Categories
2021-May-Poem কবিতা

গৌতম সরকার

হরেশ কাকার স্যান্ডো আর শরীরে লবণ দিয়ে ভারতবর্ষ আঁকা।
সে-ম্যাপে আছে পাকিস্তান, চীন, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ।
সে যখন হাল দেয় তখন মাটির গন্ধ গায়ে মাখতে ঘুটকুরি আসে, দুধ সাদা বক, টেকেনাই…। এরা
কোন এক প্রাচীন কাল থেকে স্নান করে না। শরীরে তাদের শামুক খোলের মতো মেঠো গন্ধের আস্তরণ।
প্রতীক্ষা নিয়ে বসে থাকে… এক আড়াই আঙুলের লোভে।
আর সেই ডানপিটে আড়াই অন্ধকারকে দড়ি বানিয়ে বানিয়ে ভাগ করে— নুন, ভাত, ফ্যানা।

তোমাকে পেতে চেয়ে শরীর পেতেছি।
আর পেতেছি দুধ সাদা বুক…
তোমাকে চেয়ে উল্লেখযোগ্য উলঙ্গ হয়েছি। অথবা দৃষ্টান্ত হব বলে।
উপরে দিয়েছি ভেজা খড়। ছেঁড়া ধকর। ছোটো ছোটো টেকা দেখব বলে ভোরের আঁচল সরিয়েছি।
ছেনিতে ছুয়েছি জল। মুস দিয়েছি মাখিয়ে…
এত কাণ্ডের পর জুহুরি এসে যখন বল— ও তো খাস্তান!!
তবে পরাগও মিছামিছি মিলন করে। শরীর চেপে থাকে রস।

পাগলা গোরুটাকে অনেক কষ্টে বাগাতে পেরেছি।
সে এখন ডান বাম বোঝে। উঠস বইস বোঝে।
হাই তোলে না আর আগের মতো। লাঙল তুলে দিই ঘারে। তাল তাল সন্তান পাবার আশায় বীজ পুঁতে দিই জমির শরীরটাতে…
জানো নন্দ— এতে কতবার শরীর ভাঙে।
আমার, জমির, গোরুর।
আর তুমি শুধু উল্লেখযোগ্য ভাম ধরো। বাজে খেলো। নীতি করো। আমি কতটুকু তোমার নিয়েছি? আর তুমি কতটা পেয়েছ নন্দ?
চলো খেরোর খাতা খোলো…

মা বলে— বাসন একখানে থাকলে ওমন শব্দ হবেই।
রোজই রেগে ওঠে বড়ো মুখ ওয়ালা ডেকচি। ঝনাঝন শব্দ হয়। কেটলির কারি আর আগুন মোতা গরম সইতে পারি না বলে একা চলে যাই দূরে।
কেকারুদের বাগানে বড়ো গাছে গিয়ে লুকোচুরি হই। মা হয় হয়রান। বাবা হয় আগুন
মা বলল— একদিন দেখিস
সেই যে টুকুনটা ছিল। আমি তাকে বলতাম চিকনঠোঁটি। সে গতকাল হাতবদল হয়েছে। তার কান্না দেখে আমি ভান করেছি।

মা আর কিছু বলে না।
এখন শুধু ভাত হতে ইচ্ছে করে…

পিতা হওয়ার চিন্তা আঁকি। কিংবা আদরের কোল।
দুই থেকে বারো ঘরের নামতা মুখস্থ হয়নি কোনো কালেই। তাই, যোগ আর ভাগের সময় অনেক দাঁড়ি কেটেছি খাতায়।
বলে আপাত এই শ্বাশত বুক ছিঁড়ি। হাতের রেখায় মৃত্যু যোগ খুঁজে একের পর এক গুণ কষতে থাকি। ইনফিনিটি চিহ্ন ছেড়ে হাল কষি ততক্ষণ, যতক্ষণ না বুদ্ধের চরণ অবধি পৌঁছাতে পারি…

পুতুলনাচ এখন নতুন করে ভাবি…
কেমন এক অদৃশ্য সুতোয় ঝুলে আছে মেঘ।
যেমন থাকে জন্ম ও মৃত্যুর সম্পর্কের মাঝামাঝি। উলম্ব… কোনো মোহযুক্ত টান নেই অযথা ঝড়ে যাওয়ার। নেহাতই নিয়ম মেনে চলা ক্লাস সেভেনের ছাত্র সে…
ঘণ্টা-রুটিন-পোশাক…

সে যখন লাবণ্য খায়। বিয়ে হয়…।
খিদে বাড়ে আরও।
মনে হয় আর নয়। নয় আর…
তারপর আবার চরম হতে চায়। শক্ত হয় আটি… তুলতুলে হয় দানব। সে তো এক ভয়াবহ চক্রব্যূহে লড়াই!! লড়তে থাকা ক্লান্ত ভক্ষক চেটেপুটে খেতে থাকে রস।
এরপর না-থাকার এক দশর্ন পাঠ করে। আর না। না আর… সাধু হয়।
না-বাচকের পাঠক হয়।

Categories
2021-May-Poem কবিতা

অর্ণব রায়

ধ্বংসশহর: একটি অনুবাদ কবিতা

একবার আমাদের পুরোনো পিক আপ ভ্যান আর চার ক্রেট বিয়ার নিয়ে অসীমের প্রান্ত দেখব বলে বেরিয়ে পড়েছিলাম। সে-প্রান্তটি, দেখা গেল, এক অচেনা মহিলার বাড়ির সামনে দুম করে থেমে গেল। ইতিমধ্যে ক্রেটের সব বরফ গলে জল হয়ে গেছে। অছিলা নয়, সত্যি সত্যি বরফ চাইতেই সেই বাড়ির সামনে থেমেছিলাম। আদিগন্ত গমের খেতের মধ্যে সেই একখানা একক কাঠের বাড়ি। ফিকে হলুদ আর কালচে রং করা।

আমি কোনোদিনও ভুলব না সেই সামনের কাঠের বারান্দা। ঝোলানো হ্যামক। আইসড টি। ভাই লুসি, অতদূর তুই কোনোদিন যাসনি। অতক্ষণ গাড়ি চালানোর পরে অমন একজোড়া চোখ, চোয়ালের ধার, নরম গ্রীবা আর কখনো কেউ দেখেনি। আর কেউ কখনো অমনভাবে কারোর বলা কথার দিকে হৃদয় পেতে রাখেনি।

এইসব আগুনঝড় ভূমিকম্প পাতালের আগ্রাসন মিটে গেলে একদিন আমরা ওই বাড়িটার খোঁজে বেরিয়ে পড়ব। দড়জায় টোকা মেরে বলব, একটু বরফ পাওয়া যাবে আপনার কাছে? এক আধটা পিক আপ ভ্যান আর কয়েক ক্রেট বিয়ারও জোগাড় হয়ে যাবে নিশ্চই।

ভাই লুসি, ওই বুঝি শুরু হল। আগুনের হলকার মতো এক একটা বাতাসের ঝাপটা বুঝি আসতে শুরু করল। রাত থাকতে চক্রাকার লাল মেঘ বাবায়ারামের মাথার ওপর জমতে শুরু করেছিল। যেন আমরা জানতাম, শেষের শুরু এরকমটাই হবে।

আমরা এ-সব পাশে নিয়েই রাস্তায় হেঁটে বেরিয়েছি। কিছু যে হবে, তা আমরা জানতাম। কিন্তু বিশ্বাস করতাম, কিছুই হবে না। আমাদের জানা আর বিশ্বাসের মাঝে এখন গরম হাওয়া বইছে। গা যেন পুড়ে যাচ্ছে।

এখন কবরস্থানের পাশে গিয়ে প্রার্থনা করার সময়। যে যার পাপের জন্য নিজ নিজ মাপে শাস্তি চেয়ে নেওয়ার সময়।

কিন্তু যদি কেউই না দেখছে, প্রার্থনা করে কী করব? ঈশ্বর এ-শহর ছেড়ে স্মিথদের ওয়াগনে চেপে চলে গেছেন।

যেন এক বিষণ্ণ মেলায় মাঝরাতে এসে উপস্থিত হয়েছি। এখানে লোকের মুখ নিথর। নাগরদোলা থেকে বিষণ্ণতা উপচে পড়ছে। খেলনার দোকান থেকে দুঃখের ফেনা ভসভস করে বেরিয়ে আসছে। আলোগুলি উজ্জ্বল কিন্তু ফিনফিনে কালো চাদরে ঢাকা। ডাঁই করে রাখা খাবারগুলি পাথর হয়ে গেছে। ছুঁয়ে দিলে ভেঙে যাবে।

আমরা, মানে আমি মার্থা আর বাচ্চারা একবার এই মেলায় এসেছিলাম। প্রচুর জিনিস দু-হাত ভরে কেনার পর, এখানেই আমাদের মধ্যে কিছু একটা বিষয় নিয়ে তীব্র ঝাঁঝালো ঝগড়া শুরু হয়। সেই ঝগড়া শুরুর মুহূর্ত থেকে মেলাটি সেই অবস্থায় স্থির হয়ে আছে। আর ধীরে ধীরে ভঙ্গুর পাথর হয়ে যাচ্ছে।

ভাই লুসি, সেই থেকে একটি ঘামে চটচটে মেলায় আমি পথ হারিয়ে ফেলি। সম্পূর্ণ ফাঁকা মাঠে অসংখ্য গলিপথ সৃষ্টি হয়। অগুন্তি ফেরিওয়ালা তাদের বেলুন, বুদবুদ, খেলনা বাঁদর নিয়ে আমার মুখের ওপর ‘পিকাবু’ বলে উঁকি দিয়ে যায়। অচেনা মুখের পাথর আমি রোজ দেখি।
আজ তোর সাথে মেলায় এসেছি। আজ আবার মেলা চালু হবে। এ-পর্যন্ত সরল আজ আমরা হব।

প্রবীণ বয়সে এসে হোমার অন্ধত্বের গুরূত্ব বুঝলেন। সারাজীবন আলোর জন্য হাহাকার করেছেন। সারাজীবন তার কল্পিত জগৎকে একবার দেখার জন্য আকুলি বিকুলি করেছেন। শেষ জীবনে এসে বুঝলেন, আলো নয়, আলোয় উদ্ভাসিত প্রিয়মুখ, ঘরবাড়ি বস্তুপুঞ্জ— কিছু নয়। অন্ধকারই আসল রূপ। নিকষ সীমাহীন অবয়বহীন কালো। এখন তিনি সেই অন্ধকারের ওপর অন্ধকার দিয়ে আঙুল নেড়ে নেড়ে আলপনা আঁকেন।

ভাই লুসি, আমরাও কি সেরকমই কোনো অন্ধত্বে ডুবে গেছি? দেখতে পাচ্ছি কি পাচ্ছি না তা-ই বুঝতে পারছি না। আলো আঁধার গোধূলি সকাল সাদা কালো ধোঁয়া ধূসর— কিচ্ছুটি এখানে নেই। এখান বলতে ঠিক কোথায় তা-ও স্পষ্ট নয়। পৃথিবীর বুক থেকে আমাদের শহর স্বেচ্ছায় গুটিয়ে নেই হয়ে গেছে। শহরের স্মৃতিও আর আমাদের মধ্যে নেই।

লুসি, আমি তোকে ডাকছি, কথা বলছি বটে, তুই আদৌ আমার সাথে শোনার দূরত্বে আছিস কি না জানি না। গাধাটি কোথায় গেল? আমিই-বা কই?

এ-সবের মাঝে হোমারই-বা কী করছেন? কী লিখছেন?

প্রথম ক-দিন ওরা খুব ঈশ্বর ডেকেছিল। ওরা, যে যেরকম, মাটিপূজারী, পাখিবাদী, ব্যথাসঞ্চয়ী, অবিশ্বাসী— যে যার মতন করে প্রাণ থেকে আবেদন পৌঁছোনোর চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল। একদিনও কোনো গাছতলা, গুহা, পাতালঘর, যাদুর মাধ্যমে রোগ সারানো— একটি দরবারের একটি সিটও খালি যায়নি। লোকে রাস্তায় হাঁটু ভেঙে ভেঙে বসে পড়েছে যখন তখন।

প্রথম যেদিন বাবায়ারামের মাথা নড়ে উঠল, তার প্রায় একমাস আগে থেকে চৌকো টেলিভিশনের ভেতরে থাকা মেয়েটি হাত পা নেড়ে আমাদের নীচে, মাটির তলায় সান্দ্র আগুনের চলাচলের কথা বলে আসছিল। শহরের কেউ শুনতে পায়নি। শহরের সকলে সকাল হলে গাড়ি নিয়ে ট্রাফিকের মধ্যে লাফিয়ে পড়তে, বিকেল হলে সেই ট্রাফিক ভেঙে ভেঙে বাড়ি ফিরতে, সপ্তাহ শেষে আবার সেই গাড়ি নিয়ে সমুদ্রের জলে পা ডোবাতে বেরিয়ে পড়তে ব্যস্ত ছিল। রেস্তোঁরাগুলি প্রতি সন্ধ্যায় মানুষের সমবেত গুনগুনানিতে গুনগুন করছিল। প্রথম যেদিন বাবায়ারামের মাথা নড়ে উঠল, টেলিভিশনের ভেতরে থাকা মেয়েটি সেদিন আর হাত পা নেড়ে কিছু বলার চেষ্টা করল না। সেদিন তার ঠোঁটের একপাশে এক নীরব আধখানা হাসি ফুটে উঠল। সেদিনও গোটা শহরে তাকে দেখার কেউ ছিল না। সকলে, যে যেখানে ছিল, স্তব্ধ বিস্ময়ে বাবায়ারামের মাথার দিকে তাকিয়ে ছিল।
ঈশ্বর ডাকার পর্ব একদিন শেষ হলে সকলে শুঁড়িখানায় গিয়ে ভিড় জমাতে শুরু করে।

Categories
2021-May-Poem কবিতা

সুস্মিতা কৌশিকী

সময়

কোথাও তীব্র বাজছে মুহূর্ত
নদী না, ডোডো পাখির সঙ্গম না, প্রচ্ছন্ন আভাস না
ব্যবহারিক অথবা অপেক্ষাকৃত জান্তব গতির অসঙ্গতি
মর্মান্তিক ভুলের কাছে গুটিয়ে যাচ্ছে চিৎ কণিকারা

মনে হয় হার মানতে নারাজ; এক ডানাভর
ঝুপ করে নেমে আসা মাছরাঙা ঠোঁট
তখনও কিছুই তেমন গুছিয়ে তোলা হয়নি
ছোঁ মেরে নিয়ে গেল

দেখে কাতর লাগে; তৃষ্ণার ছিল কিছু বাকি
আপৎকালীন, প্রিয়তার মুখ, যাপনের যৎকিঞ্চিৎ সঞ্চয়
প্রত্যাশার জন্ম-জড়ুল ছুঁয়ে ছেলেমানুষি জিদ

তবু একরোখা; বর্তুলের ভিতর ঢুকে পড়া ছিপ
তুলে নিল নিখুঁত ব্যবধানে
নিমেষ, শূন্যতা, অনাদী, বিষণ্ণ।

বৃদ্ধ গাছ ও স্বতন্ত্র কুঠার

গাছটার বয়স হয়েছে যথেষ্ট
গায়ে ধরা পোকা খুঁটে খায় রঙিন কাঠঠোকরা
এদিক ওদিক সুযোগসন্ধানী পরগাছা ধরেছে জাপটে
দুটো ডাল দুঃখের স্মৃতির মতো আটকে রয়েছে বেহায়া শরীরে

তবু সামান্য স্নেহগন্ধ বৃষ্টিতে এখনও কেমন মেলে ধরে ডানা
ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আকাঙ্ক্ষার নবপত্রিকা
ফল মুখে উড়ে আসে বিবিধ গোপন পাখি
ডালে বসে, গান গায়
আহ্লাদের খড়কুটো নীড় গড়ে তোলে
সালতামামির প্রজনন শেষে সুখের উড়াল

এ-সবই ক্ষণকালের জাদুবাস্তবতা— গ্রাহ্য করে না
সারাবেলা সজাগ অতন্দ্র কাঠুরিয়া,
হাতে নিয়ে স্বতন্ত্র কঠিন কুঠার।

অক্ষয় বৃক্ষচরিত

যেটুকু দিয়েছ ভোগ সেটুকুই, এর বেশি যাঞ্চা করিনি
ফিরেয়ে দিতে পেরেছি লাবণ্য আকর, মাটি ও উর্বরতা
অনীহা উদাসীনতপ উপেক্ষার অনুপূর্ব যাতায়াতে
মুখ ঘুরিয়ে চলে যাইনি ইচ্ছামৃত্যুর ললিতসভায়
হাতে ধরানো ফেরারি সুইসাইডনোট নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি একা—
ত্রিভুবন শয্যার পাশে দৃশ্যহীন বাহুডোরে, যেমন দ্যুতিহীন শ্লীল কঠোরতা আপন হয় অক্লেশে।

মানুষের স্বার্থপরতা দেখেছি, পরশ্রীকাতরতা, উল্লাস
সব ছেড়ে নিজস্ব নির্বান ঘিরে ঐশী বিভার পরন্তপ
দেহপল্লব, সুতনু ঘ্রাণ, চিন্তার মণিকোঠায় জলজ প্রকরণ।

সুদৃশ্য মাইলফলকে অতিক্রমহীন দূরত্ব জ্ঞাপক গেঁথে
পাড়ি দিয়েছি দুরূহ প্রব্রজ্যা, ঋতুপর্ণ মন্থনের কালে
এই দেহ সন্ন্যাসে গোপনে রাখিনি কোনো যৌন-শঙ্খল সাপ।

কেবল হাওয়ার আদলে বদলে গেছি থেকে থেকে, আর
শব্দযোনী খুঁড়ে তুলে এনেছি ওঁ-কার
ব্যথা ভুলবার মন্ত্রে রচিত হয়েছে অক্ষয় বৃক্ষচরিত।

কণ্ঠিবদল

ভেঙে ছিল আবাল্য প্রেম তারুণ্য বিভাজিকায়
দোহাই সৌন্দর্যহীনতা
তারপর একে একে গেছে সব প্রেম, সংসার আবিল
ভেঙেছে যাবতীয় ক্ষোভে ও অভাবে
পথে পথে ঘুরে হাতবদলের ফেরে হয়েছে পতিতা
শরীর ছুঁয়েছে অযুতে, অধরাই থেকে গেছে মন
নেই মান
মানুষের সমাজে ঘৃণ্য সমান।

শেষে এক অন্ধ বাউল
হাত ধরে নিয়ে যায় মাটির কুটিরে
আকাশপ্রদীপ জ্বলে, উদ্ভাসিত একতারা
মন দিয়ে ছুঁয়ে দেয় মন, মাটির নিরালায়
শত শঙ্খ বাজে যে-আঁধারে, অলৌকিক উলু,
তুলসী কাঠের মালা হিরেমোতি আলোর বাহক
যাপন বিন্যাসে গেয়ে ফেরে পথে পথে
বাজে খঞ্জনি দেহতত্ত্ব গানে
সুন্দর হয়েছে সত্য, সত্য‌ অমর্ত্য।

বেঁচে থাক আত্মার বাঙ্ময় আলো, দেহকাঁচা, ফকিরাত।

ব্যক্তিগত জার্নাল

জানাও— কতটুকু আঁধার, কতটুকু অনালোক। আঁধারে বাজুক সেতার সর্বভুক, অনালোক ছুঁয়ে ফেলো সন্ন্যাস জোছনায়। তলিয়ে যেতে যেতে তোমার সিংহকেশর পৌরুষ শাসন করুক আমার ভূলোক দ্যুর্লোক। অমার্জিত প্রেমে বনেচর জীবন ডায়নার খরস্রোত। আমাকে বখে যেতে দাও।

পূর্বজন্মের কথা মনে পড়ে। আহা! জলজ মীন জীবন। পলকহীন চোখে দর্পণের পিপাসা। ইন্দ্রিয়গুলো একে একে মরে যেতে থাকে। স্পর্শ পাখনা ক্ষতিগ্রস্থ হলে জলতল ভুল হয়ে যায়, যেভাবে গন্ধ মরে গেলে বাঁচেনা প্রেম। প্রতিকূল নয় কিছুই, কেবল ধর্মের শিঙা বাজাতে শিখিনি বলে…

আমাকে থামিয়ে দিয়েছ বিনাশরেখা থেকে সংকটপূর্ণ দুরত্বে। রোজ একটু একটু পরখ করে নিই, কতটা অবলম্বনহীন বেড়ে ওঠে বিরুৎজীবন। মুখ লুকোবার পরিসরে পাথর খাদান। তবু ব্যভিচারী আঙুলগুলো সেজে ওঠে অভয়মুদ্রায়।

Categories
2021-May-Poem কবিতা

মণিশংকর বিশ্বাস

ফল

রোদের জটা থেকে ছিটকে ওঠে কয়েকটি শালিখ
‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ কিশোরীর মতো ধানখেত একা শিস দেয়
গোলাপ ফুলটি আসলে ততটা বড়ো, যতদূর তার সুগন্ধ
বহুদূর হতে আকাশে জীবন্ত কোনো গ্রহ তাকে প্রেম নিবেদন করে।
এইসব মিলেমিশে থাকে আমার ভিতর—
বাইরে থেকে বোঝাই যায় না এই মিলমিশ—
একটি বৃহৎ সংখ্যা যেরকম দুই বা দুইয়ের অধিক ক্ষুদ্রতর সংখ্যার যোগফল।

অশোকনগর

ভালোবাসি— এই ব্যক্তিগত বোধগম্যতার আঁধারে
একটি জোনাকি ক্রমাগত জ্বলে বা নেভে।
বরষাঘন চোখের মতো পুকুরের ধারে
দাঁড়িয়ে রয়েছি, ভিজে কুকুরের আনুগত্য নিয়ে।
সাইকেলে বাঁধা বেলুনগুচ্ছের মতো
কী যেন একটা
ছটফট করে, উলটো দিকে ছুটে যেতে চায়।

তোমার চোখের বিন্দুবিসর্গ আমার ভালো লাগে

আমি চাই ও-দু-খানি চোখ জানালা দিয়ে এসে
আমাকে তুলে নিয়ে যাক

…নিয়ে যাক তোমার নিজ্‌ঝুমে, অশোকনগর।

কলাবউ

তোমাকেই পেতে চেয়ে বাকি সব আগডুম বাগডুম
এই শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকও চলে গেল
তুমি সেই দেহতত্ত্ব গান।
সুন্দরের জলে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে—

দুপুরের নির্জন খয়েরিনীল কচুরিপানায়
যেরকম ডুবে থাকে রাজহাঁস।
মনে পড়ে গত শতকের আশির দশক—
মানুষের যা যা দরকার, সব আবিষ্কার হয়ে গেছে
দুপুরবেলা আমিও আবিষ্কার করেছি কখন
প্রতিদিন তুমি শাড়ি খুলে উড়াও পাখির ঝাঁক
পুকুরের জলে মেশে বৃত্তাকার হলুদ
ওই উদ্বৃত্ত নাভিদেশ পরক্ষণেই অন্য মহাদেশ
বৃষ্টিবন…
পঁচিশ বছর দেখা হোক বা না হোক

আজও তোমার মুখের ’পরে
আমার সকল যৌনইচ্ছা খেলা করে।

প্রাক্তন

পুরোনো দিনগুলিকে দুর্বোধ্য সংকেত মনে হয়।

কী যেন ভুলতে হবে—
সারাক্ষণ মনে পড়ে।
রক্তের গভীরে ফোটা এই রক্তজবার মালা
অতর্কিতে দেবতার পায়ের দিকে চেয়ে
হাড়িকাঠের মান্যতা চায়
অন্ধের চোখের সাদা অংশের মতো ভয়
ও কালো অংশের মতো উদ্দেশ্যহীনতা
ছাগশিশুটির ’পরে ভর করে।

আমাদের সম্পর্ককে, অতঃপর, জলে ধুয়ে ফেলা রক্তের দাগ মনে হয়।

নিজের পুরোনো কবিতার মুখোমুখি

যখন পিছন ফিরি তোমাকে দেখতে
মনে করি এ কোন সময়?
তুমি কি গভীর নও তত
তবে কেন এত জল, এত কান্না উপচে পড়ছে?
ফার্নপাতা, শ্যাওলায় ঢেকে গেছে প্রেমিকার চুল
পাথরের শ্বেতাভ হাসির দাগ লেগে আছে
ওই মর্মরজটিল বেদেনির ঠোঁটে…
লতানো ফুলের গাছ থেকে
ঝরে পড়ে ফুল, আরও শাদা ফুল।
একটি গোখরো হিলহিলে, সহসা উঁকি মারে
সবুজ পিচ্ছিল অক্ষরের ফাঁকে

অধীর প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতন।

Categories
2021, January, Kobita কবিতা

মনিশংকর বিশ্বাস

ফল

রোদের জটা থেকে ছিটকে ওঠে কয়েকটি শালিখ
‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ কিশোরীর মতো ধানক্ষেত একা শিস দেয়
গোলাপ ফুলটি আসলে ততটা বড়ো, যতদূর তার সুগন্ধ
বহুদূর হ’তে আকাশে জীবন্ত কোনো গ্রহ তাকে প্রেম নিবেদন করে।
এইসব মিলেমিশে থাকে আমার ভিতর—
বাইরে থেকে বোঝাই যায় না এই মিলমিশ—
একটি বৃহৎ সংখ্যা যে-রকম দুই বা দুইয়ের অধিক সংখ্যার যোগফল।

মেঘ, বৃষ্টির প্রতি

যেদিন তুমি দুঃখ দাও না কোনো—
সেদিনও কেন এত কষ্ট পাই?

শৈশব

এক হাঁটু জল
জলে বাবার ছবি— শুধু একটি মাত্র তারা
কেঁপে কেঁপে দূরে সরে যায়

পারভার্ট- ১

ধর্মাবতার, মিথ্যে বলব না, ঘুম থেকে উঠবার পর থেকেই
শুরু হয় যৌনচিন্তা— মাইল-মাইল লম্বা আর প্যাঁচালো পথ—

চড়ুই পাখি, যারা সারাদিন খুঁটে খায় আর যৌনতা করে
ওদের তো তবু চিন্তাটা করতে হয় না—
এদিকে আমি হাড়হাভাতে
সারাদিন এই পাপের পথে হাঁটি
চটির ফিতে ছিঁড়ে যায়, পায়ে এটা ওটা বিঁধে যায়
এত হিউমিডিটি, যে দম খিঁচে আসে
তবু দরজা খোলে না কোনো…

সন্ধ্যাবেলায় আত্মহত্যার পরে
কখনো-সখনো একপশলা বৃষ্টি নামে—

আরও রাতের দিকে
এঁটো-হাতে ছেঁড়া জবাফুল নিয়ে বসে থাকি
রুগ্নবউ ঘেন্নায় পাশ ফিরে শোয়…

অতর্কিতে

তাজা বরবটির মতো ট্রেন—
এসো, তাকে শীত বলে ডাকি

ব্যক্তিগত ঈশ্বর বা পথের কুকুর—
কাউকে নিয়ো না সঙ্গে

গত তিনদিন ধরে চোখে লেগে থাকা মেয়েটি
পালসের ভিতর হেসে ফ্যালে।

চাঁদের নিজস্ব আলো আছে

চাঁদপানা মেয়েটি আজ হাওয়াইয়ান ব্রিজ ও ল্যাভেন্ডারের মিশ্র সুবাস পরে এসেছে।
এই সুবাস তৈরি হয়েছে বহুদূরের এক সমুদ্রশহরে—
কোরাল প্রাচীর ঘেরা ছোট্ট এক শহর
সেখানে সব পুরুষেরা মৎস্যজীবী, সমুদ্রনির্ভর—
তবে মেয়েরা মূলত সুগন্ধি-কারখানায় কাজ করে
আজ মেয়েটির সঙ্গে সেই সমুদ্রললনাদের এক ঝাঁক এখানে এসে পড়েছে
তাদের রোদ্দুর আর তলপেটের ব্যথা-সমেত।


আর আমি সারাক্ষণ ভাবছি, এই সুগন্ধে
ঠিক কতটুকু
চাঁদের নিজস্ব আলো

Categories
কবিতা

অনিন্দ্য রায়ের কবিতা

হাসির সমার্থশব্দ

হাসির সমার্থশব্দ, তুমি তো ব্রুনেট

দেহাতি ডান্সবার, এখানে আয়না নিয়ে প্রবেশ নিষেধ
যদি নিজেকে খোলার ব্রীড়া নিজেই দেখতে

ওই ছুরি, শীতল খেলনা
ওই টারকোয়েজ রুমাল
          পরস্পরকে টুকরো করছে
               অবদমনের বশে যেভাবে ইন্দ্রিয় কাটা হয়
আর হ্যাজাকের পাশে চুপ করে বসেছে টিকটিকি
পোকারা বিপন্ন হচ্ছে
          পুরুষের চোখের মতো ছোটোছোটো পোকা

সমস্ত পোশাক খুলে শুধু হাসিটুকু পরে রয়েছ, তুমি দ্যু
আর দীর্ঘ কালোচুল যতখানি প্রহেলিকাপ্রিয়

বিরহ বুড়ির বাড়ি

বিরহ বুড়ির বাড়ি, স্বামী ও সতীন থাকে ওপাশের ঘরে
প্রেম কি ওখানে!
আজ কেউ আগুন ধরাবে?
কেউ বলবে, “ভালোবাসা বয়সের পোষা”?
সহসা শেকল খুলে বাইরে এনেছে, নগ্ন
               এবং মাংসাশী
বুক্কনের শেষে যে নৈঃশব্দ্য আসে
সেখানে রক্তের ছোপ উটকো তরুলতায় ছেটানো রয়েছে

Categories
কবিতা

গৌরাঙ্গ মণ্ডলের কবিতা

সমঝোতা

একঘাটে যতদিন স্নান করা যায়
তার চেয়ে দীর্ঘ না সময়

নিঙড়ে নেওয়ার জন্য হাত কি
জলের আজ্ঞা শোনে?

উদ্বাস্তু শ্যাওলায় আমাদের সূর্যোদয়
পিছলে যাওয়ার আগে শক্ত করে বাঁধো আলিঙ্গন

রাজা নই, চন্দ্র নই, কর্তৃকারকের দায়
এখনও পারি না

খুচরো মাংসের দিকে জিভডগা সাপের ফকিরি

ঘর বড়ো, ধড় বড়ো, হাঁড়ি, শূন্য, কাঁধ…
বয়স বেশির মেয়ে, পারাপার দেবে বলে
তুমিও তো নিয়ে চলো
কায়াভীতিতলে

বাংলা ভাষার থেকে সরে যাও
ব্যাকরণ বড়ো বেশি নিষ্ঠুর প্রেরণা

পদটির অনিচ্ছা জেনেও
ব্যাস বাক্য
ভেঙে ভেঙে রাখছ

এই বিচ্ছেদের দায় নাও। যত পারো দুঃখ করো। শোনো, কসাই হইয়ো না

আমার যা পছন্দের, তার
বাইরে তোমাকে খুঁজি
যা অপছন্দের, তার ভেতরেও…

বিস্তৃত সিঁথির মাঝে
বালকেচ্ছা তীব্র হয়ে ওঠে

সমস্ত রৌদ্রকে আজ স্তনের মাদুলি করে নাও
বৃক্ষহীন এ জীবনে বিদ্ধ হোক অপ্রস্তুত ছায়া

সময়

চিহ্ন দেখে নির্ধারণ
বিশ্বাস রাখিনি এই প্রাচীন প্রথায়

কাদা কি পায়ের কেউ!
সে কেন, সে কেন
নির্মাণে ভুলেছে বৃষ্টিকে

দৃশ্যেও গোপন থাকে, রঙের আড়ালও
ছুরির লাগে না কোনো সাজঘর, ব্যাধি

যা বলার, বলে নাও দ্রুত
তুমি তো চন্দন না যে, ক্ষয়ে গিয়ে ছড়াবে সুখ্যাতি

Categories
কবিতা

তমোঘ্ন মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

খিদে

হরিণ লাফাক, তুমি সাপের গর্ভের কথা বলো। আমাদের মাঠে বসে গুণিন ছিলিম টানে ভোরে। ফের কিছু লোক এসে কোকুনের ছাল রেখে যাবে। নদীতে যে মড়া এসে কাল রাতে ঠেকেছে শ্মশানে, তার কোনো নাভি নেই, শুধু কিছু কুচো মাছ খুঁটে খুঁটে শ্যাওলা খেয়ে যায়। গুণিন জমিয়ে বসে, সাপের রভস ব্যাখ্যা করে। কীভাবে নক্ষত্র থাকে শঙ্খ হলে কৃষ্ণা প্রতিপদে… কীভাবে সাপের শুক্র উচাটনে স্থির হয়ে যায়… ফের ঘুম, ফের কিছু উপোসের বাটি নড়ে ওঠে। হরিণ শিথিল হয়ে মুচড়ে গেছে ছোটার আগেই।

একা বুড়ো গুণিনের ঘরের উনুনে ছাই ছুঁড়ে
মড়ার কণ্ঠার হাড় মাছ ভেবে ছিঁড়েছে সারস।

চাষ

মধ্যযামে রমণ। প্রতিবার ক্লান্ত স্ত্রী আরও যেন কুহক, আগামী।
প্রবেশ সংযম ধরে বীভৎস ঝাঁকিয়ে দিল,
যেন নিচে বিছানা নেই, মাধ্যাকর্ষণ নেই।

গতি তো ধ্রুবক নয়; ধীরে ধীরে নিভে যায় আয়ু।

যত চেনা ঘামগন্ধ, সিঁদুরগন্ধ, গৃহগন্ধ—
হাড় তত আগন্তুক শামুক।

সারাদিন বীজ পেটে ভাত রাঁধছে দানে পাওয়া গাছ।

অন্দরে মানতের জ্যান্ত, গাঢ় সুতো

ন’মাস

সুজাতা হয়ে ভাসে।

Categories
কবিতা

নির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা

ছায়ামানুষের খেলনাগাড়ি

১৬

আলো-না আলোয় বোনা পাতার পোশাক তারে মেলা

ফাঁকে ফাঁকে বাজনা থেমে আছে

নেভানো ঘরের জানলা উগরে দিচ্ছে দ্রাক্ষারস, ময়ূরের কেকা

পাড় ভাঙছে মাটির পেয়ালা

বারান্দা হারিয়ে যাচ্ছে দুপুরের নীরব মুঠোয়

জলরঙে আঁকা শূন্য থেকে

যা কখনও লাল নয় তবু তার লালের গভীরে
অস্থির প্যাডেল ঠেলে নেমে যাচ্ছে কাঙাল সেলাই

১৭

নিজেকে পিছন থেকে ধাওয়া করে ব্রহ্মবীজে ফিরেছে কুসুম

ভিতরে তারের বাজনা, বাজনার ভিতরে ডালপালা

ঘুঘু ডাকছে পাতার আড়ালে

দেউটির পিরান থেকে খসে পড়ছে গুলঞ্চ, টগর

কব্জি থেকে কাটা বালিঘড়ির জখমচিহ্ন শুষে
হাওয়া উঠছে ঘুরে ঘুরে ঘুরে

টলমলে গর্ভের ঘুম ভেঙে
গোলকের মুঠো খুলে ভেসে যাচ্ছে মাটির শাবক

Categories
কবিতা

প্রীতম বসাকের কবিতা

স্থিত হও। মধুর যে আলোক—চক্ষু মুদিয়া তাহার সংহিতা বুঝিয়া লও। প্রবীণ বাক্যের পার্শ্বে আমাদিগের সারল্য রাখিয়া দিয়াছি। ওলো কৃষাণীর দেহের কাঁচা লাবণি ভাসিয়া যায় স্রোতে! অধর ফাটিয়া জীবমণ্ডল প্রস্ফুটিত হইতে থাকে। একটি মানুষের দিনলিপির ভেতর ঢুকিয়া পড়ে ভিন্ন মানুষ। দুঃখের সনাতন কাঁপিয়া ওঠে। তুমি ধারণ করিও উহার সজল বায়ু। মেঘ নামাইয়ো আশার ছলনে। দুদণ্ড দাঁড়াইয়ো হে পথিন৷ নিকটে ঘুমাইয়া আছে আমাদিগের দীন সফলতা !

অতঃপর তাহারা পাখির উচ্চতায় আসিয়া বসিল। দেখিল কুঞ্জবনে ছড়াইয়া আছে কাহার নোলক। একটি অসম্পূর্ণ আত্মজীবনীর অংশ ভাবিল কেহ। কেহ কেহ নদীর নিকট রাখিল দুঃখের তরজমা। একটি সহজ রচিত হইতে হইতে সহসা বাঁক লইয়া মানুষের পাড়ায় আসিয়া পড়িল। দেখিল ফুলের প্রতি সন্দেহ! শুশ্রূষা কেন্দ্রের নিকটে পথ হারাইয়াছে একাধিক ছোটোগল্প। একটি শিশুর দাঁতে আমি দেখিলাম চাঁদের টুকরো লাগিয়া আছে। তাহাকে একটি সরলরেখা উপহার দিতে গিয়া আমার হাসি হাসিগুলোর অপমৃত্যু হইল।