চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান
মেঝেতে থালা নিয়ে ভাতের পাহাড়ের আড়ালে বসলেন ফয়জুল রহমান।
নিজেকে আজকাল একটা ঘোটকীর মতো লাগে রোশন আরার। খাদের কিনার ঘেঁষে ঘাস খেতে খেতে পাহাড়ের চূড়া ছুঁতে চাওয়া ঘোটকী। পিঠে তার আট হাতপাওয়ালা রশিদা বেগম, করিমন বিবি আর করিমন বিবির তেত্রিশ হপ্তা বয়সী পেট। জমানো সব সঞ্চয় শেষ হয়ে আসছে তার। একইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করিমন বিবির জঠর। ওই পেটের দিকে তাকালেই দম বন্ধ হয়ে আসে রোশন আরার।
করিমন বিবির মরাকান্না দু-ঘণ্টার বিবর্তনের পর একঘেয়ে নাকিসুরে ঘ্যানঘ্যানে কান্নায় পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকের স্পষ্ট প্রলাপ এখন বিকৃত হয়ে গোঙানি। খেই হারানো কান্না দলা পাকিয়ে আছে বাইরের ঘরটায়। করিমন বিবির নাক, চোখ, গাল ফুলে গিয়ে গোল আর লাল হয়ে চকচক করছে। পেট ফোলা করিমন বিবিকে এখন তুলোভরা স্ফীত ভাল্লুকের মতো দেখাচ্ছে। পার্থক্য শুধু,— ওই গালে পিন ফুটালে চামড়া ফুঁড়ে ভক করে তুলোর পরিবর্তে তার সমস্ত শোক বেরিয়ে পড়বে।
একতলা হাতি আর ইঁদুরের
আজ খুশির ঈদ। মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ! আজ রশিদা বেগমের শোকের দিন। আজ রশিদা বেগমের বড়ো ছেলে, বড়ো মেয়ে ছোটো মেয়ের বাপ,— ফয়জুল রহমানের অন্তর্ধান দিবস। যেন সহস্র বছর পূর্বে আজকের একফালি চাঁদের এই বিশেষ দিনটিতে খালি পায়ে সাইকেলে চড়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফয়জুল রহমান। চটি-জুতো পড়ে ছিল দুয়ারে। মানিব্যাগ, পকেটচিরুনি, হাতঘড়ি, রুমাল দেরাজে ঠায় বসে ছিল একে-অপরের পানে চেয়ে।
আমাদের কোনো শাখা নেই, কোনো শাখা নেই
বড়োমেয়ে ফিরেছে আধা ঘণ্টা হল। দোরে দোরে আলো জ্বলে উঠেছে। জাহান আরা বড়ো মেয়ের সামনে মুড়ির বাটি রেখে বেরোতে গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ে। বড়ো মেয়ে জানে এই থমকে যাওয়ার মানে।
‘কত টাকা লাগবে?’ বলে মুখে মুড়ি ভরে রোশন আরা তাকিয়ে থাকে জাহান আরার দিকে।
ছোটোমেয়ে মনে মনে হিসেব করে বলে, ‘আড়াইশ,’