লেখক নয় , লেখাই মূলধন

অরিত্র সোমের কবিতা

বাঙ্কার

খুব মনখারাপ হলে, সবাই তারাদের দিকে চোখ ফেরায়
শৈশব দ্যাখে…
তারপর বৃষ্টির প্রত্যাশায়
আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে

একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাঙ্কার, সেখানে
অপেক্ষায়

প্রহেলিকা, উত্তর দাও

বুকে আজন্ম দেশ ভেঙে ভেঙে
চালাঘর তৈরি করেছে সংসার

এপাশের দরজা থেকে তোমার প্রস্থান জেনে
হাত পেতে রেখেছি বৃত্তে;
আর আকাশ ছেড়ে বৃষ্টি আসার আগেই
অপু ফিরে আসে…

এ বসন্তে, একটা অশান্ত রাধাচূড়
আমাদের নিরুদ্দিষ্ট পথের বর্ণনা দেবে

গলি থেকে দূরে

কর্পোরেট ছাপ পড়তে পড়তে, গলিটার ‘নকশাল’ তকমা
উঠে গেছে
এখন রাত উলটোলে— হ্যারিকেন জ্বলে না আর
চারিদিকের পবিত্রতা পেরোলে আমরা থামি;
এমন গ্রীষ্মের রাতেই তো
তুমি থেমেছিলে!

তোমাকে ভেঙে ভেঙে, প্রতিটা একা থাকা
গুজরান হয়…

পৃথিবী, তুমি কি কাব্যগ্রন্থ ভাবছ?

ঘুড়ি ১

যেভাবে মিলিয়ে এসেছিল ঢাকেশ্বরীর থান

একটা সাদা চিল— আমাদের বাসা ছেড়ে
ইতিহাস ছেড়ে
জড়িয়ে ধরেছিল তার স্মরণীয় ঠোঁট

বেলা বাড়লে, লাটাই মাঞ্জা ভুলে
ছেলেটা পেরিয়ে যায় নদীতট…
ব্যক্তিগত জন্ম…

এখানে, প্রতিটা আকাশে আমাদের কান্না
ঘুড়ি হয়ে ওড়ে

ঘুড়ি ২

মাঠভরতি চোরকাঁটা পেরিয়ে, একটা দুদ্দাড় বিকেল থেমে আছে
উসখুশ গাছেদের থেকে আওয়াজ এল—
‘ ভোঁকাট্টা! ‘

বাবা দেখছেন, অজস্র দেওয়ালের ভিড়ে
ছেলেটা ঘুড়ি হয়ে উড়ছে
আর সুতোর দূরত্ব— একটার পর একটা আলো পেরিয়ে
প্রজন্ম মিলিয়ে দিচ্ছে…

বাবা হাসছেন। অজান্তেই বলে ওঠেন, পক্ষীরাজ!

যে দেহে রাইয়ের গন্ধ

তোমার ভেজা জবার গন্ধ আমায় ছিঁড়ে ফেলুক, রাই
এই রাত্রি আমি চাই না আর;
যেন সর্বক্ষণ ঝড় ওঠে…
আমার ঘেন্না হয়, খুব ঘেন্না হয়
সন্তর্পণে এড়িয়ে চলি সুলভ আস্তানা
এই ঘাম, এই শীৎকার… আহ্ রাই! তুমি চাবুকে নেভাও
কান্নার শহরে ক্ষান্ত করো ভালোবাসা ভালোবাসা…

এখানে, ভালোবাসায় কেউ শীতকাল রেখে চলে গেছে

…আমি তারেই বলি

ধরো, এখানে কোন বাড়ি নেই, সংসার নেই… শুধু একটা মাঠ, মাঠের ধারে গুলমোহর গাছ, পেঁজা কাশফুল, ভোরের গল্প নিয়ে থাকা একরত্তি রাত্রি… আর আছে একটা নদী আর তার ছোট্ট নৌকো। হলুদ শাড়িতে সেজে তুমি বসলে ধারে… তোমার চোখে কালবোশেখের ঘন আলো; ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’…

আমি কাঁদতে জানিনে, আমি লিখতে জানিনে। আমি শুধু, ভালবাসতে জানি…

জ্বর


‘নির্বিকার’ থেকে বিকার-টুকু তুলে নিয়ে বসে আছে
একটি ইজিচেয়ার

ধূসর চাদর। ক্যালেন্ডার
সমস্ত ঘোরের মধ্যেই, এরকম একটা করে
ক্যালেন্ডার ওড়ে…

নিঃশব্দে থেমে পড়ছে দিনগুলো…

জলপটির হাওয়ায়, শহরের মুখগুলো থেকে একজন করে
মা উঠে আসছে

প্রিয়বালা

প্রতিধ্বনি ভাঙতে ভাঙতে শৈশব এগিয়ে যাচ্ছে
আশপাশ থেকে জেগে উঠছে ডাকনাম
রাস্তা পার হবে— এমন সময়
জামার আঁচল টানল কেউ;

খোকা, যাস নে…

পনেরো বছরের স্বপ্নে— কেবল একটাই কাঠের ফুলদানি
আর এদিক ওদিক, ছিঁটে ছিঁটে
অন্ধকার রাখা…
প্রিয়বালা!

লেখক পরিচিতি:

অরিত্র সোম। জন্ম ১৯৯৫, ৭ই আগষ্ট। বেলঘরিয়ায় নিবাস।

Facebook Comments

পছন্দের বই