লেখক নয় , লেখাই মূলধন

ওয়াহিদা খন্দকারের কবিতা

ম্লান আলোর সারাংশ

নির্বাক উচ্চারণে গড়িয়ে যায় সশব্দ পায়চারি
উঠে যাচ্ছে উপনিবেশ,
পাহাড়সহ ধসে যাচ্ছে কাঠের বাংলো
ঝরনার গর্জনে চাপা পড়ে গেল আর্তনাদ।

নীল জলে তুমি সংরক্ষিত ছিলে এতদিন
জল বদল না হলে তো মজে উঠবে শ্যাওলায়!
অতএব বেকসুর খালাস…

রাত কেটে ভোর হল, বুনো হাতি ডেকে চলে শুধু।

নেকড়ের উল্লাস দেখে মনে হয় ওর প্রেম বোধ নেই।
যে রক্ত চেটে খায় যে তার ভালোবাসা থাকতে নেই
আছে শুধু আচ্ছন্নতা, যৌনতার মতো?

ওর লালায় ভেসে থাকে মাংসের লেশ
ও কি আর দেখে লঞ্চ ঘাটের কুয়াশা?
কোনো এক ঘোলা স্টেশনে জ্যোৎস্না নামের আলোয়
সঙ্গিনীর মুখে দেখে শুধু
আর তৃপ্ত অভিমানী নিয়ে সরে পড়ে পরবর্তী শিকারে।

একটা কুটুম পাখিকে বিস্মিত করতে
মাঝরাত অবধি ধ্যান করি আমি।
কীসে তরঙ্গ ওঠে, নাক আরক্ত হয় ডাহুকের?
পোকামাকড় খুঁটে খেতে খেতে কখন জিভে জল আসে টিকটিকির?
জানি না।
মধ্যরাতের কোকিলও জানে ব্যথা ভোলার সুর।
উপায় খুঁজতে খুঁজতে বেসমেনে যাই
তোমার গায়ের ঘ্রাণ মনে পড়লে
মনে আসে বহুক্ষণ আগে ভাত বসিয়েছি,
ফ্যান উতলে পড়ছে হয়ত…
মনে পড়ে এ পৃথিবী শুধুই প্রসূতি আর পিপাসা

কিছু তৃষ্ণার অপচয় করেছি এযাবৎ
হিকমতের কবিতা উলটে রেখে
তোমার মুখে আলো ধরেছি।

আন্তরিক বিপ্লবকে নস্যাৎ করে ফুলদানিতে লাল গোলাপ
আর জলাধারে শালুক ফুটিয়েছি।

কিশোরী কোনোক্রমে আলো জ্বালাতে পারলেও
আগুন নেভাতে শেখেনি।
সিঁড়ি ধরে তাই সমুদ্রে নেমে যেতে যেতে
যদি চোরাবালি গিলে নেয় তাহলে বুঝব
একটা সফল, দীর্ঘ সামিয়ানা টাঙাতে পেরেছিলাম।

নোনা মাটিতেও স্বাদু মিঠে আতা গাছ জন্মে
ঝড়ের পর যেমন কচি সবুজে ধরে গান।

দপ করে জ্বলে ওঠার চেয়ে নিজেকে কমিয়ে রাখা ভালো
পরবর্তী মাত্রায় মনোযোগ থাকে বেশি, ভাগের বদলে;
ফোঁটা ফোঁটা নিশ্বাসে আমরাও তো জড়ো করি নিজেকে
নিজেকেই উল্লাস দেব বলে—

চোরাবালির দিকে এগিয়ে যাই, চিনে নিই বন্ধনী।
বন্ধনী মুক্ত হতে হতে কেটে যায় ষোলো ঋতু।

জানালা দিয়ে তখনও রোদ আসে, আমারই উপাচার নিয়ে।

সব পাপগুলো দিয়ে দেব একদিন
আর উড়ে যাব ঘুলঘুলিতে
যেখানে খড়কুটো, ছেঁড়া কানি জড়ো করেছি এতদিন।

বুক পীঠস্থানে আমাদের ধ্যান হোক চিরন্তন
চরনামৃত খেয়ে সহ্য করে নিয়েছি সেসব ধর্মপাঠ।
ধারণ করতে করতে ইতিমধ্যে ভুলেও গেছি
কত গান তেপান্তরের!
তাই সকাল আসে মুখ নামিয়ে এখন।
অতল থেকে এসব বিষাদ সারিয়ে তুলব বলেই কি
বুকটান ঝাঁপ দিয়েছিলাম একদিন!

দিন শেষ হলে বেরোতেই হয় চাঁদ খুঁজতে।

নাস্তিক দেবতা দত্তক নিয়েছে সযত্নে
ধীরে সুস্থে বড়ো হই আরেকবার।

নদীর দুপারের বৃষ্টি উপভোগ করি আমরা
তবু খুব জোরে বৃষ্টি এলে
ছাঁট পড়ে আমাদের গল্পে, কথামালায়
ভিজে ওঠে মুখের মাটি ।
জলবাতাসের তোড়ে বন্ধ করতে হয় জানালা
অন্ধকারে হ্যারিকেন জ্বেলে সরে বসি দেহাংশ নিয়ে ।
ভেতরে বাইরে আংশিক মানুষটাকে নিয়ে
উচ্চারণে মেতে থাকি।
অথচ আমরা কেউ কাউকে চিনি না।

Facebook Comments

পছন্দের বই