Categories
2021-May-Prose গদ্য

তন্ময় ভট্টাচার্য

বাঁ-হাতে ছুড়ে দেওয়া লেখা

সময় আর দিনকাল— এ-দুই নিয়ে ভারি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে মনে। অবশ্য দুয়ের মধ্যে ফারাকও কি আছে কোনো? নিজস্ব অবস্থান অনুযায়ী বিচার করি। মনে হয়, এখনকার মতো খারাপ সময় আর আসেনি। নাকি সময় বরাবরই খারাপ, আমি-অবধি এসে পৌঁছোয়নি বলে নিশ্চিন্ত ছিলাম এতদিন?

সমাজের দিকে তাকাই। বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে খারাপ আর কীই বা হতে পারে! ‘আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়ো’— এই স্পর্ধামাখানো বাক্য বলার সাহসই-বা দেখাতে পারছে কে! চরমতম পরিণতি যা— মৃত্যু— সেই সুন্দরই আজ ওঁৎ পেতে রয়েছে চারপাশে। মৃত্যুচিন্তার শরীর থেকে খসে পড়ছে বহুকল্পিত সৌন্দর্যও। কদর্য ডাক আর তা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা— জীবৎকালের হিংস্রতম চোর-পুলিশ খেলার সামনে দাঁড়িয়ে, আর কোন চেতনাই-বা জরুরি হয়ে উঠবে!

যদি সমাজবিচ্ছিন্ন হতাম, কিংবা মারিসীমানার বাইরে নিরাপদ অবস্থান কোনো, সময় ‘কু’ হত না ততখানি। বরং দূর থেকে বিচার করতে পারতাম; কে জানে, হয়তো নিগূঢ় কোনো দর্শনও উঁকি দিত অবরে-সবরে। কিন্তু প্রবলভাবে জড়িয়ে থেকে এটুকু বুঝেছি, পেট আর পিঠ বাঁচানোর লড়াই-এর থেকে কঠিন কিছুই নেই। নিজের ও আত্মস্বজনের পিঠ বাঁচাতে বাঁচাতে, না-পেরে, সর্বাঙ্গে চাবুকদাগ নিয়ে আর যাইহোক, সাহিত্যবিলাস হয় না। তাও এই স্বল্প সময়ে— যখন ধাতস্থ বা অভ্যস্ত হতে অনেক দেরি, চাইছিও না হতে, বরং অসম লড়াইয়ে বার বার হার মানাতে চাইছি মৃত্যুকে। শব্দ খুঁটে-খুঁটে লেখার মন আজ মৃত। তবে মনের সুবিধা এই, উপযুক্ত সঞ্জীবনী ছিটিয়ে তাকে বাঁচিয়ে তোলা যায় আবার। দৈহিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে সেই বিকল্প নেই। ফলে, বেঁচে থাকলে, মনকে ফিরিয়ে আনা দুষ্কর হবে না ততটাও। আপাতত এই কেঠো, অপরিকল্পিত ও চলনসই গদ্যেই সময়ের কাছে নতিস্বীকার।

বিপরীতে অন্য চিন্তাও যে উঁকি দিচ্ছে না, তা নয়। এতখানি সীমাবদ্ধ হয়ে গেলাম? বর্তমান ও তার সমস্ত নেতি-কে অতিক্রম করার যে-পথ, তা থেকে পিছলে গেলাম এতখানি! আমারই অবহেলা এর জন্যে দায়ী, সন্দেহ নেই। নিজেকে ভেসে যেতে দিয়েছি, ঝাঁপিয়ে পড়েছি বাইরের কলরোলে। কিন্তু ভয়ংকর এ-বাহিরের সামনে আত্মসমর্পণ না করেই-বা উপায় কী! সমাজ তো বটেই, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে— মৌলিক ‘আমি’-র অস্তিত্বেও যখন ভয় ঢুকে পড়ে, মনে হয়, রেহাই নেই এবার। শিল্প-সাহিত্য সেই স্তর অবধি পৌঁছোতে পারবে না। অন্তত, স্বল্প জীবনকালে এমন সংকট এর আগে দেখিনি আমি। যে-মানুষ নিজের বা অন্যের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত, সমস্ত শৈল্পিক সৌকর্য সে ঢেলে দেয় মুহূর্তের ওই ক্রিয়াতেই। কোনো কবিতা-গান তখন অস্ত্র হয়ে আসে না। অস্ত্র হয় না শব্দব্যবহারের অপার্থিব সূক্ষ্মতা। বরং, শিল্পের চোখে যা ‘স্থূল’, সেসবই বাঁচাতে পারে মানুষের প্রাণ।

তাহলে শিল্পের ভূমিকা কী? বার বার খুঁজছি এর উত্তর। মারিতে আক্রান্ত বা মৃত কোনো মানুষকে কেন বাঁচাতে পারল না শিল্প? কেন নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা-উচ্চারণেই থেমে গেল তার দৌড়?
উত্তর দিয়েছে শিল্প নিজেই। মনের সঙ্গে কারসাজি তার। এবং, মনের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেটুকু শরীর, তার সঙ্গে। শরীরের শরীর সে ভেদ করতে পারে না। ভাইরাস পারে।

এবং, এতদিনকার আলোড়িত সেই কথাই প্রতিধ্বনিত হল আবার। সামান্য ভাইরাসের কাছে আমাদের চর্চা কৃষ্টি বোধ সূক্ষ্মতা সব অসহায়। ফলে, যে-অস্ত্র অবশ্যম্ভাবী, তাকেই তুলে নিতে হত। আর এই লেখা? থেকে যাক সময়ের অভিশাপ হয়েই। এর বেশি কোনো ভূমিকাই নেই এর। দুঃসময় কাটলে, হয়তো ফিরে পড়ব। অস্তিত্বের চরমতম সংকটে, না, কবিতা পাশে এসে দাঁড়ায়নি। দাঁড়িয়েছিল চিকিৎসা। বন্ধু। ‘বন্ধুর কবিতা থেকে আমাকে আবার দেখা যায়।’ এই মারিকালে, বেঁচে থাকার চেয়ে বড়ো কবিতা আর নেই। ‘জীবন’ নামের সেই কবিতাই প্রতিফলিত করছে আমাকে-তোমাকে। বেঁচে থাকা দেখতে পাচ্ছি আমি। তোমার মধ্যে। আয়নায়। লিখে-ফেলা এই অসংলগ্নতায়।

মনে পড়ে চাঁদ সওদাগরের কথা। অনিচ্ছুক হয়েও মনসার পূজা। বাঁ-হাতে ছুড়ে দিয়েছিলেন ফুল। পরিবর্তে, ফিরে পেলেন বাণিজ্যতরী। আমার এ-লেখাও তেমনই, বাঁ-হাতে ছুড়ে দেওয়া। যতই তাৎক্ষণিক হোক, না-লিখে উপায় নেই। অধরা রইল নীরস তরুবরও। কিন্তু শুষ্কং কাষ্ঠং থেকে যাওয়ার সামর্থ্যটুকু ছিনিয়ে নিতে পারবে না কেউ।

বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, আবার স্বাভাবিক হবে সব। ফিরে পাব আগেকার ডুব। কোনো-না-কোনো মুহূর্তে, কারো কবিতা পড়ে আফশোস জন্মাবে আবার। মনে হবে, যদি লিখতে পারতাম এমনটি। বেঁচে থাকা সেই অতৃপ্তি উপভোগের জন্যেই। জীবন— কবিতা— এক-একটা হাতছানির নাম। সমুদ্রের বুকে বাড়তে থাকা ঘূর্ণিঝড়ের মতো। ডাঙায় আছড়ে পড়বে, ধ্বংসও আনবে; তবু না-পড়া অবধি, শান্তি নেই, শান্তি নেই তার…

Categories
2021-May-Prose গদ্য

সুপ্রিয় মিত্র

জনহিত মে জারি

মৃত নক্ষত্র থেকে নতুন নক্ষত্রের জন্ম হয়। ভুল কথা। মৃত নক্ষত্র একা সেই জন্ম দিতে পারে না। দু-টি মৃত নক্ষত্র তাদের ধুলোবালি, হাওয়া নিয়ে মহাশূন্যের সংসারে এমন এক সংঘর্ষের মুখোমুখি হয় যে, তারা ফের জ্বলে ওঠে। এ এক পলিটিকাল ইনকারেক্টনেস। এত ঝামেলা আছে, তাই আমি-তুমি আছি। বা ছিলাম। কারণ, নক্ষত্র হয়ে ওঠা মাত্র তারা আবার একে-অপরের থেকে দূরে সরে যায়। তাদের চারপাশে গ্রহ ঘোরে ফেরে। এমনকী, ঘুরপাক খায় গ্রহদোষ। এ দোষ উদ্ভাসের। যেভাবে কথায় কথা বাড়ে। আলোও তেমন। আলো সতত ঘনিষ্ঠ নয়, যতটা অন্ধকার। এমনকী এককও নয়। নিজের উৎসের মধ্যেই বন্দি হয়ে পড়ে। সময় ও পরিসরের বক্র অভিসারে মহাসংসারের খেলা জমে ওঠে।

নক্ষত্রজগতের মতো, আমরা নিঃসঙ্গ। একক হওয়ার তাড়নায় একা। যেভাবে শিকারিকে তাড়া করে শিকারের প্রত্যাশা। আমাদের দূরে সরে যাওয়া, আমার-তোমার গুণ। ওই যে নিকটস্থ ভার্গো তারাজগৎ, সেকেন্ডে ১২০০ কিমি বেগে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ওই যে দূরতর নক্ষত্রদ্বীপ ‘থ্রি সি-২৯৫’ ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিমি প্রতি সেকেন্ড বেগে সরে যাচ্ছে আমাদের থেকে— এও কি আলোহীনতা নয়? যত দূরের, তত দ্রুত সরে যাওয়া। যত কাছের, তার গতি তত কম। তবু, সরে যাওয়া থেকে এর ছুটি নেই।

শ্মশানে বন্ধুর মুখাগ্নি করতে গিয়ে, কবরিস্তানে বন্ধুকে নুন-মাটি দিতে গিয়ে, এ-সত্য জ্বলে ওঠে। জ্বলে ওঠে সোডিয়াম লাইট। সম্পর্কের, অনিয়ন্ত্রিত বিন্যাসে। আর নিয়ন্ত্রণে যা থাকে, তা কেবল সংঘর্ষ। আছে বলে, জ্বলে ওঠা আছে। আছে— এই থাকাটাই অনঙ্গ নিয়তি।

আর, এ-সবের থেকে কিছু দূরে, বসে আছে গাছ। টাটানো সিলিন্ড্রিকাল দেহ। পাখি এসে মায়া বাড়িয়ে দিচ্ছে, ঋতু এসে পিঠ চাপড়ে দিয়ে যাচ্ছে— চালিয়ে যাও, আরও থাকো, চুপ করে বেঁচে থাকতে হবে, দোস্ত!

এ যেন এক নীতিশিক্ষা— যত চুপ করে থাকা, তত প্রাণ। একদম চুপ করে যাও। কেবল হাওয়া এসে চুল আঁচড়ে দিয়ে যাবে। তাকে তুমি ঘেঁটে দেওয়া ভেবো না। তারপর দ্যাখ, তোমার সমস্ত দেহ ও দেহবুদ্ধি থেকে বেরোচ্ছে শ্বাসবায়ু। তোমার নিশ্বাস নিয়ে আর একজন কথা-বলা-দেহ বেঁচে আছে। তুমি তাকে অক্সিজেন জোগাচ্ছ।

তাই বলে, তুমি যেন মরে যেয়ো না। কিংবা, মরে গেলেও কী আর হবে।

এভাবেই সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

চোখে জল নেমে আসে। উড়ে আসে ঝড়। আমি থেমে আছি। আর, সকালে পর্বতের হাওয়া, দুপুরে সমুদ্রের, ভোররাতে মরুবায়ু আমায় ছুঁয়ে যাচ্ছে। এও কি ভ্রমণ নয়, এ কি নয় প্রকৃতির কাছে যাওয়া? আসে না কেবল অরণ্যের সমূহ বাতাস। পড়শির বাগানের ফল-ফুল-মূল না খেয়েও, অক্সিজেন ভোগ করে যেভাবে মানুষ এবং অজান্তে দ্রাক্ষাবনের শেয়াল হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে ধোপার কাঁধে গাধা, হয়ে ওঠে জনমদুখী বাপের বাস্তুশোক— অরণ্যের দুঃস্বপ্ন নিয়ে, বনানীর নিশ্বাসচিন্তা বয়ে, সেও একদিন ভাবে— আর ক-টা দিন পর মৃতবন্ধুর সঙ্গে তার দেখা হয়ে যাবে। এবং সংঘর্ষ হয়ে পড়বে পুনর্নিয়তি। মানুষের চলে যাওয়া থেকে মানুষ এই আশ্বাস কুড়োয়।

এবং সে কাঁদে। বিশ্বাস আছে বলে কাঁদে।

জানলা-দরজার নাম রুদালি। হাওয়ার সঙ্গে সংযম অভ্যাস করে যারা, তারা একসময় সেই হাওয়ার প্রতি ক্লান্তবোধ করে বা নিজেরাই হাওয়া হয়ে ওঠে। ঝড় যেন সেই তালে থাকে। সম্পর্ক তো এমনই। হম রহে না হম, তুম রহে না তুম। কিংবা, পদ্মাবতীর বিবাহমঙ্গল। নিজেকেই তার প্রেমিক মনে হয়, নিজেই সে প্রেমিকা। প্রেমিককে মনে হয় সে। আলম্বন, উদ্দীপন।

জানলা এখন হাওয়া। হাওয়া এখন দরজা। ঘরে ঢুকে পড়ছে। বাইরে থেকে বন্ধ হয়, না কি ভেতর থেকে খোলে, কেউই সবটা বলতে পারে না। কিংবা সবই একপ্রকার হাওয়া। ধুলো জমাট হলে আকার আছে, নয়তো নেই।

ঘরে হাওয়া খেলানোর যারা রিংমাস্টার, সেই জানলা আর দরজা এখন বুক চাপড়ায়। মানুষের থেকে তারা একটা জায়গার নামই উচ্চারণ করতে শিখেছে। দমদম। দ্দম দ্দম দ্দম দ্দম। এয়ারপোর্ট? সেখানেও হাওয়ার আখ্যান। বার্নৌলির নীতি দিয়ে বাড়িকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন? জানলা দরজা এখন বাড়িদের ডানা। উড়তে পারে না। কিন্তু এই ক্ষুদ্র সাহসদের বরাবর ভয় পেয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠান। কৃষককে ভয় পায় রাজধানী, শ্রমিককে ভয় পায় কারখানা, পৌরুষ-শূন্যতাকে ভয় পায় পুরুষতন্ত্র, লিট্ল ম্যাগাজিনকে এড়িয়ে থাকে স্যর-ম্যাডামদের পত্র-পত্রিকা, রাস্তার হোটেলকে ভয় পায় বড়ো রেস্তোরাঁ। তেমনই হাওয়াকে ভয় পায় ঘর। ফলে ততটুকু, যতটা বিলাসের। কিন্তু বিলাস একসময় মুক্তি পেয়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠে।

গরম ভাত কে না চায়। কিন্তু আঙুল তাকে সমঝে চলে। ফুঁ-সহযোগে তার গরাস ওঠে। ফুঁ বেড়ে গেলে ভাত ছিটকে যাবে। কিন্তু ভাত শুকিয়ে গেলে শুকনো বিপদ। গলা দিয়ে নামতে কষ্ট।

ওই যে, আধপেটা শ্রমিক, ফ্যানভাতে বাঁচে। কিন্তু, সতত জল বিনা কে চলিতে পারে? সতত জল যেভাবে জীবন, সেই জীবনখানি জলের ধর্মে উচ্চ থেকে নীচে ছুটে যায় যেহেতু, প্রতিষ্ঠান চায় একে পৃথিবীর অভিকর্ষ-দোষ বলে চালিয়ে দাও। জীবন যে বাধ্যত জল, সে-কথাটি এখানে উচ্চারণ কোরো না। পাঁচশো-হাজার কিলোমিটার অনুল্লিখিত সে ছুটে যাক, বাস্তুভিটের নামে, শিকড়ের নামে, আশ্রয়ের নামে, অপলাপের নামে, সে যাক। তার পরিধি যতটুকু বড়ো হয়েছে, যেন গোল্লাপাক খেতে খেতে বিন্দুতে গিয়ে গুমখুন হয়ে ক্ষান্ত হয়। জীবনের পিয়াসায়, প্রাণবায়ু যেন বড়ো হয়ে ওঠে, যেন ভবঘুরে শাস্ত্রস্নিগ্ধ নয়, গড়িয়ে যাওয়া শেষত পাথরের ধর্ম পায়। কেবল বেঁচে থাকাটাই যেন অনঙ্গ অভিজ্ঞতা লাগে। এইরূপে ঝড় প্রলয়ের হাওয়া-সহ আসে। অতিথি হয়ে নয়। কোল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে আসে, হে ধর্ম, তোমার সন্তান। সন্তানের ধারক বা বাপ-মা এখানে সন্তানের জাগরণ, জ্বালানি। যেহেতু তাদের ক্ষয় অবশ্যম্ভাবী, যে-কোনো অপত্যের স্নেহে।

ঝড়ের জ্বালানি কি বৃষ্টি? ততক্ষণ, যতক্ষণ মেঘের পেটে সে রয়েছে? ফুরালে ঝড়ও ফুরিয়ে আসে? বাচাল হাওয়া এ-সব বোঝে না। মেঘ চুরি করে আনে। বিপদ সে চায়, কিন্তু শুকনো বিপদ চায় না। জলকে দলে টানে। জল, যা মরণোত্তর। হাওয়া, যা জীবনবিমুখ।

কেন এতক্ষণ ধরে পড়ছেন? যান, দেখুন, দরজা-জানলা-সিলিন্ডারে কোনো লিক রয়ে গেল না তো?