Categories
চিঠি

অরুণেশ ঘোষের লেখা অপ্রকাশিত চিঠি

একটি কবিতার বই, কিছু চিঠি ও অম্লমধুর তথ্য

গৌতম চট্টোপাধ্যায়

একটা মজার ঠিকানা— হাওয়ার গাড়ি, ঘুঘুমারি, কোচবিহার। মাত্র ৩৫ বছর আগে, ১৯৮৫ সালে গেছিলাম এক কবির সাথে দেখা করতে। কোচবিহারের উপকণ্ঠে তাঁর বাড়িতে যাবার সুযোগ ঘটেনি, কারণ কবির ইচ্ছায় মিলনক্ষেত্র স্থির হয়েছিল শহরের বড়ো বাজার পেরিয়ে যতদূর মনে পড়ে কলাবাগান এলাকায়— যেখানে শহরের দগদগে ঘা সীমান্তে এঁকে দাঁড়িয়ে থাকত যৌনদাসীরা। প্রথম আলাপেই বন্ধু শান্তিনাথ আর আমি মন্ত্রমুগ্ধ কবির আন্তরিকতায়। পক্ষান্তরে কবিও হয়তো!

আলাপ আবর্তিত হয়েছিল গভীর সম্পর্কে। কবির নিজস্ব কোনো ফোন ছিল না, শুধু রবিবাসরীয় বিকেলে কোচবিহারে তার এক বন্ধুর ল্যান্ডলাইনে কল করার অনুমতি ছিল মাত্র। আমারও কোনো ফোন ছিল না, আমাকে পাবলিক বুথ থেকে এস. টি. ডি কল করতে হত প্রায় রবিবারেই— শুধু মাত্র আড্ডা-আলোচনার তাগিদে।

সালটা ১৯৮৮। সিদ্ধান্ত নিলাম অরুণেশদা’র কবিতার বই বের করব, অরুণেশদা— আমাদের প্রিয় কবি অরুণেশ ঘোষ— যাঁর ছিল হাংরি জেনারেশন যোগ, সেই অরুণেশদার বই। অরুণেশদার কাছে প্রস্তাব রাখলাম, উনি গ্রহণ করলেন, পাঠিয়ে দিলেন ২২/২৪ টি কবিতার পাণ্ডুলিপি— যার থেকে সুনির্বাচিত ১৬টি কবিতা সাজিয়ে এক ফর্মার (তখন খুব চল ছিল) কবিতার বই প্রকাশের জন্য। ১২/১০/১৯৮৮-তে পোস্টকার্ডে লেখা চিঠিতে তিনি জানালেন— “…হ্যাঁ, ১ফর্মার বই বের করুন কিন্তু আমার দিক থেকে এ মুহূর্তে আর্থিক সাহায্য অসম্ভব।” আবার একটি চিঠিতে (৩/১/১৯৮৯) লিখলেন— “আমার উচিত, আপনাকে কিছু টাকা পাঠানো কারণ বই ও পত্রিকা বের করতে আপনার ওপর খুবই চাপ পড়বে।”

জানুয়ারি, ১৯৮৯— পুনরুত্থান কর্তৃক প্রকাশিত হল অরুণেশ ঘোষ এর ১ফর্মার কবিতার বই “সহজ সন্তান যারা”। অরুণেশদার মৌখিক নির্দেশ মেনে সাদামাটা কভারে/ যতদূর সম্ভব নির্ভুল এবং স্বাভাবিকের থেকে বেশি কপিই ছাপানো হয়েছিল। কবির আশা ছিল যেহেতু দীর্ঘ ব্যবধানে তার বই প্রকাশ হবে তাই তুড়িতে ৫০০ কপিও শেষ হয়ে যাবে। অরুণেশের এটি তৃতীয় কবিতার বই। তখনো অরুণেশকে নিয়ে ঠিক সেইভাবে আলোচনা শুরু হয়নি। তাঁর দীর্ঘ আলাপ, স্মৃতিচারণ, চিঠিপত্র এইসব থেকে যে সারাৎসার পাওয়া গেছিল তার ভিত্তিতে বন্ধু শান্তিনাথ একটি বড়োসড়ো ব্লার্ব লেখেন। ১/৫/১৯৮৯ তারিখে লেখা অরুণেশদার চিঠির কয়েকটি লাইন প্রণিধানযোগ্য— “বুঝতে পারছি, প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়েছেন। একসঙ্গে এতোগুলো বই বের করা ঠিক হয়নি আপনার। আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন, কিন্তু ভেঙ্গে পড়লে চলবে কি?”

একটু বলতেই হচ্ছে যে, প্রতিমাসে একটি বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা (ক্ষীণতম হলেও) প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট অর্থ-সময়-শ্রম ব্যয় করতে হত। তবু তারই মধ্যে সম্ভবত কোনো মফস্‌সল শহরে প্রথম একটা সমান্তরাল প্রকাশনীও শুরু করেছিলাম। উল্লেখ জরুরি যে, আমাদের পাঠকদের সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে আমরা ব্যয়িত অর্থের সমানুপাতিক দাম নির্ধারণ করতাম এবং এর মধ্যে ‘লাভ’ নামক অর্থকে অনর্থ ঘটাতে দিতাম না। আমাদের সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে আমরা মুদ্রিত সংখ্যা ৩০০ কপির বেশি রাখতাম না। এবং লেখকদের কাছ থেকেও কোনো আর্থিক সহায়তা আমরা পেতাম না।

‘পুনরুত্থান’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল অরুণেশদার বইটি ছাড়াও শান্তিনাথ এর ‘গণতন্ত্র ও শিল্পভাষা’, গল্প সংকলন ‘বোকা বুড়োদের গপ্পো’ (অরুণেশদারও একটি গল্প ছিল), তপন ভট্টাচার্যের কবিতার বই ‘অগ্নিকীট’। ১৯৮৯ এর বইমেলা বেরিয়েছিল ১০টি পকেটবই— লেখক মণ্ডলীতে ছিলেন প্রফুল্ল কুমার চক্রবর্তী (প্রবন্ধ), নিখিল বিশ্বাস (রেখাচিত্র), ফল্গু বসু (কবিতা), শান্তিনাথ (গল্প), গৌতম চট্টোপাধ্যায় (প্রবন্ধ) প্রমুখ।

এইটুকু ইতিহাস বলতেই হল কারণ একেবারে বিজ্ঞাপনহীন, মুনাফা বিরোধী, স্বল্প মূল্যের, মাসিক, বিষয়ভিত্তিক একটি ব্যতিক্রমী লিটল ম্যাগাজিন পুনরুত্থান ও তার প্রকাশনাগুলি প্রকাশ করতে গিয়ে আমিও ঋণে জর্জরিত হয়েছিলাম। অরুণেশদা আশাবাদী ছিলেন যে তাঁর বই প্রচুর বিক্রি হবে, তিনি প্রথমবারে ১০০ কপি বই বিক্রি করে দেবার জন্যে নিয়ে গেলেও হঠাৎ কেন জানি না সব যোগাযোগ হারিয়ে গেলেন। আমি নিয়মিত ডাকমাশুল ব্যয় করে নতুন সংখ্যা/চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু উত্তর আসেনি। তার বই অবিক্রীত থেকে গেছে, আমার সংগ্রহের শোভা বেড়েছে, কিন্তু বিক্রি হয়নি। মাত্র দুই টাকা মূল্যের বইটি জোর করেই পাঠক/অপাঠক নির্বিশেষে বিনামূল্যে গছিয়ে দিয়েও অব্যাহতি পাইনি।

ইতিমধ্যে ১৯৯১ সালের মে মাসে ‘পুনরুত্থান’ পত্রিকার ‘ক্ষুধার্ত প্রজন্ম’ সংখ্যা বেরোয় যেখানে জনৈক সুশোভন বসুর লেখা একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ ছিল— “অরুণেশ, জাঁ জেনে, হাংরি”। হাইবার্নেশন কাটিয়ে উঠে অরুণেশদা ১২/৭/১৯৯১-এ একটি ইনল্যাণ্ড লেটার কার্ডে  বড়োসড়ো চিঠি লিখে জানালেন— “নাকি একসময় আমার একটি চিঠি যাচ্ছেতাই পদ্যপুস্তিকা গাঁটের পয়সায় বের করেছিলেন বলে, এই তিরস্কার/” চিঠি শেষ করলেন এই শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে— “হে আমার লাল-লালাভ-গাঢ় রক্তবর্ণ নাগরবৃন্দ আমার প্রণাম গ্রহণ করুন। হাজার বছরেও যেন আমাদের বোধোদয় না হয়। ধ্বংসের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যেন আপনাদের ভণ্ডামির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে”।

আমি স্তম্ভিত। আমার অন্তর্গত “লাল-লালাভ…” (ক্রোধ সংবরণ করে বুঝেছিলাম নীরবতার সুশ্রুষা অন্যরকম। মাত্র তিনমাসের আমার নীরবতা (তবে পত্রিকা পাঠিয়ে গেছি)। ১৪/১০/১৯৯১-এ লেখা একটা পোস্টকার্ড পেলাম, যেখানে অরুণেশদা লিখলেন— “প্রিয় গৌতম, দীর্ঘদিন আগে একটি প্রায় ক্রুদ্ধ চিঠিতে আমার যে অবস্থার (রাস্তার গণিকা) বর্ণনা করে দিতাম।”… “আমার কথা মতন আপনাকে মুদ্রণ ব্যাপারে কিছু অর্থ দিতে পারলে আমার দিক থেকে স্বস্তি হত। আপনারও কষ্ট লাঘব হত”।

‘অর্থ অনর্থের মূল’ তত্ত্বের আরেক প্রতিভাস দেখেছি এই ঘটনায়। চেয়েছিলাম অরুণেশদার বইটা বেরক, আর উনি চেয়েছিলেন মুদ্রাব্যায়ের একটি অংশের অংশীদার হতে। কিন্তু যেহেতু তিনি আর্থিক অংশগ্রহণে অপারগ হচ্ছিলেন সেহেতু বারবার তিনি মর্মবেদনায় বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তিনি সম্ভবত নিরামিষ কাব্যলোচনাকেও ভেবে নিয়েছিলেন সেটি তাঁকে বিদ্ধকরার মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছিল/ তবু মধুর কথাটা এই যে, শেষ পর্যন্ত তিনি অম্ল-পত্রটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন! শুধু আমি জানি তিনি ‘সহজ সন্তান যারা’ বইটির পিতৃত্ব অস্বীকার করেছিলেন! তা হোক, আমরা এখনো হাংরি জেনারেশনের অনন্য উজ্জ্বল প্রতিনিধি হিসেবেই অরুণেশ ঘোষকে চিনি।

অরুণেশ ঘোষের লেখা অপ্রকাশিত চিঠি:

১২/১০/৮৮

প্রিয় গৌতম,

আপনার চিঠি পেয়েছি, পত্রিকা এখনও পাইনি। হ্যাঁ, ১ ফর্মার বই বের করুন কিন্তু আমার দিক থেকে এ মুহূর্তে অর্থিক সাহায্য অসম্ভব। খুবই বাজে অবস্থায় কাটছে। আপনাকে কবিতা পাঠিয়ে দেব আরও কিছু, বেছে নেবেন। আলোচনা ইত্যাদি যা করার আপনারাই করবেন। শান্তির গদ্যের বইও এবারের বইমেলাতেই বের করে দিন। এখন আর যাওয়া হচ্ছে না, বইমেলার সময়েই কলকাতা ও রানাঘাট যাবো। গদ্য অবশ্যই পাঠাবো।

ভালোবাসা
অরুণেশ
১২/১০/০৮

♦♦♦

০৩/০১/৮৯

প্রিয় গৌতম,

মনে হচ্ছে, জয় ঠিকই বলেছেন, ওই নামটি, ‘সহজ সন্তান যারা’-ই রাখুন। আপনার কবিতা নির্বাচন যথাযথ হয়েছে। ‘পুরাণ’ পর্য্যায়ের আরও কিছু লেখা খাতার পাতায় আছে, হয়ত কিছু লেখাও হবে, সেসব আপনাকে পরে পাঠাবো, ‘পুরাণ সিরিজ’ সম্পর্কে পরে ভাবা যাবে। আমার উচিত আপনাকে কিছু টাকা পাঠানো কারণ বই ও পত্রিকা বের করতে আপনার ওপর খুবই চাপ পড়বে। চেষ্টাও করছি কিন্তু কোনমতেই জোটানো যাচ্ছে না। পরে আমি আপনাকে যা পারি পাঠাতে চেষ্টা করবো। হয়ত ২৬/২৭ জানুয়ারী কলকাতা যাবো। রানাঘাট যাওয়ার অনেক দিনের ইচ্ছে এবং একবার জয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হবার। সেটা এবারও হবে কিনা বুঝতে পারছি না। বইমেলায় কি আপনাদের ষ্টল হচ্ছে? না হলেও যাবেন, ওখানেই আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। পরে ওখান থেকে চেষ্টা করবো আপনাদের সঙ্গে রানাঘাট যাবার। কলকাতায় আমি যে ঠিকানায় থাকবো, সেটা আগে ভাগেই জানিয়ে রাখছি: — Arun Basu, Flat- c/2, Rental. 30E Ramkrishna Samadhi Rd. Cal-54 (কাঁকুরগাছির সরকারী ফ্ল্যাট)। গল্পটা সম্পর্কে যা ভাল মনে হয় করবেন। শান্তি কেমন আছেন?

ভালোবাসা
অরুণেশ

♦♦♦

২৮/০২/৮৯

গৌতম,

আমাকে আরও ১০ কপি বই পাঠানো যায় কিনা দেখো। যে বই এনেছিলাম তা প্রায় রাস্তায় শেষ হয়ে গেছে। এখানে বইমেলায় দু-এক কপি রেখেছিলাম বিক্রি হয়ে গেছে। এমন কি তোমাদের সাদা বাড়ী, শক্তির বই সব স্টলের ছেলেরা এসে নিয়ে গেছে। আমি পড়েও উঠতে পারিনি।

বই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় পাঠিয়ে দেবে। আলোচনার জন্য, না হওয়াটাই স্বাভাবিক তবু পাঠাবে। আর পাতিরামে কিছু বই রাখতে পারো। আমার শব ও সন্ন্যাসী, গুহা মানুষ পাতিরাম থেকে ভালই বিক্তি হয়েছে।

ভালোবাসা
অরুণেশ
২৮/২

♦♦♦

০১/০৫/৮৯

গৌতম,

বুঝতে পারছি, প্রচণ্ড হতাশ হয়ে পড়েছেন। একসঙ্গে এতগুলো বই বের করা ঠিক হয়নি আপনার। আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে কি? লেখা-লেখির যে পথটা নিয়েছেন, সে পথে সারা জীবন ধরে দিয়েই যেতে হবে। এর বিপরীতে আছে প্রতিষ্ঠানের দাস হওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো। তাদের কৃপাদৃষ্টি আকর্ষণ করা, সে পথে তো যাননি। গত ২৫ বছর আমি এই অসম যুদ্ধ চালিয়ে এসেছি, আজ আমি ও আমার স্ত্রী দুজনেই হাসপাতালে। প্রচণ্ড অসুস্থ। কিন্তু বিন্দুমাত্র হতাশ নই। কারন এক এক করে সমস্ত ক্রীতদাসকে প্রতিষ্ঠানের গহ্বরে ঢুকতে দেখেছি ও মিলিয়ে যেতে দেখেছি। আমি এই সময়কে জানি, আমি আমার আত্মায়, সত্তায় এই সময়ের নির্যাসটুকু তুলে নিতে পেরেছি। আমার দেবার আছে, নেওয়ার কিছু নেই। আমি আমার নিয়তি আগে থেকে জানি, কেন হতাশ হবো? আপনিও নিজেকে জানুন।

ভালবাসা
অরুণেশ

♦♦♦

১২/০৭/৯১

সবিনয় নিবেদন,

ছিঃ। আমার লেখা পদ্য ও গদ্য আবার আলোচ্য বিষয় হতে পারে! যে পুরষ্কার যোগ্য নয়, সে নিশ্চয়ই তিরস্কার যোগ্য— এ অনুমানে কি আপনারা আমাকে তিরস্কার করেছেন? নাকি একসময় আমার একটি চটি যাচ্ছেতাই পদ্য পুস্তিকা গাঁটের পয়সায় বের করেছিলেন বলে, এই তিরস্কার!— হ্যাঁ, সে অধিকার তো আপনাদের আছেই। ছোট মালিকও মালিক তো বটে! না জানি বড় বড় প্রতিষ্ঠানভুক্ত কবি শিল্পীদের কত না বকা খেতে হয়।

আগে ভাবতাম বড় বড় কাগজের কাছে বিক্রি হওয়া লেখক কবিরাই বুঝি বেশ্যা। আর বাইরে যারা তারা সৎ ও স্বাধীন। এখন দেখছি তা নয়। ওরা হল অভিজাত মাগী— দালাল বাড়িওলী আর প্রেমিক(!) পরিবেষ্টিত; এরা রাস্তার। যেমন আমি। রাস্তার গণিকা। তা রাস্তার বেশ্যা যদি সাততলার পয়সাওয়ালা মাগীর ছলা কলা এট্টু আধটু ধার করে— তাতে দোষ দেবেন না আমার ইয়ে, আদর্শবাদী নাগর! হাজার হোক আমরা মেয়েছেলে তো!

ওদের খদ্দের নাকি বুরজোয়া। আমাদের খদ্দের লাল-টুপী জিন্‌স্‌-জোব্বা ফ্রেঞ্চকাট। রাস্তার মালকে সস্তায়, সস্তায় কেন বিনে পয়সায় পাওয়া যায় বলে এরা বিপ্লবী, আহ্‌— আদর্শবাদী তা সেদিন এক অভিজাত মাগীর সঙ্গে পথে দেখা। কি লো কেমন আছিস, সে বলল, তোর কত সুখ, বাড়িওয়ালা নেই দালাল নেই কারুর তোয়াক্কা নেই— কত স্বাধীন তুই… যে খদ্দের খুশী…

আমি বললাম, স্বাধীন না কচু। তোর নাগর শুধু তোর রক্ত মাসেই খুশী। আত্মা কি করে মুঠোয় পুরতে হয় জানে না। আমার নাগরেরা রক্তমাখা তো শুষে নেয়ই সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়ায় আমার লুকিয়ে রাখা সর্বস্ব, আমার শেষ অবলম্বন আত্মার দিকে। দানবিক শক্তিতে পেষণ করতে করতে, বলে সে। আরে দূর আত্মা ফাত্মা বলে আবার কিছু আছে নাকি!

তফাৎ শুধু এইটুকু!

হে আমার লাল-লালাভ-গাঢ় রক্তবর্ণ নাগরবৃন্দ আমার প্রণাম গ্রহণ করুন। হাজার বছরেও যেন আপনাদের বোধোদয় না হয়। ধ্বংসের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যেন আপনাদের ভণ্ডামির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে।

বিনীত
অরুণেশ ঘোষ
১২/৭

♦♦♦

১৪/১০/৯১

প্রিয় গৌতম,

দীর্ঘদিন আগে একটি প্রায় ক্রুদ্ধ চিঠিতে আমার যে অবস্থার (রাস্তার গণিকা) বর্ণনা করেছিলাম। পৃথিবীর তাবৎ সৃষ্টিশীল ও প্রতিভাবান ব্যক্তির অবস্থা সত্যি তাই। চিঠিটি আপনি গভীর অর্থেই নেবেন আশা করছি। আমার কথামতন আপনাকে মুদ্রণ ব্যাপারে কিছু অর্থ দিতে পারলে আমার দিক থেকে স্বস্তি হোত। আপনারও কষ্ট লাগব হোত। যদি, এখন সম্ভব হচ্ছে না, আমার আর্থিক অবস্থা জঘন্য। তবে একবছর পরে হলেও আমি আপনাকে যতটা পারি দিতে চেষ্টা করবো। না, আমার পক্ষে সংগঠনমুখী হওয়া সম্ভব নয়। না না কারনেই। আমি লিখে যাচ্ছি— লিখতে পারছি— আমার লেখা ভালবেসে আমাকে যদি কেউ ভালবাসে— সেটাই বড় পুরষ্কার। অন্য কিছু নয়। পুনরুত্থান ২৩ পেরিছি। শংকর গুহ নিয়োগীকে নিয়ে আপনাদের উদ্যোগ শুভ। কিন্তু এই অশুভ ও ধ্বংস প্রবন সময়ের সঙ্গে শিল্প দিয়েই মোকাবিলা করা যায় গৌতম, আর কোন সংগঠন, রাজনীতি ও মহৎ আশা দিয়ে নয়। শিল্পই মানুষকে বাঁচাবে। যদি তার বাঁচার ইচ্ছে থাকে।

ভালবাসা জানবেন
চিঠি দেবেন। অরুণেশ