লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

ইন্দ্রজিৎ নন্দী

বাদুড়কলোনি


বাদুড়ের ভালোবাসা সহজেই অনুভব করা যায়
কেন-না, শহরতলির শেষে নগ্ন মৃতপ্রায়
তাদের চিন্তাহীন ঝুলে থাকা!

সম্পর্কের ভিতরে বাড়ে তুমুল সম্পর্কতাপ।
তুমি টের পাও ঢের জীবন বেঁচে থেকে
আর বাদুড়েরা টের পায় কয়েক মুহূর্তে!
যখন অপরপ্রান্ত ভালোবাসায় ধাক্কা লেগে ফেরে আল্ট্রাসোনিক,
তাদের এই ঝুলে থাকা সম্পর্ক শান্তির কিংবা প্রেমের সমধিক।


তোমাকে আমি প্রেমিকা হিসেবে অল্পই চিনি।
যখন যখন রোদ পড়ে আসে প্রেমিক দারুচিনির,
হেমন্ত আঁকা গাছটার নিচে আমাদের দেখা হয়,
সময়টা বোধ’য় খারিফ শস্য কাটার সময়…

মাঠে ধান নেই, ইঁদুরেরা কেটে নিয়ে গেছে ঘরে
ওদিকে ঠোঁটখড় বয়ে ফেরে শালিখ শহরের
মাঠের একপাশে দারুচিনি, অন্য পাশে পিপুলের শান্ত কলোনি।
বাদুড়-মেঘের উলটো দিকে ঝুলে থাকা ন্যাসপাতি ফল যেমন
সেভাবেই আমরা ভালোবাসাটুকু চিনে নিই।


ছিল না শিমুল কাঠের ছলনা;
পর্যটক পাতা সাজিয়ে রাখে অর্জুন সামিয়ানা!
পাতার নীচে ঘুরতে আসে ট্যুরিস্টব্যাগ— অ্যাটাচিকেস,
সম্পর্কের মতো শিমুল, হাওয়া লেগে চিপকে একশেষ
পর্যটক মাথায় লাগে, গায়ে লাগে, ওড়ে
উড়তে উড়তে সারারাত জাগে, সমস্ত রাত জাগে

জাগতে জাগতে বাদুড় হয়ে যায় বাদুড়ের পড়শী পাতাটিও
যা কিছু ওড়ে তাদের বাদুড়বশে পালক ভেবে নিয়ো!


বৃষ্টি পড়লে এক ফুলের হৃদয় পুকুর হয়ে যায়
চুলের খোঁপা থেকে বয়ে চলে গন্ধরাজ নদী;
নদীর জন্য এক পৃথিবী ভালোবাসা রেখে
ঝরে যায় শালবন পাতা।
পাতা বয়ে গেলে নাম জানা হয় না খরস্রোতার।

নদীর মতো করে একবার সে-পাতার শরীর তুলে ধরো,
পারো! সংসারের ভিত নাড়িয়ে চলে যেতে তুমি পারো।

নড়বড়ে ভিত শিকড়ের উপর তীব্র মেঘের সংসার বানাব
আমরা দু-জন, দূর থেকে মনে হবে পাখি!
দিনশেষে আমরা আসলে ঘোরতর স্তন্যপায়ী।


একটা প্রেমের প্রতি আমরা বরাবরই উদার
যে-প্রেমে চুলে পাক ধরে জারুলপাতার
কিংবা বুড়ো পাতা পড়ে ভরে ওঠে শিউলি সরোবর;
পড়ে যায়, ডুবে যায় বুক অবধি ভিজে শাড়ির মতো,
এ-সব অনেক পুরোনো পদ্ধতি— ইতিহাস লিখিত

এক শরীরের ইতিহাস লিখতে গিয়ে
প্রায়শই নিমগাছ কিংবা নিয়ামক সানন্দার তীরে
ঝুঁকে পড়া মেধা নিয়ে— জলের উপর জেলেপাড়ার নিম
বাদুড় শরীরের মতো তার ছায়া গভীর— অসীম।

অসীমের উপরে জল, নীচেও স্মৃতির মতো কালো নিমরাজি জল,
মাঝখানে তিতো অস্তিত্বের মতো সোহাগ কিংবা গাঢ়তর নিমফল।

Facebook Comments

পছন্দের বই