Categories
কবিতা

রাজীব মৌলিক

খচ্চর

পায়ের তলাতে রাখা আমাদের দুঃখ
তবু কেন ঘাসফুল হয়ে ফুটল না
নদী হয়ে ছুটল না—

গড়িয়ে পড়ছে দিন; দেহ থেকে হাত
তারা কেন আদালতে গিয়ে বলল না
পড়াশোনা করে চুষে দিতে পারব না কালো দাগ।

মা-কে নিয়ে কথা হয় রোজ
ভাগাভাগি করি হাতাহাতি করি খিস্তি দিয়ে বলি
জন্ম না দিলেই বাঁড়া দেখতে হত না
খচ্চরের মুখে ঝামা ঘষে দিলে কেউ ফাঁসি হয়ে ফুটত না!

দেশকে আমার মনে হয় কেন ভিখিরির কোল
গভীর ঘুমেও ভেঙে যায় ঘুম থেকে
ডেকে ওঠে ককিয়ে যে পাড়া
বেশ্যার ভাতের ফ্যানে আমার আইন দেয় টোল।

মাজন

আমার এখন মানুষকে দেখলে ভয় হয় না
কাউকে আর অনুরোধ করে কিছু বলতে হয় না
কোনো অবিশ্বাস করার কিছু নেই

এখন আমি সরকার পক্ষের
সরকার আমাকে যা বলে আমি তাই করি
আমার নিজস্ব কোনো চোখ কান নেই
বন্ধুরাও আমার দলে যোগ দিয়েছে
আশাবাদী গোটা পৃথিবীটাই আমার সঙ্গে

যদিও আমার বাবা মা বিরোধিতা করেছে
এবং তারা সরকারের সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে
আমি সুবিধাবাদী পন্থায় বিশ্বাসী

নিজের সুখের জন্য সরকারের পতন চাইতেও পারি।

আমার কবিতা

আমার কবিতা ঘুমিয়ে পড়েছিল
খিদেয়, তৃষ্ণায়, পাঠকের অবহেলায়
সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মতো আবার জেগে উঠেছে

এখন আমার কবিতা খেতে জানে
ঘুমোতে জানে
লোকমুখে উলঙ্গ হতে জানে
কুকুরের মতো পা চাটতে জানে

আমি আশ্চর্য হই তার জাদুকরী শক্তি দেখে
আমার কবিতা কখন কুকুর হয়ে গেছে
কখন ঘেউঘেউ করা শিখল—

দেশটা কি সত্যি সত্যি কুকুরে ভরে গেল!

খেউড়

বাবাকে গালি দেওয়ার মতো শব্দ বাংলা অভিধানে নেই
তাই সরকারের মতো তার কাজকর্ম বলে গালি দিই

সে এতে মনে কিছু করে না
ভাবে ছেলে সোনার টুকরো
গালি দিলেও গায়ে লাগে না

অথচ আমি মন থেকে বাবাকে গালি দিই
আর মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি

কাউকে যেন এমন হাত না দিয়ে পাঠান
যে-হাতে শুধু ইট পাথরের শব্দ লেগে থাকে

সঙ্গে একটা কালো টিপসই…

হাটবার

পশুদের হাট বসেছে আজ
সমস্ত হিংস্র পশুরা বুথে বুথে দামি গাড়ি নিয়ে ঘুরছে
আর দেখছে ছোটো ছোটো হরিণ শাবকের দল
লাইন দিয়ে বলী হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে

ব্যানারে ফেস্টুনে খোদাই করা তাদের নাম
কেউ-বা মাইকে ছড়িয়ে দিচ্ছে হুমকি
বলি হওয়ার বিভিন্ন পন্থা

আমার বাবার শরীর ভালো না
তবু সে হাটে যাবে

হাটে না গেলে গোয়ালে বলী হওয়ার মতো পশু নাই

উপত্যকা

গুষ্টিশুদ্ধ বোকাচোদা একজায়গায় জড়ো হয়েছে
এবার বাজেট তৈরি হবে—
কে কার পেটে লাথি মারবে তার প্ল্যান লিখে রাখা হবে
ভিখারির দল এ শুনে রাস্তা অবরোধ, ট্রেনে আগুন জ্বালাবে
ওদের কাজই দেশে আগুন লাগানো

এত বেশি আগুন যদি পোঁদে থাকে
তাহলে সাহস করে যা না মেরে আয়
প্ল্যানিং কমিটির পোঁদে

মরলেও লোকে বলবে
শিশুকালে বাঘিনী মায়ের দুধ পান করেছিল

বালটা আসলেই একটা মাল ছিলো…!

ডাঁসা

ডাঁসা পেয়ারার মতো তোমার ভবিষ্যৎ
অন্ধকারে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে—

তুমি জ্বলে উঠছ
গাঁজাখোরের মতো

উজ্জ্বল হয়ে উঠে আবার কেলিয়ে যাচ্ছে তোমার ভবিষ্যৎ
আর তাতেই বাঁড়া তুমি রেগে লবডঙ্কা
সামান্য দেশলাইয়ে বারুদ কম থাকায়
হাত উঠালে দোকানদারের উপর
হাত উঠালে মা বোনের উপর

অথচ তোমার প্রতিটি রাতজাগা জুড়ে আলো ফেলছিল
থিওরি, থিসিস, লিটেরাচার, সায়েন্স।

ভিত্তিহীন

একুশতম গোল মিটিঙেও দেশের উন্নয়নের কথা বলা হল না
আর রাজ্যটা তো বোকাচোদায় পেয়েছে
যে-ই ক্ষমতায় আসে সেই গাঁড় মারে

এবার দুর্গাপূজায় মা-কে পুরোনো শাড়িতে দেখতে হবে
অথচ উদগাণ্ডুগুলো নশ্বর দেহে কেজি কেজি সোনা পরিয়ে
পালন করবে ডি জে উৎসব।

ভাড়াটে মাগিদের নাভি দেখে নৃত্য ভুলে যাবে
কিশোরী মেয়েটি।

তবু বিদ্রোহ করবে না। রাস্তায় নামবে না একজোট হয়ে
পার্টি পার্টি করে নিজের রক্ত চুষতে দেবে—

অথচ যে-কোনো মুহূর্তে দেশটা বলদে যেতে পারত
শুধু একটা বিদ্রোহ দরকার
সমস্ত রং ভুলে একবার মাঠে নামলেই নৃপতিরা পালটে যেত।

শোঁ-শোঁ

শোঁ-শোঁ আওয়াজ করে গিলে খাচ্ছে তোমাকে আমাকে
স্বপ্নের ভেতরেরও ঢুকে পড়ছে হেলিকপ্টার
আমাদের প্রিয় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী

তার শরীরে কোথাও স্বপ্ন নাই
তার মনে কোথাও পাপ নাই

সে নরক থেকে পালিয়ে এসেছে
লুসিফার তল্লাশি করেও ব্যর্থ হয়েছে

এবার আমরাও ব্যর্থ হয়েছি চিনতে
তবু সোচ্চার হচ্ছি না

আমাদের কলিজা সে কিনে ফেলেছে
জোম্বি হয়ে গেছি আমরা

নিজেদের রক্তকে ভাবছি বিরোধী মুখ।

Categories
কবিতা

দেবাশিস বিশ্বাস

নামহীন


সন্ধেই কিচিরমিচির করে যখন তার পাখি থাকে না। উঠতি চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বয়স। এই বয়স নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছিল ভৈরব। তার দেখা ভয়ংকরতম উদাহরণ হল সে। যেমন লেকচারে জীবন পোড়ে৷ এক পোড়া ঘরে বেলুন ফাটাচ্ছে শিশুটির৷ কি না করেছে সে। বাপের সম্পত্তি হল কচ্ছপের পিঠ— তাকে ধরার বারুদে নত হয়ে গেছে। কৃত্রিম বয়স ওড়ানোর তালিম নিচ্ছে হাওয়ায়।

ভৈরব ঐ কিচিরমিচিরে দৃশ্যহীন।
মাথায় পাগড়ী থাকলেই কি হয়? কখন যে পাইথন পেঁচিয়েছে মাথায়… তার ঘণ্টা ভেঙেছে
শব্দ হয়েছে পৃথিবীর বুকে

এটা তুমি ঈগলের চিৎকার বলছ?


মাথা ঝোঁকার জন্য হলে মরে যেতাম

হাসির ভিতর আঁকা থাকত দাঁত।
এমন করেছো তুমি—
ঘরের ভিতরের হাসি ঘর থেকে বার করতে?

পুরোটা সকাল আলো পোড়াতে গিয়ে হাত পোড়ে
নক্ষত্রের পিণ্ডি মুছে হাসির ভিতরে আঁকো—
— নাহ্! জটিল হচ্ছে চিৎকার!
আমরা কেন কিড়িমিড় শব্দ করে ভয় দেখাচ্ছি তাকে!

তার হাসপাতালে ঘুরতে যেও
জটিল রোগগুলো মরে যাবে সে জানে—


কবিতা লিখলেই
মানুষের কানে চোখ বাড়ে… রোম খাঁড়া হয় প্রগাঢ় দুপুরে
ভেণ্ডি বাগানে এত সবুজ ধুয়ে গ্যাছে কেন?
কবিতা লিখলেই, প্রশ্ন আসে
উত্তর সাপের হেঁটে আসা নকল করে।
ঝুম করে কারোর হাসি পারতে বল্লেই—
তোমার হাত এত লম্বা হয় যেন মহাকাশ চুরি করে পকেটে পুরছ।

কবিতা লিখলেই,
হাসিকে থেঁতলে দিও
মানুষের কানে চোখ বাড়ে
ভেণ্ডি বাগানে


উৎসব শুরু হয়
অন্ধ তাঁবুর নির্জনে, ব্যাঙ এসে লাফ দ্যায় ঘাড়ে
তার ইউরিক চর্চা যখন ছিল না তখন অতিবর্ষায় পায়ে পাপড়ি হয়ে ফাটে…
পায়ের দোষকে মাথায় তুলো না।
পায়ের জন্যই এই হাঁটা পথ মাথাকে ন্যুব্জ করে।
তারপর ঘর আসে,

ঘরের ভিতরের হাসি ঘরেই থাকছে কেন—
ব’লে রু রু দুপুর কাঁতরাচ্ছে ভীষণ!

জবলেস

চাষের উর্বরতার জন্য কেঁচোকে নিয়ে এক নম্বরের প্রশ্ন
উত্তর দিলে সেন্ট্রাল আমায় গ্রুপডি-তে নিয়োগ করবে
আমি আমেরিকার পতাকায় ক-টি তারা মুখস্থ করেছিলাম
যাতে আন্তর্জাতিক উত্তরের জন্য দু-নম্বর বেশি পাওয়া যায়
এরকম অবস্থায় যারা পারে না
তারা সকাল থেকে সন্ধে কোনো নক্ষত্র দেখে না
ইমাজিন করুন, ওই মুহূর্তটুকু সে কেঁচোর প্রয়োজনীয়তা অথবা আমেরিকার তারা সম্পর্কে কতটা ব্যতিব্যস্ত

হাত ফাঁক করলে কল্পনা ঝরে
যুবতীরা কল্পনা খায়

এপিটাফ

বনভূমি ডেবে রাখে
হাতগাড়ি
তাকে বয়ে নিয়ে যাওয়া কি মুশকিল, বলো!

যদি আগুন ধরিয়ে দিই
যদি ক্রুড অয়েলের লোভে প্রিয়তম হাড়-ম্যান
নিজের অক্ষিকোটরে বিশুদ্ধ বারুদ লুকিয়ে রাখে

নিশ্চয়। ঘরের কোনাটায়
যদি আগুন ধরিয়ে দি
বনভূমি ডেবে রাখে হাতগাড়ি ও কিছু সস্তার অ্যালকোহল!

আপাতত আকাশ কাঁপিয়ে
পাখিগুলির তন্তু আঁশ পায়ুনালী
ওড়াতে ওড়াতে, আমি এক ধোঁয়াপ্রবণ শিলায় খোদাই করে রাখছি এসব—

শেষে পৃথিবীর ভাগাভাগি তেমন জটিল নয়

নিরক্ষরেখা, অক্ষাংশের হ্যালুসিনেসন ছাড়া!

অস্বস্তি

কবিতা লেখার দায়ে বানানো হয়েছে—
এরকম ভাবলে মন শ্রান্ত হয় বলছ?
যেদিন গুচ্ছ গুচ্ছ গুহ্যদ্বার থেকে কাগজ বার করে আনছি আমার এক কবি বন্ধু ইংরাজি কবিতা পড়ছেন ওয়াইনকে সাক্ষী রেখে। মহিষের তেল মেখে নেচে উঠছে দাঁড়ি। এই এক বিকাল।
একটা
হেবি ওয়েট পাথরকে মদ্য চোখে মেয়ে বানিয়ে দিচ্ছে
আর তাকে
খাওয়ার চেষ্টায়
পাহাড় কাঁপাচ্ছে, নিম্নে তার পদ্যলেখা
অস্বস্তি
পাখি বাবলা গাছে বসে হাগছে
সে হাগায় ঝগড়া হচ্ছে পশ্চিম পাড়ায়—
তাতে বীজ থাকে
ছিঁবড়া ছিঁবড়া সূর্যাস্তের খুন
দৃশ্যেরও গলার অন্দরে পাখিকঙ্কাল
মরা শালবনে
মুতে
চলে গ্যাছে বাবুল সর্দার—
দাঁতে তার শামুকের মাজন।

পাখিকে যে-কোনো গাছে হাগতে বল্লে
সে কেবল ঘুরেফিরে
এখানেই
চকচকে বিপ্লবের উপর হেগে দ্যায়
যা দিয়ে
পাখির গুহ্য চিরে
মানুষ হয়েছে
তুখোড়
গায়ক।
এখানে
কেন্দ্র ছিল বলে চিৎকার দেখাচ্ছে দূরে/প্রান্তে
ফাটা

আউট অব কভারেজ
এখন
ঝিরি ঝিরি প্রচারবিমুখ শাকাহারী কুনোব্যাং ডুব দিচ্ছে
প্রকৃতির মায়াময়
আলুথালু
উচ্চিংড়ের পাতায়
প্রশ্ন করছো এ্যাত?
চাঁদ ফেটে মহাকাশ
মহাকাশ ফেটে
ঘিলুর তেল— মহাকাল পোলতে জ্বালিয়ে ধ্যানে বসেছেন
‘হরাস’ যার ডান চোখ রোদের নক্ষত্র
কোথাও

 

Categories
কবিতা

রূপক চ্যাটার্জী

চতুর মাছ, তীর ছুঁয়েই
অতলের দিকে চলে যায়। চোখে পড়ে থাকে
রুপোলি ঝলক। কিছু সাদাসিধে ছাপোষা মাছকে ধরে,
জেলে পূর্ণ করে তার আঁশটে উল্লাস!

ভালোবাসা, পূর্ণ আস্থার নাম।
আর পূর্ণ আস্থা বলতে একটি বাবলা গাছ!
যার দেহে কাঁটার তীক্ষ্ণতা থাকলেও
তোমায় হলুদ ফুলের নাকছাবি দেখাবে ভোরবেলা।

নিজেকে খাওয়ার সংকল্প নিয়ে
বহুদিন বুড়ি ছিল অনাহারে।
ডোলভিরা খননের পর, তার ছেলেরা
বহুকষ্টে খুঁজে পেলো বুড়ির কয়লা শরীর। স্তন দিয়ে
তখনও ফোঁটা ফোঁটা সকাল টসকে পড়ছে!

তৃতীয় নেত্র খুলে দাও,
ওই পথ দিয়েই যদি, আমাদের হারানো মেরুদণ্ড পুনরুদ্ধার হয়। তবে ওটাই তলোয়ার করে
বারকয়েক শূন্যে ঘুরাব। শত্রুরা সব তো
হৃদমাঝারে বসে আছে, কাকে আর তাড়াই তবে বলো?

এক কাপ চায়ের পাশেই
তোমার বসে থাকাটা
ডারউইনবাদ এর মধ্যে পড়ে না! আমাকে অগ্রাহ্য করে,
পশমের বল থেকে উলের বুনন আরও
নিরিবিলি, আরও দক্ষ হয়েছে। আমাদের
বসন্ত গেছে বলেই, কাকতাড়ুয়ার কাঁধে বসে
কাক এসে শস্যাবর্তনের গল্প শোনায়!

 

 

Categories
কবিতা

সৌমিক মৈত্র

প্রার্থনা…

আমার বাড়ির উঠোনে দুটো গাছ—
জবা আর করবী।

মা রোজ সকালে স্নান সেরে, লাল জবা তোলে—
ঠাকুরের পায়ে দেয়।

আমি ঠাকুরের পায়ে মাথা রেখে প্রার্থনা করি।
মায়ের পায়ে যেন সাদা করবী দিতে না হয় কখনো।

মানতাসা

কাঁটাতার ঘিরে রাখে লালচে-ধূসর আলোককুণ্ডলী।
এই বিচ্ছিন্নতা অমূলক, তবু তুমি আঁচড়ে কামড়ে ভাঙো আমায়।
বিলুপ্ত হোক প্রতিষেধক, উপশম।
রহস্যময় উপনগরীর আহত সিংহদ্বারে ছড়িয়েছে মনুষ্য লোম।

এত রক্ত কেন মাখো—
প্রকৃতির চক্রাকার দিগন্তে আহত পাখির মতো।
তুমি প্রগতির বুক কেটে অন্তর্বাহিনীকে মুক্ত করে দাও এই প্রগলভ মরুবালিকণায়।
স্থিতু হও, মিঠে খেঁজুরের গন্ধমাখা বিকেলে।
যেখানে মৃত্যু যায়—
তার পিছে পিছে তুমি কোন লোভে গেলে?

নিশি কোলাহল নির্বিকার, গ্রহণ সকালে যেন মরক লেগেছে শঙ্কিল হৃদযন্ত্রে।
এ নৈর্ঋত মেঘ আহার্যবিহীন আপরাজিতা— দু-ফোঁটা কান্নার লোভে মাটি ছুঁয়ে হয়েছে ধোঁয়াশা।
অনারম্বর তুমি, মৃত কবজি থেকে ঝুলে থাকে—
প্রিয় মানতাসা।

যন্ত্রণা…

মৃতপ্রায় শরীরে—
ব্যথার রাক্ষস জেগে ওঠে।
আঘাতের নকশায় যন্ত্রণা ফুল হয়ে ফোটে।

মিনে করা কাটা দাগ,
রক্ত শুকনো, আলপনা—
দু-ঠোঁট বাক্যহীন, বেদনার সুতো দিনে বোনা।

এ-ক্ষত নির্বোধ, ছেড়ে যায় নিঃশ্বাস, প্রাণ।
নিঃস্ব কবর, একা—
পাশে তার বিষাদখাদান।

চামড়ায় শাদা ছোপ—
ফোস্কায় জ্বলে গেছে মুখ
যার দেহে ক্ষত নেই, তার শুধু মনের অসুখ।

রহস্য!

মশলার গন্ধ লেগে চঞ্চল, লাস্য বিকেলে।
যেন ক্যাওড়া জলে ভেজা মিঠে জায়ফল।

আফগানি কেশরের হলদে লালে,
ঢাকা পড়েছে মানস সরোবরের শাদা।

তুমি তেজপাতা ঠোঁটের—
হেমন্ত ঝাঁজ মিশিয়ে দাও গন্ধহীন রাতে।

দারুচিনি দেশ ঋতুমতী হল,
তুমি এলাচের স্বাদ বলে শুকনো ঝাল মাখিয়েছ গালে।

এ-জ্বালা তীব্র নয় জেনো—
এ শুধু রঙের আড়ম্বর, মিশে থাকা
সান্ধ্য বকুলে।

প্রলেতারিয়েত

অবসর বসে থাকে, শুকনো জানালায়।
মেঠো গন্ধের শোক—
লেগে আছে রক্তাভ পায়ে।

আহতের মতো দুই মৃত চোখে মাংসের লাল,
ধূসর জানালা থেকে ঝুঁকে আছে শূন্য কপাল।

বিষাদ মাখানো চোখে, উঁকি দিয়ে চলে গেল প্রেত—
প্রলেতারিয়েত।

 

Categories
কবিতা

উমা মণ্ডল

জহর বিষয়ক—

জহরের কাল মুছে গেছে সেই কবে। পুরাণের পৃষ্ঠা থেকে কখনো শুনতে পায়নি কেউই। জীবাশ্মের ছায়া তবু বেঁচে থাকে। লুকোচুরি খেলা। এই দেখা, এই ভ্রম… মরীচিকা পায়ে পায়ে ঘোরে বেখেয়ালে। কুণ্ডের ভাষায় যদি বলা যায় আগুনের আঁচ আছে। সেই যে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি; তুলিরেখা মুখে অবন ঠাকুর। আসলে সে বিষ বিষয়ক শব্দবন্ধে ঘোরে ছিল বহুকাল। নতুন বৌঠান শুধু বলে গেল না কিছুই।

উড়ে উড়ে কথা বলে নিষিদ্ধ রাত্রির। গন্ধ পায় চিতাকাঠ ঘি চামড়া পোড়া আদিমের। বন্য আঁতুড়ের ঘরে জন্ম নেওয়া প্রতিমার চোখ জ্বলে গেছে আগেই; যোনির দ্বারে দারোয়ান বাঁধা। পথে কাঁটাখেত। তবু কালো প্যাঁচা মাংসাশী প্রাণী। তার প্রাণ চাই।
এই ঘণ্টা কি সতর্ক করে???? ঈশ্বরের দূত নর্দমায় বয়ে যায়। পাশে পড়ে থাকা অজন্মা ভ্রূণটি ধর্ষণের অবৈধ প্রমাণ। ওকে জহরের কালে নিয়ে যাও। আর শয়ে শয়ে অবলা বালারা ওদেরও ধরো একসাথে। বাঁধো। ঘাটে ঘাটে প্রদীপের আস্ফালন। এইভাবে পথ ব্যস্ত। রাঙা সূর্য ফুটে আছে পৃথিবীর গায়ে।

যদি ঘাড় ধরে থাকা হাতটাকে আগুনের উৎসবে তুলে দেওয়া যেত বেশ হত। কুণ্ডের কিন্তু পুরুষ বিষয়ক মাংসের চাহিদা আছে পুরাকাল থেকে। একবার জিভে নিয়েই দেখুক। অমৃত মন্থন

বিষবৃক্ষ—

এইসব উপন্যাসে দম্পতির বিছানায় চোরাকাঁটা
চকচক করে
অবকাশ যাপনের অছিলায় ডাক দেয়
খাদের ঈশানকোণে

অশনি এমনই মায়ামৃগ
কস্তুরী নেশায় পথ ডাকে
আরও কাছে, আরও কাছে
পথিকটি এখনও সরল ছকে কাটাচিহ্ন খেলে
বাঁক থেকে বাঁকে যে মৃত্যুর পরওনা নিয়ে
বাটখারা বসে আছে
সেই সংবাদপত্রের পাতা সে পড়ে ওঠেনি
আর্যভট্টের ভক্তটি শুধু সরলরেখায় বিন্দু গুনে চলে

ওগো খই এইভাবে ওড়া ঠিক নয়
পড়েছ যমের পাতা; অবসরে
ঘুম ছিল চোখে…

ফলারের সাদা খই সই পাতিয়েছে লেবু ও লঙ্কার সাথে। ওরা ভাগ্যচক্রে কালো বেড়া দেয়। বেড়ালের এঁটোমাছ নিয়ে ঝোল রাঁধে। তার সাথে রাঁধুনি মশলা। খই তাই উড়ে যায় শোকচিহ্ন নিয়ে

বার বার চিহ্ন আঁকো অবলা আমার
কবে যে খুঁটের ধার খেয়ে গেছে তোতাপাখি…
পাখি শুধু হরিনাম বোঝে; শতবার কর গুনে খাবি খায়
ওদিকে শিকড় হাত লম্বা করে ভিতে
ভূমিকম্প ডেকে আনে

দুর্গা সহায়—


আমি সেই সুর চিনি… বাঁশি থেকে উড়ে আসা পথের গানটি আমায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে। ফেলে আসা কথা মাত্রা পেয়ে যায়

আশ্বিনের ঢেউ এসে গেল। প্রকৃতিতে শারদীয়া লেখা। কোথা থেকে জন্ম অসুখের আমাকে মনে পড়েছে। গায়ে জ্বর। সামনের খোলা জানলাটি এক পাঠাগার। শব্দগুলি উড়োচিঠি যেন। পড়ে ফেললেই হল। একলা ঘর বলে যে-বাতিস্তম্ভের নাম রাখা, বিদ্যুৎ সংকেত পেয়ে চমকে ওঠে। চোখ স্থির হয়

অন্য একটি চোখের ছায়া পড়ে। সেই ছায়াপথে অদৃশ্যের মায়াগন্ধ। এক অতলের ডাক। মেয়েটির জলে ভরা আয়নাটি কত কথা বলে। হে, নৈঃশব্দ্য…


দুর্গার গায়ে তাপের প্রকোপ বেড়েই চলে; তবু কাশে ভরা রেলপথ হাত তুলে ডাকে। পায়ে যাযাবর খুর বাঁধা। আর সেই চোখ, জলে ভরা সেই চোখ… নৌকা টানে ছলাৎ, ছলাৎ

জল শুধু জল… পোড়ামাটির ঈশ্বর তখন অস্থির। মাটি ধুয়ে যায়, কাঠামোও; কালাশৌচ পার করে পরিবার যাত্রা করে অন্য পথে। তখন ওরা তিনেতে বন্দি। ভিটেতে ‘কাল’ শিকড় পুঁতেছে; সর্পিল চলাফেরা। এইসব দৃশ্যপট, গোরুরগাড়ির ধুন; স্মৃতিময়…

কিন্তু সেই চোখ, জলে ভরা চোখ; দরজায় হাত রেখে ঠায়… মাটি ডাকে, ছড়া কাটা মাটি; এই ভিটে প্রদীপের সলতে তখনও নামিয়ে রাখেনি।


প্রকৃতি এখন আশ্বিনের দরজায়। কাঠামোয় মৃন্ময়ীর চোখ আঁকা হয়ে গেছে। মেঘগুলো চালচিত্র তৈরি করে একতারা সুরে। ওদের পালকে নক্ষত্রের সংসার। আমার গায়ে জ্বর। সামনের জানলায় ইতিহাস, বর্তমান… পাশে পড়ে ওষুধের ছেঁড়া নামগুলো; চোখ স্থির। হয়তো কাশের ভেলা দেখছে কিংবা রেলপথ, টানা রেলপথ…

বিন্দুতে আরম্ভ, বিন্দুতে সমাপ্তি; সব একাকার… অনন্তের পথে, লন্ঠনের আলো, জ্বর রাত; বিশল্যকরণী… বাঁশি বেজে যায়। জলে ভরা চোখ থেকে গভীরের ডুব; মায়াপথ। তল থেকে চিন্ময়ী আলোককণা সংকেত পাঠায়। দুর্গারা এখনও ত্রিশুলের শব্দ ভুলে যায়নি পুরোটা। চোখ বন্ধ হয়ে আসে; ঘুম চিরঘুম। দরজাটা বন্ধ আছে।
হে, নৈঃশব্দ্য… দুর্গা সহায়

 

Categories
কবিতা

শিবু মণ্ডল

হর-কি-পৌরি


হর-কি-পৌরি এলে সবাই হাসিখুশি থাকে। মানুষ মানুষকে দেখে। দেখে অন্যভাবে। নিজের কথা ভাবে কি না বোঝা যায় না। আমি অনেকবার এসেছি। যখনই আসি আমিও মানুষ দেখি। গঙ্গার স্রোতের মতোই আসছে আর যাচ্ছে। এক অনিঃশেষ প্রবাহ। নারীপুরুষ বালক বালিকা সকলেই ঝাঁপিয়ে চান করে। নারীরা স্নানের পর ঘাটেই কাপড় বদলায়। কেউ কেউ আড়ালে কেউ আবার প্রকাশ্যেই। তবে আমি পুরুষদের দেখি অন্য সময় রাস্তাঘাটে মহিলাদের দিকে যে-রূপ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকায় তেমনভাবে এখানে দেখে না। তারাও শুধু জাঙিয়া পরে স্নান করে। যে যার খুশিতে বরফগলা জলে ডুব দেয় আর আনন্দে কাঁপে।


ঘাটে একটু দূর দূর লম্বা শেকল বাঁধা থাকে। পুন্যার্থীরা সূর্যকে নমস্কার করে দু-চার ডুব দেয়। কেউ কেউ সাঁতার কাটে। সাঁতার কাটলেও গঙ্গার প্রবাহের সাথে তারা অনিশ্চিত ভেসে যেতে পারে। কিন্তু কেউই যায় না। সেই শেকলটি ধরে থাকে ভয়ে। আর এমনভাবে শরীর উলটেপালটে চান করে দেখে মনে হয় নিজের সাথেই নিজে দু-টি কুমীরের মতো খেলে যাচ্ছে।


সন্ধ্যা ছ-টা বাজলেই মাইকে বেজে ওঠে অনুরাধা পড়োয়ালের কণ্ঠে— ওঁ জয় গঙ্গে মাতা…! চোদ্দো বছর হয়ে গেল আমি হরিদ্বারে আছি। তখন থেকেই দেখছি সেই একই গান বেজে আসছে। এই গানটির চেয়ে অন্য কোনো গঙ্গাস্তুতি বা তাকে নিয়ে গান হতে পারে তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। গঙ্গা আরতির সময় যখন এই গানটি বেজে ওঠে তখন আমার শরীর জুড়ে এক শিহরণ জাগে— এ এক ভালোলাগারও অধিক কিছু। এক অতিপ্রাকৃতিক ভাবও বলা যেতে পারে। তখন আমি যেন সামনে বয়ে যাওয়া নদীটির জল হয়ে যাই। অথবা নদীর তরঙ্গে কাঁপতে থাকা আলো!


গঙ্গা আরতি শেষ হয়ে যাবার পরও আমি গঙ্গার পাড়েই বসে থাকি। আমার চারপাশ পুরুষের অন্তর্বাস থেকে ঝরে পড়া গঙ্গাজলে, মহিলার পোশাক ও চুল থেকে ঝরে পড়া গঙ্গাজলে থৈ থৈ দশা। ছোট্ট একটি ছেলে কিংবা মেয়ে তিলক ও শৃঙ্গারের বাটি এনে সামনে দাঁড়াবে। আমার হাসিমুখ দেখে কী বুঝবে জানি না। সে আমার কপালে তিলক ও শৃঙ্গার কেটে দিয়ে পয়সা চাইবে। অন্য সময় কেউ এভাবে পয়সা চাইলে ধমকে দিই। কিন্তু এখন আমি দশ টাকাও স্মিত মুখে দিয়ে দিই। তারপরেই আসবে একটি পুরুষ কিংবা মহিলা প্রদীপের থালা হাতে। আমি তাকেও ফিরাই না খালি হাতে।


দু-টি কিশোরী এলোচুলে বসে আছে সিঁড়ির ধাপে। তাদের ধবধবে ফর্সা পা জোড়াদু-টি গঙ্গার নীল জলে ডুবে আছে। সেলফি তুলছে তারা। সামনে দিয়ে বয়ে গেল গোলাপের পাপড়ি বোঝাই একটি পলাশ পাতা দিয়ে বানানো ডোঙা। তাতে জ্বলে আছে কর্পূর দিয়ে বানানো ক্ষণায়ু প্রদীপখানি। একটি মাঝবয়সি লোক ভিডিয়ো কলিং করে দেখাচ্ছে তার দূরদেশি আত্মীয়াকে! বয়ে যাওয়া আলো, গন্ধ ও জল দেখিয়ে প্রলুব্ধ করছে সেই দূরদেশবাসিনীকে। আমন্ত্রণ করছে তাকে ঈশ্বরের এই আপন দেশে!

 

Categories
কবিতা

বর্ণালী কোলে

প্রতারণা বিষধর সাপ


তোমারা প্রতীক্ষা করেছিলে, অবসান
আমি প্রতীক্ষা করেছিলাম, সূচনা
তোমরা আমাকে বেঁধে ফেলতে শুরু করেছিলে
আমার পায়ে বেড়ি দিয়ে
এইটুকুই আকাশ তোমার
এইটুকুই জগৎ

পৃথিবী তোমাদের দেওয়া ঈর্ষা-উপহার


একজন নারী কতটা কষ্ট পেলে
তোমার অহং শান্ত হবে, ভাবি
এত নির্লিপ্তি
এ তো খুনিদের থাকে
তুমিও তাই?
কেবলই হত্যা করো, হৃদয়
দীর্ঘ তলোয়ার, হৃৎপিণ্ডের তাজা রক্ত

ভুলে গেছি
মুখ মনে নেই
তবুও মাঝেমধ্যে মনখারাপ
কপালে, শিরায় আড়ষ্ট ব্যথা
চাবুকের দাগ


স্নেহ নেই, প্রীতি নেই
প্রেম নয়, দরদ নয়

ভয় লাগে, এখনও তার ভয় লাগে
আকাশি রঙের শাড়ি
নতুন বধূ

সিঁদুরচিহ্ন বিবাহের পরদিন মুছে নিয়েছে
মহাকাশে এখনও চাবুক
তারই শব্দ শোনে সে

তার সব বোধ
ঠিক যেন মানসিক রোগীদের চিকিৎসালয়


“শিকার” তোমার প্রতিবেশী নয়
খবরের কাগজের নারী নয়
তুমি নিজেই “শিকার”

আতঙ্কের মধ্যে থাকতে থাকতে
প্রত্যাশা হারিয়ে গেছে
জীবনের অংশগ্রহণের ইচ্ছে শেষ

মাঝেমাঝে ঈশ্বরের দিকে তাকাই
এরপর? এরপর?


এই মানুষগুলোরও মৃত্যু হতে পারে, অবাক দেখছি
চিত হয়ে শুয়ে বিশালদেহী লাশ
পচা দুর্গন্ধ বেরোয়নি এখনও
এখনও ছিটকে বেরোচ্ছে তেজ, দর্প, হুঙ্কার, ত্রাস
শাসন

একটু পর চিতায়
ছাই

স্মৃতি মৃত্যুর থেকেও বেশি বিভীষিকাময়


নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে
পিঁপড়ের মতো তোমার ওপর উঠে আসছে ওরা
তোমার বাঁচার ইচ্ছেকে ছেঁটে ফেলা
শোষণ নয়?

স্বপ্নে দেখ, রাজপথ
হাজার হাজার তুমি
মুষ্টিবদ্ধ ঘোষণা— “বাঁচতে চাই।”


প্রতারণা বিষধর সাপ। আজও
ছোবল দিয়েছে বহু বার। বিষদাঁত তার
নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করেছে টানা ছয় মাস
দংশনের পর।
ভেঙে পড়ার বিষাদ একটি ব্যর্থ সংগম।

উঠে দাঁড়াচ্ছে। চলছে সে আবার।
নীলক্ষত কিছুটা মলিন।

রোদ্দুর, পুরুষ হও, তুমি।
ওর হাত ধরো একবার।
ও প্রত্যয় ফিরে পাক।

 

Categories
কবিতা

সেখ সাদ্দাম হোসেন

সদরঘাট

জল সরে গেছে। ঠাকুরের খড়ের কাঠামো
অসাড় পড়ে আছে বালির চরে

তোমাকে মনে পড়ে
বলো, এখন কি আর প্রণাম করা চলে?
পূজার সমস্ত মাটি ধুয়ে গেছে জলে

শুভ্র বসন, নাকের নোলক— দূর কোনো বন্দরে
আমাদের সমস্ত অনুরাগ ছেড়ে যাচ্ছে ভূমি
বিসর্জন সুরে

তোমাকে মনে পড়ে
এই যে অলস বিকেল, ঠাকুরের ভেসে যাওয়া চুল
এমন ফুটে আছে— যেন বিষাদও এক ফুল

নার্স

ওই দূরে

শুকিয়ে যাওয়া বৃক্ষের ডালে
কয়েকটা পাখি এসে বসেছে
কেউ শিস দিচ্ছে

কেউ ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে নিচ্ছে পোকা

কুকুর


ব্যস্ততা এক কুকুর
ক্ষ্যাপাটে কুকুর
এর থেকে পালিয়ে বাঁচুন


একাকিত্ব
কুকুরের থেকেও ভয়ংকর

স্যালভেশন ৩

অসময়ে, ফুলও বড়ো ভারী লাগে
তবুও সম্ভাবনাময়, ধরো,
গাছের কালো ছায়ার উপর ছড়িয়ে দাও
ফুটে থাক—

এখন এ-সময় বড়ো প্রতারক।
শান্ত হও, একবার বোঝাও তাকে

দুঃখকে যে মেরে ফেলে, আসলে সেও ঘাতক

ইউরেকা

সমস্ত

সমস্ত দুঃখ বলার পরেও
কিছু দুঃখ থেকে যায় গোপনে

বুকের
অনেক
নীচে

পচতে শুরু করে। পচতে পচতে একদিন হঠাৎ
কেউ এসে বলে: এ তো জৈব সার। খুব উর্বর

Categories
কবিতা

সরসিজ বসু

ছান্দোগ্য বিনিয়োগ


যে কং সে-ই খং, যা খং তা-ই কং
যে রাহু সে-ই শির
        রাগরাজ, অমর মস্তক!

প্রতীকের নীচেই অন্ধকার

কথকতা অতিগ্রহ, তুশ্চু বারো আনা
সকলে একত্র হয়েও ভগবান হন না
অথচ একটু পুঁজিপাটা হলে কেউ তাঁকে ছাড়িয়ে ওঠেন


হাসিনামা লেখা হচ্ছে, লেজুড় হয়েছে হাস্যজন
এতটা জামিনযোগ্য থাকবে না এই হাস্যরস

মৃত্যুভয় ভেঙে গেছে বলে
যে-ঔদাসীন্য শেষে আসে
সুরুতেও যদি তা থাকত!

প্রশ্ন করবার বেলা সবাই মেধাবী, মহালোচ্চাগুলো
তদন্তে বাধা হয় এমন গজলও গাওয়া অনুচিত


সফরের পদে পদে আমি কত শূন্য দেখলাম
যে-দেশে যেমন শূন্য, যার কাছে যত আক্ষরিক
রক্তশূন্যতার সঙ্গে ভারসাম্য রেখে
যদি কোনো অছিলায় শূন্যের শরিক হওয়া যায়,
গুজব পাগল দেশে পালাবার তাড়াহুড়ো থাকে

অবিদ্যা ও অপরের বিপরীত রতি
কত নোংরা ভোগমূল্য বাজারে ছেড়েছে!


বারে বারে আর আসা যাবে না: এই মেঠো গানে
প্রণব পুটিত করে নিলে
সেটাই দিনের বড় আপডেট হয়

হৃদয় মৌচাক নয়, গানের ছেপ্‌কায়
প্রসাদী জনমত ঘুরছে শহরে
       নির্দোষ জীবন তুমি ধুয়ে খাবে?

লজ্জাকে ললিতকলা ভাবতেই পারো


তুমি কিন্তু অনেক দূরের কোনো পায়ের আওয়াজে
পা মিলিয়ে হাঁটো,
স্বচ্ছন্দে গিলতে পারো অনেকের গলার আওয়াজ

একখানা সর্ষেপুরাণ যদি লেখা হত!

যে-কথা বলার নয় সে-কথা কোথায় পাওয়া যায়
নিজের কোলেই শুয়ে কত-না ভেবেছ!

তুমি পঙ্‌ক্তিদূষক, তোমাদের দেবতা আলাদা

Categories
2021-JUNE-KOBITA কবিতা

অর্ঘ্যকমল পাত্র

ধ্রুপদী

আমার বন্ধুরা কত কথাই বলে, তোমাকে দেখলে
তোমার বন্ধুরা কত কথাই বলে, আমাকে দেখলে

অথচ,
আমি তোমাকে দেখলে চুপ
তুমি আমাকে দেখলে চুপ

আমাদের বন্ধুরা কত কথাই না বলে
আমাদের দেখলে…

অপেক্ষা

সে আসতে পারে শেষ মুহূর্তে—
এই কথা ভেবে
আমি মুহূর্তকে আর-ও দীর্ঘ করে রাখি

যে-কোনো মুহূর্তে সে আসবেই—
এই কথা ভেবে
আমি মুহূর্তকে বড়ো বেশি ছোটো করে ফেলি

এবং এর ফলে
মুহূর্তেরা ভেঙে যায়
টুকরো করে আমাকে!

অসুখ

যে-বৃষ্টি তুমি চেয়েছিলে
যে-বৃষ্টিতে তুমি ভিজেছিলে সারারাত

সে-বৃষ্টিকে চোখেও দেখিনি আমি।
আমি কেবল চেয়েছিলাম
তার গন্ধ…
এই
এবং বৃষ্টির গন্ধে
ঘুমিয়ে পড়েছি সারারাত…

তৃতীয় বিশ্ব

পাহাড়ের গল্প মাঝেমধ্যেই শুরু হয়
পাহাড়ের গল্প কোনোদিনই শেষ হয় না

এবং যাদের কোনোদিন-ই
কোনো পাহাড় দেখা হয়নি
পাহাড়ের গল্প শুনে
তাদের ভিতরে ভিতরেও

একটা বিশাল পাহাড় জেগে ওঠে

যে-সব আর কিনে দেওয়া হল না

চুড়ি
শুধুমাত্র শৌখিন সৌন্দর্য
বেশিদিন থাকে না

ভেঙে যায়। চুরমার…

টিপ
সংস্কারে বিশ্বাস নেই। জানি।
অসতর্কতার মতো পুনরাধুনিক তুমি

অগত্যা তোমার কপালে
পরিয়ে দিতে চাই না— আমার চিহ্ন

কাজল
এ যেন তোমার
উতলা চোখের বালি।

কোনো কোনো ঢেউ আসে
ঘেঁটে দেয়…

লিপস্টিক
সে তো
ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া মেজোবোন

শুধু গান ধরলেই
উজ্জ্বল লাগে সব কিছু!