লেখক নয় , লেখাই মূলধন

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের কবিতা

রহস্য নাম্বার


হাসির শব্দ বৃষ্টি ছাপিয়ে ছড়িয়ে পড়লে
দুপুরের অলস কেটে যাচ্ছিল তার
পাখি বুকের পাতা খুলে দূরে
চলে যাচ্ছে শাড়িগাছ
আততায়ীর ছায়া সরে যাচ্ছে দ্রুত
জোকারের ভিতর থেকে
একটা পুতুল ডাস্টবিন হয়ে যাবার পর
হারিয়ে গেছে গোটা ছেলেবেলা-ই

কিছু লেখা আসছে না বলে
তুমি ছবিতে বন এঁকে আগুন দিয়ে
শুঁকে যাচ্ছ মাংসল গন্ধ
ভবিষ্যতে কান্না আসবে না জেনে


গান করা মেয়েটি চোখ থেকে হেঁটে
রূপালি বিদ্যুৎ রেখে গেল
ছাদের একাকীত্ব কান্নার ভিতর
খেলা করতে করতে ভিজে যায় যেখানে
অনেক নীচে পড়ে আছে চশমা
টুকরো টুকরো কাচে ভাঙা ভাঙা চাঁদ
কার কার পা কে সাবধান শোনাবে
অন্ধকারে সবাই হেঁটে যায় অনায়াসে
এক ছাতার ভিতর এত ভালোবাসা
হারানো দিনের গান রেখে গেলে
লং প্লে বাজায় কল ঘুরিয়ে গ্রামাফোন
পুরোনো নবকল্লোলের পাতা ভেসে
নার্গিস ফুলটি রাজ করে বুকে
ঘুমন্ত সে শহরে আত্মহত্যার স্বরলিপি নেই


স্বরলিপি না দেখেই শেখা গান
মাঠ জমিয়ে দিলে
নদীর ভালো লেগে যায়
এভাবেই তো উড়তে শেখা
মাছের চলনে সুর ঝরে পড়ে

সমুদ্রের দিকে যেতে যেতে
বাতাস নোনা আলাপ সেরে নেয়

জলের ভিতর হাত পা ছুঁড়ে
মৃদুস্বরে এসরাজ বাজে

রহস্য জন্ম নিচ্ছে পাতায়
আমাদের রেশম


বৃষ্টির ভিতর তার পড়ে যাওয়া
ব্যালকনির যন্ত্রণা উসকে দেয়
ভিজতে ভিজতে নেমে আসছে
হলুদ দেহ আর প্রিয় টব
মৃত্যু সশব্দে ফেটে পড়লে
মাটির শরীরে দুঃখ নামের ট্যাবু
জমা জলে ছড়িয়ে যায়
শরনার্থীর আসলে কোথাও
আশ্রয় নেই
ধ্রুবসত্যটি সকলেই জানেন বলে
কর্ণেলকে কেউ চিঠি লেখে না


নারী ভাবতে ভাবতে সে গাছ ছুঁয়ে বসে
সংলাপ থাকে না সেই দুপুরের গায়
পাতার আদর আর কাণ্ডের গভীরে
বিছানার উত্তেজনা চলে আসে
সব খোলাখুলি হলে ভাদ্রমাসের কিছু করার থাকে না
শুধু মেঘের ছায়ানাম নিয়ে পড়ে থাকে
একলা পুকুর
খুঁটিনাটি চিন্তার থেকে দূরে কিছু অন্তমিল
খেলতে থাকে
ঈশ্বরের স্বর বাজতে বাজতে ডালে আগুন ধরে যায়
মাংসল পৃথিবীর সেই পোড়া গন্ধ সন্ধ্যাকে
ডেকে আনে অন্ধকারে
পরজীবীদের কিছুতেই বোঝাতে পারি না
এত শোষনের পরেও দিব্য শিকড় কী করে কিতকিত খেলায় মাত করে রাখে জোছনা উঠোন


একটা দুঃশাসন ঝড় এসে
উড়িয়ে নিয়ে গেলে শাড়ি
সন্ধ্যার দ্রৌপদী জানালা টেনে দেয়
পরির পাঠ্যবইয়ে নেমে আসে
বকরাক্ষস ঘামের গন্ধ নিয়ে
দেয়ালে দেয়ালে লন্ঠনের দীর্ঘদেহ
ঝুঁকে আসে অক্ষরের জটিল পাঠে
রেহাই আসে না উপলক্ষ যাইহোক
শুধু একটা শুকনো পাতা কখন ঢুকে
বসে গেছে পাশে ইঁদুর শরীরে
ছায়া দেখি তাকেও ছাড়েনি


সকালের দুধ সেপ্টেম্বর ঢাললে
পেপে গাছের শূন্যতা নজরে আসে
বিপরীত ক্রিয়ার এ-খেলায়
হারানো বাস্প চালিত ইঞ্জিন
ঢুকে পড়ে ছেলেবেলা সমেত
আর একটা দেয়াল গাই বাছুর আঁকা
মা হারিয়ে যাবার পর কুকুরের বাচ্চা
আর আমি কখন মিলির মা’র
কাছাকাছি চলে আসি একটা
অ্যান্টেনা লাগানো টিভির
সাদাকালো ঘরে খসে পড়ে সুরকি
জড়াজড়ি করে থাকতে থাকতে
ভাবা হয়ে যায় যা ভাবনার নয়
এ সব ক্ষরণে রক্ত না দুধ
পুতনা পেরিয়ে যশোদায় চলে যায়


পুঁথি ভোর খুলতেই শব্দ কথা বলে তালপাতায়
কীর্তন আমার ডাকনাম চোখে চৈতন্য জাগায়
জায়গাটি চিনে নেয় ভিতর শামুক
পত্রে পুস্প কাণ্ডে পুজো লেগে যায়
তবুও ভাদর দিন বড়ু চণ্ডীদাসের
কানা কখনোই কানা নয় প্রেম ডাকা চোখ
কুকুরদের যৌন তাড়নায় ব্লেকের
আশ্রয় নেয়
ভেড়া থেকে বেরিয়ে আসে চিত্রমাখা বাঘ
নিরীহ চিন্তাগুলো কখন জলের আয়নায়
স্বরূপ চিনতে পেরে হিংস্র রোদ
এইসব খেলায় একটি লটারির টিকিট
হঠাৎ ঢুকে জানায় আপাতত ভাগ্যধর
সন্ন্যাস নেওয়ায় মাথুর জমেনি


ছবির বাড়ি যাব বলেই ছবি ফুল
মস্তিতে এক একটা ভুল করে যায়
নেগেটিভ হারিয়ে বেহালা বাজায়
এক একটা সন্ধ্যা সন্ধ্যামণি ফুলের
গায়ে চাঁদলাগা দেখে লিখে রাখে
চর্যার সহজিয়া পদ মাটিগন্ধমাখা
খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় পর রাত্রি
অভুক্ত বসে থাকে আর অ্যালবাম
উল্টে নিয়ে আসে সাদাকালো দিন
নকশাল হত্যার পর খুনি গাড়ি
ময়দান পার সবুজ গাছের নীচে
চারমিনার বার করে আগুন দেয়
মুখ আর মুখোশ আশ্রয় নেয় একটি
ভস্মাধারে ফিনিক্স পাখিরা ফেরে না
ঘুম পাড়ানি গান বড়ো সংক্রামক
মকাই আর মাই ছাড়িয়ে নেতিয়ে
পড়ে আছে বিছানায় যেন নেতিবাচক
কিছুই না ঘটে ভোর কুসুম কুসুম

১০
জপের মালার পাশে শুয়ে ঠান্ডা বেড়াল
ক্লোরোফিল হারিয়ে যাবার পর কোটরে
ঢুকে যাচ্ছে একটা ডানাহীন রাষ্ট্র আর
দেশলাই কাঠি ঠুকে দেখে নেওয়া হচ্ছে
কতটা ধারণ ক্ষমতা আগুণের এই মৌসুমে
চৌকাঠ পেরলেই চলে আসে যতটা শরৎ
সেই যাতায়াতের রাস্তায় নিষেধের টুকরো
কাচের ধারালো অংশ জলভ্রমে শিউলি পড়ে
নর্তকীর ঝুমকার সেই আশ্চর্য পতন
এনে দেয় নৈঃশব্দের হিরোশিমা
সীমার ওপারে মেঘেদের উদ্বাস্তু শিবির
বিলাপহীন দৃশ্যের কাছে নত হয়ে থাকে

Facebook Comments

পছন্দের বই