Categories
প্রবন্ধ

গৌতম মিত্রের প্রবন্ধ

জীবনানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ: দ্বৈরথ

রবীন্দ্রনাথের কাছে জীবনানন্দ দাশ ‘ভিড়ের ভিতর হারিয়ে’ যাওয়া মানুষই হয়তো থেকে গেলেন চিরকাল।
সমসাময়িক আর কোনো কবির ভাগ্যে এতটা অবজ্ঞা জোটেনি। শুধু চিঠির কথাই যদি ধরি, রবীন্দ্রনাথ অমিয় চক্রবর্তীকে চিঠি লিখেছেন ১৩৭, সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে ৩৮, বুদ্ধদেব বসুকে ৩৬, বিষ্ণু দে ও সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে ৮টি করে। অথচ জীবনানন্দ দাশের কপালে জুটেছে মাত্র ২টি চিঠি, তা-ও যতটুকু না লিখলে ভদ্রতা বজায় রাখা যায় না।

Categories
প্রবন্ধ

শতানীক রায়ের প্রবন্ধ

সমর সেন: bird of passage

অনেক বছর ঘুমিয়ে থাকলাম আর নয়। যে-কাজটা করতে চেয়েছিলাম সমর সেনকে কেন্দ্র করে তা মূল থেকে অনেকটা দূরে সরে গেছে। মাছি মিষ্টির ওপর থেকে অনেকক্ষণ ভন ভন করার পর দূরে বহু দূরে সরে যায় যেমন। তারপর লিখব এই তাগিদ বোধ করলেও নানাভাবে আমার নিজের ব্যক্তিবিভ্রান্তি জুড়ে অগোছালো ভাবনাগুলো এসে বসেছে। বরং বলব এরকম নির্নিমেষ দূরে থাকার ভেতর ফিরে আসার এক অনাবিল আনন্দ আছে।

Categories
প্রবন্ধ

ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ

উনিশ শতকের কলকাতার বারাঙ্গনা কন্যারা ও তাদের আলোয় ফেরার কিছু কথা

নগরসভ্যতা আর পতিতাবৃত্তি প্রায় সমবয়সি। মধ্যযুগে নগরসভ্যতার অন্যতম ভূষণ ছিল বারাঙ্গনা পল্লি। বারাঙ্গনা সংসর্গ ছিল মধ্যযুগীয় পৌরুষ ও আভিজাত্যের প্রতীক। সে-সব অন্য প্রসঙ্গ। আমি বুঝতে চাইছি আঠেরো/ উনিশ শতকের কলকাতার বারাঙ্গনা সমস্যার উদ্ভব ও তাদের আলোয় ফেরার কথা।
আধুনিক শহরের সমস্ত কদর্যতাকে সঙ্গে নিয়ে নগর কলকাতার ক্রমবিকাশ হয়েছিল আর এদেশে বারাঙ্গনা বৃত্তির উদ্ভব বৃটিশ শাসনের হাত ধরেই। কলকাতার নগরায়ন শুরু হয় পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে। সংবাদপত্র দূরের কথা ছাপার যন্ত্রের কথাও তখন কল্পনায় ছিল না। শৈশবের কলকাতায় লোকসংখ্যাই বা কত! ১৭১০ সালে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি যে তিনটি গণ্ডগ্রাম নিয়ে কলকাতা নগরীর পত্তন হয়েছিল সাকুল্যে তার লোকসংখ্যা ছিল দশ হাজার।

Categories
প্রবন্ধ

মলয় রায়চৌধুরীর প্রবন্ধ

মাতৃত্বের সংজ্ঞায় কুয়াশা

মুম্বাইয়ে প্রতিদিনই সংবাদপত্রে পড়ি, একটি নবজাতককে সমুদ্রের ধারে বা ট্রেনলাইনের পাশে বা বাইপাসের ভেতরে, যে জায়গাগুলো রাতের বেলায় অন্ধকার, কাপড়ে মোড়া পাওয়া গেছে।
এক বা দুই দিনের সেই শিশু ছেলেও হতে পারে বা মেয়েও হতে পারে।
চিনের মতন বা বহু খ্রিস্টধর্মী দেশের গির্জার মতন, আমাদের দেশে অবাঞ্ছিত, অপ্রার্থিত, অনাবশ্যক সন্তানকে লুকিয়ে রেখে যাবার বন্দোবস্ত নেই, যে সন্তানটিকে রাষ্ট্র বা গীর্জা পালন করার দায়িত্ব নেবে।

Categories
প্রবন্ধ

শতানীক রায়ের প্রবন্ধ

সেই আমি-র মৃত্যু

মৃত্যু হল সেই চরম শূন্যতা যা আমাদের চেতনার ওপরের অন্য স্রোত। সেখানে অসম্ভব এক দোলন, দেহের চারপাশে বহমান সে-শূন্য কেবলই অজানা থেকে যায়। মঙ্গল চিহ্নে যাকে বাঁধা যায় না, আবার অমঙ্গল বলেও তাকে দাগিয়ে দেওয়া স্পর্ধার হয়ে ওঠে। আমার দেহ আছে সে আমার বোধের আয়তনের মধ্যে পড়ছে তবে যবে আমি থাকব না তখন!! আমার দেহের বিনষ্টকরণের পর আমি কী করে জানব আমি নেই ? আমি যে দেহে মনে সংযুক্ত ছিলাম পৃথিবীতে, সমাজে, মহাবিশ্বে, ব্রহ্মাণ্ডে আর দেহের ক্ষয় হওয়ার পর সমস্ত বোধ দেহহীন হওয়ার পর আমি কি আদতেও জানব যে আমি আর নেই?

Categories
প্রবন্ধ

ফাল্গুনী ঘোষের প্রবন্ধ

বারোমাসে তেরো পার্বণ

বাঙালির নাকি বারো মাসে তের পাবণ। ভাগ্যিস! এই উৎসবের সুবাদেই তো একঘেঁয়েমির অসুর দমন সম্ভব হয়ে ওঠে।

Categories
প্রবন্ধ

সুকান্ত ঘোষের প্রবন্ধ

শিশিরকুমার দাশ: জ্ঞানচর্চার আলোকে (প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য)

  1. একটা অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করব। সময়টা ২০০৮, সাল ট্রেনে করে দিল্লি থেকে বাড়ি ফিরছি। ট্রেনে এক ভদ্রলোক আমায় জিজ্ঞেস করলেন, দিল্লিতে আমি কী করি? তখন আমি এম.এ পড়ছিলাম। আমিও সদুত্তর দিলাম— আধুনিক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে বাংলায় এম.এ করছি। তিনি বলেছিলেন— যে বিভাগে শিশিরকুমার দাশ পড়িয়েছেন তার মান তো অপরিসীম। আমি একটু দ্বিধানি্বতভাবে উত্তর দিয়েছিলাম— হ্যাঁ। কারণ তখন তাঁর কর্মজগৎ ও জ্ঞানজগতের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় ছিল না। এখনো যে খুব একটা পরিচিতি হয়েছে এমন দাবী করছি না। কিন্তু যে সামান্য পরিচয় পেয়েছি তাতে খানিকটা আন্দাজ করতে পারি, নয় বছর আগে সেই ভদ্রলোকের কথার তাৎপর্যখানি।