লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বন্ধুসুন্দর পালের কবিতা

ভাসান

গভীর, তোমাকে যে গভীর ভাবে না, সে তোমার কাছে ডুবে মরতে ভয় পায় না

মায়ের মাটির শরীর
বাবা চাষবাস পারেন না
তবুও মায়ের যে একটা বাঁধানো কুলো আছে
সে দিয়েই মা, বাবার পাঞ্জাবীতে রিপু করা গ্লানি বাতাসে উড়িয়ে দেন, তারপর মাটির ঘরের মেঝেতে থইথই করে ভাতফুল

বাবার গানবাজনার শখ
মা ওসবের কিছুই বোঝেন না, জানেন না
কিন্তু যখন সন্ধেবেলায় হারমোনিয়ামের রিডে বাবার আঙ্গুল পড়ে
তখন মা তুলসীতলায় সন্ধ্যাবাতি দিতে দিতে শুনতে পান ভাসানের গান

বর্ষাকালে পান্তাভাতের দিনগুলি

নিষিদ্ধ আয়ুর থেকে ছিনিয়ে এনেছি বর্ষাকাল
মাটির কুঁজোতে স্যাঁতস্যাঁতে শরীর রেখেছি ভরে, যদি কেউ পান্তাভাতের লোভেই আসে!
কুমারী পাতিলেবুর বীজ বার করে তাকে সাবালক করে তুলেছি, তবুও
নুনের অপমানে অতিথির বোঝা সামলে ব্যাঙাচির মতো জিভে কেউ ঠাট্টা মেরে যায়

যে মেয়েটি ঘনঘোর বর্ষায় ইস্কুল পালিয়ে একটা বখাটে ছেলের সাথে সিনেমা দেখতে যায়
তাকে বাসমতি চাল ভেবে তার গন্ধ নেয় বাতাস প্রেমিক
সেও ফুটতে ফুটতে ভাত হয়ে আসে
পরের দিন আবার মেয়েটি পান্তাভাত খেয়ে ইস্কুলে যায়

এমন বর্ষার দিনে ঘাটকুলে কেউ ছাপাশাড়ি শুকোতে দিয়েছে
কোনো কানাই-এর দল সেই শাড়ি নিয়ে লুকোচুরি খেলছে না
ছাপাশাড়ির গা বেয়ে টসটস করে পড়ছে জল
যেন কোনো হাড়-ভাঙা শ্রমিক বর্ষায় ঘরে ফিরে পান্তাভাত না পেয়ে খুব মেরেছে তার বউকে…

সেভিং ক্রিম

আমিও, সম্মোহনের শরীর সারাই
তাই, সেলুনের এককোণে রেখেছি স্নো পাউডার…
আর সামনে ঝুলিয়েছি লেবুলঙ্কা
যাহাতে, নজর লেগে খদ্দেরের বসন খুলে না পড়ে

‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো হে প্রভু’-নামের নিউব্রান্ড কোম্পানির সেভিং ক্রিম নিয়ে এসেছে দোকানে একটি সুন্দরী সেলসম্যান
—এই ক্রিমে নাকি পুরুষের দাড়ির বিরহ ঘোচে
অথচ, ঐ মহিলার কী ঝকঝকে গাল!
যে কোনো ঠাট্টায় পুরুষের লোমকূপ ভিজে যেতে পারে!

আমাকে পটাতে পারে এমন বিরহ দোকানে রাখি না, তা জানিয়ে দিয়েছি হাসি মুখে
মহিলার তর্কে বেশিদূর যেতে পারব না টের পেয়েই
বললাম, ‘আমাকেও কি সঙ্গে নেবেন ?’

মহিলা ইয়ার্কি মেরে প্রত্যুত্তরে জানিয়ে দিলেন—
‘আপনার নিজেরই তো একমুখ দাড়ি! কখনো সেভ করেছেন বলে মনে তো হয় না! আপনার দ্বারা হবে না এই ক্রিম সেল করা!’

আমিও বুঝলাম, হয়তো সঙ্গে নিতে চায় না বলেই…

Facebook Comments

পছন্দের বই