লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কাশ্মীরের কবিতা

ভাষান্তর: সোহেল ইসলাম

এখানে পাঁচজন কাশ্মীরির দুটো করে মোট দশটা জবানবন্দি থাকল। গত সাত-আট মাস কাশ্মীর নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে কবিতাগুলোকে আমার জবানবন্দিই মনে হয়েছে। তাই তার উল্লেখ। কাশ্মীরে আমরা যা দেখি, তারচেয়ে বেশি কিছুই ঘটে প্রতিনিয়ত। গোটা কাশ্মীর জুড়ে মানুষের অভিজ্ঞতা একই। স্কুল বন্ধ, বাজারঘাট বন্ধ, ফোন বন্ধ, গণপরিবহন বন্ধ, রাস্তায় বেরোনো বন্ধ, এমনকী সবচেয়ে দরকারেও এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো যায় না। এ তো গেল দিনের আলোর কথা। রাত তো আরও ঝুঁকি দিয়ে ভরা। ওষুধ কেনা এমনকী হাসপাতাল যাওয়ার মতো দরকারেও রাতের কাশ্মীর নিরাপদ নয় খোদ কাশ্মীরিদের কাছেও। কেন-না রাতের দখল থাকে সেনাবাহিনী আর পুলিশের হাতে। কাশ্মীরের অন্ধকার মানুষের অসহায়তার কথা বলে। ছাদের বুক থেকে চাঙর ভেঙে পড়লে যেমন ছাদ চুপচাপ থাকে, স্বাভাবিক হতে চায়, কিছুই হয়নি এমন ভাব নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। ঠিক একইরকমভাবে কাশ্মীরও শরীরে স্যালাইনের নিডিল নিয়ে ব্যথা, যন্ত্রণা, দুঃখ, না-পাওয়া একনিঃশ্বাসে ভুলিয়ে দিয়ে আবার বেঁচে উঠতে চায়। এই বেঁচে ওঠায় কোনো মিথ্যে নেই, কোনো নাটক নেই। থাকার মধ্যে আছে শুধু অপেক্ষা। সেই একই অপেক্ষা এখানকার ঘরবাড়ি, দরজা-জানলার এবং এখানকার মানুষের মতোই। একটু মন দিয়ে তাকালে দেখতে পাবেন, দেওয়ালগুলো বোমা আর বুলেটের অত্যাচার সহ্য করতে করতে নিথর হয়ে গেছে। আর দরজা-জানালাগুলো সেনাবাহিনীর নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে নিতে বুড়ো হয়ে গেল। বাড়ির আলো ছুটে যে রাস্তায় বেরিয়ে আসবে তার কোনো উপায় নেই। এখানে মুক্তির একমাত্র পথ হল মরে যাওয়া। তবে মজার ব্যাপার যে মরে গেল, মুক্তি কেবল তার। কিন্তু তারপর বাড়ির লোক পড়বে যাঁতাকলে। তল্লাশি, প্রশ্ন, রাতবিরেতে গলা ধাক্কা, সুরক্ষার অভাব, হয়রানি এসবই যেন তখন ওই বাড়ির রোজকার জীবন হয়ে ওঠে। আবার নতুন করে তারা তখন মৃত্যুর অপেক্ষায়, মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে।

লকডাউন, মারধোর, হেফাজত, কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া, পুরোনো FIR দেখিয়ে এনকাউন্টার, হাত-পা ভেঙে দেওয়া, চেকিংয়ের নামে অসভ্যতা কাশ্মীরে নতুন কিছু নয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এর সাক্ষী। আপনি যদি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখতে গিয়ে লাল কাশ্মীর দেখে ফেলেন, অবাক হওয়ার কিছু নেই। সত্যিই কাশ্মীর এখন দুঃখে, কাঁদতে কাঁদতে, ক্ষতবিক্ষত শিশুর মৃতদেহের মতোই লাল। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর তথ্য আর সরকারি আমলার বক্তব্যের উপর নির্ভর করে যে-কাশ্মীরের কথা আমরা মনে মনে কল্পনা করি তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। দেশের জনগণের কাছে কাশ্মীর মানেই ভিড়, উশৃঙ্খল, হাতে পাথর নিয়ে তেড়ে আসা জনতার ভিড়। কিন্তু উলটো দিকে দাঁড়িয়ে থাকাদেরও যে একটা ভিড়, তারাও যে রাইফেল, প্যালেট গান, গ্রেনেড হাতে ভিড় তৈরি করেছে তা আর দেখানো হয় না। এই যে বারবার কয়েনের একপিঠ দেখিয়ে বিচারপতি বসিয়ে বিচার করে নেওয়ার মানসিকতার বিরুদ্ধেই কাশ্মীরের কলম জ্বলে উঠেছে, জ্বলে উঠছে। আর তাই কাশ্মীরের কবিরা সরাসরি মানবাধিকারের কথা বলছেন, মানবজাতির পক্ষে কথা বলছেন। ফলে কাশ্মীরের কবিতায় আপনি যত এগোতে থাকবেন, দেখবেন― মা, কারফিউ, রক্ত, হ্যান্ড গ্রেনেড, কাঁটাতার, নিষ্ঠুরতা, গণকবরের মতো শব্দ উঠে আসছে বারবার। আসাটাই স্বাভাবিক। কাশ্মীর তার কবিতায় জীবন লেখে, বেঁচে থাকা, ঘুরে দাঁড়ানো, কাঁধে কাঁধ রেখে উঠে দাঁড়ানোর কথা লেখে। যা তাকে শিখতে হয়নি। জীবনচর্চার মধ্য দিয়েই তার কলম একে ধারণ করেছে।

আর একটা কথা আতহার জিয়া এবং হুজাইফা পণ্ডিতের সাহায্য না পেলে কাশ্মীরকে আমার জানাই হত না সেভাবে। শাম্মি কাপুরের ‘ইয়া হু’ বলে বরফে ঝাঁপিয়ে পড়া কাশ্মীর নিয়েই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতাম। কিন্তু তা যে হওয়ার নয়, বেশ বুঝতে পারছি এখন।

আসিয়া জহুরের কবিতা

[পরিচিতি: আসিয়া জহুর বর্তমানে কাশ্মীরের বারামুল্লার একটি কলেজে মনোবিজ্ঞান পড়ানোয় কর্মরত। কাশ্মীরি সাহিত্য, কবিতা, মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বই এবং নিবন্ধ লিখেছেন।]

মিলিটারাইজড জোন

জিভ কেটে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে দেওয়ার আগে
কিছু বলা যাক

মাথায় হাতুড়ির আঘাত নেমে আসার আগে
কিছু চিন্তার ফসল ফলানো যাক

ঘুমের দেওয়াল
বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়ার আগে
কিছু স্বপ্ন বোনা যাক

অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই
চলো, অন্ধকারকেই আয়না বানিয়ে ফেলি

শব্দ মুছে দেওয়ার আগে
হাতের তালুতেই
লিপিবদ্ধ করি কাশ্মীরি ইতিহাস

নদী

একদিন নদী রাস্তা ভুল করে
ঢুকে পড়ল পাড়ায়
বাড়িতে
স্কুলে
দরজায় কড়া নাড়তে আরম্ভ করল
যত রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি
তত বাড়তে থাকে রাগ
সে কী একগুঁয়ে জেদ নদীর
দরজা-জানালার ফাঁকফোঁকর দিয়ে
ফাটা দেওয়াল দিয়ে ঢুকতে লাগল ভেতরে
প্রথমে বইগুলো তাকে তুললাম
তারপর আসবাবপত্র
শেষে নিজেরাও
কিন্তু নদীর জেদ…
বই থেকে শব্দগুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল
পাড়া থেকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল প্রতিবেশী

আমরা এখন
হাসি-কান্না ভাগ করে নিতে নিতে
এক দেওয়ালহীন বিশ্বের বসবাসকারী

আমজাদ মজিদের কবিতা

[পরিচিতি: আমজাদ মজিদ ইনভার্স জার্নালের সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে দক্ষিণ কাশ্মীরে থাকেন। সেখানে বসে চীন, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার সমালোচনা বইয়ের উপর কাজ করছেন।]

কাশ্মীরে কারফিউ

কারফিউ রাস্তায়
স্কুলে
ঘরবাড়িতে
রেডিয়ো, সংবাদপত্রে
ইন্টারনেটে
টিভি চ্যানেলে
আমাদের বক্তব্যে
আন্দোলনে
প্রতিবাদে
শোকে
এমনকী যে-স্বাধীনতার কথা আপনারা বলেন
কাশ্মীরে তাতেও কারফিউ
তবুও আমরা আশা ছাড়িনি
জীবনকে বাজি রেখে
মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
উন্মাদনা ভাগ করে
লড়াই জারি রেখেছি—
ঠিক একদিন কারফিউ মুক্ত কাশ্মীর গড়ব আমরা

পরিচয় পত্র

দরখাস্তের ভিড় থেকে আলাদা হয়ে
সেও প্রিন্ট হল অন্যদের মতো
নোটারিযুক্ত হয়ে
দেশের স্ট্যাম্প নিয়ে
ল্যামিনেশনে মুড়ে
এক সরকারি দপ্তর থেকে
আরেক সরকারি দপ্তরের টেবিলে চক্কর কাটতে লাগল
তারপর সত্যি সত্যিই একদিন
দাগী আমলাদের হাত থেকে মুক্তি ঘটল তার

আজও স্পষ্ট মনে আছে
সেই দিনটির কথা
কাগজের ভিড়ে মাথা তুলে তাকানো দরখাস্ত
লম্বা কিউয়ে উলঙ্গ মজিদ
আর তার রক্ত-মাংস দেশীয় হওয়ার প্রমাণ দিচ্ছে

তখন আমি বাড়ি থেকে অনেক দূরে
কাচের জানলা দিয়ে দেখছি দেশ

শাবির আহমেদ মীরের কবিতা

[পরিচিতি: শাবির আহমেদ মীর কাশ্মীরের পুলওয়ামায় থাকেন। একজন গদ্যকার, কবি ও ছোটোগল্প লেখক। বর্তমানে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।]

যেদিন যুদ্ধ শেষ হবে

যুদ্ধ শেষ হলে
একবার আসুন আমাদের এখানে
বুলেট কিংবা প্যালেট গানে ফুটো হয়ে যাওয়া জায়গায়
আঙুল ঢুকিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে নেবেন
কতটা আহত
কতটা আঘাত সহ্য করেছি আমরা

যুদ্ধ থেমে গেলে
আপনাকে এনে দেব গন্ধ
ভয়ের গন্ধ
ধ্বংসস্তূপের গন্ধ
দেখে নেবেন কী জমকালো সেইসব অন্ধকারের গন্ধ

যুদ্ধ থেমে গেলে
বুটের দৌড়ঝাঁপের আবহ শোনাতে নিয়ে যাব আপনাদের
উপত্যকা ভাগ করা
কাঁটাতারের গর্জন শোনাতে নিয়ে যাব

যুদ্ধ থেমে গেলে
আপনাকে নিয়ে যাব ভেরিনাগ
সেখান থেকে পায়ে হেঁটে সুখনাগ
তারপর আমরা যাব ডাল লেকে
একটি দিন কাটাব বন্দুকের পাহারা ছাড়া
দেখবেন কী শান্তিপূর্ণ সেই ভ্রমণ

যুদ্ধ শেষ হলে
গণকবর খনন বন্ধ হলে
আপনাকে যোগদান করতে বলব
কাশ্মীরি সংগীতের ঐতিহ্যের সঙ্গে
আপনি অনুভব করবেন
আমরা ঠিক কতটা খুশিতে থাকি
নিজেদের নিয়ে

সত্যি সত্যিই যেদিন যুদ্ধ থেমে যাবে চিরতরে
আপনাকে চায়ের আমন্ত্রণ জানাব
নোনতা, গোলাপি চা
আশা করি সেদিন বুঝবেন
আমরা কোনোদিনই
একে-অপরের শত্রু ছিলাম না

সিরিয়ায়

সোমবার,
আশার দিন
অপেক্ষা শেষ হওয়ার দিন
জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে
চকচকে রুপোর বাটিতে খাবার পরিবেশনের দিন
যেন একটা বিশেষ মুহূর্ত
যার জন্য আমরা
একে অন্যের মুখ চাওয়াচায়ি করে থাকি
ওই তো রূপকথা থেকে
আল্লাহ আর তাঁর দূত
আমাদের বাঁচাতে আসছেন
                           অবশেষে

মঙ্গলবার,
সতর্ক থাকার খবর আসছে
জরুরী সামান হাতের কাছে গুছিয়ে রাখার সতর্কবার্তা
যে-কোনো সময়
সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতে হতে পারে

রেহানার কপাল
তাই তো পালিয়ে যেতে পেরেছে
চোখের মণি, আইলানকে মানুষ করার সুযোগ পেয়েছে
যে কি না এখন রেহানার একমাত্র ভরসা

বুধবার,
প্রথম মা হওয়া গাভীর মতো ছটফট করছি
স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছি না
গুজব ছড়িয়ে পড়ছে
বন্দুকের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে
বোমায় টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ঘরবাড়ি
বাইরে কারফিউ
এখন ধৈর্য্যই একমাত্র পথ
আমাদের অপেক্ষা করতে হবে
জুতসই পালানোর মুহূর্ত না আসা পর্যন্ত

বৃহস্পতিবার,
আমাদের দুঃখের দিন
ধোঁয়া আর ধ্বংসস্তূপের মাঝখান থেকে
জিভের টুকরো
গোল গোল চোখ
ছোটো সরু হাড় কুড়িয়ে
বাড়ি ফেরার দিন

শুক্রবার,
আমাদের শোক এতটাই দগদগে যে
আমরা শিষ্টাচার ভুলে যাই
আপনি চান
আমরা দেওয়ালে মাথা ঠুকি
হাত দিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে থেমে যাই
জিভ অসাড় হয়ে আসুক
জল শুকিয়ে যাক চোখেই
কিন্তু আমাদের হাহাকার এতটাই নাছোড় যে
থামতে জানে না

শনিবার,
ক্ষোভ প্রকাশের দিন
এও এক নেশার মতো
আকাশের দিকে দু-হাত তুলে চিৎকার

দর্শকরা প্রথম প্রথম
সমবেদনা জানান
মাথা নীচু করে বিড়বিড় করেন
তারপর একটা সময় বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন
কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন
আমরা দিন শেষে
ঝাঁকে ঝাঁকে যে যার বাড়ি ফিরে আসি

রবিবার,
আমাদের নীরবতার দিন
নতুন সপ্তাহের প্রস্তুতির দিন

কায়সার বশিরের কবিতা
[পরিচিতি: কায়সার বশির কাশ্মীরের অনুবাদক, লেখক এবং কবি। কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।]

মৃতদেহ

ওই দেখুন একটা মৃতদেহ
কোথায়?
ওই তো স্রোতে ভেসে আসছে
আমি তো দেখতে পাচ্ছি না
ওটা কী?
ওই দেখুন লাশ! আখরোট গাছের নীচে
ওটা দুর্ঘটনা না খুন, আপনি কী মনে করেন?
ওই দেখুন একটা বুলেট
কোথায় বুলেট?
এটা তো একটা মাথা
পাকা তুঁতের মতো ছেঁতরে গেছে
আমি বুঝতে পারছি না… একটু গুছিয়ে বলুন
শুনতে পাচ্ছেন?
কী?
মায়েরা উঠোনে বসে কাঁদছে
মৃতদেহের জন্য?
হতে পারে
চলুন, সান্ত্বনা দিয়ে আসি
কী করে, ওটা তো রেড জোন
আমি বিশ্বাস করি না
বিশ্বাস করতে হবে আপনাকে
শুনুন
কী?
কণ্ঠস্বর
হ্যাঁ, একটা আওয়াজ
কণ্ঠস্বর না, ওটা চিৎকার
কীসের?
মিছিলের
ওরা কি লাশ তুলতে আসছে?
আমি জানি না
তবে, এদিকেই আসছে― যেন একটা হিংস্র নদী
চলুন, দৌড়ান
তা না হলে আমরা খুন হয়ে যাব
কেন? এটা ঠিক না
জানি, আপনি চলুন
লাশের কী হবে?
ভুলে যান, চলুন…
কোথায়?
যেখানে নিরাপদ মনে হবে
আমি দৌড়তে পারি না
আমার পা সেই কবে থেকে ঘুমিয়ে আছে
কেমন স্বপ্ন পছন্দের আপনার?
কার?
লাশের…
ভুলে যান, চলুন
ওরা এদিকেই আসছে
কোথায়?
আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না
এত কুয়াশা কেন?
কোথায় কুয়াশা, এগুলো ধোঁয়া
আগুন ধরিয়ে দিয়েছে
কারা?
আমি জানি না
চলুন, পালাই
আপনি যান, আমি থাকব
কেন?
ওরা যে আমার ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে আসছে
ভাইকে একা ফেলে কোথায় যাব?

আমি

বৃষ্টির পরে
আগস্টের আকাশে রামধনু উঠল
আমি তার কাছ থেকে
কিছুটা লাল রং ধার করলাম
আমাদের দুঃখ লিখব বলে

সিদরা নাজিরের কবিতা

[পরিচিতি: সিদরা নাজির কাশ্মীরের কবি। কাশ্মীরের আন্তিপোড়ার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেছেন। সিদরার কাছে কবিতা একটা প্রার্থনা, যা তাকে সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায়।]

কাশ্মীর

দাসের মতো বাঁচা কাকে বলে― আপনি কি জানেন?
বাইরে বেরোলেই কাঁটাতারের ঘেরা
হায়নার চোখের মতো বন্দুকের নল
আপনার দিকে তাক করা
তখন কেমন অনুভব হয়
আপনি কি জানেন?

যখন কোনো কাশ্মীরি যুবক নিখোঁজ হয়ে যায়
সেই বাড়ির মুকুট থেকে নিশ্চিত
একটা পালক খুলে পড়ে
মায়ের চোখ থেকে ঝরে পড়ে নোনা জল
জল নয় অভিশাপ
আপনি কি জানেন― কেমন সেই অনুভূতি
প্রতিটি কাশ্মীরি বোনের মনে ক্রোধের বাস
বাবাদের হাতে কবরের মাটি
আপনি কোনোদিনই জানতে পারবেন না
এই শাসন দেখতে দেখতে
কাশ্মীর আস্ত একটা কবরে পরিণত হচ্ছে

কবরের রাস্তায়

সাদা কাফন এল
আতরের গন্ধ এল নাকে
হাসি নিমেষে বদলে গেল কান্নায়
সেই বীরের সম্মানে
ইনকিলাবের নাড়া দিতে দিতে চলে গেল একদল যুবক
শুধু,
একজন বাবা কেঁদে উঠলেন
একজন মা কেঁদে উঠলেন
আর চারজনের কাঁধে করে
একটা কাঠের ফ্রেম চলল―
                       শীতের দেশে

Facebook Comments

পছন্দের বই