অনুবাদ
চার্লস বুকাওস্কি
বারবিকিউ সস দিয়ে যিশু
ভাষান্তর: শুভঙ্কর দাশ
পেট্রল পাম্পের কাছেই হিচহাইকারটা দাঁড়িয়েছিল যখন ওরা তাকে গাড়িতে তুলে নিল। তাকে বসানো হল পিছনের সিটে ক্যারোলিনের সাথে।
গাড়ি চালাচ্ছিল মাররি। ফ্র্যাঙ্ক তার হাতটা সিটের পেছনে রেখে ঘাড় ঘুরিয়ে হিচহাইকারের দিকে ফিরে তাকাল।
‘তুমি কি হিপি?’
‘আমি জানি না। কেন?’ জিজ্ঞেস করল অল্পবয়সি তরুণটি।
‘আসলে হিপিদের ব্যাপারে আমরা বিশেষজ্ঞ। ওদের ব্যাপারে আমরা অভস্থ।’
‘তাহলে আমাদের আপনার অপছন্দ নয়?’
‘আরে না না, আমরা হিপিদের ভালোইবাসি! তা তোমার নাম কী?’
‘ব্রুস।’
‘ব্রুস। বাহ সুন্দর নাম। আমি ফ্র্যাঙ্ক। যে গাড়ি চালাচ্ছে ও হল মাররি। আর তোমার পাশের ওই সুন্দরী মাগিটার নাম ক্যারোলিন।‘
ব্রুস মাথা নাড়িয়ে হাসল। তারপর জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনারা কতদূর যাচ্ছেন?’
‘পুরোটাই যাব আমরা, তোমাকে নিয়ে পুরোটাই যাব আমরা বাচ্চে।’
মাররি হেসে উঠল হা হা করে।
ব্রুস জিজ্ঞাসা করল, ‘উনি হঠাৎ হাসছেন কেন?’
‘মাররি ওরকম সবসময় ভুল সময়ে হাসে। কিন্তু ও আমাদের গাড়ির চালক। আর ও খুব ভালো চালক। ও আমাদের নিয়ে যায় উপকূলের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত। অ্যারিজোনা, টেক্সাস, লুসিয়ানার বুক চিরে। আর ও কখনোই ক্লান্ত হয় না। আর ও ঠিকই আছে তাই না সোনা?’ সে ক্যারোলিনকে জিজ্ঞাসা করে।
‘একদম তাই আর ব্রুসও বিন্দাস।’ সে ব্রুসের হাঁটুতে হাত রেখে অল্প চাপ দেয়। তারপর ঝুঁকে এসে তার গালে একটা চুমু খায়।
‘কিছু কী খেয়েছ তুমি বাচ্চে?’
‘না, আমার বেশ খিদে পেয়েছে।’
‘ঘাবড়ো না। আমরা শিগ্গির গাড়ি থামিয়ে কিছু খাব।’
ক্যারোলিন সমানে হেসে চলেছে ব্রুসের দিকে তাকিয়ে। ‘ও সত্যি খুব ভালো। খুব ভালো।’ ব্রুস টের পেল ক্যারোলিনের হাতটা আস্তে আস্তে তার পা বেয়ে নেমে আসছে তার লিঙ্গের দিকে। ফ্র্যাঙ্ক ব্যাপারটায় গা লাগাচ্ছে না আর মাররি গাড়ি চালিয়ে চলেছে। তারপর ক্যারোলিন ব্রুসের লিঙ্গ ঘঁষতে শুরু করল আর হাসতে লাগল।
‘গত রাতে কোথায় ঘুমিয়েছিলে তুমি বাচ্চা?’ ফ্র্যাঙ্ক জিজ্ঞাসা করল।
‘গাছের নীচে। খুব ঠান্ডা ছিল। আর তাই মন ভালো হয়ে গেল যখন সূর্য উঠল।’
‘তুমি ভাগ্যবান। রাতে কোনো জন্তু তোমাকে গিলে ফেলেনি ভাগ্যিস।’
মাররি আবার হেসে উঠল।
‘আপনি কী বলতে চাইছেন?’ বাচ্চাটা জিজ্ঞাসা করল।
‘আমি বলতে চাইছি তোমার ওই অত চুলের ভেতরে তোমাকে একটা সরস বাচ্চার মতো লাগছে।’
‘একদম তাই’ ক্যারোলিন জবাব দেয়। সে সমানে ব্রুসের লিঙ্গ ধরে উপর নিচ করতে থাকে। সেটা শক্ত হতে থাকে ক্রমে।
‘তোমার কত বয়স ব্রুস?’
‘১৯।’
‘তুমি গিন্সবার্গ, কেরুয়াক পড়েছ?’
‘হ্যাঁ, কিন্তু ওঁরা বিট জমানার। আমরা ভালোবাসি রক এবং লোকসংগীত, আমার জনি ক্যাশকেও ভালো লাগে। আর ববি ডিলান, অবশ্যই…’
ক্যারোলিন ব্রুসের জিপার খুলে ফেলে ওটা বার করে ফেলেছে। তারপর সে তার জিভ ছোঁয়ায়, আর জিভটা ওপর নিচ করে লিঙ্গ বরাবর। ফ্র্যাঙ্ক এমন ভাব দেখায় যেন কিছুই ঘটছে না।
‘তুমি বার্কিলি অবধি এসেছ?’
‘এসেছি তো। বার্কিলি, ডেনভার, সান্টা বারবারা, ফ্রিস্কো…’
‘তুমি কি মনে করো একটা বিপ্লব ঘটবে?’
‘হ্যাঁ, হতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই আর। বুঝতে পারছেন…’
ক্যারোলিন ব্রুসের লিঙ্গটা তার মুখে পুরে নিয়েছে। বাচ্চাটা আর কোনো কথা বলতে পারে না।
মাররি অবশেষে পিছন ফিরে তাকায়, তারপর হা হা করে হেসে ওঠে। ফ্র্যাঙ্ক একটা সিগারেট ধরিয়ে দেখতে থাকে।
‘হে যিশু’, বাচ্চাটা বলে ওঠে, ‘হে ভগবান, যিশু!’
ক্যারোলিন ঝাঁকাচ্ছিল। তারপর সে পুরোটাই মুখের ভেতর পেল। শেষ হল ব্যাপারটা। ব্রুস সিটে গা এলিয়ে দিয়েছে। জিপারটা টেনে বন্ধ করেছে।
‘কীরকম লাগল, বাচ্চা?’
‘সত্যি বলতে, ভালোই লেগেছে।’
‘সবসময় এমন একটা গাড়ি চড়ার অভিজ্ঞতা ঘটে না আর তাছাড়া ব্যাপারটা এখনও শেষ হয়নি। এটা স্রেফ একটা শুরু। দাঁড়াও এবার আমরা খাবার জন্য থামব।’
মাররি আবার হেসে উঠল।
‘ওনার ওভাবে হাসাটা আমার ভালো লাগছে না’, বলল ব্রুস।
‘সব কিছু তো আর ঠিকঠাক হয় না। এই তো সুন্দর একটা চোষণ পেলে।’
তারা আরও কিছুক্ষণ এগিয়ে চলল।
‘খিদে পাচ্ছে মাররি?’
মাররি এই প্রথম কথা বলল, ‘হ্যাঁ’।
‘বেশ বেশ, একটা ভালো জায়গা পেলেই আমরা গাড়ি থামাব।’
‘আশা করি দ্রুত ওটা পাওয়া যাবে’, বলল মাররি।
‘আমার মনে হয় ক্যারোলিনের খিদে পায়নি। ও তো সবে লাঞ্চ খেলো।’
‘আমি কিছুটা ডেসার্ট খেতে পারি যদিও’, ক্যারোলিন হেসে উঠল।
‘আমরা শেষ কখন খেয়েছি যেন?’ ফ্র্যাঙ্ক জিজ্ঞাসা করে।
‘গত পরশু’, উত্তর দেয় ক্যারোলিন।
‘সে কী?’ জিজ্ঞাসা করে ব্রুস, ‘গত পরশু?’
‘হ্যাঁ, বাচ্চা, কিন্তু যখন আমরা খাই, সত্যি আমরা খাই— আরে এই তো। এই জায়গাটা তো ভালোই মনে হচ্ছে। প্রচুর গাছগাছালি, একদম ফাঁকা। গাড়িটা রাস্তা থেকে নীচে নামাও মাররি।’
মাররি রাস্তার ধারে গাড়িটা থামায় আর ওরা সবাই বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে, আড়মোড়া ভাঙে।
‘তোমার দাঁড়িটা খুব সুন্দর বাচ্চা। আর ওই একমাথা চুল। নাপিতেরা তোমার থেকে খুব বেশি কিছু নিতে পারেনি, তাই না?’
‘আমার মনে হয় কেউই পারেনি নিতে’।
‘কেয়াবাৎ বাচ্চে। বেশ, মাররি একটা গর্ত খুঁড়ে ফেলো রোস্ট করার জন্য। একটা শিক তৈরি রাখো। দু-দিন কেটে গেছে এবার তো আমার পেটের অবস্থা করুণ’।
মাররি ট্রাঙ্কটা খোলে। ভেতরে ছিল একটা বেলচা। কাঠ এমনকী কয়লাও। সব কিছুই ছিল যা ওদের দরকার। ও সেগুলো বয়ে নিয়ে চলল গাছগাছালির ভেতর। অন্যান্যরা গাড়িতে গিয়ে উঠল। ফ্র্যাঙ্ক-এর দেওয়া জ্বলন্ত তামাক ঘুরতে লাগল হাতে হাতে আর একটা স্কচের বোতল। মদটা স্মুথ কিন্তু বাচ্চাটার বার দুয়েক জলের বোতলের প্রয়োজন হল।
‘আমার সত্যি ব্রুসকে পছন্দ’, বলল ক্যারোলিন।
‘আমারও ওকে পছন্দ’, বলল ফ্র্যাঙ্ক। ‘তাতে কী, আমরা কি ওকে ভাগ করে নিতে পারি না?’
‘নিশ্চয়ই’।
ওরা সবাই কথা না বলে মদ খেয়ে চলল। তারপর ফ্র্যাঙ্ক বলে উঠল, ‘চলো সব এতক্ষণে মাররি নির্ঘাত সব রেডি করে ফেলেছে।’
ওরা বাইরে বেরিয়ে ফ্র্যাঙ্কের পিছু পিছু চলল গাছগাছালির দিকে। ক্যারোলিন আর ব্রুস হাত ধরাধরি করে। ওরা যখন সেখানে পৌঁছোল দেখল মাররির কাজ প্রায় শেষ।
‘ওই জিনিসটা কী?’ বাচ্চাটা জিজ্ঞাসা করল।
‘ওটা একটা ক্রুশ। মাররি নিজে বানিয়েছে। দারুণ হয়েছে তাই না?’
‘মানে আমি বলতে চাইছি ওটা কী জন্য?’
‘মাররি বিশাস করে ধর্মীয় আচারপদ্ধতিতে। ও একটু ওরকম আমরা এটা মজা করে মেনে নি।’
‘শুনুন’, বাচ্চাটা বলে, ‘আমার খিদে পায়নি। আমার মনে হয় আমি রাস্তা ধরে কিছুটা এগোই হাঁটতে হাঁটতে’।
‘কিন্তু আমাদের খিদে পেয়েছে বাচ্চা’।
‘বেশ, কিন্তু আমার…’
ফ্র্যাঙ্ক বাচ্চাটার পেটে ঘুসি মারল একটা আর সে ঝুঁকে গেল সামনের দিকে, মাররি তার কানের পেছনে একটা গদা দিয়ে মারল। ক্যারোলিন পাতা দিয়ে একটা বালিশ বানাল আর বসে রইল আর তখন ফ্র্যাঙ্ক আর মাররি বাচ্চাটাকে হেঁচড়ে নিয়ে চলল ক্রুশের দিকে। ফ্র্যাঙ্ক ব্রুসকে ক্রুশে ঠেসে ধরে রাখল আর মাররি বাচ্চাটার বাঁ-হাতের পাতায় একটা বড়ো পেরেক গেঁথে দিল। তারপর তারা তার ডান হাতের পাতায় গাঁথল।
‘তুমি কি পায়ের পাতায়ও পেরেক লাগাবে?’ জিজ্ঞাসা করল ফ্র্যাঙ্ক।
‘না, আমি ওতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। বড্ড বেশি কাজ।’
ওরা বসে পড়ল ক্যারোলিনের পাশে আর মদের বোতল দেওয়া নেওয়া শুরু হল।
‘এখানে ওদের সূর্যাস্তটা বড়ো সুন্দর, তাই না?’ জিজ্ঞাসা করল ক্যারোলিন।
‘হ্যাঁ। ওদিকে তাকাও। গোলাপী আর আস্তে আস্তে যা লাল হচ্ছে। তোমার সূর্যাস্ত ভালো লাগে মাররি’।
‘হ্যাঁ তো। আমার সূর্যাস্ত ভালো লাগে। তোমার কী মনে হয়?’
‘আমি স্রেফ জিজ্ঞাসা করছিলাম। রাগ কোরো না আবার’।
‘তোমরা সারাক্ষণ আমাকে একটা বোকাগাধা বলে মনে করো। সত্যিই আমার সূর্যাস্ত ভালো লাগে’।
‘বেশ। তর্ক করব না আমরা। বা হয়তো আমাদের তর্ক করার দরকার আছে। কারণ, আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।’
‘তাই?’ বলল মাররি।
‘হ্যাঁ। আমি বারবিকিউ সস খেয়ে খেয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি ওই স্বাদে ক্লান্ত একেবারে। আর তাছাড়া কোথাও একটা পড়েছিলাম ওটা বেশি খেলে ক্যান্সার হতে পারে।’
‘কিন্তু কথা হল, আমার বারবিকিউ সস ভালো লাগে। আর আমি সারাক্ষণ গাড়ি চালাই, সমস্ত কাজ আমি করি, তাই আমাদের বারবিকিউ সস খাওয়া উচিত’।
‘তোমার কী মনে হয় ক্যারোলিন?’
‘আমার কিছু আসে যায় না, সস দিয়ে বা সস ছাড়া। এখন খাবার খেতে পেলেই হল’।
বাচ্চাটা ক্রুশে নড়াচড়া করা শুরু করেছে। সে পা ছড়ায় দাঁড়াবে বলে, সে উপর দিকে তাকায়। তারপর নিজের হাতটা দেখতে পায়।
‘হে ভগবান। এ আমার কী করেছেন?’
তারপর ব্রুস চিৎকার করে উঠল। সেটা ছিল একটা লম্বা তীক্ষ্ণ আর্তনাদের কাকুতি। তারপর সে চুপ করে গেল।
‘মাথা ঠানৃডা রাখো বাচ্চা’, বলল ফ্র্যাঙ্ক।
‘হ্যাঁ ঠিক’, বলল মাররি।
‘মনে হয় না এখন ও আরেকটা চোষণ চাইবে, তাই না ক্যারোলিন?’
ক্যারোলিন হেসে উঠল।
‘শুনুন’, বাচ্চাটা বলল, ‘আমাকে দয়া করে ক্রুশ থেকে খুলে নামিয়ে দিন। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এই যন্ত্রণা— খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি দুঃখিত যে, আমি চিৎকার করেছি। দয়া করে আমাকে নামান। দয়া করুন, দয়া করুন, হে পরমেশ্বর, আমাকে নামান!’
‘বেশ, মাররি ওকে নামাও।’
‘হে ঈশ্বর, ধন্যবাদ!’
মাররি ক্রুশের দিকে এগিয়ে গেল, তারপর বাচ্চাটার মাথা ঠেলে দিলো পেছন দিকে তারপর তার ঘাড়ের শিরা একটা মাংস কাটার ছুরি দিয়ে কেটে দিল। তারপর সে একটা পেরেক-তোলা হাতুড়ি দিয়ে বাঁ-হাতের পাতার পেরেকটা ধরে টানতে লাগল। সে খিস্তি দিল বিড়বিড় করে।
‘এই অংশটা সবসময় খুব কঠিন।’
তারপর মাররি বাচ্চাটাকে নামিয়ে তার জামাকাপড় খুলছিল। সে জামাকাপড় ছুড়ে ফেলে দিল একপাশে। তারপর ছুরি দিয়ে কাটতে লাগল বাচ্চাটাকে। পাঁজরের নিচ থেকে টেনে পেট বরাবর কেটে ফেলল।
‘চলে এসো’, বলল ফ্র্যাঙ্ক। ‘এই অংশটা আমি দেখতে পছন্দ করি না।’
ক্যারোলিন আর ফ্র্যাঙ্ক উঠে চলে গেল জঙ্গলের ভেতর। যখন ওরা ফিরে এল তখন মাররি বাচ্চাটাকে শিকে গেঁথে রোস্ট করছে।
‘শোনো মাররি।’
‘হ্যাঁ বলো।’
‘বারবিকিউ সস-এর কী হল?’
‘আমি ওটা দিতে যাচ্ছিলাম। ওটা দিতে হয় মাংস রাঁধার সময় যাতে করে সঠিক স্বাদটা পাওয়া যায়, তুমি তো সেটা জানো।’
‘একটা কথা বলি। এই ব্যাপারটা নিয়ে টস করা যাক। তুমি রাজি আছ মাররি?’
‘বেশ। ক্যারোলিন তুমি এদিকে এসো। তুমি মাংসটা উলটেপালটে রোস্ট কর, আমরা ততক্ষণ টস করে নি।’
‘ঠিক আছে।’
‘একবারই কল করবে’, বলল ফ্র্যাঙ্ক। ‘কল করবে যখন কয়েনটা বাতাসে ঘুরছে।’
ফ্র্যাঙ্ক কয়েনটাকে অনেক উঁচুতে টোকা মেরে পাঠাল।
‘হেডস!’ চেঁচিয়ে উঠল মাররি।
কয়েনটা এসে পড়ল। ওরা এগিয়ে গেল দেখতে।
হেডস ছিল।
‘ধোর বাঁড়া’, বলল ফ্র্যাঙ্ক।
‘তুমি যদি খেতে না চাও তাহলে খাবার দরকার নেই তোমার’, বলল মাররি।
‘আমি খাব,’ উত্তর দিল ফ্র্যাঙ্ক।
পরের দিন সকালে তারা চলেছে গাড়ি চালিয়ে। গাড়ির সামনে বসে আছে ফ্র্যাঙ্ক আর মাররি, আর পেছনের সিটে ক্যারোলিন। সূর্য উঠে গেছে অনেকটা। ক্যারোলিন পেছনের সিটে বসে আছে একটা হাত নিয়ে। হাতের আঙুলের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
‘এই মেয়েছেলে খেতে পারে বটে, আমি এমন দেখিনি’, বলে ওঠে মাররি।
‘হ্যাঁ, আর প্রথম চাখাটা তো ওই চেখেছে। ছেলেটা গাড়িতে ওঠার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে’।
ফ্র্যাঙ্ক আর মাররি দু-জনেই হা হা করে হেসে ওঠে।
‘এইসব বাজে কথা কিন্তু, এক্কেবারে বাজে কথা!’
ক্যারোলিন গাড়ির কাচ নামিয়ে হাতটাকে বাইরে ছুড়ে ফেলে।
‘আমার পেটটা বড্ড ভরে গেছে’, মাররি বলে, ‘আমি আর একটাও হিপি দেখতে চাই না।’
‘তুমি একই কথা বলেছিলে ২ বা ৩ দিন আগে’ ফ্র্যাঙ্ক বলে ওঠে।
‘আমি জানি, আমি জানি…’
‘ওই দেখো! আস্তে চালাও! আমার মনে হয় আমি আর একজনকে দেখছি! হ্যাঁ, দেখো, দাঁড়ি, চটি, সাজগোজ’।
‘এটাকে বাদ দাও ফ্র্যাঙ্ক’।
হিপি তাদের দিকে বুড়ো আঙুল নাড়িয়ে লিফট চায়।
‘গাড়িটা থামাও মাররি। দেখা যাক না ও কতদূর যেতে চায়।’
ওরা গাড়ি থামায়।
‘কতদূর যাবে বাচ্চে?’
‘নিউ অরলিয়ন্স।’
‘নিউ অরলিয়ন্স? ওতে আমাদের কম করে যেতে ৩ বা ৪ দিন লেগে যাবে। বেশ উঠে পড়ো, বাচ্চা। যাও পিছনে গিয়ে বোসো আমাদের সুন্দরী ভদ্রমহিলার সাথে।’
হিপি গাড়িতে উঠে পড়ে আর মাররি গাড়ি চালাতে শুরু করে।
‘তোমার নাম কী, বাচ্চা?’
‘ডেভ।’
‘ডেভ। বাহ্ সুন্দর নাম। আমি ফ্র্যাঙ্ক। যে গাড়ি চালাচ্ছে ও হল মাররি। আর তোমার পাশের ওই সুন্দরী মাগিটার নাম ক্যারোলিন।’
‘আপনাদের সবার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগছে’, বলল ডেভ আর তারপর ক্যারোলিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।
‘তোমার সাথে দেখা হয়ে আমরাও খুশি হয়েছি’, হাসল ক্যারোলিন।
মাররি ঢেকুর তুলল আর তখনই ক্যারোলিন তার হাতটা রাখল ডেভের হাঁটুর উপর।
[এই লেখাটা নিয়ে বলতে গিয়ে বুকাওস্কি বলেছিলেন, এই গল্পটার মূল ভিত্তি আমেরিকার টেক্সাসে ঘটা একটা ঘটনার নিউজ রিপোর্ট। পরে পুলিশ যখন ওদের ধরে তখনও মেয়েটার হাতে ছিল একটা মাংসের টুকরো। সে-মাংস কীসের তা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না।]
অনুবাদক: শুভঙ্কর দাশ
জন্ম ১৩ই মার্চ, ১৯৬৩, কলকাতায়। একাধিক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— চার্লস বুকাওস্কির অজানা ১০’, ‘দানিল খার্মস’, চার্লস বুকাওস্কির জার্নাল ‘ক্যাপ্টেন দুপুরে ভাত খেতে গেছে আর নাবিকেরা দখল নিয়েছে জাহাজের’, ‘আমেরিকার ভেন্ন কবিতা’, ইত্যাদি।

চার্লস বুকাওস্কি
(১৬ আগস্ট, ১৯২০- ৯ মার্চ, ১৯৯৪) একজন জার্মান-আমেরিকান সাহিত্যিক। ‘ডার্টি রিয়্যালিজম্’ এবং ‘ট্রান্সগ্রেসিভ ফিকশন’ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব তিনি। গল্প, উপন্যাস, কবিতা— সাহিত্যের নানা মাধ্যমে বিচরণকারী এই সাহিত্যিক তীব্র যৌনতা ও ভায়োলেন্সের কথাচিত্রের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন সমাজেতিহাসের নির্মম বাস্তবতাকে।