লেখক নয় , লেখাই মূলধন

মোহিত তন্ময়ের কবিতা

চিত্র: ইভস্ ট্যাঙ্গি


বৃষ্টি ভেজা বালিহাঁস কিচ্ছুক্ষণ আগেই আমি উড়িয়ে দিয়েছি। যত দিন যায় মৃত কুকুরের কাঁধে একটু একটু হাত রাখতে শুরু করছে অন্ধ দেওয়ালঘড়ি। কয়েকদিন আগে নদীর কাছাকাছি কোনো ভাঙা শববাহী গাড়ি ডুবে গিয়েছে। বন্ধ্যা কলকাতা এ’সব কিছুই দেখতে পায় না। এখন এই উত্তপ্ত মরুভূমির মাঝে তুমি জোরসে হর্ন বাজাও, এই মৃতপ্রায় শহরে বেড়ে উঠুক প্রেম, সাহিত্য, জঞ্জাল, ডাস্টবিন। এই ভাঙা দরজা আটকে চলে যাব কোনো মৃত্যু উপত্যকায়। যেখানে কাল সন্ধ্যায় একটা নদী নগ্ন হয়ে যায়। সারা শহরকে বুকের নরম পলি দেখায়।

সবকিছু গিলে ফেলতে চাওয়া পাকস্থলী আমি খুলে রেখেছি ছেঁড়া বালিশের ভিতর। তোমার শীতল বিছানায় এই মাঝরাতে কেউ মরে যাচ্ছে, তুমি হাসছ। হাসতে… হাসতে… এই অন্ধকারে তারা খসার অপেক্ষা করছ। ভাঙা বুক ঝরা তারাদের কাছাকাছি এলে পোড়া মাংসের গন্ধ ওঠে। এই সংকটের দিনে, আমাদের ঘুম পায়।
আমি তুমি আর আমাদের পোড়া ছাই নিয়ে আমরা শুয়ে পড়ব। কিন্তু অনেক দিন হল, আমাদের শোবার খাট আমি নিলামে বিক্রি করে দিয়েছি কোনো এক বর্ষার সন্ধ্যায়।


শৌখিন পথ পেরিয়ে এসে ভাঙা মন্দিরের কাছে নত হই। জীবন এখন অন্তিম বিকেলের বৃক্ষ।
নিয়মিত রোদ ছুঁড়ে ফেলে অন্ধকার ধারণ করে। চলে যাওয়া দিনগুলো মৃত প্রজাপতির মতো। রঙিন ডানা কবেই মাটির কাছাকাছি পৌঁছে গ্যাছে, নিজেই জানি না।

মায়া ও যন্ত্রণার মাঝে এক অদ্ভুত শূন্যতা আছে। সেই শূন্যতা জুড়ে অন্ধকার ঘনিয়ে এলে দিনের শেষ ট্রেনটি এসে থামে। তারপর ট্রেন থেকে নেমে আসে লাল-নীল-হলুদ মলাট দেওয়া বিল-বই, গাঢ় নীল কার্বন পেপার আর তিন টাকার ইউজ এন্ড থ্রো পেন। নিস্তব্ধ স্টেশন ভেদ করে একটি প্রকাণ্ড মাঠ। প্রবল শীতের ভোরে কুয়াশায় মোড়া অস্পষ্ট মাঠে একজন বৃদ্ধ খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়েছে। অদ্ভুত ঘুম! ঘুমের মধ্যে আশি বছরের বৃদ্ধ, দুধের শিশু হয়ে যায়। এখন শিশুটি ঘুমের ঘোরে ইউজ এন্ড থ্রো পেন দিয়ে বুকের মধ্যে একটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন আঁকছে।

Facebook Comments

পছন্দের বই