লেখক নয় , লেখাই মূলধন

নরেশ সাক্সেনার গুচ্ছকবিতা

ভাষান্তর: রবিউল ইসলাম

উইপোকা

উইপোকা পড়তে
জানে না।

সে পুরো
বই
চেটে খেয়ে নেয়।

সিঁড়ি

আমি এক সিঁড়ির সন্ধান করছি,
সিঁড়ি দেওয়ালে
ওঠার জন্য নয়
নীচে নামার জন্য।

আমি দুর্গকে জেতার জন্য না
ওটাকে ধ্বংস করতে চাই।

ফাটল
ইঁটকে জোড়ার টেনশন শেষ হল
প্লাস্টারের উপর মুচকি হাসি উঠে এল
পিঁপড়ে দৌড়ে-দৌড়ে নিয়ে এল অন্নজল
শুরু হল অঙ্কুরোদগম
যেখানে টেনশন ছিল
সেখানে এখন উৎসব
হাসি
হাসি
হাসতে হাসতে দু’টো দেওয়াল হয়ে যায়।

পরিবর্তন
বহু বছর পড়ে থাকা প্রাসাদে
কেউ আসেনি
একদিন ঝড় এল
তার সাথে ধুলো
শুকনো পাতা আর ঘাস আর কাগজের টুকরো
পুরো প্রাসাদ এক আশ্চর্য সুগন্ধে ভরে গেল।

শিশু
শিশু ছড়ার অর্থকে নয়
তার সুরকে বোঝে
পরে সে ভাষা শিখবে
আগে অর্থ জানুক।

সে সবার হাসি বোঝে
বোঝে সবারই এল্লে ইল্লে লে
তোমার বেদ-কোরান-পুরাণ
এখন সে বোঝে না
আগে সে অর্থ বোঝুক।

তাকে বোঝার জন্য
তুমি কতটা অসমর্থ
সে বুঝতে পারে
শিশু ছড়ার অর্থকে নয়
তার সুরকে বোঝে।

এখন সে অর্থ বুঝুক
পরে সে শিখবে ভাষা
তার কাছে এটাই আশা

শিশু ছড়ার অর্থকে নয়
সুরকে বোঝে।

পতিত
চারশো বছর পরে
কাউকে কুতুব মিনারে উঠে
চেঁচিয়ে বলতে হবে না
আজকের হাওয়া আর প্রতিবন্ধকতা
জিনিস পতিত হওয়ার নিয়ম
আজ মানুষের উপর

ভয়
হাওয়া বওয়ার সময়
কিছু মেঘ এদিক-ওদিক হয়ে যায়
কিন্তু লাগাতার কালো হতে যাওয়া
আকাশের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না

আমার মনে পড়ে যায় ছোটোবেলার ঘরের সামনে
তারের সঙ্গে লটকে থাকা
মরে যাওয়া পাখির কালো শরীর

আমার সঙ্গে সঙ্গে ভয় বড়ো হয়ে গেছে
মরে যাওয়া কালো পাখি এখন আকাশ।

পানি

বয়ে চলা পানি
পাথরের উপর ছাপ ছেড়ে যায়

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়
পাথর জলের উপর
কোনো ছাপ ছেড়ে যায় না।

মৃত্যুক্ষুধা

খিদেয় অন্ত্রগুলি চুপসে ছোটো হয়ে
মাথা ঠিক পেটের কাছে এসে গেছে

আলো ফিরেছে তার নিজের স্রোতে

পৃথিবী বড়ো দ্বিধায় পড়ে গেছে
বাম থেকে ডানে ঘুরবে না ডান থেকে বাঁয়ে
বা স্থির হয়ে যাবে

শেষে শুরু হল তারা খসা
ঠিক নাভির নিচে
ব্ল্যাকহোল

মহাজগতের দিকে ফেলে দিচ্ছে
ঘিলু
খালি পেটেতে।

কবি পরিচিতি: হিন্দি সাহিত্যে নরেশ সাক্সেনা একটি পরিচিত নাম। তিনি ১৯৩৯ সালের ১৬ই জানুয়ারি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে জন্মগ্রহণ করেন। নরেশ সাক্সেনা ‘আরম্ভ’, বর্ষ’ এবং ‘ছায়ানট’ নামের পত্রিকার সম্পাদনা করেন। তিনি ফিল্ম নির্দেশনার জন্য ১৯৯২ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি হিন্দি সাহিত্য সম্মেলন সম্মান (১৯৭৩), পহল সম্মান (২০০০), কবিতা কোষ সম্মাননা (২০১১) সহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর কাব্যের মধ্যে ‘সমুদ্র পর হো রাহি হ্যায় বারিশ’(২০০১) উল্লেখযোগ্য।

Facebook Comments

পছন্দের বই