লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

মণিশংকর বিশ্বাস

ফল

রোদের জটা থেকে ছিটকে ওঠে কয়েকটি শালিখ
‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ কিশোরীর মতো ধানখেত একা শিস দেয়
গোলাপ ফুলটি আসলে ততটা বড়ো, যতদূর তার সুগন্ধ
বহুদূর হতে আকাশে জীবন্ত কোনো গ্রহ তাকে প্রেম নিবেদন করে।
এইসব মিলেমিশে থাকে আমার ভিতর—
বাইরে থেকে বোঝাই যায় না এই মিলমিশ—
একটি বৃহৎ সংখ্যা যেরকম দুই বা দুইয়ের অধিক ক্ষুদ্রতর সংখ্যার যোগফল।

অশোকনগর

ভালোবাসি— এই ব্যক্তিগত বোধগম্যতার আঁধারে
একটি জোনাকি ক্রমাগত জ্বলে বা নেভে।
বরষাঘন চোখের মতো পুকুরের ধারে
দাঁড়িয়ে রয়েছি, ভিজে কুকুরের আনুগত্য নিয়ে।
সাইকেলে বাঁধা বেলুনগুচ্ছের মতো
কী যেন একটা
ছটফট করে, উলটো দিকে ছুটে যেতে চায়।

তোমার চোখের বিন্দুবিসর্গ আমার ভালো লাগে

আমি চাই ও-দু-খানি চোখ জানালা দিয়ে এসে
আমাকে তুলে নিয়ে যাক

…নিয়ে যাক তোমার নিজ্‌ঝুমে, অশোকনগর।

কলাবউ

তোমাকেই পেতে চেয়ে বাকি সব আগডুম বাগডুম
এই শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকও চলে গেল
তুমি সেই দেহতত্ত্ব গান।
সুন্দরের জলে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে—

দুপুরের নির্জন খয়েরিনীল কচুরিপানায়
যেরকম ডুবে থাকে রাজহাঁস।
মনে পড়ে গত শতকের আশির দশক—
মানুষের যা যা দরকার, সব আবিষ্কার হয়ে গেছে
দুপুরবেলা আমিও আবিষ্কার করেছি কখন
প্রতিদিন তুমি শাড়ি খুলে উড়াও পাখির ঝাঁক
পুকুরের জলে মেশে বৃত্তাকার হলুদ
ওই উদ্বৃত্ত নাভিদেশ পরক্ষণেই অন্য মহাদেশ
বৃষ্টিবন…
পঁচিশ বছর দেখা হোক বা না হোক

আজও তোমার মুখের ’পরে
আমার সকল যৌনইচ্ছা খেলা করে।

প্রাক্তন

পুরোনো দিনগুলিকে দুর্বোধ্য সংকেত মনে হয়।

কী যেন ভুলতে হবে—
সারাক্ষণ মনে পড়ে।
রক্তের গভীরে ফোটা এই রক্তজবার মালা
অতর্কিতে দেবতার পায়ের দিকে চেয়ে
হাড়িকাঠের মান্যতা চায়
অন্ধের চোখের সাদা অংশের মতো ভয়
ও কালো অংশের মতো উদ্দেশ্যহীনতা
ছাগশিশুটির ’পরে ভর করে।

আমাদের সম্পর্ককে, অতঃপর, জলে ধুয়ে ফেলা রক্তের দাগ মনে হয়।

নিজের পুরোনো কবিতার মুখোমুখি

যখন পিছন ফিরি তোমাকে দেখতে
মনে করি এ কোন সময়?
তুমি কি গভীর নও তত
তবে কেন এত জল, এত কান্না উপচে পড়ছে?
ফার্নপাতা, শ্যাওলায় ঢেকে গেছে প্রেমিকার চুল
পাথরের শ্বেতাভ হাসির দাগ লেগে আছে
ওই মর্মরজটিল বেদেনির ঠোঁটে…
লতানো ফুলের গাছ থেকে
ঝরে পড়ে ফুল, আরও শাদা ফুল।
একটি গোখরো হিলহিলে, সহসা উঁকি মারে
সবুজ পিচ্ছিল অক্ষরের ফাঁকে

অধীর প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতন।

Facebook Comments

পছন্দের বই