লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

বেবী সাউ

চাও করুণানয়নে


অন্ধকার তোমাকে কাঁদায়?
তার দিকে মুখ করে বসে আছ, বিষাদের ধ্বনি!

তোমার প্রেমিকা রাধা, উজ্জ্বলতা বেশি
চোখের সাগরে ঝাঁপ দিই,
বার বার মরি

তীক্ষ্ণ ট্রেন আসে… কাঁপো…
খান খান ভেঙে পড়ে
হৃদয় তোমার

অন্ধকার উড়ে যায়…
যেতে যেতে অভিশাপ ছুড়ে দিয়ে বলে,

আলোতে অধিক জ্বালা
যাও, ভোগ করো…


চুপ করে বসে থাকো, আলো বিপরীতে…

হাওয়া-বাতাসের শব্দ ভাসে
তাকে লেখো

শূন্যতার সুর নিয়ে হেঁটে যায় নিশাচরী সেই
ধরে রাখো তাকে, প্রেমোদক

কেউ তো তোমার নয়
তুমিও কারো না এ-যাবৎকাল

নূপুরের ধ্বনি বাজে শুধু
শুধু বলে, আছি… আছি…

বাঁশিটি আড়াল হল শ্যাম
কুঞ্জবন ভাঙা পড়ে থাক…


প্রার্থনার মন্ত্র দিয়ে তাকে বেঁধে রাখো। বোঝে সেও?

সে কি মায়ার অধিক ছায়া, গান, শব্দ!
সে কি যাতনার কাল ছুঁয়ে বার বার কাঁদায় তোমায়!

বাসনার ঘরে এনে তাকেই বসাই
দু-হাতে জড়িয়ে দিই এয়োতির সাজ, ধানদুর্বো…

দিন কেটে যায়… ফিকে হয় মন, দেহ…

প্রেম, অভিযোগ শেষ হলে
গলা তুলে বলি, ‘সর্বনাশ, তুই মর মুখপুড়ি…!’


যা কিছু জমানো আমার, সঞ্চিত মায়া
দেহ দিই, স্নেহ দিই, দিই তাকে অধিক যাতনা

ধীরে ধীরে তার কাছে নিজেকে বসাই… ভাবি…
বিচ্ছেদ প্রবল জেনে লিখে রাখি পদাবলী, শ্লোক

দেখেও দেখে না কিছু
উপেক্ষায় রাত কেটে যায়…

সমস্ত শহর জানে নদীটির গায়ে কাল
ভেসে যাবে উলঙ্গিনী বধূ…


আকাঙ্ক্ষার হাড়গোড় নিয়ে বসে আছি, একা

পালিত যাপন এই, লোভানীয় হয়ে ওঠে আরও

ঝিঁঝি ডাকে
নিঝুম ডালের ফাঁকে দেখা দেয় রহস্যের চাঁদ

কেউ নেই
কেউ নেই

ধ্বনি নেই শব্দ নেই
অক্ষরের কাচ ভেঙে চলে গেছে নিঝুম শূন্যতা

পাশ ফিরে শুই
ভয়ে ভয়ে ডাক দিই… ‘আছ… জেগে আছ…!’

বাঁশি বেজে ওঠে…


কত রক্ত ক্ষয়ে গেল, প্রিয়,
কত মন ভেঙে ছারখার…

পাওয়ার নেশাই তবু বার বার বাঁচিয়ে তুলেছে…
আর্তনাদে ভরে গেছে শস্যের শরীর…

এ-ভাদর আসলে পোড়া…
এই দেহে ফসলের মায়া নেই কোনো

তাহাকেই কৃষিকাজ ভেবে
এ-জন্ম জাতিস্মর হল…


নিজেকেই খুঁড়ি

নিজের শরীরে খুঁজি ক্ষিতি, তেজ, বায়ু…

আকাশ এখানে মেশে
জল বয়ে যায়…

প্রতিটি ধ্বনির মাঝে তুমিও নিপুণ
সাবধানে রেখে দাও, ক্ষত, রক্তপাত

খুঁড়ি আর খুঁড়ি
আমার আহত দেহে তুমি জন্ম নাও…


গৈরিক বসনে সাজাই, আলুলায়িত কেশরাশি
জটা পড়ে…

পাগলিনী বেশ এই… কঠিন, কঠোর
শহরের পথে পথে ভেসে যায় পূর্ণতার ধ্বনি
গাছ কাঁদে, মাটি কাঁদে; আকাশের পাখি…

সাধনায় ভরে যায় নীপবীথি বন
নীলের আঁচল ওড়ে, শূন্য চারিদিক

পাথুরে শহর গলে, জল হয়ে যায়

মীরার ভজনগীত তোমাকেও জ্বালায়, পোড়ায়…


তোমাকে জীবন মানি
তোমাকে মরণ

আলেয়ার দিকে ছুটে ছুটে মরি
সরণের পথ নেই কোনো
ভাব নেই

ছেঁড়া বসনের ভাঁজে লুকিয়ে রেখেছি যে-কবিতা
কীর্তনের সুর দিই
বাঁশি দিই

মাদলের রব ঘন হলে
অভিসার, মৃদু ইশারায় চোখ মারে…
ডাকো?

১০
যে-পথ তোমাকে চায়, তার পরে কাত হয়ে শুয়ে থাকি আমি

পদধ্বনি বাজে

প্রতিটি ধুলোয় গায় বেজে ওঠে রাধা রাধা রব

নীচু মুখ, অভিমানী
সে-সব ধুলোর গায়, ধীরে ধীরে লিখি ‘অশ্রুপাত… তাহাকে কাঁদাও…’

Facebook Comments

পছন্দের বই