লেখক নয় , লেখাই মূলধন

জেন কবিতা

কোব্যায়শি ইশা

ভাষান্তর: রাজীব দত্ত

[কোব্যায়শি নব্যুয়কি থেকে কোব্যায়শি ইশা। ইশা মানে ‘এক কাপ চা’। এটা ছদ্মনাম। জাপানের অন্যতম যে-চারজন অন্যতম জেন কবি; ইশা তাদের একজন। বাকিরা হচ্ছেন বাশো, বুসোন এবং শিকি। ইশা কবিতা লেখা শুরু করেন শৈশবেই। মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর লেখা কবিতার সংখ্যা বিশ হাজারেরও বেশি। তার মধ্যে অধিকাংশই প্রকৃতি নিয়ে। একটা মাছি, মথ, ফড়িং, ব্যাঙ, শামুক, মাকড়শা, প্রজাপতি, চড়ুইপাখি, কোকিল, কুকুর, চেরিফুল সকলেই ইশার বিষয়। তাদের সবার সাথেই মিলে মিশে নিজের মনুষ্য জীবনের দিকে যেন তাজ্জব তাকায় আছেন। বিহ্বলভাবে। পড়তে পড়তে সেই বিহ্বলতায় আমরাও সংক্রমিত হচ্ছি। কল থেকে পানি পড়ার শব্দ, পুরোনো দরজার আওয়াজ, মরচে পড়া তালা সব রকম প্রাত্যাহিকতার মাঝেই যেন ইশা। আর এটাই বোধহয় জেন; জেন কবিতা। সীমার মধ্যে অসীমের সন্ধান।

এইবার অনুবাদ প্রসঙ্গ। হাইকুর যে-শব্দবিন্যাস, তার যে-নিয়ম, তাকে এখানে মানা হয়নি। কারণ, আমার ধারণা, জাপানি ভাষা-শব্দের যে-বিন্যাস চাইলেও বাংলায় তা মানা সম্ভব না। দুইটা দুই ভাষা। ভাষা ভিন্ন হবার কারণে তার ব্যাকরণ-উচ্চারণ ইত্যাদি বিষয়াদিও ভিন্ন হতে বাধ্য। জাপানি বর্ণমালার হিসেবে বাংলাকে সাজালে তা কাঠখোট্টাও হয়ে উঠতে পারে। তাই, স্বাধীনতা নিয়েছি যথেষ্ট। কারণ তথাকথিত মূলানুগত থাকার দায়ে পাঠক যেন হোঁচট না খান। যেন মনে না করেন তিনি ভিন ভাষার সামনে। বলতে পারেন, পাঠকের অজুহাতে নিজের দায় নিজেই কমিয়ে নিলাম। উপায় ছিল না আর। এর আগে ইশার কবিতার আরেক কিস্তি অনুবাদ আরেক জায়গায় ছাপা হয়।

আরেকটা বিষয়, সবগুলো কবিতাই ইন্টারনেট থেকে নানা জায়গা ঘুরে সংগ্রহ করা এবং বেশিরভাগেরই ইংরেজি অনুবাদক রবার্ট হ্যাস। যেহেতু জাপানি থেকে ইংরেজি, তারপর ইংরেজি থেকে বাংলা; তাই নিশ্চিন্তেই বলা যায় দুধ তো নাই-ই, ঘোলও বাকি নাই। তাই ভালো হয় যদি আপনি ইংরেজিটাই পড়েন এবং আমার ভুলগুলা ধরায় দেন।]


ও টুনটুনি—
এই দিক ওই দিক তাকায়া
কী খুঁজো?


কোকিলটা কানতেছে;
যেন মাত্র দেখল
পর্বতটারে।


বরফ গলতেছে;
আর গ্রামটা ভরে গেল
বাচ্চাকাচ্চায়।


কাকটা
এমনভাবে হাঁটতেছে
যেন চাষবাস করতেছে


এই গরমকালের রাইতে
তারারাও
কানাকানি করতেছে।


একটা বাছুর
এই হেমন্তের বৃষ্টিতে
ঘুরতেছে।


নতুন বছর, নতুন সকাল
হাঁসেরা পুকুরে
প্যাকপ্যাক।


নয়া বছর
নয়া নয়া ফুল;
আর আমার যাচ্ছে আর কী!

১০
শুয়েছিলাম দুপুরে;
কৃষকদের গান শুনে
লজ্জা পাইলাম।

১১
পুরাদিন
ঘুমায় কাটাই দিলাম;
কেউ-ই কিছু কইল না।

১২
মাছিরা
আমি বাইরে যাইতেছি
তোমরা ধুমায়া প্রেম করো

১৩
ঘুম থেকে উঠে
হাই তুলতে তুলতে
বিলাইটা প্রেম করতে চলে গেল

১৪
ও চড়াইপাখি
রাস্তা ছাইড়া দাও;
ঘোড়া আসতেছে

১৫
এমনকী পোকাদের সাথেও—
কেউ গাইতে পারে
কেউ পারে না।

১৬
এই দুনিয়ায়
নরকের ছাদে হাঁটতে হাঁটতে
ফুল বাগান দেখতেছি

১৭
মাকড়শারা,
টেনশন নিয়ো না
ঘর এরকমই থাকবে।

১৮
মাছিদের মাইরো না
তারা হাত জোড় কইরা
মাফ চাইতেছে

১৯
পয়সাওয়ালাদের জন্য
বরফ পড়া নিয়া হাবিজাবি লিখতেছি,
আর্ট-টার্টনা।

২০
একটা বড়োসড়ো ব্যাঙ আর আমি;
একজন অপরের দিকে
অপলক তাকায় আছি।

২১
কী অদ্ভুত!
এই ফুলে ভরা চেরির নীচে
বাঁইচা থাকা

২২
বুদ্ধের ছবির নীচে
বসন্তের ফুলও কেমন জানি
ঝিমাইন্না ঝিমাইন্না।

২৩
এই বসন্তের বৃষ্টিতে
সুন্দর একটা মাইয়া,
হাই তুলতেছে।

২৪
ভাবতেছি,
বাপের মুখের উপর থেকে
মাছিগুলা তাড়ায় দিব।

২৫
ও ফড়িং,
তুমি কি আসছ আমাদের
পথ দেখাইতে?

২৬
দেখলাম
টেলিস্কোপ দিয়ে;
দশ পয়সার একটা ব্যাঙ

২৭
একটা কোকিল গান গাইতেছে;
আমারে শুনায়া,
পর্বতরেও শুনায়া।

২৮
পোকামাকড়ের কাছ থেকে ঘরটা
ধার নিয়া
ঘুমাইতে ছিলাম।

২৯
মানুষ কই?
সব মাছি আর
বুদ্ধ।

৩০
লোকটা মুলা তুলতে ছিল;
মুলা দিয়েই আমারে
রাস্তা দেখাইল।

৩১
হাঁস চরতেছে পুকুরে;
ওরাও কি আজকে
সুখ আাশা করতেছে?

Facebook Comments

অনুবাদক: রাজীব দত্ত

রাজীব দত্ত। ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট এবং লেখক। প্রকাশিত বই সাবানের বন (কবিতা, ২০১৫, প্রকাশক: মিতাক্ষরা), ফরসা একটা ফল গড়িয়ে যাচ্ছে ( কবিতা,২০১৮, প্রকাশক: তবুও প্রয়াস) এবং রিউমার ( মেটাফিকশন, ২০২১, বৈভব)।

পছন্দের বই