লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

দেবজ্যোতি দাশগুপ্ত

একাদশী

অন্ধ আকাশে উজ্জ্বল চন্দ্রবিন্দু ঝুলিয়ে,
জোৎস্না ‘চ’ থেকে ‘ছ’-এর দিকে
বৈঠা হাতে এগোয় অভিকর্ষের টানে।

‘দ’-এ দূরত্ব; ‘দ’-এ দৃষ্টি।

আমরা স্বাধীন জোৎস্না উপভোগ করে,
ওর ত‍্যাগ করা একাধিক শয‍্যা-কে কলঙ্ক বলে ডাকি।

অনুরণন

মাঝরাতে আলো নেভার পর,
প্রতিটি শরীর দেশ হয়ে ওঠে।
এক নিঃশ্বাসে আওড়ে নেয় পররাষ্ট্র নীতির সারমর্ম।
চৌষট্টি খোপের বিছানায় সেঁধিয়ে যায়
প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য।
এখানে শুধু আমদানি হয়।
আর রপ্তানিতে বজ্রপাতের ভয়।
মখমলের সীমানায় ভাগ হয় আত্মপ্রকৃতি।
পাশবালিশের দুই ধারে দুইটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র আবদ্ধ
এক জীবনের হার না-মানার চুক্তিতে।

পাসওয়ার্ড

ইস্তক দেখছি, চোখের সামনে একটি জায়ান্টস্ক্রিন ঘোরাফেরা করছে।
শুধু আমার নয়, সবার।
তবুও কিছু দৃশ্যে
কেউ কেউ কী সুন্দর, সুনিপুণ ভাবে চোখ বন্ধ রাখে।
ভাবে, অন‍্যরাও বুঝি এর স্বাদ হতে বঞ্চিত।
সুযোগের সদ্‌ব্যবহার ঠিক তখনই ঘটে।
যাবতীয় গোপনীয়-নিষিদ্ধ যা-কিছু আছে কুড়িয়ে
মা, বাবা, ভাই, বোন, প্রেমিক, প্রেমিকা, বন্ধু, বান্ধবী
সকলকে বোরের মতো সামনে দাঁড় করিয়ে দিই পাহারায়।
আর এরাই এই ডিজিটাল যুগে ক্রমশ,
মানুষ থেকে পাসওয়ার্ড-এর এক-একটি বিন্দু হয়ে ওঠে।

পদোন্নতি

একে-অপরের উন্নতির পাশ দিয়ে যাতায়াত করি

অজানা সময়, অজ্ঞাত পরিচয়

ঘরে সবকিছুর মান শূন্য

ধনাত্মকে গিয়ে ঋণাত্মকে ফেরা

উন্নতির দূরত্ব স্থির

আফসোস

সেটি কমে গেলে পথ বলে আর কিছুই থাকবে না।

ইনসমনিয়া

ঘুম না-আসার দায় রাতের উপর চাপিয়ে দিই

আণুবীক্ষণিক স্মৃতিচারণ

দেখতে দেখতে পৃথিবীর সমস্ত ভরকেন্দ্রের মালিকানা পেয়ে চোখ বুজতে ভয় হয়

ঘুমোলে নিজেকে দেখতে পাই না বলে জেগে থাকি পাহারায়

আর ঘুমন্ত মুখ দেখে ভাবি

সে তার পরিচয়কে এত সহজে সরিয়ে রাখে কীভাবে?

Facebook Comments

পছন্দের বই