লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

দেবোত্তম গায়েন

প্রলাপ এক মধুর স্বর…


মায়ের সমস্ত সুরের প্রলেপ প্রতিপালনের মধ্যে ঘুমিয়ে রইল। আগাছার জন্ম এ-বাড়ির মধ্যে হলে তা শাকপাতাসন্তান। অকুণ্ঠ চেয়ে চেয়ে শেষে লাল হয়ে এলে তার নাম জবা, জবা-ই। মাটিরূপ। ভাষা দাও। শরীরের কষ্ট। প্রমাদের মধ্যে জীবন। আমি বুঝতে পারছি তুমি উলঙ্গ, ভীষণ ঠান্ডা মস্তিষ্কজীবী এক পরাভূতা, জেগে আছে প্রচণ্ড বৈভবে ঘ্রাণের শিউলি, এ-দেহ না থাকলেও হত।


নিজের মধ্যে অন্ধ জেগে উঠলে পিঠ ভারি হয়ে আসে না-দেখার বোঝা নিয়ে। তাই সে নম্র হতে চেয়েও শত্রু সেজে বাড়ি ফেরে। তার ‘কে’ আলো চাইতে গিয়ে লতা হয়ে যায় পড়শির নরম জানালায়। এই শোভা থেকে আমাকে মুক্ত করে আপদকালীন স্বপ্ন। চেয়ে আর দেখার মধ্যে অনেকটা ফারাক, আমি বুঝতে পারি না। ডুব নিয়ে নেয় তারপর…


পতনের আশ্চর্য চিত্র তুমি বয়ে নিয়ে চলেছ নিরন্তর। মহিমার নীল চাঁদ ফুটে উঠলে অপরাজিত তুলতুলে শরীর চিরে বেরিয়ে আসে আরও একটা মানুষ। পৃথিবীর উপর এই অভিমান শ্বাপদের মানায় না তাই। ফুলের মর্ম মৃত্যু থেকে ছুটে আসা মৌমাছির মতো। ভিজে পদ্মের খসখসে ধ্বনি যে শীৎকার হয়ে ওঠে; এ তেমন বর্ষার গানও নয়।


হরিণ এক শাবক। ধোঁয়া ওঠা শরীরের কঠিন পর্যবেক্ষক। নিমজ্জিত অন্ধকার থেকে সরে এসে মানুষের বিশ্রাম পোষ মানিয়ে গেল শস্যের ফলন এবং যৌথ পরিকাঠামো। ছুঁয়ে দেখার প্রকৌশল এক আদ্যাপিঠের গুপ্ত মূর্তি। গোলা ভরা উলঙ্গ পোকা ফসল খেয়ে গেলে নিয়ম হয়ে উঠল পর্যবেক্ষক।


এ ভরা ডাকের মাঝে পড়ে আছে গাছের শুকনো আদল। বাদল ওহে বাদল। শরীর যে নগ্ন করি পরম বিশুদ্ধ সে-ধ্বনি; প্রবালের অনুভূতি। গভীরে কেউ, দেখে না সে মানুষের আঁচ পাওয়া ঢেউ। খেতে খেতে ভরে আছে সোনা ধানের আবেগ; সেরে যায় শরীর, ভিতর। নিজেকে যে নগ্ন করি পরম সত্যি এই। আবহ গান হয়, হয়ে ওঠে সত্তা এক প্রতিধ্বনি।

Facebook Comments

পছন্দের বই