লেখক নয় , লেখাই মূলধন

প্রবন্ধ

অভিজ্ঞান সেনগুপ্ত

উর্দু সাহিত্য ও প্রগতিশীলতা

গল্পটি এইরকম, দু-জন ব্যক্তির আলাপচারিতা… একজন হাকিম, অন্যজন রোগী—

“ধর্ম আসলে খুব বড় ব্যাপার। কষ্টের সময়, বিপদে আপদে, হতাশার সময়, যখন আমাদের বোধবুদ্ধি কাজ করে না আর আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই; যখন আমরা কোনও ঘায়েল জানোয়ারের মতো ভয়ে ত্রাসে বিবশ দৃষ্টিতে চারিদিকে দৌড়ে বেড়াই— সেসময় কী এমন শক্তি থাকে যা আমাদের ডুবে যাওয়া হৃদয়কে ভরসা দিয়ে থাকে? তা হল ধর্ম। আর ধর্মের শিকড় হল ইমান। ভয় আর ইমান। ধর্মের প্রশংসা শুধু বাক্য দিয়ে করা সম্ভব না, একে আমরা বুদ্ধির প্রাবল্য দিয়েও বুঝতে পারব না। এটি একটি অন্তর্গত অবস্থা…”

“কী বললে? অন্তর্গত অবস্থা?”

“এটা কোনো হাস্যকর কথা নয়, ধর্ম এক স্বর্গীয় প্রভা— যার দীপ্তিতে আমরা সৃষ্টির উজ্জ্বল আড়ম্বরগুলি প্রত্যক্ষ করি। এটি এক অন্তর্গত…।”

“খোদার ওয়াস্তে আপনি অন্যকিছু কথা বলুন। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি আমার অন্তর্গত অবস্থা আন্দাজ করতে পারছেন না। আমার পেটে খুব যন্ত্রনা হচ্ছে। এই সময় আমার স্বর্গীয় প্রভার প্রয়োজন একেবারেই নাই। আমার প্রয়োজন বিরেচক ওষুধ…”

বুদ্ধি আর ইমান, আকাশ আর পৃথিবী, মানুষ আর ফেরেশতা, খোদা আর শয়তান— এ-সব আমি কী ভেবে চলেছি? এ হল বর্ষার বৃষ্টি। যখন শুকনো নিরস জমি আর্দ্র হয়ে ওঠে আর সেখান থেকে অদ্ভুত সুন্দর সোঁদা সুগন্ধ আসতে থাকে। অথচ দুর্ভিক্ষে ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ মরে। বুড়ো, শিশু, জোয়ান, নারী-পুরুষ সকলের চোখ গর্তে ঢুকে যায়। চেহারা হলুদ হয়, চামড়া ফেটে হাড়-পাঁজরা বেরিয়ে আসে। ক্ষুধার জ্বালা, কলেরা, বমি, পাতলা পায়খানা, মাছি, মৃত্যু… মৃত লাশের দাফন করার বা পোড়ানোর লোক নেই। লাশগুলো পচতে থাকে আর তা থেকে অদ্ভুত রকমের দু্র্গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

আর একটি গল্পে—

“— প্রিয় বোন, আমাদেরও তো আসতে দাও।”

বারান্দা থেকে কথাগুলো ভেসে এল। আর সেইসঙ্গে একটি মেয়ে তার কুর্তার আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল।

তার পরিচিত জানাশোনার মধ্যে মল্লিকা বেগমই ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি রেলগাড়িতে চড়েছিলেন। আর সেটাও ছিল ফরিদাবাদ থেকে দিল্লি পর্যন্ত। একদিনের সফর। মহল্লার সব মহিলা ওর সেই সফরের গল্প শোনার জন্য হাজির হয়েছিল।

“— ওহো, আসার ইচ্ছে হলে এসো। একই কথা বারবার বলতে বলতে আমার মুখে তো ব্যথা হয়ে গেল। আল্লাহ্‌ যেন আমাকে দিয়ে মিথ্যা না বলিয়ে নেয়। তো, হাজারবার তো শোনালাম। এখান থেকে রেলগাড়িতে চেপে দিল্লি পৌঁছালাম। সেখানে ওর পরিচিত হতভাগা ষ্টেশনমাষ্টারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমাকে আসবাবপত্রের সঙ্গে রেখে তিনি উধাও হয়ে গেলেন। আর আমি বোরকায় সারা শরীর ঢেকে ওই আসবাবপত্রের উপর বসে রইলাম। একে তো বিরক্তিকর বোরকা আর দ্বিতীয় হল পুরুষমানুষেরা। পুরুষমানুষেরা এমনিতেই তো বদস্বভাবের হয়ে থাকে। তার উপর যদি কোনো স্ত্রীলোককে একভাবে বসে থাকতে দেখে তো তখন ওখানেই ঘুরঘুর করতে থাকে। একটা পান খাওয়ারও জো নেই। কোনও হতভাগা খুকখুক করে কাশতে থাকে, তো কেউ আবার গলা খাঁকারি দেয়। ভয়ে তো আমার দম বেরিয়ে আসার জোগার। আর খোদা জানেন, কী ভয়ানক খিদে যে লেগেছিল…”

একটি নাটকে দু-জন শরিফ মুসলিম পরিবারের জেনানার কথোপকথনটি ছিল এইরকম—

“আফতাব বেগম-ও, তাহলে এই কথা! এ-সব আমি কী করে জানব বল্‌! খোদা যেন এরকম পুরুষ মানুষের হাত থেকে সকলকে রক্ষা করেন। জানোয়াররাও দেখি লজ্জা শরম করে, ভয় করে। কিন্তু এ তো দেখছি জানোয়ারের থেকেও বদস্বভাবের হয়ে গেছে। এরকম পুরুষমানুষের পাল্লায় কেউ যেন না পড়ে। এরকম ব্যাপার-স্যাপার আগে কিন্তু ছিল না বুয়া ! আর এখন প্রত্যেক পুরুষমানুষের বিষয়েই এই এক কথা শোনা যায়। হতভাগাদের নিয়ে এই হল আপদ। এই ত তোমার বেহনই-এর কথাই যদি বলতে হয়, যদিও এখন সে বুড়ো হয়ে গেছে, কিন্তু যুবক বয়সেও কখনোও জোরজবরদস্তি করেনি… খোদার কসম, ঘন্টার পর ঘন্টা আমার পায়ে ধরে সাধত।

মহম্মদি বেগম— সবই নসিব। তোমার এই কথা শুনে মনে পড়ে গেল, হ্যাঁ ওই ডাক্তারনির কথা তো শেষ হয়নি। কথা যে কোথা থেকে কোথায় গড়িয়ে যায়! ওই ডাক্তারনি যখন বললেন যে আমার দুই মাসের পেট… তারপর অবাক হয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। বললেন– বেগাম সাহেবা আপনি তো বলছেন যে চারমাস থেকে আপনি বিছানায় পড়ে রয়েছেন! ডাক্তার গিয়াসও বলছিলেন আপনার রোজ সন্ধ্যায় ১০০ থেকে ১০১ পর্যন্ত জ্বর হয়। তবুও আপনি বলতে চান যে আপনার…। আমি বললাম— ও মিসসাহেবা, তুমি তো ভাগ্যবতী! নিজের রোজগারে খাও দাও আর শান্তিতে ঘুমাও। কিন্তু আমাদের মতো মেয়েরা মৃত্যুর পরে জান্নাতেই যাই বা দোজখে, নিজের হালুয়া নিজেকেই বানিয়ে খেতে হবে। বিবি মুখপুড়িদের শরীর সুস্থই থাক বা অসুস্থই থাক, অসুখ-বিসুখে মরে যাক— পুরুষদের শুধু নিজের ভোগবিলাস আর আনন্দ-ফুর্তির সাথে সম্পর্ক। সে বেচারি সব শুনে চুপ হয়ে গেলেন…”

উপরের গল্পগুলোকে, তাদের চরিত্র বা চরিত্রের মুখের কথাগুলোকে আজকের সমকালে দাঁড়িয়ে দেখলে হয়তো স্বাভাবিক বলেই মনে হবে, কতজন আজকের দিনে এরকম বা এর চেয়েও আরও তীব্র ভঙ্গিমায়, চটপটে টানটান বয়ানে গল্প বলে থাকেন। গদ্য-পদ্যের চাতুর্যে, ভাঙাগড়ায় কথাগুলোর আবেদন আরও নিপুণ লক্ষ্যভেদী হয়ে ওঠে। কিন্তু আজ থেকে প্রায় একশো বছরের ওপারে গত শতাব্দীর তিরিশ-চল্লিশের দশকের চরম রক্ষনশীল সামাজিক পরিসরে দাঁড়িয়ে বিশেষ করে গোঁড়ামির বৃত্তে আটকে থাকা মুসলিম সমাজের মধ্যে থেকে এইসব কথাগুলো বলে ফেলা খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। সহজ ব্যাপার হয়ওনি। অথচ সত্যিটা হল সেইসময়ই রক্ষনশীল পারিপার্শ্বিকতার অন্ধকার পর্দাটিকে স্রেফ কলমের জোরে ছিন্নভিন্ন করে তৎকালীন সাহিত্যের ফেনিল আবেগসর্বস্বতার বাইরে বেরিয়ে ঘোর বাস্তবকে নিয়ে লেখালেখির সূচনা হল, এবং তা উর্দুতে। এই আখ্যানে আমরা সেই সোনালি সময়ের গল্প বলতে চেষ্টা করব। বুঝতে চেষ্টা করব ইতিহাস যাকে প্রগতিশীল উর্দু সাহিত্য বলে চিহ্নিত করেছে। কী অসম্ভব বৈপ্লবিক এক সময়ের আখ্যান— যতটা না তার আঙ্গিকে, রচনাশৈলীতে তার চেয়েও বেশি তার বিষয়ধর্মীতায়, রাজনীতিতে, সামাজিক আবেদনে। এক অপরিচিত নতুন ভাষ্যে। তাতে যতটা কল্পনাশ্রিত আবেগ আছে তার চেয়েও বেশি আছে নিষ্ঠুর কঠোরতা, সমস্ত হিপক্রেসিকে মুহূর্তে নগ্ন করে দেওয়া সুতীব্র কশাঘাত। চমকে উঠেছিল সবাই। তারপর রাগে ফেটে পড়েছিল। তবুও কলম থামেনি। এই আলোচনার স্বল্পবিস্তৃত পরিধিতে সেই কথাগুলোকেই জেনেবুঝে নেওয়া যাক।

ব্রিটিশ শাসিত পরাধীন ভারতবর্ষে সে-সময় শিক্ষার অভাব, অশিক্ষা-কুসংস্কারের কুপ্রভাব আর পুরুষ প্রধান সমাজে সুযোগের অভাবে ভারতীয় নারীরা বিশেষ করে মুসলিম নারীরা ছিলেন অধিকার বঞ্চিত এবং ঘরের কোণে পর্দার আড়ালে বন্দি বন্দী। এই সময়েই স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের আহ্বানে আলিগড়ে আসেন শেখ আবদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী বেগ ওয়াহিদ জাহান বা আলা বি, দু-জনেই একটা অন্ধকার সময়ে আলোর খোঁজ এনেছিলেন। ওয়াহিদ জাহানের পিতা মির্জা ইব্রাহিম বেগ ছিলেন দিল্লি রেঁনেসার অন্যতম স্থপতি। দু-জনেই রক্ষনশীল মুসলিম সমাজের মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করেন, এবং সারাজীবন নানান প্রতিবন্ধকতা, বিরোধের মোকাবিলা করেও মুসলিম মেয়েদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য প্রাণপাত করেন। গড়ে তোলেন এক স্কুল, ‘আলিগড় জেনানা মাদ্রাসা’, যা আলিগড়ে শুধু না সমগ্র উত্তর ভারতে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার ভরকেন্দ্রে পরিনত হয়। শেখ আব্দুল্লাহ আর ওয়াহিদ জাহানের উদ্যোগে প্রকাশিত পত্রিকা ‘খাতুন’ তাঁদের চিন্তাভাবনাকে, মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্বকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরতে থাকে। আবদুল্লার বাড়িতে যে-প্রগতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে নিয়মিত উপস্থিত হতেন হালি, নাজির আহমেদ, জাকারুল্লাহ, আতিয়া ফৈজীর মতো মুসলিম সমাজের নতুন চিন্তার নানা মানুষ, যারা একত্রে মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রবল জনমত তৈরি করেন, পাশে পান মহমদিয়ান এডুকেশন কনফারেন্সকে, আর ভোপালের বেগমকে। এই সমস্তই তৈরি করেছিল বিপ্লবের এক উজ্জ্বল পটভূমি, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আলিগড়েই সেই আগুনে তপ্ত হয়ে অঙ্গার হয়ে ওঠে একদল তরুণ দামাল ছেলে-মেয়ে— সাজ্জাদ জাহির, আহমেদ আলি, রশিদ জাহাঁ (শেখ আবদুল্লার কন্যা) আর মাহমুদ-উজ-জাফর। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত একদল তরুণ লেখকের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে থাকে ভারতের প্রগতিশীল লেখক আন্দোলন। তৈরি হবে প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পী সংঘ। একে একে আসবেন, থাকবেন কৃষাণ চন্দর, ইসমত চুগতাই, সাদাত হাসান মন্টো, রাজিন্দর সিংহ বেদি-রা, যোগ দেবেন ফৈজ আহমেদ ফৈজ, আহমদ নাদিম কাসেমি, আলী সরদার জাফরি, সিবতে হাসান, এহতেশাম হোসেন, মমতাজ হোসেন, সাহির লুধিয়ানভি, কাইফি আজমি, আলী আব্বাস হুসাইনী, মাখদুম মহিউদ্দিন, ফারিগ বুখারী, খাতির গজনবী, রাজা হামদানি, অমৃতা প্রীতম, আলী সিকান্দার, জো আনসারী, মাজাজ লাকনাভি ও আরও অনেকে। যাঁদের হাতে তৈরি হবে, রক্ষিত থাকবে দেশভাগ-বিক্ষত, ভীত, ক্লিষ্ট এই উপমহাদেশের এক নতুন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ভাষ্য। নিঃসন্দেহে উর্দু সাহিত্যে প্রগতিশীল লেখক আন্দোলন স্যার সৈয়দের শিক্ষা আন্দোলনের পরে সবচেয়ে শক্তিশালী আন্দোলন ছিল।

প্রগতিবাদীরা উর্দু সাহিত্যে গদ্য ও কবিতায় বাস্তব ও কল্পনার চমৎকার মেলবন্ধন করেছিল। ইউরোপীয় রোমান্টিকতার পরবর্তীতে বাস্তববাদ বা রিয়্যালিজমের প্রভাব উর্দু সাহিত্যেও পড়ে। ঊনবিংশ শতকের শেষে বা বিংশ শতকের প্রথম দশকে রোমানিয়ত-এর পরম্পরা উর্দু সাহিত্যকে জারিত করেছিল, সমান্তরালে বাস্তববাদ প্রভাব ফেললেও বিংশ শতাব্দীর কয়েক দশকে দেখা যায় কালাকার বাস্তবতার গভীরতায় ডুবে থেকে রোমানিয়ত্‌-এর নতুন ধারার সন্ধান করছেন। প্রথাগত রোম্যান্টিকতাকে সরিয়ে এই নতুন বাস্তবধর্মী রোমানিয়ত্‌ সামাজিক বাস্তবতাগুলিকে সাহিত্যের উপজীব্য করে তুলল।

শুরুটা একটু একটু করে হচ্ছিল আগে থেকেই। কিন্তু প্রথাগত উর্দু সাহিত্যের কোমল রোমান্টিক পরম্পরাকে, প্রেমোদ্যানের বুলবুল, আশিক-মাসুক আর শের-শায়েরির মৃদু নরম আঙিনা ছেড়ে সমাজবাস্তবতার কঠিন জমিনে প্রথম নামিয়ে আনলেন মুন্সি প্রেমচাঁদ, নিম্নবর্গীয় সাধারণ মানুষের কাহিনি চিত্রিত করলেন। প্রেমচাঁদের কাছে হিন্দি ও উর্দু উভয় ক্ষেত্রেই ছোটোগল্প এবং উপন্যাসে নতুন ধরন তৈরি করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কার্যত একাকী তিনি উর্দু ও হিন্দী কথাসাহিত্যকে উর্বর তুলেছিলেন, তত্কালীন ইউরোপীয় কথাসাহিত্যের সঙ্গে তুলনীয় এক বাস্তববাদী আখ্যানের রোমান্টিক ক্রনিকলগুলি রচনা করেছিলেন।

‘কাফন’ গল্পটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, গল্পের শুরুটা এইরকম—

“ঝুপড়ির দুয়ারে বাপ-বেটা দু’জন বসে আছে। চুপচাপ। সামনে একটা আগুনের কুণ্ডুলি নিভু নিভু জ্বলছে। ভেতরে বেটার যুবতী বউ বুধিয়া প্রসব বেদনায় উথাল পাথাল আছাড় খায়। থেকে থেকে তার মুখ থেকে এমন মর্মবিদারক আর্তনাদ বের হয়ে আসে যে, উভয়ের কলিজা পানি হয়ে যায়।

শীতের রাত। চারদিক নৈশব্দে ডোবা। সারা গ্রাম অন্ধকারের চাদরে ঢাকা।

— মনে হচচে বাঁচপে নাকো। দিনমানই তড়পি গেলো। যা তো যা, মাধু, একটু দিকি আয়। বাপ হাসু বললো।

— মরিই গিলি তো জলদি মরচে না ক্যান? কী দিকি আসপো গো? ভয়-খাওয়া পাখির মতো জবাব দিলো মাধু।

— তুই একটু শক্ত-মক্ত পাষাণ আচিস হে। বচ্ছর ভরি যার সাতন জীবনের সুকু-মুকু খেললি তার সাতে এমন অকরুণ করচিস?

— বললি-ই হবি? ওর ওই তড়পানি, তাতে আবার হাত-পার ছট-ফটি, ওসব আমি দিকতি পারি নাকো।

একে তো চামারের ঘর। তারপর আবার গাঁ জুড়ে তার বদনাম আছে। হাসু একদিন কাজ-কাম করে তো তিন দিন করে আয়েশ। মাধুও কম না। সে এমনই কামচোর, এক ঘণ্টা খেঁটে-ছিটে ফের এক ঘণ্টা চুরুট টানে। এ কারণে কেউই তাকে কাজে রাখে না। ঘরে যদি একমুঠ চাল, ডাল কিংবা একফোঁটা শালুনের ঝোল থাকে তো কসম খেলেও কাজে নামবে না মাধু। দিন দু-এক অনাহারে কাটলে পরে একদিন হাসু গাছের ডাল-পাতা ভেঙ্গে কুড়িয়ে মাধুর কাছে দেয়, আর মাধু সেগুলো নিয়ে বাজারে বেচে আসে। যে ক’দিন এ দিয়ে চলে সে ক’দিন আর রোজগার নেই। দু’জন নবাবের বদন নিয়ে দিনভর এদিক সেদিক ঘুরে বেরায়। আবার যখন খুদ-পিপাসা হবে তখন হয়তো আবার কাঠখড়ি ভাঙে, নয়তো অনিচ্ছায় কারো দু’চার আনার মজদুরির তালাশে যায়।

এমন না যে, গাঁয়ে এখন কাজের দুর্ভিক্ষ যাচ্ছে। কাজকামের কোনো অভাব নেই। কৃষাণকুলের গ্রাম। মেহনতি মানুষের জন্য পাচ-পঞ্চাশটা কাজ ছড়িয়েই থাকে। কিন্তু গাঁয়ের মানুষ এদের কাজের জন্যে তখনই পায় যখন দু’জন থেকে অন্তত একজনের কাজ না করে আর কোনো উপায় থাকে না। ভাগ্যক্রমে এ দু’জন যদি সাধু-সন্ন্যাসী হতো তবে ‘অল্পতুষ্টি’ আর ‘খোদাভরসা’র লাইনে এদের শুদ্ধ করতে কোনো সবকের দরকার হতো না কেননা, এসব তাদের স্বভাব জাত ‘গুণাবলি’…”

এইভাবেই চামার সমাজের কঠিন বাস্তবতার অভিব্যক্তি মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে এই রচনায়। এভাবেই মানুষের বাস্তব জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, পাওয়া-না-পাওয়া ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়। চরম দারিদ্র্য আর অভাবকে, দলিত সমাজ, জাতপাত নির্ভর জীবনের কঠিন রূপ— সমাজের নীচু তলার মানুষরাই তার লেখার মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছিল। মাধু, হাসু এরাই প্রথম সাহিত্যের চৌহদ্দিতে প্রবেশের সুযোগ পেল প্রেমচাঁদের হাত ধরে।

এর পরেই হুড়মুড় করে উর্দু সাহিত্যের দোরগোরায় হাজির হল সেই চারজন, জলন্ত অঙ্গার হয়ে। ১৯৩২ সালে ‘অঙ্গারে’ নামক উর্দু গল্পের যে-দুঃসাহসী সংকলনটি বাজারে বেরোনোর অল্প কিছুদিনের মধ্যে যুক্ত প্রদেশে নিষিদ্ধ করা হয়, তার চারজন নবীন বুদ্ধিচর্চায় উদ্বুদ্ধ ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দীপ্ত চার গল্পকার একত্রে পরিচিত অঙ্গার গ্রুপ নামে। চারজনই র‍্যাডিকাল, প্রগতিশীল, পরবর্তী সময়ে আহমেদ আলি বাদ দিয়ে বাকি তিনজনই প্রত্যক্ষভাবে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। সাহিত্যে বিধিনিষেধ এবং উত্তর ভারতের মুসলমান সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামির মূলে প্রবল আঘাত করেছিল অঙ্গার। তাই আওয়াজ উঠল এ-বই ‘নোংরা’, ‘ভাষা ও ভঙ্গিতে নির্লজ্জ’, এবং ‘ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি আক্রমণাত্মক’। পরবর্তিতে এই ‘অঙ্গারে’ বিতর্ককে ঘিরে পালটা-আওয়াজ তুললেন নানা ভাষার প্রগতিশীল লেখকরা; ধর্মীয় ও সাম্রাজ্যবাদী সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে।

মূলত সাজ্জাদ জাহির-এর পাঁচটি ছোটোগল্প, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘নিদ নেহি আতি’ ও ‘দুলারি’, আহমেদ আলি-র ‘বাদল নেহি আতি’ ও ‘মহাব্বতোঁ কি এক রাত’, মাহমুদ-এর ‘জওয়ানমর্দী’ এবং রশিদ জাহান-এর ছোটোগল্প ‘দিল্লি কি সয়ের’ ও নাটক ‘পর্দে কি পিছে’… এই দশটি লেখা নিয়ে ‘অঙ্গারে’।

এই রচনার উল্লিখিত একদম প্রথমের গল্পটি সাজ্জাদ জাহিরের ‘ফির ইয়ে হাঙ্গামা’। ধর্ম আর রক্ষণশীলতার শোষণের পেছনের ছলচাতুরি আর তার বাইরের ভয়ংকর রিয়্যালিজমকে দেখিয়েছেন সাজ্জাদ। পরের গল্প ‘দিল্লী কি সয়ের’ আর নাটকটি ‘পর্দে কে পিছে’, ‘লেখিকা, ডাক্তার এবং কমিউনিষ্ট’ রাশিদ জাহাঁ অঙ্গারেওয়ালির লেখা। যিনি ইসমত চুঘতাই-এর ‘রাশিদা আপা’। ‘দিল্লী কি সয়ের’ গল্পটিকে দেখা যাক— একটি মুসলিম রমণীর দিল্লী ভ্রমণের কাহিনি, তার স্বামী তাকে মালপত্রের স্তূপে বসিয়ে দিয়ে নিজে বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে চলে গেছেন। বউটি সেই জনবহুল স্টেশনে কয়েক ঘণ্টা একা একা যে-সব ভয়াবহ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, সেগুলি ফিরে গিরে একটি মেয়েদের আড্ডায় বলছে… কিংবা ‘পর্দে কে পিছে’ নাটকটি, যেখানে দু-জন শরিফ মুসলিম পরিবারের রমণী তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছে, তাদের যৌনতার সুখ-দুঃখের কথা বলছে, একটি চরিত্র মহমুদি বেগম তার বার বার গর্ভপাত ও খারাপ স্বাস্থের কার্যকারণ সম্পর্কে কথা প্রসঙ্গে লেডি ডাক্তারটিকে বলে ওঠে যে, সে ডাক্তার সাহিবার মতো স্বাধীন নয়, বরং তার পুরুষের অধীন, যে-পুরুষ শুধু নিজের সুখের পরোয়া করে, তার কাছে তার পত্নী বাঁচল কি মরল, কোনো গুরুত্ব পায় না। যেন সে শুধু যৌনদাসী মাত্র… অঙ্গারের ভাষ্য তাবৎ তৎকালীন উর্দু সাহিত্যের পরিসরে সত্যিই আগুন জ্বালিয়েছিল। নাড়িয়ে দিয়েছিল যাবতীয় সামাজিক হিপোক্রেসির শিকড়, ধর্মীয় রক্ষণশীলতার বাঁধন, পুরষতান্ত্রিকতার অহংকারকে।

অঙ্গার উর্দু সাহিত্যে একটা বাঁক। প্রগতিশীলতার দিকে। যেখানে পরতে পরতে মিশে আছে বামপন্থা আর রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের পরবর্তী বাস্তববাদের ভাবনা। আঙ্গারে গোষ্ঠীর লেখকরাও পরবর্তীতে (মেহমুদ আলি ছাড়া) জড়িয়ে পড়েছেন সক্রিয় রাজনীতিতে, সদস্য হয়েছেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির। তাঁরা আলোচনাত্বক, সামাজিক এবং বৈপ্লবিক-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সাহিত্যের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করতেন। লেখার গুণগত মান বা শৈলীর বিচারে অঙ্গারের অবস্থান যাইহোক না কেন, উর্দু সাহিত্যের প্রগতিশীল ধারার জনক হিসেবে এই চটি বইটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। যদিও প্রগতিশীল আন্দোলনের সব লেখক-কবিই সমাজবাদী বা সাম্যবাদি ছিলেন না, তবুও তার প্রত্যেকেই সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ছিলেন। এই বৈশিষ্ট্য অঙ্গার বা পরবর্তী উর্দু প্রগতিশীল সাহিত্যের মধ্যেও ছিল।

উর্দু প্রগতিশীল ধারার সাহিত্যের আর একটি গুরত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল এর মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের গভীর প্রভাব। পরবর্তীতে এই মনোবৈজ্ঞানিক ধারণা রহস্যবাদের সঙ্গে মিশে আধুনিক উর্দু সাহিত্যের নির্মাণ করেছে, কিন্তু সে ভিন্ন গল্প। প্রগতিশীলতার চরম উৎকর্ষতার সময়কালে উর্দু সাহিত্যিকরা লেখায় মানবিক সংবেদনকে দৃষ্টিগোচর করার ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে ইসমত চুঘতাই, মন্টো, কৃষণ চন্দর, রাজেন্দ্র সিং বেদী বা মুমতাজ মুফতি, হাসান অসকরি, মহসিন আজিমাবাদী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। একাধিক উদাহারণের মধ্যে ইসমত চুঘতাই-এর ‘দিল কি দুনিয়া’, মন্টো-র ‘তোবা টেক সিং’, কৃষণ চন্দরের ‘ভরা চাঁদের রাত’ বা রাজেন্দ্র সিং বেদী-র ‘লাজবন্তি’ নিয়ে কথা বললে মনোগত জটিলতার ভাঙাগড়ার ছবিটা স্পষ্ট হবে।

যেমন ইসমত চুঘতাই-এর ‘দিল কি দুনিয়া’ গল্পটি—

“কুদসিয়া বানো কচি বয়সেই স্বামী-পরিত্যক্তা, ফিট খেত ভক্তির সুর মিশ্রিত হামদ শুনলে, এত ইন্দ্রিয়জ কামনাতুর ছিল সেই সদ্যোযৌবনের হতাশার বোধ। শেষে তার একটু গর্ববোধও হতে থাকে যে, এক মেমের জন্য তার স্বামী তাকে ছেড়েছেন। অর্থাৎ, দেশের রাজার সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক রয়েছে কিছু। পাড়ার লোকেও সশ্রদ্ধ ভাবে তাকায়। পাঠানি বুয়া তার বাবা-মা-স্বামীকে দুর্ঘটনায় হারিয়ে চাঁপা গাছের ডালে বেপর্দা বসে থাকে, তাকে প্রলুব্ধ করে লোকগানের যে নাগর মেরঠে চলে গেছে, তার কথা গেয়ে বিলাপ করে সে। নিজেকে মনে করতে থাকে ওই গ্রামের যে পীর বালে মিয়াঁ, যার মৃত্যুদিনে ওরস হয়, তাঁরই রাধা, মত্ত, দিওয়ানি। এ ভাবে তার ভিতরের কামনাগুলি, যা কোনও দিন পূর্ণতা পাবে না, জানলে লোকে বেহুদা বেশরম বলে দোর বন্ধ করে রাখবে, তা বলতে পারা যায় জোরে জোরে। অন্য বৈধতায়। শরিয়তি ধর্মের দিক থেকে দেখলে শাস্ত্রে তার ঠাঁই নেই, কিন্তু এই উপমহাদেশের লোকজ মরমিয়া তত্ত্বের ইতিহাসে সম্পূর্ণ সিদ্ধ। এক দিকে উত্তরপ্রদেশের উর্দু আফসানা, তাকে এলিট অন্তঃপুরের নিজস্ব রূপে দেখান চুঘতাই, অন্য দিকে তাঁর লেখা যেন জানানার মধ্য থেকে দেখা,নানা-নানী-বড়ি-আব্বা-আম্মা-বাঈজী-ছোটি বুয়া-ভাবীজান-চাচা সন্ধেবেলা লণ্ঠন-হাতে আলি বকশ। যাদের দেখার জন্য তিনি বেছে নেন এক বালিকা কথককে। বালিকার চোখ থেকে দেখায় জানাচেনা জিনিসগুলি হয়ে দাঁড়ায় না-জানা, সংকেতময়, ভয়াবহ বা সারল্যে ভরা। ঝিয়ের মেয়ে গাইন্দাকে যে গর্ভবতী করেছে ভাইয়া, বা এটা যে লেপের নীচে বেগমজান আর তার পরিচারিকা রাব্বু— রোজ রাত্তিরে ভয় দেখানো পাগল হাতি না, বালিকা কথকদের এই সব ভয় আর অজানা দিয়েই তৈরি হয় একটা সমাজের অবসন্নতা, ক্ষয়িষ্ণুতার ছবি, তার সমালোচনাও। নারীবাদের তীব্র প্রতিবাদের স্বর এখানে অনেক মনস্তাত্ত্বিক, অন্তর্ঘাতমূলক।”

এভাবেই প্রগতিশীল উর্দু সাহিত্য ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে থাকে। যা কেবল উর্দু সাহিত্যকেই পুষ্ট করেনি প্রতিটি ভারতীয় ভাষার সাহিত্যে তা আলোকবর্তিকার কাজ করেছিল। প্রগতিশীল লেখক আন্দোলন ১৯৩৬ সালে লখনউতে গঠিত হয়েছিল, ভারতীয় লেখকদের লন্ডন বৈঠকের ঠিক এক বছর পরে, এই সংস্থার পিছনে প্রেরণা হিসাবে সাজ্জাদ জহির-এর নেতৃত্বে ‘আঞ্জুমান তারককি পাসান্দ মুসান্নাফিন’ ছিল। শীর্ষস্থানীয় অন্যান্য লেখকরা যাঁরা যুক্ত ছিলেন— ডঃ মুলক রাজ আনন্দ, ডাঃ জোশী পারশাদ, প্রমোদ রঞ্জন সেনগুপ্ত এবং ডাঃ এমডি তাসির ইত্যাদিরা। সাজ্জাদ জহির তাঁর বিখ্যাত বই ‘রোশনিতে’-র গঠনের বিবরণ সন্ধান করেছিলেন। বলা যেতে পারে যে, উর্দু লেখকরা ‘আঞ্জুমান তারককি পাসান্দ মুসান্নাফিন’-এর সর্বাগ্রে ছিলেন, তবে পরবর্তীকালে ভারতীয় ভাষার প্রায় সমস্ত লেখকেরা একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, দেশের অভ্যন্তরে সামন্তবাদের বিরুদ্ধে, কৃষক-শ্রমিকের অধিকারের জন্য সংগঠনটি সমাজতন্ত্রকে যথাযথ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসাবে বিবেচনা করে, যা শোষণের অবসান ঘটাতে পারে। প্রগতিশীল সাহিত্যের লেখকগণ স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল, জনগণের শাসনের দাবিকে লেখায় গুরুত্ব দিয়েছিল।

উর্দু তথা ভারতীয় সাহিত্যের প্রগতিশীল ধারা একটি বহুধা বিস্তৃত আলোচনা। আজকের সমকালীনতায় সেই ইতিহাসকে জানা ও বোঝা খুব জরুরি। জরুরি এই আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

একবার বলা দরকার প্রিয় ফয়েজ-এর কথাও, বামপন্থী চিন্তাধারার বিপ্লবী উর্দু কবি ছিলেন ফয়েজ । সর্বভারতীয় প্রগতিশীল লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। সাম্যবাদী এই কবি সাম্রাজ্যবাদ আর প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, জেল খেটেছেন, নির্বাসন দণ্ড ভোগ করেছেন। উর্দু কবিতা চর্চার প্রতিটি মুহূর্তে বিশ্বে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আফ্রো-এশীয় মানুষের মুক্তি ও শান্তির সপক্ষে সংগ্রাম করেছেন…

“তারপর কেউ এলো বুঝি মুর্দা-মনের জানাজায়?
না তো, কেউ না পথভোলা মুসাফির হবে কোনো
চলে যাবে এখনই
ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সুদীর্ঘ রাত, মুখ লুকাচ্ছে তারকারাজির মাহফিল মহলে মহলে কাঁপছে ঘুমাতুর প্রদীপশিখা
পথচারীর অপেক্ষায় ঘুমিয়ে পড়েছে হরেক পথ অচেনা ধুলো ঢেকে দিয়েছে বাসি কদমের ছাপ।
প্রদীপ নেভাও ঢালো রত্নখচিত পেয়ালায় শরাব,
এরপর শিকল লাগিয়ে নাও তোমার স্বপ্নহীন সব দরজায়
কেউ না, কেউ আর আসবে না এই ঠিকানায়…।”

Facebook Comments

পছন্দের বই