লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বুদ্ধদেব হালদারের গুচ্ছকবিতা

সাইকো


এবারের ডিসেম্বরের কথা তুমি ভুলে যেও না যেন? যদিও
ভীষণ দাড়িগোঁফ বেড়ে গেছে আমার। চুলে খুশকিও হইয়াছে
প্রবল। তবুও আমাদের এখনই কিছু প্রেমের কবিতা লিখে রাখা
দরকার। শুনেছি তোমার শূন্যতা অপরিশোধনীয়? এবং তুমি
হয়তো এখন স্নান সেরে ভেজা মন শুকোতে উঠেছ ছাদে। আমি
মার্সেল প্রুস্তের ছেঁড়া চটি পরে হেঁটে বেড়াচ্ছি রাস্তায়। আমার
কিছু খাবার প্রয়োজন। এবং কিছু টাকা। আহ, একটা মজার
কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি তোমায়। বম্বে থেকে পুরস্কার দিচ্ছেন
আমায় এক সম্পাদক। তুমি পারলে তাকে প্রণাম কোরো।


দীর্ঘদিন চিঠি লিখিনি তোমায়। কীই-বা লেখার আছে এত?
গত হপ্তায় মাথার চুল উঠেছে প্রচুর। আর অনেকটাই রোগা
হয়ে গেছি আমি। তোমার স্মৃতির নির্দেশে মাঝেমধ্যে কেঁদে
ফেলছি রাতে। অথচ এসএসডি ব্লটিং জিভে নিয়ে এখনও দারুণ
স্বপ্ন দেখি আমি। তুমি তোমার বরের একটি অতি অত্যাবশ্যকীয়
পণ্য। ফলত আমার ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় বাংলা কবিতার এক ও
একমাত্র সম্পদ। এসব বোঝো তুমি? শোনো, ফাহিমা ভীষণ ভালো
একটি মেয়ে এবং সে আমার কবিতা সম্পর্কে মোটেই আগ্রহী নয়,
সবকিছু ঠিক থাকলে তাকে আমি বিয়ে করব আগামী ডিসেম্বর।
তুমি খুশি হবে?


স্মৃতিকাতরতা আমার পোষায় না, কবে শেষ যৌনাঙ্গে
হাত মেরেছি মনে নেই। তোমার স্তনের অস্তিত্ব কি শুধুই
বিনোদনের জন্য? তোমার ছেলের কাছে এসব জানতে
ইচ্ছে করে। এবং তোমার বরের কাছেও। বহুকাল আগেই
দু-কান কেটেছি বিরহবেদনায়। এখন কি তবে নিজেকে
বেচে দেব চ্যুতিয়া কবিসমাজে? তোমাকে অল্প-বিস্তর
ঘৃণা করি আমি, কিংবা নিজেকেও। আমাদের বিচ্ছেদটুকু
বড়োই হাস্যকর, বিরিখে আঙুল ঢুকিয়ে অনুভব করেছি,
সত্যিই এ জীবন কেবলই যাতনাময়


নিজেকে আরও কিছুটা বানিজ্যিক করে তোলার কথা ভাবছি,
এ ব্যাপারে ফাহিমা আমার উপর অনেকটাই বিরক্ত। গত চারদিনে
সে আমায় ফোন করেনি একবারও। কোনোরকম কথাবার্তা হয়নি
আমাদের। গতকাল একটু-আধটু শ্বাসকষ্ট হয়েছিল আমার। আর
পাড়াটা লকডাউনে থমকে গেছে কেমন, একটা বিড়াল পাশের বাড়ির
পাঁচিলে বসে বমি করছে। এই মাঝরাতে শরীর জুড়ে জেগে উঠছে
ফ্রয়েড। নিভাকে ফোন করব? কিংবা সুমনাকে? অথচ ফাহিমার জন্য
সত্যিই কান্না পাচ্ছে আমার


কবিতা না-লিখে দিব্যি কাটিয়ে দিয়েছি সতেরো মাস। এবং আজ
এই মাঝরাতে দারুণ একটা স্বপ্ন দেখতে চেয়েছি আমি। যদিও সেসব
খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। আমার শুক্রথলি তুমি আঙুলে ঘাঁটছ
আর আমি প্রস্তুত হচ্ছি মঞ্চে ওঠার জন্য। লোকেরা আমার সঙ্গে অবান্তর
ও অদরকারি কথাবার্তা বলতে পছন্দ করেন। যদিও আমি আমার জিভ
কথা বলার জন্য ব্যবহার করিনি কখনও। বাঙালি কবিরা আমাকে নিয়ে
ভীষণ লজ্জিত। সুর তাল কিছুই নেই আমার অনুভূতিতে। একটি মেয়ের
ফুটোয় আঙুল দিতে গিয়ে প্রথম মনে হয়েছিল কবিতার প্রতি মানুষের
আজীবন কৃতজ্ঞ থেকে যাওয়া উচিত। আমার কি আরও কিছুটা সংযমী
হওয়া প্রয়োজন? মঞ্চের উপর ব্যাঙগুলোকে পিষে ফেলছি পা-এ, এবং
কবিতা পড়ার বদলে হেগে নেমে যাচ্ছি আমি। বলো, তোমরা কি আমায়
অনুকরণে সমর্থ?


‘তোমার পাশে দাঁড়িয়ে ভাঙা পৃথিবী সাজাবো।’ এসব কথা
বৃদ্ধ রাম বসু বলতেন। এসব পড়ে আমি খুবই লজ্জিত হয়ে
উঠেছি। এবং বিছানা থেকে পড়ে গেছি মাঝরাতে। এমনকী
নিজের কান কেটে পাড়ার সবচেয়ে চড়ানে সুন্দরীকে সঁপে
দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি এই মুহূর্তে। সমস্ত প্রকাশকদের
কাছে অনুরোধ, আমার যাবতীয় কবিতা নিয়ে একটি
‘বুদ্ধদেবের গদ্য সমগ্র’ প্রকাশ করা হোক। কিংবা উলটোটাও
করা যেতে পারে। গদ্যের নামে কবিতা। মেয়েগুলো এতটাই
তামাশা করে তুলেছে আমার জীবন, এর জন্য আমি সেই
সমস্ত দেবীর কাছে কৃতজ্ঞ যাদের চোখ অদ্ভুত সপ্নিল আর
যাদের ঠোঁট অসম্ভব আর্দ্র। থিকথিকে জীবাণুর মতো এই
ভালোবাসার কথা আমি আর লিখতে পারছি না, প্রিয় পাঠক

Facebook Comments

পছন্দের বই