Categories
2021-December-Anubad

সিমাস হিনি

ভাষান্তর: অরূপরতন হালদার

 

বাসা বাঁধার জমি
[Nesting-Ground]

স্যান্ডমার্টিনদের বাসাগুলো ছিল নদীর পাড়ে অন্ধকারে
অসংখ্য ছিদ্রের মতো। সে কল্পনা করল বগল পর্যন্ত তার
হাত, হাতায় মোড়া, আর সোজা, কিন্তু একবার একটা মরা
রবিনের পায়ের ঠান্ডা নখ তার হাতে লেগেছিল, আর
পাখিটার যে-ছোট্ট ঠোঁট শুধু তার নজরে এসেছিল তার
ঘনত্ব তাকে অবাক করে দিয়েছিল।

সে দূর থেকে ভেসে আসা কিচিরমিচির শুনতে পাচ্ছিল,
কিন্তু লোকজন তাকে একবার খড়ের গাদার মাথার দিকে
একটা ইঁদুরের বাসা দেখিয়েছিল, বাসার ভেতরে তুষ আর
ভুট্টার ডালপালার গুঁড়ো লেগে থাকা গোলাপি, আর্দ্র গলা
আর পিঠের শব্দ শুনেছিল সে।

সে সান্ত্রীর মতো দাঁড়িয়ে রইল, একদৃষ্টে; অপেক্ষা করতে
করতে তার মনে হল যদি সে পরিত্যক্ত একটা গর্তে কান
লাগিয়ে মাটির নীচের নৈঃশব্দ্য শুনতে পেত।

[কাব্যগ্রন্থ: ‘The Stations’, 1975]

জুলাই
[July]

হিম-পড়া সন্ধ্যার মধ্যে ড্রামের শব্দ বেজে উঠল, যেন
বাতাসের গম্বুজকে কেউ ডেকে উঠল মৃদুস্বরে। কিন্তু না।
ড্রামের অনেক নিচ থেকেই ড্রামের অস্ফুট স্বর যেন উঠে আসছিল।
অথচ ড্রামের শব্দ তেমন অস্ফুট নয়, বরং হাতুড়ির শব্দের
মতো জোরালো। শব্দ বিষয়ে অভিজ্ঞজনেরা ধীরে ধীরে
এর মধ্যে একটা ছন্দ খুঁজে পেলেন। পাহাড়ের মধ্যে
অনেক দূরে ঢালু অধিত্যকায় পিটিয়ে পাতলা করে ফেলা
হচ্ছিল সব পিপে আর ধাতব পাত।
পাহাড় যেন একটা পেটমোটা শব্দ উদ্গীরণ করা বাক্স,
অনুনাদী, দৈনন্দিন নির্ঘোষের বিপরীতে নীচু তারে বাঁধা,
একটা থেকে যাওয়া জোয়ারের ঢেউ যা যে-কোনো মুহূর্তে
ফেটে পড়তে পারে।
জুলাই মাসের রক্তিম সমুদ্রের ভেতর দিয়ে কমলা রঙের
ড্রামবাদকেরা তাদের স্বপ্নের মধ্যে পছন্দের মানুষটিকে
পায়। সব প্রসারণ, ফুলে ফেঁপে ওঠা যেন সংযোজিত স্বর;
সূর্যাস্তের মধ্যে কলার-শোভিত, লম্বা হাতাওলা সেইসব
মানুষ যারা নিয়তই পিছলে যায়, আর পুলিশের দল
তাদের ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছিল অব্যবহার্য পাথুরে কয়লার মতো
বাতাস অন্ধকার হয়ে এসেছিল, মেঘাচ্ছন্ন, আর কোনো
কসাইয়ের একটা অ্যাপ্রন। রাত স্তব্ধতায় ফিরে গিয়েছিল
যেন একটা শাদা রঙের মথের মধ্যে জলের প্রবাহ, যুদ্ধ
থেকে বহু মাইল দূরে, আর একটা রক্তের গ্রন্থি এখনও
নালার ভেতর অলস, নিস্তব্ধ

[কাব্যগ্রন্থ: ‘The Stations’, 1975]

পর্যটক
[The Wanderer]

একটা অর্ধবৃত্তের মধ্যে আমরা বুড়ো অঙুলের উপর ভর
দিয়ে অধিপতির টেবিল ঘিরে চকখড়ি দিয়ে যে-রেখা টানা
আছে তার উপর দাঁড়ালাম, আর দিনের ভেতর তখন সূর্য
দুধের উপরিতল গেঁজিয়ে দিচ্ছিল, একটা জ্যামের শিশির
এক ধার গরম হয়ে উঠছিল যার মধ্যে একটা গোটা বিনের
খোলা ফেটে গিয়েছিল। অধিপতি আমাকে সামনে
ডাকলেন, আমার হাতের উপর একটা রুপোর মুদ্রা রেখে
বললেন, ‘ছুটি শেষ হলে এই লোকটি ডেরির দিকে যাত্রা
করবে, তাই ওর জন্য এটা, এটা ওর পাওয়া জলপানি…
আমরা সবাই ওকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এবার যে যার
জায়গায় ফিরে যাও।’
আমি সেই মুদ্রা-প্রদায়ীর থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি
আজ, আর এই পরিযায়ী নিঃসঙ্গতা থেকে ফিরে যাওয়ার
কোনো বাসনা নেই আমার। আমি দেখেছি জ্বলন্ত হলঘর,
ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা হৃদয়, ভরে ওঠা এবং পুনরায়
শূন্য হয়ে যাওয়া বেঞ্চগুলো, আসঙ্গের বৃত্তগুলোর ফিরে
আসা এবং ভেঙে যাওয়া। সেই সময় আমি ছিলাম
একজন ধনী যুবক, যে আজ তোমাকে বলবে অস্থিরতার
কথা, রাত-পাহারা, সব পতন, আর নারীদের কেঁদে-ওঠা
চোখগুলোর কথা।

[কাব্যগ্রন্থ: ‘Stations’, 1975]

নিভৃত
[Cloistered]

কলেজের ছোটো গীর্জাটির ঝুঁকে থাকা জানলার কাচে
আলো যেন কড়া পড়ে যাওয়া একটা অস্তিত্ব, উপাসনা-
স্থানের কৃত্রিম পাথরের চওড়া জায়গাটায় দীর্ঘ তেরচা
একটা দণ্ডের মতো জেগে আছে। কর্তব্যরত যাজক তাঁর
উচ্চারণগুলো প্রতিটা থাম আর প্লাস্টারের বিপরীতে
পরীক্ষা করে নিচ্ছিলেন, আর আমরা বেঞ্চির শক্ত প্রান্তে
আমাদের কনুইয়ের শক্তি মেপে নিচ্ছিলাম কিংবা সোনালি
রঙে মোড়া প্রার্থনা-পুস্তকের বেড় ছিঁড়ে ফেলছিলাম।

আমি ওই ছ-টা বছর নিয়ে একটা বেশ লম্বা একটা বই
লিখে ফেলতে পারতাম, আচার-অনুষ্ঠান আর অবসর
বিনোদন নিয়ে পাহাড়ের খাড়া দেওয়ালে একটা ফ্লেমিশ
ক্যালেন্ডার আটকানো। দেখ: আমাদের পেছনে পাহাড়-লাগোয়া
একটা সমাধিক্ষেত্র, আর নদীর ওপারে জমি চষা
চলছে, মাঝখানে একটা সুরক্ষিত শহর। এখানে এক
বিশ্বস্ত কেরানি বিশপের আংটি চুম্বন করছে, এখানে
মরশুমি ক্রীড়ার কারুকার্য, আর একজন অক্লান্ত উদ্ভাসক
এক কোণে তাঁর ডেস্কের উপর অবনত।

পড়ার হলঘরে আমার হাত শীতে কোনো লিপিকরের
হাতের মতো ঠান্ডা। অধীক্ষক পাশ দিয়ে হিসহিস শব্দের
মর্মর তুলে চলে গেলেন, স্তোস্ত্রগীতের বাষ্পের মধ্যে লীন,
তাঁর শক্ত জুতোর চাবুকের মতো ধ্বনি আলখাল্লার নীচে
আয়ত, মৃদু। এরপর আমি AB নামের সরলরেখাটিকে
দ্বিখণ্ডিত করি, আমার পা রাখার জায়গা খুঁজে পাই
লিভির প্রধান ক্রিয়াপদের মধ্যে। আমার কুড়েটা থেকে
আলো ফোটার পর আমি সপ্তর্ষিমণ্ডলকে ভালো করে
আরও একবার দেখি এবং সকালবেলায় একটা বেশ
প্রফুল্ল একটা আত্মজ্ঞান সহযোগে এনামেলের জলের
পাত্রে বরফের কুচি ভেঙে রাখি।

[কাব্যগ্রন্থ: ‘Stations’, 1975]

পশ্চিমের স্টেশনগুলো
[The Stations of the West]

গেইল্ট্যাষ্টের প্রথম রাতে সেই বৃদ্ধা রমণী আমার সঙ্গে
ইংরেজিতে কথা বলছিলেন: ‘সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
আমি আবছায়া আলোয় একটা বিছানার পাশে বসে
দেওয়ালের মধ্যে দিয়ে অনর্গল আইরিশ ভাষায় শুনতে
পাচ্ছিলাম কথাদের, একটা ভাষণ যা সম্পূর্ণ মুছে ফেলতে
চেয়েছিলাম, তার জন্য দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে আমি
তখন ভীষণ কাতর।
আমি পশ্চিমে এসেছিলাম বিশুদ্ধ আবহাওয়া উপভোগ
করতে। স্বপ্নদর্শী যাঁরা, আমার মুখের উপর তাঁদের
শ্বাসবায়ু বেয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল রান্নাঘরের গন্ধ, তাঁরা
ক্রপীদের কবরের ধুলো মিশিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের
ধর্মের উপোসি লালাদের ভেতর, আর তা দিয়ে আমার
ঠোঁট লেপে দিয়েছিলেন। তাঁরা এফিটকে আহ্বান
করেছিলেন। আমি তখন আরক্তিম, আমার মুখে মাত্র
কয়েকটি কথা ফুটেছিল।
উপরের সেই ঘরটায় আমার সেইসব দিনগুলোয় যখন
চারপাশের সবকিছু মনে হচ্ছিল যেন দৈববাণীর অধীন,
আমার ভেতর সরস্বতীর কোনো বিভূতি ঝরে পড়েনি।
কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে পড়ছিল পশ্চিমের সেই স্টেশনের
কথা, শাদা বালি আর কঠিন শিলাস্তর, সেই আলোর কথা
যা তার নিজস্ব সংজ্ঞার মতো উঠে গিয়েছিল রানাফাস্ট
আর এরিগালের উপর দিয়ে, আনাঘ্রা আর কিনকাস্লাহর
উপর দিয়ে: এই নামগুলো ছিল বহনযোগ্য সেইসব
বেদীর পাথর, অবিমিশ্র প্রাকৃত উপাদান।

(ক্রপী: আইরিশ রিপাবলিকান বিদ্রোহী (সাধারণত অপভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।), এফিট: প্রাচীন এথেন্সের বিচারালয়ের সদস্য যাঁরা কিছু হত্যার মামলার বিচার করেছিলেন।)

[কাব্যগ্রন্থ: ‘Stations’, 1975]

আশ্চর্য ফল
[Strange Fruit]

এই সেই কিশোরীর মাথা যেন কবর থেকে তুলে আনা লাউ।
ডিম্বাকৃতি, আলুবোখারার মতো গা, দাঁত যেন শুকনো খেজুর।
তারা তার চুল থেকে ভিজে ফার্নের পরত খুলে নিচ্ছিল
যেন সে-কেশরাশির জটা তারা উন্মুক্ত করে দেবে,
তার অটল সৌন্দর্যের মধ্যে বয়ে গিয়েছিল হাওয়া।
চর্বির মোহঘোর, নশ্বর ঐশ্বর্য:
তার ভাঙা নাক তৃণক্ষেত্রের একটা টুকরোর মতো অন্ধকারাচ্ছন্ন,
তার চোখের গর্ত পুরোনো কারুকাজের মধ্যে শূন্য এক পুকুর,
ডাইওডেরাস সিকিউলাস স্বীকার করেছেন
নীচের এইসব ব্যাপারে তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যের কথা:
নিহত, বিস্মৃত, নামহীন, ভয়াবহ
বালিকা যার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে, অপ্রস্তুত করে দেওয়া কুঠার
আর স্বর্গসুখ, যা আপাতভাবে মনে হচ্ছিল ভক্তিশ্রদ্ধার ব্যাপার
তাকেও অপ্রস্তুত করে দিচ্ছিল।

[কাব্যগ্রন্থ: ‘North’, 1975]

ঝিনুক
[Oysters]

আমাদের খোলাগুলো প্লেটের উপর খটখট শব্দ করছিল।
আমার জিভ যেন ভরে ওঠা মোহানা,
তারার আলোয় ভরা আমার তালু ঝুলন্ত, স্তব্ধ:
আর আমি লবণাক্ত কৃত্তিকার স্বাদ নিয়েছিলাম
কালপুরুষ জলে তার পা ডুবিয়ে দিয়েছিল।

জীবিত এবং অতিক্রান্ত
তারা তাদের বরফের বিছানায় শুয়ে থাকে
দ্বিকোষগুলি: ফেটে যাওয়া কন্দ
আর সমুদ্রের ছেনালিময় দীর্ঘশ্বাস।
অযুত তারা ছেঁড়া, খোসা ছাড়ানো, ছড়িয়ে রয়েছে চারপাশে।

আমরা সেই সৈকতের দিকে গাড়ি ছুটিয়েছিলাম
বেলেপাথর আর ফুলগুলোর মধ্যে দিয়ে
আমরা উদ্যাপন করছিলাম আমাদের বন্ধুতা,
একটা নিখুঁত স্মৃতি যেন নির্মিত হয়ে চলেছিল
খড়ের ছাউনি আর মাটির বাসনপত্রের ঠান্ডার মধ্যে।

আল্পসের উপর দিয়ে খড় আর তুষারের মধ্যে
বস্তাবন্দি অবস্থায় রোমানরা তাদের সব ঝিনুক
দক্ষিণ থেকে রোমের দিকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল:
আমি দেখেছিলাম স্যাঁৎসেঁতে সেইসব ঝুড়ি উগরে দিচ্ছিল
পাতার ঠোঁটঅলা, সমুদ্রের লবণে বিদ্ধ
বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত সেইসব ভুরিভোজ

আর আমি ক্রমশ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছিলাম এই ভেবে যে
সমুদ্র থেকে উঠে আসা কবিতা বা স্বাধীনতার মতো
উজ্জ্বল আলোয় আমার দেহ এলিয়ে দিতে পারছিলাম না।
আমি ইচ্ছে করেই আমার গোটা দিনটাকে খেয়ে ফেলেছিলাম
যাতে এর তীব্র, কটু স্বাদ আমাকে
আমার ক্রিয়া, বিশুদ্ধ ক্রিয়ার ভেতর দ্রুততর করে তোলে।

[কাব্যগ্রন্থ: ‘Field Work’, 1979]

টুম রোড
[The Toom Road]

একদিন বেশ সকালে আমি সাঁজোয়া গাড়িদের দেখলাম
কনভয়ের মধ্যে তারা শক্তপোক্ত টায়ারের উপর ভর করে
পাখিদের মতো কিচিরমিচির শব্দ করছিল,
সবার গায়ে ছিল ভুর্জের ডালপালা দিয়ে বানানো ছদ্মবেশ,
আর কানে হেডফোন গোঁজা সৈন্যরা গম্বুজের চূড়ায় দাঁড়িয়েছিল।
কতক্ষণ তারা আমার রাস্তা দিয়ে এভাবে যাওয়া-আসা করেছিল
যেন তারাই এ-রাস্তার মালিক? সারা দেশ ছিল ঘুমন্ত।
আমার ছিল আসা-যাওয়ার জন্য নিজস্ব রাস্তা,
শস্যখেত, আর গবাদি পশুরা,
ট্র‍্যাক্টরগুলো খড়-টানা মই নিয়ে খোলা ছাউনির নীচে
যেন ঝাঁকিয়ে উঠছিল,
শস্যের গুদাম, ঠান্ডা হয়ে থাকা গেটগুলো, ভিজে শ্লেটপাথর,
বাইরের ছাদে ছড়িয়ে থাকা সবুজ আর লাল লতাপাতা।
পেছনের দরজায় খিল দেওয়া বাড়িগুলোর মধ্যে
আমি কার কাছে ছুটে গিয়ে জানাব
দুঃসংবাদ যে বয়ে এনেছিল তার কথা, সেই ক্ষণকালের অভ্যাগত
যে ছিল প্রত্যাশিত, তাকে কি দূরে রাখা সম্ভব ছিল?
যারা বীজ বুনেছিল, যারা সমাধিফলকগুলো খাড়া করেছিল…
হে সারথি, তোমার ঘুমন্ত বন্দুকগুলোর উপরে
এখনও স্থির দাঁড়িয়ে আছে, যখন তুমি পাশ দিয়ে হেঁটে যাও
স্পন্দমান দাঁড়ানো
সেই অদৃশ্য, দৃঢ় প্রস্তরফলক।

[কাব্যগ্রন্থ: ‘Field Work’, 1979]

জলপান
[A Drink of Water]

মেয়েটি রোজ সকালে জল নিতে আসত
যেন সেই পুরোনো বাদুড় মাঠের মাঝখানে বাতাসে টলায়মান:
পাম্পের তীব্র কাশির দমক, বালতির ঝনঝন শব্দ আর
ভরে উঠতে উঠতে সে-শব্দের ধীরে কমে আসা,
যেন তারই আগমনবার্তা। আমার মনে পড়ে
তার ধূসর রঙের অ্যাপ্রন, তার উছলে ওঠা বালতির
ক্ষতচিহ্নে ভরা সাদা এনামেল, আর উঁচু তারে বাঁধা
তার কণ্ঠস্বর যেন পাম্পের হাতলের শব্দ।
যখন পূর্ণিমার চাঁদ তার দেহের তীক্ষ্ণ কোণ পার করে
আকাশে উঠে আসে
তার জানালা দিয়ে রাত নীচে পড়ে যায়
শুয়ে থাকে টেবিলের উপর বয়ে চলা জলের ভেতর।
আমি যেখানে আরও একবার
জল পান করার জন্য মুখ নামিয়ে দিয়েছিলাম
আমি বিশ্বস্ত থাকতে চেয়েছিলাম
তার কাপটির উপর লেখা সেই সাবধানবাণীর প্রতি
দাতাকে স্মরণে রেখো, যা তার ঠোঁট থেকে ক্রমশ মুছে যাচ্ছিল

[কাব্যগ্রন্থ: ‘Field Work’, 1979]

ঈর্ষা-সম্বন্ধীয় একটা স্বপ্ন
[A Dream of Jealousy]

তুমি এবং আর একজন মহিলার সঙ্গে আমি হাঁটছিলাম
গাছপালায় ঘেরা একটা বাগানের মধ্যে, ঘাসের মর্মর
চিন্তামগ্ন আমাদের নৈঃশব্দ্যের ভেতর
তার আঙুল চালিয়ে দিয়েছিল
আর গাছগুলো খুলে গিয়েছিল একটা ছায়াচ্ছন্ন
আকস্মিক উজ্জ্বলতায় যার ভেতর আমরা বসে ছিলাম।
আমার মনে হল যেন আলোর সরলতায়
আমাদের মধ্যে ভয় জেগে উঠছিল
আমরা আমাদের বাসনার কথা বলেছিলাম আর
ঈর্ষা আমাদের ঘিরে ধরছিল,
আমাদের সংলাপ যেন একটা ঢোলা আলখাল্লা
অথবা চড়ুইভাতির জন্য পেতে রাখা একটা শাদা টেবিলক্লথ
যেন একটা আচরণবিধির বই নির্জন প্রান্তরে পড়ে আছে।
‘আমাকে দেখাও’ আমি বলে উঠলাম আমার সঙ্গীকে
‘আমি যা সবচেয়ে বেশি কামনা করেছি
তোমার স্তনের উপর এলিয়ে থাকা
সেই ফিকে লাল রঙের তারা’।
সে রাজি হয়েছিল। হায়, না এইসব কবিতা
না আমার আমার বিচক্ষণতা আর ভালোবাসা
তোমার বিক্ষত দৃষ্টিকে সারিয়ে তুলতে পারে।

[কাব্যগ্রন্থ: ‘Field Work’, 1979]