Category: গল্প

গলছে মেঘের হাতিটা

—দোলেমোন, বালো, তি-ভী… সাড়ে তিন বছর বয়সী মুখ থেকে বের হয়ে আসা শব্দগুলো এখনও স্পষ্টতা পায়নি। কিন্তু অন্য বাতাস তাঁর কথায় প্রাণ যোগাচ্ছে।
—তিভী, দোলেমোন, শুন্দল… বিষণ্ণ শহরে হঠাৎ জ্বলে ওঠা আলোর মতো হেসে ওঠে শিশু মুখ।

সাইনেস্থেশিয়া

—বাবা সাড়া দিচ্ছে না যে, ও বকুল। আমার কিন্তু ভালো ঠেকছে না। তুই ছুট্টে যা, মাকে ডেকে নিয়ে আয়। ওই দেখো, দাঁতে দাঁত লেগে গিয়েছে। শিগগির চামচটা দিয়ে যা। এখনও হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস? বাবা, ও বাবা, সাড়া দাও। এই দেখো, আমি টুনি, বাবা!

বারিদের বন্ধুরা

হিসেব মেলে না। মেলে না বলা ভুল, হিসেব রাখাই হয়নি। যে-সব হিসেব মিলে যায় তারা অঙ্কপাড়ার লক্ষ্মী ছেলে। বাঁ-পাশ, ডান-পাশ হুবহু এক। সবুজ কালির টিকচিহ্ন। কিন্তু যে-সব হিসেব রাখা হয় না, একটা সময় দেখা যায়, সেই হিসেব রাখাই জরুরি ছিল। এদের অঙ্ক হয় না। এদের মেলানো যায় না। কিন্তু মেলানো দরকারি ছিল।

প্রতিবিম্ব

ছেলেটি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল। আর তখনই শোনা গেল এক বিরাট বিস্ফোরণের শব্দ। ছেলেটির চোখের সামনে গোটা শপিং মলটা উড়ে গেল। প্রচণ্ড শব্দের পর এখন সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। লোকজন। পাগলের মতো দৌড়াদৌড়ি করছে। ধোঁয়ায় ভরে গেছে চারপাশ।

পাহাড়বাড়ির রহস্য

১
বাগডোগরায় পৌঁছেছিলাম বিকেল পাঁচটা নাগাদ।
ইচ্ছে করলে শিলিগুড়িতে থাকাই যেত কিন্তু পাহাড়ের অমোঘ আকর্ষণে বিকেল বিকেলই রওনা দিয়ে দিলাম।
সেবক রেলগেট, তিস্তা বাজারের জ্যাম পেরিয়ে যখন কালিম্পং পৌঁছলাম তখন রাত ন’টা বেজে গেছে। পাহাড়ের রাতের মধ্যে একটা অদ্ভুত স্তব্ধতা আছে।

হারাম

বড়ো প্রার্থিত ঘন এক ব্যক্তিগততম ফিসফিস হয়ে বেরিয়ে এল, “আল্লাহ”। এইসব ইটপাথালি অবশ্য পাঁচ ছ’শ বছর ধরে হরেক ফিকিরের ফিসিফিস শুনে আসছে। তাই আলাদা করে তারা কান দিল না। নিজেদের ঝুরঝুরে হয়ে যাওয়া ফাঁকগুলোকে খানিক জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে দিয়ে সেই ফিসিফিসকে নিজেদের ভিতর নিয়ে নিল।

পরলোকে রবীন্দ্রনাথ

অধুনা পরলোকে আজকাল ইন্দ্রলোক বা বিষ্ণুলোকের প্রতি মোহ নেই। বরং মৃত্যুর পূর্বে যাঁরা রবীন্দ্রানুরাগী ছিলেন, মৃত্যুর পরে ভিড় বাড়াচ্ছেন রবীন্দ্রলোকে। পৃথিবীর সব রবীন্দ্রানুরাগী এক জায়গায় সমবেত হতে পেরে ধন্য-ধন্য করছেন।