লেখক নয় , লেখাই মূলধন

দেবজ্যোতি রায়ের কবিতা

শ‍্যামকল‍্যাণ

বিবাহবাসরে ডালিমের রক্তস্রোতে
শুনেছি মুলতানি, তিলক-কামোদ
শিকারির হারপুন বিঁধে আছে
শ‍্যামকল‍্যাণে।

গন্তব্য ডুবে যায় গোধূলির চোরাগর্তে।
ফলের ভেতর পোকা, পোকার শরীরে
গল্পের রেখাচিত্র ওঠানামা করে
মা তারা বিড়ির মতো কিছুক্ষণ জ্বলে।

তান্ত্রিকের ঝুলি থেকে বের হয় অজ্ঞাত সংকেত
বিবাহের ছেঁড়া সুতো পাক খায়
ব্রহ্মসূত্রে, নির্জন টেবিলে।

গীতগোবিন্দের পদে তোমার সোনার নখ
জ্বল জ্বল করে।

ডোমকানা জীবনের স্তব্ধ বাঁশবনে
ঝিঁঝির ডাকের মতো শোনা যায়
বিবাহের মন্ত্রউচ্চারণ।

বাতাসে টংকার শুনে

হাওয়ামোরগের ছন্দে ঘুরছে মাধববাবু, ঘুরছে সময়
ঘুরছে পরিস্থিতি, এলোকেশী, রক্তমাখা খাঁড়া
নিজস্ব মূঢ়তা নিয়ে আমিও শিখেছি দাঁড়ানোর বিচিত্র ভঙ্গিমা
পায়াভাঙা চেয়ারের মতো।

টলমল নৌকায় পার হয় মন্থর বিকেল
পার হয় রেলব্রিজ, দোকান বাজার

অশ্বমেধের ঘোড়া ঢুকছে আড়াই চালে প্রশ্নের গভীরে
আপনার ইশারায় গাছে গাছে ফুল ফোটে, পাখি ডাকে
আবার ইঙ্গিতমাত্র সব গান বন্ধ হয়ে যায়।

আমরা নিশ্চিন্ত হই
মনে হয় ওভারকোটের মধ্যে আশ্রয় পেয়েছি

বাতাসে টংকার শুনে বুঝতে পারি
পরিস্থিতি বেশ নিয়ন্ত্রণে।

দ্রাঘিমারেখার বাইরে

নতুন গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়ে বুঝতে পারি
ক্রমাগত সরে যেতে হবে
জনহীন রাস্তার দিকে

তোমাকে আমার থেকে, আমাকে শ্যামশ্রী থেকে
শ্যামশ্রীকে দ্রাঘিমারেখার থেকে
দূরে যেতে হবে

কতদূরে যেতে হবে?
বিশ্বস্ত হুইলচেয়ার আমাকে উপেক্ষা ক’রে
নেমে যায় খাদে, স্তব্ধতায়।
তাকিয়ে রয়েছি স্তম্ভিত জ‍্যোৎস্নার দিকে
বালিতে সানগ্লাস রেখে কেউ
নেমেছে সমুদ্রে

দূরে যেতে হবে?

আরও দূরে, লংশটে ঠিকানাবিহীন সানগ্লাস।
তোমার কর্নিয়া কেন ঝাউবনে অবলুপ্ত
তোমার দূরত্ব কেন নীলিমাকে নিঃস্ব করে দেয়?

কতদূরে যেতে হবে
জেলিফিশ, তারামাছ, স্পঞ্জের
অজ্ঞাত জগতে?

প‍্যারাসুট

বরফের মিউজিক‍্যাল চেয়ারে আমাকে বসিয়ে
আপনি উধাও হলেন
ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছি।
গলে যায় সমূহ আঙ্গিক

গণিতশিক্ষক সেই কবে ব্ল‍্যাকবোর্ডে বৃত্ত আঁকা
শিখিয়েছিলেন

কুমোরের চাক ঘোরে
অন্ধের প্রতিভা নিয়ে বৃত্তকে যতটা বুঝি―
শোলার বলের মধ্যে লোহার ওজন
অক্টোপাসের মুঠো, নিবিড় ক্ষমতা

শহরের অভিজাত ডাইনিং স্পেসে
উড়ছে ওভারকোট, উড়ছে গাউন
জোকারের টুপি থেকে উড়ে যাচ্ছে কল্পনার হাঁস

বিষণ্ণ সাইকেলগুলি রাস্তা ছেড়ে চলে যায়
পাইনের বনে।
আমরা অপেক্ষা করি
গগনবিহারী প‍্যারাসুট কোনো সুখবর নিয়ে
ফিরে আসবে মহাকাশ থেকে!

অন্ধকারে, লকডাউনে

ধূপের গন্ধের মধ‍্যে বাস করি
শান্তি টাওয়ারে

পালক বুলিয়ে তুমি এনে দাও
আরও ঘুম, আরও অবসেসন

তুমি দেবতার থান
আমি রোজ ঢিল বাঁধি তোমার দেবত্বে

কংক্রিট চূড়ায় সুখের পায়রা আমি
মাথার ভেতর বাজে ঝমঝম রূপোর ঘুঙুর

ঘোলাটে আলোর মতো দুরূহ বাস্তব
ঢলে পড়ে নেশায়, ম‍্যাজিকে
ম‍্যাজিকের সীমাহীন নীলে
ভুলে যাই
শরীর ও লাশের ব‍্যবধান

আমরা ভুলেছি কত কিছু

শুধু রেললাইন মনে রাখে
শুকনো রুটির পাশে পড়ে আছে
ক্ষুধার্ত উদর।

Facebook Comments

পছন্দের বই