Categories
উপন্যাস ধারাবাহিক

শতদল মিত্র

মস্তানের বউ


রূপা সকালে আগে দেওয়াল থেকে তার কৃষ্ণের ফোটোটা নামায়। পেছনে জমা ঝুলকালি পরিষ্কার করে। পরম মমতায় নিজের আঁচল দিয়ে আস্তে আস্তে ছবির ওপর জমা তেলকালির ধূসরতা মুছে দিতে থাকে সে। যেন তার কৃষ্ণের পরশ পায় সে-আদরে। হ্যাঁ, আদরই দেয় রূপা কৃষ্ণকে, তার রাজাকে কত-কত দিন পর। চোখ ভিজে ওঠে তার। ফোটোটা যথাস্থানে ঝুলিয়ে একটা গোড়ের মালা পরিয়ে দেয় ছবিতে। তার ঝাপসা চোখে গোড়ের মালা অতীত আঁকে।

উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়েই যেন! এক সন্ধ্যেবেলা কৃষ্ণ হাজির তাদের বাড়ি।

— কাল সকালে রেডি থাকবে। সকাল দশটা। এই নাও।

একটা সুদৃশ্য, কলকাতার বড়ো দোকানের ব্যাগ তার হাতে ধরিয়ে দেয় কৃষ্ণ।

— শাড়ি আছে। গয়নাও। কাল সকালে রেডি থাকবে। কাল বিয়ে করব আমরা। কালিঘাটে।

রূপা কী বলবে? সে নির্বাক প্রস্তরমূর্তি যেন বা। শুধু বুকের ভেতরটা তিরতির কেঁপে জানান দিচ্ছিল যে, সে বেঁচে আছে, মরেনি। যদিও ভয়, ভালোবাসা, জয়— জীবনের তীব্রতম আকুতিতে সে মরেই যেতে চেয়েছিল সে-সাঁঝে!

ফ্যালফ্যাল দৃষ্টির নিথর বাবার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে বলেছিল কৃষ্ণ— এটা রাখুন। সামান্য টাকা। বড়োমেয়ের বিয়ের ঠিক করুন। সব দায় আমার।

কাটা-কাটা স্বরে উচ্চারণ ভাসিয়ে কৃষ্ণ পিছন ফিরেছিল। এমনই কাটা-কাটা কথাতে অভ্যস্ত ছিল সে। যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই বলাই তার অভ্যাস। ঘরের চৌকাঠে পা দিয়ে চকিতে মুখ ঘুরিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছিল সে কথা ক-টাও—রামুকে দু-দিন পর দেখা করতে বলবেন আমার সঙ্গে। আমার ঠেকে। সকাল আটটায়। সাবান কলে লোক নেবে।

বেরিয়ে যায় কৃষ্ণ আঁধার ঠেলে বস্তির কয়েক জোড়া অদৃশ্য চোখকে পাত্তা না দিয়েই। রাত চিরে বাইক গর্জে উঠেছে ততক্ষণে।

পরের দিন সকালে সাদা প্যান্টের ওপর ঘি-রঙা সিল্কের পাঞ্জাবিতে আর গোড়ের মালায় কী অপূর্বই দেখতে লেগেছিল তার কৃষ্ণকে— যেন স্বয়ং কেষ্ট ঠাকুরটিই!

কালিঘাট মন্দির থেকে ওরা সদলবলে পার্ক স্ট্রিটে বড়ো হোটেলে গিয়েছিল। রূপার জীবনে প্রথম অত বড়ো হোটেলে খাওয়া। মুগ্ধ দৃষ্টিতে বার বার আড়চোখে দেখেছিল সে তার রাখাল রাজাকে। আনন্দে-আহ্লাদে!

গোড়ের মালায় আর সকালের নবীন রোদে কৃষ্ণের ফোটোটা ঝলমল করে ওঠে। যেন হাসে রূপার দিকে তাকিয়ে। এমনিতে গম্ভীর, চোখজোড়া সদা চঞ্চল, যা আভাস দেয় তার মন কোথাও স্থির না, ডাঙা পাচ্ছে না এমনই ভাসমান— সে গম্ভীর কৃষ্ণ হাসত খুবই কম। তবু রূপার মনে হত একমাত্র তার কাছে এলে যেন দাপুটে লোকটা কোথাও ডাঙা পেত, যা ভরসা, আশ্রয়ই হয়তো। তার মুখে হাসির সজল মায়া জাগৎ রূপার সান্নিধ্যেই যেন। তেমনি তো হেসেছিল সেদিন। যেদিন কৃষ্ণ প্রথম মায়া এঁকেছিল তার মনে, তার পরের দিন কলেজে ফি দিতে গিয়ে দেখে তার সারা বছরের ফি মেটানো হয়ে গেছে। তবে কি সে, সে-ই! সদ্য ফোটা রূপার মনে দোলা ছিল! লজ্জায় মাথা তুলতে পারে নি কলেজের অফিস কাউন্টারে। ক্লার্ক নৃপতিবাবু কি হেসেছিল!

কলেজ ছুটির পরে ফেরার পথে লজ্জায় মুখ নামিয়েই রূপশ্রী হল পার হচ্ছিল সে। কেন-না এই হলের আশেপাশেই তো ওদের আড্ডা। তখন বিকেল মায়া সাজাচ্ছে আকাশে। সে-মায়ায় এক কালো ছায়া ঢেকে নেয় তাকে— কেমন চমক দিলাম!

হে ধরণী দ্বিধা হও— এমনই যেন রূপার ভঙ্গিমা তখন। তবু অপাঙ্গে তার ঝিলিক হেনেছিল এক নিরুচ্চার হাসির উদ্ভাস। সে-উদ্ভাসই যেন আজ এই সকালে ঝিলিক হানে পৌঢ়া রূপার চোখে। ঝাপসা চোখে সহসা সকাল মুছে সাঁঝমায়া! রূপশ্রী হল আলো ঝলমল সুর বোনে— দশ কা বিশ! দশ কা বিশ! হারু হিমসিম খায় খদ্দের সামলাতে!

রূপার সজল চোখে ছায়া ফেলে সে-জলরঙা ছবির মায়ালু পেলবতাও। কৃষ্ণ কথা রেখেছিল। তার দিদির বিয়ের সব খরচ কৃষ্ণই দিয়েছিল। রামু সাবান কলে আজও চাকরি করে। ভালই মাইনে পায়। শুধু তাই-ই নয়, তার পরের বোনের বিয়ে, ছোটোভাইয়ের ল্যাম্প ফ্যাক্টরিতে চাকরি— সব দায়িত্ব যেন কৃষ্ণেরই। অথচ…। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে পৌঢা রূপা।! আঁচল দিয়ে চোখ মোছে। ফলে সকল সজলতা মুছে আলো ঝলমল সে-সন্ধ্যা হারিয়ে যায়। সকালের নবীন সে-রোদ তখন খর। দোকান সাজায় রূপা খদ্দেরর আশায়।

দু-একজন করে খদ্দের আসে। চা চায় তারা, খায়। গুলতানি মারে। বৃদ্ধ কিছু মানুষের আড্ডাখানাও যেন তার এই দোকান। রিটায়ার্ড, ঘরে সময় কাটে না। দোকানে আসে, ঘণ্টাখানেক গল্পগুজব করে। বাঘ মারে, হাতি মারে— বাতের গল্প আর নিজেদের বাতিল জীবনকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার গল্প। বার দুয়েক চায়ের অর্ডার দেয়। রূপা কিছু বলে না। রূপশ্রী হল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তেমন খদ্দের হয় না আর। বাজার এলাকা তো নয়! ওই স্থানীয় লোকজন, পাশের পার্টি অফিসের লোকজন আর পথ চলতি দু-একজন— এই তো তার খদ্দের! বুড়ো লোকগুলো এলে ফাঁকটা অনেকটাই ভরে ওঠে। ভালো লাগে রূপার। ভালো লাগে যখন এমনই কথা ভেসে ওঠে ওদের চায়ের তৃপ্ত চুমুকে মিশে। কাটা। কাটা।

— মানুষ ছিল একটাই সে-সময়! আর নাই।

— হ্যাঁ, রাজা মানুষ। যে কোনো সমস্যায় তার দরবারে একবার হাজির হলেই হল।

ফলে গল্প গজায়, পল্লবিত হয়, মিথের মাহাত্ম্য ডানা মেলে।

— ওই তো সেবার! হালদার পাড়ার পাঁচু রিকশাঅলা, মেয়ের বিয়ের জন্য ধরলে— এমন বিয়ে হল যে তেমন তেমন বড়োলোকও হার মেনে যায়!

— আর দীনু মিস্ত্রির বাগানের ওই অনন্ত গো! জাহাজ কলে কাজ করতে করতে মরে গেল যে। তার বিধবা কৃষ্ণকে ধরতেই এক মাসের মধ্যে চাকরি পাকা তার ছেলের।

— ফতেপুরের শিবু ছেলেটা! ইঞ্জিনিয়ারিং-এ চান্স পেল। ভর্তির টাকা দিল তো কৃষ্ণই!

এমনতর গল্পের মাহাত্ম্য দোকানের চিলতে ঘরে মাথার ওপর পাক খায়, খেয়েই যায় ঘুর্ণিয়মান পাখার সঙ্গে! আর সে মাহাত্ম্যে হঠাত্‍ একফালি উড়ো সাদা মেঘ সূর্যকে ঢাকে যেন। সে-সকাল মলিন হয় সহসা। সে-ছায়ায় কথারা গলা নামায়। যেন কৃষ্ণের বিধবা না শোনে। দুঃখ না পায়!

— ও তো মস্তানি করতো ডকে, কারখানার চৌহুদ্দিতে। ওটা ছিল তার রাজপাট।

— পাড়ায় কিন্তু সে কোনোদিন কিছু করেনি। তার জন্য পাড়ায় আমরা শান্তিতেই ছিলাম সে সময়। ফোস করে সমবেত নিঃশ্বাস পড়ে যেন। সে-নিঃশ্বাসের অভিঘাতেই যেন মেঘ ভেসে যায়, সূর্য স্বমহিম হয়।

আর ঠিক সে সময়েই কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ছায়া বিলিয়ে সূর্য ঢোকে। সূর্য মিত্র। নকশাল ছিল নাকি সে! আলজাইমার রুগি। হাত-দুটো সবসময় কাঁপে। তবুও ডান হাতটা তার সর্বদা পকেটে গোঁজা থাকে। বোমা ফেটে ডানহাতের তালুটা নাকি তার নেই। যদিও সে তালুহীন হাত কেউ কোনোদিন দেখেনি। না দেখলেও ওটা সত্যই।

অন্যেরা শশব্যস্ত হয়ে সরে বসে বেঞ্চে জায়গা করে দেয় তাকে। সমীহ করে সবাই তাকে। নাকি মায়া! যেমন রূপার মায়াই হয় জীর্ণ লোকটাকে দেখে! ব্যর্থ বিপ্লব! ব্যর্থ মানুষ। শুধু সমাজ পালটানোর স্বপ্নে যৌবনটাকে পচিয়ে দিয়েছে জেলে! রূপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তার কৃষ্ণও তো তাই! না, বিপ্লব সে করেনি। কিন্তু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল সেও তো! যদিও ক্ষমতার রাজনীতি, তবুও যথাসাধ্য গরিবকে সাহায্য তো কৃষ্ণও করত! তবুও কৃষ্ণ খুনি, গুন্ডা, মস্তান! যদিও এলাকার লোকের চোখে কৃষ্ণ কোনোদিন বিকৃত হয়ে কেষ্টা হয়নি। লোকের মুখে কৃষ্ণদা সম্বোধনে সমীহই ছিল। তবুও…।

রূপা জানে সূর্য মানুষটা চিনি ছাড়া লিকার চা খায়। ও চা এগিয়ে দেয় সূর্যের দিকে। টেবিলে নামিয়ে রাখে। সঙ্গে প্লেটে দুটো ক্রিমক্র্যাকার বিস্কুটও।

মাথার ওপর পুরোনো পাখাটা নিশ্চুপ কথার জাল বোনে। সে নিঃশব্দতাকে বাড়িয়ে সূর্য ম্লান হাসি হাসে মুখ তুলে। ফলে নৈঃশব্দ্য জমাট বাঁধে আরও।

অগত্যা রূপই এগিয়ে আসে সে জেকে বসা নৈঃশব্দ্য তাকে ভাঙতে অন্য দিনের মতোই।

— সূর্যদা শরীর এখন ভাল তো?

— ওই চলে যাচ্ছে বোন। কাঁপা কাঁপা গলা এ-উচ্চারণও বোনে,— তোমরা সব ভাল তো!

— হ্যাঁ, দাদা চলে যাচ্ছে, চালাতে তো হয়ই!

কথা পড়তে পায় না আর। একজন লুফে নেয় কথাখানা।

— এই-ই হল আসল কথা! দিন চলে যায়, চালাতে হয়।

ফলে কথার টানে কথা বাড়ে।— সত্যি কী দিন ছিল বলো তো তখন?

— এই যে সূর্য বিপ্লব করেছিল ধান্দার জন্য? না, সমাজের ভালোর জন্যই তো!

— আমাদের কৃষ্ণর কথাই ধরো না কেন? গরিবের কত উপকার করেছে ও।

— আর এখন? রাজনীতি মানে ধান্দা, নিজের আখের গোছানো শুধু! গাড়ি-বাড়ি-ব্যাঙ্ক ব্যালান্স-প্রমোটিং! ছিঃ ছিঃ! সমাজটা উচ্ছন্নে গেল একেবারে।

কথারা এমনই জাগে ঘরময়। পাখার হাওয়ায় লাট খায়। রূপার কানে গুঞ্জন তোলে। কিন্তু কিছুই সে শোনে না। তার মন অন্য ভাবনা বোনে। কী পেল ওরা? কৃষ্ণ-সূর্য! কৃষ্ণ তো নেই-ই আর। সূর্য থেকেও নেই। জেল ফেরত লোকটা রাজনীতির রা আর কাড়ে নি। সব স্বপ্নকে হারিয়ে মৃত মানুষই যেন সে। জেল তার সকল জীবনীশক্তিকে নিংড়ে ছিবড়ে করে দিয়েছিল। অথচ সে আগুনে সময়ে সূর্য যেন জ্বলন্ত সূর্যই, মধ্যাহ্নের। তার বিভায় মেয়েরা পাগল ছিল। তার পরে সূর্যগ্রহণ কালে সে আলো জেলের অন্ধকারে হারিয়ে গেলে, মুছে গিয়েছিল সকল জীবন্ত গান। শুধু জেগেছিল মনীষা। প্রতীক্ষায় ছিল তার সূর্যের গ্রহণমুক্তির। গ্রহণ কেটে গেলে সে সূর্যকে বরণ করে নিয়েছিল। অতদিন পরও। ততদিনে মনীষা সরকারি চাকুরে। এলাকার পাঁচজনে ধন্য ধন্য করেছিল এ প্রেমের শুভ পরিণতিতে। তারপরেও কিন্তু থেকেছিল। মনীষা জ্বলন্ত সূর্যকেই ভালবেসেছিল বোধহয়! গ্রহণলাগা এ সূর্য হয়তো আকাঙ্ক্ষিত ছিল না তার! ফলে প্রেম উবে গিয়েছিল কবছরেই, শুধু দাম্পত্যের অভ্যাসটুকুই টিকেছিল— করুণায়, দয়ায়। যা টিঁকে আছে আজও পরগাছার মতো। মনীষা তো জেনেবুঝে ভালবেসেই গ্রহণ করেছিল লোকটাকে। সরকারি চাকরি। যা মাইনে পায় তাতে তো স্বচ্ছলতা উপচে পড়ার কথা সংসারে। যেমন পুরুষ মানুষরা একার আয়েই তো স্বচ্ছল! তবে কি বিদুষী, বিপ্লবী মনীষার মনেও পুরুষতান্ত্রিকতার থাবা! রূপা ভাবে। মনীষা কি অন্য কিছু আশা করেছিল মানুষটার কাছে! বড়ো নেতা হবে? মন্ত্রী হবে? কে জানে? ভাবনারা পাক খায় দোকানের আলো আঁধারিতে, টাল খায় পাখার একঘেয়ে ঘুরে চলায়।

রূপাও কি কিছু চেয়েছিল তার কৃষ্ণের কাছে? নিভন্ত মন কোনো সংকেত আঁকে না। সামান্য নারী সে শুধু চেয়েছিল তার মানুষটা ঠাকুর-ঠাকুর করে বেঁচে থাকে যেন। কিন্তু…! দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রূপা গোপনে। পাখার হাওয়া ভারী হয়ে ওঠে। পরগাছা জীবন, তবুও সূর্য মানুষটা তো বেঁচে আছে! মনীষার হয়ে রূপা মনে মনে আদর দেয় জীর্ণ মানুষটাকে! দেওয়ালে ঝোলানো মানুষটা হাসে যেন— তেমনই মনে হয় রূপার!

ভাবে আর টুকটাক খদ্দের সামলায় রূপা। বেশিরভাগ জনই বাইরে দাঁড়িয়ে চা খায়। চা ফুটে উঠতে থাকে আগুনে। উথলায়। রূপা অভ্যস্ত হাতে হাতা দিয়ে উথলে ওঠা ডেকচির চাকে থিতু করে। কিন্তু তার মন! উথলে ওঠে, উথলে উঠতেই থাকে। খদ্দেরের আনাগোনা ছায়া আঁকে দোকানের আবছায়া পরিসরে। কথারা জেগে ওঠে, ভাসে। অভ্যাস্ত হাত তার মনহীন যন্ত্রের মসৃণতায় যেন খদ্দের সামলায়। মন তার ভেসে চলে যায় সেই সত্তরে! মনে মনে হাসে রূপা! রোগা-প্যাংলা লোকটা, দোখনের কোনো এক গ্রামে, কাঁধে রাইফেল মাঠের আল ভেঙে রাত চিরে হাঁটছে! দৃশ্যটা মনে হতেই মনের হাসি অজান্তেই রূপার ঠোঁটে আশ্রয় পায়। সচেতন রূপা সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলে তা। খুবই সরল সাধসিধে সূর্যদা! এই লোকটা বিপ্লবী! মানুষ খুন করেছে? করতে পারে অমন নরম লোকটা! অথচ রটনা তো তেমনই!

যেমন রটনা এও যে কৃষ্ণ নাকি খুনি! খুন করে কত লাশ নাকি শান্তিনগরের হোগলাবনে, ব্রূকলিন, সিকলেনের ঝিলে গুম করে দিয়েছে! ওরা নাকি সব ছিল তার বিরোধি দলের গুণ্ডা! কৃষ্ণের বিরোধি, নাকি পার্টির বিরোধি! দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রূপা। মাথার ওপর পুরোনো পাখাটা একঘেয়ে একটানা ঘুরেই চলে গরম হাওয়ার ঘূর্ণি তুলে। ঘূর্ণি ওঠে রূপার মনেও। কিন্তু কে খুন হল, কার লাশ গায়েব হল কেউ জানে না তা! পুলিশও কোনো রা কাড়েনি। তবুও রটনা— কৃষ্ণ খুনি! পার্টির প্রশ্রয়ে খুন হওয়া মানুষগুলো সমাজ-সংসার থেকে মুছে যায়। পুলিশের ডায়েরি থেকে যায় সফেদ-সাদা!

রূপার ভাবনা টাল খায়, কেন-না টলতে টলতে সূর্য কাঁপা হাতে পকেট থেকে টাকা বার করে কাউন্টারে রাখে। তারপর দোকানের আলো-আঁধারিকে দুলিয়ে দোকান ছেড়ে বেরিয়ে যায় বিপ্লবী সূর্য। রূপা তাকিয়ে থাকে টলায়মান সে-অতীতের ছায়ার দিকে। তাকিয়েই থাকে, কিন্তু চোখ তার ছবি আঁকে না, সেখানে তখন অন্য আলো-আঁধারির ছায়া— খুনি সূর্য বিপ্লবী! আর তার কৃষ্ণ গুণ্ডা! মস্তান! খুনি!

রূপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে আবারও। রাস্তায় গরম হাওয়া বয়। সে-হাওয়ায় প্লাস্টিকের বাতিল এক প্যাকেট উড়তে উড়তে ঠেক খায় রূপার দোকানের চৌকাঠে।

প্রথম পর্ব

Categories
উপন্যাস ধারাবাহিক

শতদল মিত্র

মস্তানের বউ


ধুতি-পাঞ্জাবির শক্ত কাঠামোটা মাথা হেলাল, যেন আনমনেই। সেই ছন্দেই অভ্যাসবশে পায়ের ভারী বুটজুতোজোড়া তাল ঠুকল। ঠকাস! একইসঙ্গে কালো একটা পুলিশ ভ্যান গড়গড় আওয়াজ তুলল সহসা। সেই সঙ্গেই ব্যাং-ব্যাং-ব্যাং— নিঃশব্দে আগুন ঝলসে উঠল রয়্যাল টকির ফাঁকা গেটে। রক্ত মেখে চারটে লাশ গড়িয়ে পড়ল সে-টকির গেটে! ফলে খাস সাহেব কলকাতার সে-এলাকায় হঠাত্‍ই সন্ধ্যের আঁধার জমাট হল। কিছু লোক দৌড়ে গেল। আশেপাশের ছাদের টিভি-অ্যান্টেনায় বসে থাকা কিছু কাক ঝিমুনি ভেঙে উড়াল দিল দিগ্বিদিক—আকাশে পাক মারতেই থাকল। সন্ধ্যের এই আঁধারসাজে তিনটে লোক টকির গেট ছাড়িয়ে পুলিশ ভ্যানের আড়ালে হঠাত্‍ই উবে গেল। পুলিশ ভ্যানের কালো অন্ধকারই হয়তো তাদের মুছে দিল। কেন-না সে-ক্ষণেই ভ্যানটি গড়াতে শুরু করেছিল।

রাস্তার চলন্ত মারুতি গাড়িটা হঠাত্‍ই হর্ন দেওয়ায়, আচমকাই— গাড়ির হেডলাইট আছড়ে পড়ল যেন দোকানে টাঙানো ফোটোটার ওপর। ছবির লোকটাকে ঝলকে আলোকিত করে, পরক্ষণেই আঁধার এঁকে গাড়িটা ছুটে চলে গেল তার গন্তব্যে। ফলে ফাঁকা নিস্তব্ধ দোকানে সন্ধ্যের আঁধার জমাট হল সহসা। উলটো দিকে কাউন্টারে বসা মানুষটা সে-অভিঘাতে সামনে টাঙানো ফোটোটার ওপর চোখ মেলে। পরক্ষণেই গাড়ির ছুটন্ত আলোর মুছে যাওয়া তাকে চোখ ফেরাতে বাধ্য করে রাস্তায়। ততক্ষণে বাস-রিকশা-মানুষের জটলায় সে-গাড়ি হারিয়েই যায় প্রায়। তবুও চেনা গাড়ি তাই, মানুষটা বাধ্য হয় গাড়িটাকে চিনে নিতে— দীনদার গাড়ি না!

এই চকিতে চিনে নেওয়া দোকানের অন্ধকারকে আরও ঘন করে যেন। মানুষটা চেয়ার ঠেলে উঠে কাউন্টার ছেড়ে উলটো দিকে ধায়। শাড়ির খুঁট দিয়ে ফোটোটার ঝুলকালি মোছে পরম মমতায়। অভিমান চোখে নুন ছড়ায়। জলহীন কান্নায় বোবা উচ্চারণ ফোটে— কাল একটা মালা কিনতে হবে সকালে! ফলে অন্ধকার জমাট হয় আরও। আবার হয়ও না। কেন-না তক্ষুনি আঁধার ঠেলে দু-জন খদ্দের ঢোকে দোকানে। বেঞ্চিতে বসে।

— বউদি দুটো চা হবে!

— একটু বসুন, দিচ্ছি। বিস্কুট, কেক কিছু লাগবে?

— হ্যাঁ, দুটো বিস্কুটও দিন।

রূপা, দোকানের মালকিন, গ্যাস জ্বালায়। সে-ইন্ধনে সহসা চারদিকে আলো ফুটে ওঠে যেন। দোকান লোকে লোকারণ্য। চা, ঘুগনি, ভেজিটেবল-এগ চপ, টোস্ট— টেবিলে টেবিলে হারু দিয়ে উঠতে পারে না, হিমশিম খায়।

চাপা গলায় আওয়াজ ওঠে— দশকা বিশ! দশকা বিশ! ব্ল্যাকার নিমু হিসহিসিয়ে ওঠে। নব্বই পয়সার লাইনে মারামারি প্রায়। ম্যাটনি শো ভেঙে ইভনিং শো শুরু হল বলে! অমিতাভ বচ্চনের মারকাটারি সুপারহিট হিন্দি বই! মায়াময় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রূপার মুখ। সে-মায়ায় পাশের রূপশ্রী হলের জীর্ণ কঙ্কালটা জেগে ওঠে ঘুম ভেঙে। আলো মেখে সত্যিই রূপশ্রী যেন সে!

হ্যাঁ, রূপশ্রী সিনেমা হলের খাতায়-কলমে অন্য মালিক থাকলেও, বকলমায় আসল মালিক তো কৃষ্ণনাথই! দীননাথ তারই ছোটোভাই। রূপা তার দেওরকে দীনদা বলতেই অভ্যস্ত প্রথম থেকেই!


তখন সদ্য কলেজ। আঠারোর ফোটা কলি। হ্যাঁ, কৃষ্ণকলিই! যেহেতু ছিপছিপে রূপা কালোর দিকেই ঢলে ছিল। আদর করে যাকে শ্যামবর্ণ বলে। সত্যিই কি রূপা আদরের ছিল কারও তখন! সামান্য ডিমঅলা বাবার পাঁচ ভাইবোনের দ্বিতীয় সে! বস্তির গরিব ঘরে দিন আনতে পান্তা ফুরানো জীবনে আদর থাকে না, থাকতে নেই! তবুও তো কনেদেখা আলোয় সাজে আকাশ কোনো কোনো দিন। সাজায় চরাচরময় প্রকৃতিকে, যা আলো আঁকে মানুষের মনে। মন যেহেতু মানুষেরই নিজস্ব ধন— মানুষ অজান্তে রেঙে ওঠে সে-আলোয়। রাঙা মন নবীন হয় যদি, তবে লজ্জাও পায়। যেমন সে-বিকেলে কনেদেখা আলোয় রূপার নবীন মনখানি ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে নীরবে লাজরাঙাই যেন। মুদিয়ালি হরিসভা পেরিয়ে, মুখার্জিদের বাড়ি ছাড়িয়ে, বাঁশঝোপের নির্জনতা যখন ফতেপুর সেকেন্ড লেনে—কোথায় যেন চ্যাংড়া সিটি বেজে উঠেছিল— টি-ই-উই! একবারই। কেন-না দ্বিতীয়বার বেজে ওঠার মুখে সে-ধ্বনি রক্তাক্ত। মুখ না তুলেই রূপা বুঝেছিল কেউ যেন গলির আধা অন্ধকারে প্রাণপণে হারিয়ে গেল। রূপার তৃতীয় নয়ন, যা নারীরই, অনুভব করেছিল তার ওপর লম্বা ছায়ার মায়া। যে-মায়া বলেছিল— যাও, বাড়ি যাও নিশ্চিন্তে। আর কেউ কোনোদিন কিছু বলবে না তোমায়!

রূপার আড় নয়নে তখন ব্রজের সে-রাখালের ছায়া! হ্যাঁ, কৃষ্ণনাথই! রূপার বুক ছোট্ট চড়ুই পাখির মতো থরথরিয়ে কেঁপে উঠেছিল। সন্ধ্যার সে-ঈশ্বরীয় আলোয় ঢেউ তুলে রূপা হেঁটে গিয়েছিল ধীরে বাড়ির পানে। বাড়ির পানেই কি? নাকি রাখালরাজার বাঁশির টানে ব্রজের পানে— পবিত্র রজ উড়িয়ে। জানেনি রূপা সেদিন। হয়তো জেনেওছিল!

কিন্তু এ যে কুরুক্ষেত্রের কৃষ্ণ! ব্রজের কানাই সে তো নয়! রূপা বুঝেছিল তা দিন গড়ালে। এখন রূপা রাস্তা দিয়ে, গলি দিয়ে হাঁটে, দিনের আলোয়, সন্ধ্যের আবছায়ায়— যেন রাজেন্দ্রানি সে। সে অনুভব করে তা। নারীর তৃতীয় নয়নে সে বোঝে যে, কেউ যেন লুকিয়ে অনুসরণ করছে তাকে। প্রথম প্রথম ভয়ই পেত সে— কৃষ্ণ যে মস্তান! গুণ্ডা! যুদ্ধবাজ! রাজা সে! তাকে ভয় পাওয়া যায়, সমীহ করা যায়, ভালোবাসা যায় কি? একদিনের ভাবনা ছিল না তা, বহু দিনের পথ চলতি ভাবনারা জড়ো হয়ে এমন মুরতিই পরিগ্রহ করেছিল তার মনে। কখনো দিনের সমারোহে, কখনো সাঁঝের মায়ায়। আর সে-মায়ার সমারোহে কৃষ্ণের যোদ্ধাসাজ মুছে একদিন রূপার মনে পীত বসন উঁকি দিয়েছিল। সে সোনালিহলুদ এক বাদল সাঁঝে যেন ময়ূরপুচ্ছের ঝলমলানি পাখনা মেলেছিল। ময়ূরের মতো নেচে উঠেছিল রূপার মন! হঠাত্‍ই সাঁঝের সে-আবছা ছায়ায় মিশে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল সজলকৃষ্ণ একখণ্ড মেঘই যেন। কৃষ্ণ! ভয়ে-বিস্ময়ে ভিজে গিয়েছিল রূপা। দুরুদুরু চোখে তাকিয়ে ছিল কৃষ্ণপানে। না, না, কৃষ্ণ কেন? রাজা, রাখালরাজাই যেন। কেন-না সে সজলকৃষ্ণে নিবেদন ছিল। একটা প্যাকেট বাড়িয়ে বলেছিল সে-মায়া,

— আজ তোমার জন্মদিন। এটা নাও।

সে-নিবেদনে দূরবর্তী সন্ধ্যের ছায়ারা ঠাইনাড়া হয়েছিল যেন উল্লাসি-বিভঙ্গে। তারা যে কৃষ্ণের যাদব, বৃষ্ণীর দল! রূপা যদিও দেখেনি তা। কেন-না তখন তার চোখে ভালোবাসা-ভয়-বিস্ময় একত্রে সজল ছায়া এঁকেছিল। লোকটা জানল কী করে তার জন্মদিনের কথা? মনের কথা সে-অন্তর্যামী কৃষ্ণ পড়তে পেরেছিল। বলেছিল— কলেজে গিয়ে জেনেছি।

যদিও আসল জন্মদিবস আজ নয় তার। তখনকার নিয়ম মেনেই খাতায়কলমে তা সত্য শুধু। জন্মদিন সে পেরিয়ে এসেছে গত হেমন্তে। এমন কথা মনেই এঁকেছিল রূপা, প্রকাশ্যে কেবল এ-উচ্চারণটুকুই ফুটেছিল তার ঠোঁটে— এ আমি নিতে পারব না।

— কেন? জলদস্বর ঘন হয়েছিল শুধু।

— বাড়িতে কী বলব? তিরতির কেঁপেছিল রূপা।

— বলবে, কৃষ্ণ দিয়েছে।

— তবুও…। রূপার গলায় যেন বালির চরা, যদিও চোখে নদীর ফল্গুমায়া।

— তাহলে আমিই গিয়ে দিয়ে আসব বাড়িতে তোমার। সে-জলদ স্বরে অনুরণন ছিল যেন। রূপা আলগা হাত মেলে দিয়েছিল, যে-হাতে কৃষ্ণের বরাভয় আঁকা হয়েছিল সে-আলোক সাঁঝে।হ্যাঁ, আলোক সাঁঝই তা, কেন-না রূপার মনে প্রথম বর্ষার নূপুর ধ্বনি, কেকা রব। মেঘ চিরে বজ্রের ঝিলিক, যা সমীহ জাগিয়েছিল।

রূপা সে-উপহারটুকু বুকের কোণে লুকিয়ে হাঁটা দিয়েছিল মাথা নীচু করে নিশ্চুপে। শব্দহীন প্রতিটি পদক্ষেপে তবুও আঁকাছিল সে-নীরব ধ্বনি— কৃষ্ণ! কৃষ্ণ! সে-ধ্বনিতে মহিম ছিল সন্ধ্যাখানি, যাকে ঈশ্বরীয় রূপদানে কোনো বাড়িতে শাঁখও বেজে উঠেছিল সহসা!

তবুও বাড়িতে যোদ্ধা কৃষ্ণকে লোকানো যায়নি। রূপার বাবা গর্জে উঠেছিল যেন— মস্তানের সঙ্গে পিরিত! তুই তো যাবিই, সঙ্গে আমরাও গুষ্ঠিশুদ্ধ সবাই জাহান্নমে যাব!

সে-কীর্তনে দোহারকি করেছিল রূপার মা যেন— হায়! হায়! হা আমার পোড়া কপাল!

Categories
আফিম: অলোকপর্ণা উপন্যাস ধারাবাহিক

অলোকপর্ণার ধারাবাহিক উপন্যাস: আফিম (শেষ পর্ব)

চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান

মেঝেতে থালা নিয়ে ভাতের পাহাড়ের আড়ালে বসলেন ফয়জুল রহমান।

Categories
আফিম: অলোকপর্ণা উপন্যাস ধারাবাহিক

অলোকপর্ণার ধারাবাহিক উপন্যাস: আফিম (পঞ্চম পর্ব)

পিউ কাহাঁ পিউ কাহাঁ পিউউউ কাহাঁ

নিজেকে আজকাল একটা ঘোটকীর মতো লাগে রোশন আরার। খাদের কিনার ঘেঁষে ঘাস খেতে খেতে পাহাড়ের চূড়া ছুঁতে চাওয়া ঘোটকী। পিঠে তার আট হাতপাওয়ালা রশিদা বেগম, করিমন বিবি আর করিমন বিবির তেত্রিশ হপ্তা বয়সী পেট। জমানো সব সঞ্চয় শেষ হয়ে আসছে তার। একইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করিমন বিবির জঠর। ওই পেটের দিকে তাকালেই দম বন্ধ হয়ে আসে রোশন আরার।

Categories
আফিম: অলোকপর্ণা উপন্যাস ধারাবাহিক

অলোকপর্ণার ধারাবাহিক উপন্যাস: আফিম (চতুর্থ পর্ব)

কাজল ভোমরা রে

করিমন বিবির মরাকান্না দু-ঘণ্টার বিবর্তনের পর একঘেয়ে নাকিসুরে ঘ্যানঘ্যানে কান্নায় পরিণত হয়েছে। প্রথম দিকের স্পষ্ট প্রলাপ এখন বিকৃত হয়ে গোঙানি। খেই হারানো কান্না দলা পাকিয়ে আছে বাইরের ঘরটায়। করিমন বিবির নাক, চোখ, গাল ফুলে গিয়ে গোল আর লাল হয়ে চকচক করছে। পেট ফোলা করিমন বিবিকে এখন তুলোভরা স্ফীত ভাল্লুকের মতো দেখাচ্ছে। পার্থক্য শুধু,— ওই গালে পিন ফুটালে চামড়া ফুঁড়ে ভক করে তুলোর পরিবর্তে তার সমস্ত শোক বেরিয়ে পড়বে।

Categories
আফিম: অলোকপর্ণা উপন্যাস ধারাবাহিক

অলোকপর্ণার ধারাবাহিক উপন্যাস: আফিম (তৃতীয় পর্ব)

একতলা হাতি আর ইঁদুরের

আজ খুশির ঈদ। মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ! আজ রশিদা বেগমের শোকের দিন। আজ রশিদা বেগমের বড়ো ছেলে, বড়ো মেয়ে ছোটো মেয়ের বাপ,— ফয়জুল রহমানের অন্তর্ধান দিবস। যেন সহস্র বছর পূর্বে আজকের একফালি চাঁদের এই বিশেষ দিনটিতে খালি পায়ে সাইকেলে চড়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফয়জুল রহমান। চটি-জুতো পড়ে ছিল দুয়ারে। মানিব্যাগ, পকেটচিরুনি, হাতঘড়ি, রুমাল দেরাজে ঠায় বসে ছিল একে-অপরের পানে চেয়ে।

Categories
আফিম: অলোকপর্ণা উপন্যাস ধারাবাহিক

অলোকপর্ণার ধারাবাহিক উপন্যাস: আফিম (দ্বিতীয় পর্ব)

আমাদের কোনো শাখা নেই, কোনো শাখা নেই

বড়োমেয়ে ফিরেছে আধা ঘণ্টা হল। দোরে দোরে আলো জ্বলে উঠেছে। জাহান আরা বড়ো মেয়ের সামনে মুড়ির বাটি রেখে বেরোতে গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ে। বড়ো মেয়ে জানে এই থমকে যাওয়ার মানে।
‘কত টাকা লাগবে?’ বলে মুখে মুড়ি ভরে রোশন আরা তাকিয়ে থাকে জাহান আরার দিকে।
ছোটোমেয়ে মনে মনে হিসেব করে বলে, ‘আড়াইশ,’

Categories
আফিম: অলোকপর্ণা উপন্যাস ধারাবাহিক

অলোকপর্ণার ধারাবাহিক উপন্যাস: আফিম

ঘাস বিচালি ঘাস

(প্রথম পর্ব)

একটা জ্বর, সকাল থেকে ঘুরেফিরে এসে আদর করে যাচ্ছে করিমন বিবিকে। নিজেকে, নিয়মিত জ্বলে পুড়ে পিছন কালো হয়ে যাওয়া একটা হাঁড়ির মতো লাগছে করিমন বিবির। ভ্রূণের ভঙ্গিমায় গুঁটি পাকিয়ে মাদুরে লেপে আছে সে। পাশ ফিরলে এক্ষুনি তার গালে বালিশের ভাজের দাগ দেখা যাবে।