লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অভিজিৎ বেরার গুচ্ছকবিতা

লকডাউনের কবিতা 

সংক্রমণ

কখন যে চলে গেছ, ডাক্তার দেখে বলে—
ঘণ্টাখানেক…
ভাড়াটে মেয়েটি এসে জল দিয়েছিল
বুঝিনি তখনও লেশ।
বুঝিনি তখনও তার
পৃথিবীর জলবায়ু দেখাশোনা সারা
শুক্তো বড়ির মতো
ডুবে আছো জলে
ভাড়াটে মেয়েটি কত জল ছেঁচে তোলে
জলের ভেতরে ভাসে চোখ
কী দেখ ওপরে?
‘উষা’র সিলিং ফ্যান? তিপান্নয়ে? বিয়ের?
নাকি উৎসুক মুখগুলি
জলের ভেতরে ঢুকে কান্নাকাটি করে…

বেশ লাগে।
মানুষে মানুষে টান—
যতক্ষণ স্থুল দেহ ছুঁয়ে থাকে
যতক্ষণ শবগাড়ি টেনেতুলে নিয়ে যাবে

ফিরতে বারোটা বাজে
জল দিয়ে সিঁড়ি ধোও, ডেটল ছড়াও

স্মৃতি না জীবাণু…
কে যে বেশি মানুষকে সংক্রমিত করে !

***

মহেশ

সাইকেলে ঘণ্টা বাজে। মহেশ!
সে বসেছে খেতে, যেন দাঁড়ায়।
নিঝুম করোনা পাড়া, দুপুরের ঝাঁজ
মহেশ মহেশ কে? ভিনদেশে কাজ
হয়ত ফেরেনি সে। হয়ত স্টেশনে বসে
কিংবা ফিরেছে হেঁটে, দুপুরের ভাত
কচুবাটা ছোলা দিয়ে…। একটু জিরোক।
দেশে দেশে ক্রিং ক্রিং মহেশ মহেশ
পৃথিবীর আতা গাছে তোতা এসে বসে
এত পথ উড়ে বুঝি সেও গেছে পুড়ে
বয়স হয়েছে বহু, ক্ষীণ কানে শোনে—

সাইকেলে ঘণ্টা বাজে। মহেশ !
সে বসেছে খেতে, যেন দাঁড়ায় !

***

জীবাণু

বোতলটি রাখা—
তার জলের ভেতর
যে জীবাণু থাকে,
জলের সঙ্গে সঙ্গে সেও
দেহ পাল্টায়।
পেটের ভেতরে কত অজস্র জটিল পথ—
কোনও এক কোণে
রংচঙে খাবারের ভিড়ে…
নিজেকে লুকিয়ে রাখে।

ঢেউ আসে…
শরীর তো সমুদ্র
তাতে লালা থুতু ক্ষার
কেবলই ভাসায়,
নীল হতে হতে তার
পুর্বস্মৃতিতে পায়…

সে ছিল সুখের দিন—
দু-দিনের বাসি জলে
সেই যে জন্ম হল বোতলের গায়ে…

তারও বর্ণ ছিল অতি গাঢ় নীল।

***

ভয়

এ পৃথিবী পাখিদের, বেড়াতে এসেছি
মানুষ-বাজার কাছে
প্রতি সোমবারে ওরা
মানুষ খরিদ করে
খাঁচাতে সাজিয়ে রাখে
বলো রাধে বলো কৃষ্ণ
বলি। যে যেমন বলে ওদের ভাষায়

পাশের খাঁচায় একটি কিশোরী মেয়ে
বিমর্ষ বসে থাকে, ছোলায় অরুচি তার
সারা গায়ে পাখির ঠোঁটের দাগ
স্তনবৃন্ত কাটা
আমি তাকে নরম কথা বলি, পদাবলী গান
তার যৌনকেশর ফোলে
খাঁচার ফোঁকর দিয়ে আঙুল বাড়িয়ে দেয়
আমিও বাড়াই হাত
স্পর্শে স্পর্শে যেন বিদ্যুৎ খেলে

পাখির শাবক এসে পর্যটন করে
একবার আমায় দেখে, একবার ওকে
খাঁচাটি সরিয়ে নিয়ে দূরত্ব করে
আমার উত্থিত লিঙ্গে চঞ্চুঘাত করে
ভয়েতে পিছোই

পৃথিবী ভয়ের দেশ
যে এসে পড়েছে তার
নিস্তার নেই।

Facebook Comments

পছন্দের বই