কবিতা
বর্ণালী কোলে
প্রতারণা বিষধর সাপ
১
তোমারা প্রতীক্ষা করেছিলে, অবসান
আমি প্রতীক্ষা করেছিলাম, সূচনা
তোমরা আমাকে বেঁধে ফেলতে শুরু করেছিলে
আমার পায়ে বেড়ি দিয়ে
এইটুকুই আকাশ তোমার
এইটুকুই জগৎ
পৃথিবী তোমাদের দেওয়া ঈর্ষা-উপহার
২
একজন নারী কতটা কষ্ট পেলে
তোমার অহং শান্ত হবে, ভাবি
এত নির্লিপ্তি
এ তো খুনিদের থাকে
তুমিও তাই?
কেবলই হত্যা করো, হৃদয়
দীর্ঘ তলোয়ার, হৃৎপিণ্ডের তাজা রক্ত
ভুলে গেছি
মুখ মনে নেই
তবুও মাঝেমধ্যে মনখারাপ
কপালে, শিরায় আড়ষ্ট ব্যথা
চাবুকের দাগ
৩
স্নেহ নেই, প্রীতি নেই
প্রেম নয়, দরদ নয়
ভয় লাগে, এখনও তার ভয় লাগে
আকাশি রঙের শাড়ি
নতুন বধূ
সিঁদুরচিহ্ন বিবাহের পরদিন মুছে নিয়েছে
মহাকাশে এখনও চাবুক
তারই শব্দ শোনে সে
তার সব বোধ
ঠিক যেন মানসিক রোগীদের চিকিৎসালয়
৪
“শিকার” তোমার প্রতিবেশী নয়
খবরের কাগজের নারী নয়
তুমি নিজেই “শিকার”
আতঙ্কের মধ্যে থাকতে থাকতে
প্রত্যাশা হারিয়ে গেছে
জীবনের অংশগ্রহণের ইচ্ছে শেষ
মাঝেমাঝে ঈশ্বরের দিকে তাকাই
এরপর? এরপর?
৫
এই মানুষগুলোরও মৃত্যু হতে পারে, অবাক দেখছি
চিত হয়ে শুয়ে বিশালদেহী লাশ
পচা দুর্গন্ধ বেরোয়নি এখনও
এখনও ছিটকে বেরোচ্ছে তেজ, দর্প, হুঙ্কার, ত্রাস
শাসন
একটু পর চিতায়
ছাই
স্মৃতি মৃত্যুর থেকেও বেশি বিভীষিকাময়
৬
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে
পিঁপড়ের মতো তোমার ওপর উঠে আসছে ওরা
তোমার বাঁচার ইচ্ছেকে ছেঁটে ফেলা
শোষণ নয়?
স্বপ্নে দেখ, রাজপথ
হাজার হাজার তুমি
মুষ্টিবদ্ধ ঘোষণা— “বাঁচতে চাই।”
৭
প্রতারণা বিষধর সাপ। আজও
ছোবল দিয়েছে বহু বার। বিষদাঁত তার
নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করেছে টানা ছয় মাস
দংশনের পর।
ভেঙে পড়ার বিষাদ একটি ব্যর্থ সংগম।
উঠে দাঁড়াচ্ছে। চলছে সে আবার।
নীলক্ষত কিছুটা মলিন।
রোদ্দুর, পুরুষ হও, তুমি।
ওর হাত ধরো একবার।
ও প্রত্যয় ফিরে পাক।

বর্ণালী কোলে
বর্ণালী কোলে। জন্ম: ০৪.১১.১৯৮০। বাসস্থান: নবদ্বীপ। বাড়ি: বর্ধমান জেলা। পেশা: শিক্ষকতা। কাব্যগ্রন্থ: ‘নির্জন জাহ্নবী’, ‘আধপোড়া দিগন্ত’, ‘আকাশ আজ রামকিঙ্কর’। মুক্তগদ্য: ‘আলোর মুহূর্ত’। প্রকাশিত উপন্যাস: ‘জানি, জানি প্রতিটি স্পর্শে’।