লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সাক্ষাৎকার

হ্যান ক্যাং

“যদি আমি ১০০ % সুস্থ হতাম তাহলে আমি লেখক হতাম না”

ভাষান্তর: শতানীক রায়

আপনার নতুন বইটি আপনার দিদির কাহিনিকে ঘিরে যে জন্মানোর দু-ঘণ্টা পরে মারা যায়। আপনাকে এখন এই কাহিনি লেখার জন্য— কী বাধ্য করল— বা অনুভব করালো?
আমি ভেবেচিন্তে আমার বড়োদিদির সম্পর্কে লিখিনি। আমাকে বড়ো করে তুলেছে আমার বাবা-মা যারা কখনো তাকে ভুলতে পারেনি। আমি যখন ‘হিউম্যান অ্যাক্টস্‌’ লিখছিলাম, সেখানে একটা এক লাইনের সংলাপ ছিল: “মরে যেয়ো না, অনুরোধ করছি মরে যেয়ো না।” সেটা আশ্চর্যভাবে একইরকম আর সেটা আমার ভেতর অনুরণনিত হয়েছে। তখনই আমি আবিষ্কার করি সেটা আমার মায়ের স্মৃতি থেকে প্রভাবিত আমকে সে বলেছিল যে, সে ওই শব্দগুলো ক্রমাগত দিদিকে বলে গেছিল যে আমার জন্মানোর আগেই মারা গেছিল।

আপনি লেখেন যে, কীভাবে আপনি “জন্মেছেন আর বড়ো হয়ে উঠেছেন সেই মৃত্যুস্থানেই”। সেটা আপনার বড়ো হয়ে ওঠাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
সেটা শুধু বিচ্ছেদের ব্যাপার ছিল না। সেটা ছিল আমাদেরকে কেন্দ্র করে যে, আমরা কত মূল্যবান। বাবা-মা আমার ভাই আর আমাকে বলেছিল: “তোমরা আমাদের কাছে খুব মূল্যবান হয়ে জন্মেছ আর আমরা তোমাদের জন্য অনেককাল ধরে প্রতীক্ষা করেছি।” কিন্তু সেখানে শোকও ছিল। সেটা ছিল শোক আর মূল্যবান জীবনের মিশ্রিত বোধ।

আপনি বইতে স্বীকার করেছেন যে, যদি আপনাদের মায়ের প্রথম দুটো সন্তান মারা না যেত, তাহলে হয়তো আপনি আর আপনার ভাই জন্মাতেন না। এটা আপনাকে কীরকমভাবে ভাবায়?
যখন আমার মা আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিল, সে খুব অসুস্থ ছিল, তাকে অনেক ওষুধ খেতে হচ্ছিল। যেহেতু সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সে গর্ভপাত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তারপরই সে আমার নড়াচড়া নিজের ভেতর অনুভব করে আর সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে জন্ম দেওয়ার। আমার মনে হয় এই জগৎ পরিবর্তনশীল আর ভাগ্যবশত আমাকে এই জগৎটা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

বইয়ের শুরুর পৃষ্ঠাগুলোতে, আপনি বলছেন যে, আপনি চাইছেন এই বইয়ের লেখার প্রক্রিয়া যেন রূপান্তরকারী হয়, সেটা কি হয়েছে?
হ্যাঁ, এই প্রক্রিয়া আমাকে সত্যি সহযোগিতা করেছে। নিত্যদিন সেটা ছিল একটা ছোটো আচারের মতো: প্রার্থনার মতো। যখন আমি লিখছিলাম, সেটা মনে হচ্ছিল যেন আমি নিত্যদিন কাছে আরও কাছে পৌঁছে যাচ্ছি, দিনের পর দিন, আমাদের ভেতরের সেই জায়গায় যা কখনো ধ্বংস করা যাবে না, যা সৃষ্টিও করা সম্ভব নয় বা নষ্ট করাও যাবে না।

কৈশোরাবস্থায় আপনার একটা নিস্তেজ করা মাইগ্রেন ছিল। সেটা আপনাকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে?
আমার মাইগ্রেনের ব্যথা আমাকে সবসময় মনে করায় যে, আমি একজন মানুষ। কারণ, যখনই মাইগ্রেন শুরু হয়, আমাকে থামিয়ে দিতে হয় আমার কাজ, আমার পড়াশুনো, আমার রোজনামচা, সেটা আমাকে সবসময় আমাকে নম্র করে এসেছে, আমাকে সহযোগিতা করেছে এটা বুঝতে যে, আমি মরণশীল আর দুর্বল। যদি আমি ১০০ % সুস্থ আর প্রবল অনলস হতাম তাহলে হয়তো আমি লেখক হতাম না।

আপনি বলেছেন, ১৪ বছর বয়সেই আপনি জানতেন যে, আপনি লেখক হতে চান। আপনি কীভাবে জানতে পারলেন?
আমি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম। আর তখনই, পাঠক হিসেবে, আমি অনুভব করলাম প্রতিটি লেখকই উত্তর খুঁজছেন আর তাঁদের কাছে কোনো উপসংহার নেই, কিন্তু তাঁরা লিখে যাচ্ছেন। সেই অবস্থান থেকে আমি ভাবলাম, কেন আমিও সেটা শুরু করে দিই?

আপনার বাবাও একজন ঔপন্যাসিক। তিনি আপনাকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন?
আমি যে-বাড়িতে বড়ো হয়ে উঠছি সেখানে অনেক বই ছিল— আমার মনে হয় এটা একটা বিশেষ দিক।

আপনার পছন্দের কিছু ছোটোদের বই কী কী ছিল?
আমি অনেক কোরিয়ান লেখকদেরই পছন্দ করতাম আর অনুবাদ বইও, যেমন অ্যাস্ত্রিদ লিনড্রেন-এর ‘দ্য ব্রাদার্স লাইয়োনহার্ট’।

কোন লেখকেরা সবচেয়ে বেশি আপনার লেখনিকে অনুপ্রাণিত করেছে?
কোরিয়ান লেখকদের মধ্যে আমি লিম চুল-উ-এর ছোটোগল্প ভালোবাসি। আর বিদেশি লেখকদের মধ্যে আমি ভালোবাসি দস্তয়েভ্‌স্কিকে।

কোন সাহিত্যিকের সঙ্গে, মৃত বা জীবিত, আপনি সবচেয়ে বেশি ইচ্ছুক দেখা করতে?
আমি লেখকদের সঙ্গে দেখা করতে চাই না: আমি তাঁদের সঙ্গে আগেই দেখা করেছি তাঁদের বইয়ের মাধ্যমে। যদি আমি তাঁদের বই পড়ে থাকি আর কিছু অনুভব করি, সেটাই আমার কাছে খুব মূল্যবান বিষয়। লেখকেরা তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব নিজের বইতেই দিয়ে দেন সেই কারণেই আমার পক্ষে সে-সব বই পড়াই যথেষ্ট।

আপনার উপন্যাস ‘দ্য ভেজেটেরিয়ান’ ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করে। সেটা আপনার লেখকজীবনে কীরকম প্রভাব ফ্যালে?
আমি অনেক বেশি পাঠক আর বৃহৎ দর্শকের সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু কয়েক মাস পরেই আমি ফিরে যেতে চেয়েছি আমার ব্যক্তিজীবনে, কারণ, একজন লেখকের জন্য সর্বক্ষণ খুব বেশি মনোযোগ ভালো নয়। আবার মনোযোগের তোয়াক্কা না করে এবং ক্রমাগত লিখে যাওয়া, এটা অসম্ভব।

Facebook Comments

অনুবাদক: শতানীক রায়

জন্ম— ২৩.০১.১৯৯৩। কবিতা লেখার শুরু ২০১১ সালে। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। প্রাণীবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। মূলত কবিতা লেখেন। পাশাপাশি গদ্য ও প্রবন্ধও লেখেন। অনুবাদও করে থাকেন অল্পস্বল্প। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখে চলেছেন। জলটুঙ্গি পত্রিকা সম্পাদনা করছেন ২০১৬ সাল থেকে।

পছন্দের বই