লেখক নয় , লেখাই মূলধন

শুভম চক্রবর্তীর কবিতা

অস্তিত্বের কথা

দেওয়ালে, উৎকর্ণ কেউ অপেক্ষায় রত। ধ্বনি, প্রতিধ্বনি, আর সমূহ বুড়বুড়ি কাটার শব্দ তার শোনা চাই৷ শুনে তিনি জাবর কাটবেন। আঁশে, বিদ্যুতে চলকে চলকে যাবে গণ্ডদেশ। স্থলনহীন অথচ মধুর জাবর কাটার শ্রান্তিতে চোখ বন্ধ হয়ে আসবে। গোয়ালে বাঁধা এঁড়ে যেন। ক্লান্ত, গাভিন হবে না । হরপ্পা, মহেঞ্জোদারোর ধ্বংসস্তূপের ওপর চরে বেড়ানো ভাইবেরাদর সকল। নিউট্রনই মূলত তোমাদের শক্তি। এবং তা থেকেই তো হ্যাঁ আর না-এর প্রোটন, ইলেকট্রন হ’ল হে। অস্বীকার খুব গুরুত্বপূর্ণ যদিও। কিন্তু আমার দেহপটাশ্রিত অস্তিত্ব বুড়বুড়ি কাটছিল, ক্ষণকাল, আর শ্রান্তিতে নিভে আসা আমি শ্রাবণীপূর্ণিমার দোদুল চিদাকাশের দেওয়ালে কান পেতে শুনছিলাম সে বুড়বুড়ির শব্দ। নিভু, অস্তিত্ব ভাবনায় ভীত নিতান্ত বুড়বুড়ি। বৃত্তাকার ডিম্বানু প্লাসেন্টার অন্ধকার রক্তমাখানো স্বস্থানে শুয়ে ঘুমোচ্ছিল। আমার জন্মমুহূর্ত মনে পড়ছে। মুখে চুল গুঁজে শুয়ে থাকা ভদ্রমহিলার হাত-পা ছোঁড়ার দৃশ্য মনে পড়ছে। হাসপাতালের বেডে রক্ত চলকে ওঠা মনে পড়ছে সেদিনের মতো। চাদরে ছোপছোপ রক্ত, আকাশে ছোপছোপ তারাই যেন। দেওয়ালে কান পেতে আছি, বুড়বুড়ির শব্দ আসছে। আমি আমার থেকে আলাদা। আমি আমার থেকে আলাদা নই। আমি আমার থেকে আলাদা।

অযোধ্যার দিকে তাকিয়ে

নিহত শম্বুক পাথরের চাতালে থেঁতলে পড়ে আছে । ইক্ষ্বাকু বংশের সূর্য আপনার, আপনাদের দাবদাহ ছেলেটার সহ্য হ’ল না। পাথরের গায়ে কালো ক্লট ক্লট রক্ত। হাঁদা শম্বুক বোকা শম্বুক তার আরাধনাকে প্রত্যয়িত করতে চেয়েছিল আপনাদের কাছে। সমগ্র আর্যাবর্তের হল্লারব সে তো শোনেনি। সে তো জানে না চিরসময়ের ভেতর কিছুক্ষণ পিছিয়ে শোননদের ধারে ছলছল করছিল আপনার মুখ। যেন প্রতিবিম্ব, যেন তার ভেতর আশফাক বিম্বিত, যেন তার ভেতর ছুঁয়ে ফেলার সুমহৎ পাপে থেঁতলে থেঁতলে মারা হচ্ছে দলিত যুবকদের আর তাদের রক্ত কী শীতল! কী নরম! কী সান্দ্র ! সূর্যাস্তের মতো। সিদ্ধাশ্রম কত দূর প্রভু? আপনাকে সোনা জহরতের চৌদোলায় চড়িয়ে চামর দোলাতে দোলাতে নিয়ে যাবে পেটমোটা ব্রাহ্মণেরা। আর কোনো বনবাস নেই, সীতা নেই, রাবণের চিতা কেউ পেচ্ছাপ ক’রে ঠিক নিভিয়ে দেবে। সূর্যাস্তের দৃশ্যে আমরা দশরথকে আনব, ওঁর মুখে মাঝে মাঝে নিহত দলিতের বাপমায়ের মিশকালো ছায়া ঘনিয়ে তুলব। বেশ হবে। প্লট জমে ক্ষীর। রক্ত থইথই ভারতবর্ষের বুকে কাড়ানাগড়া বাজাতে বাজাতে, আপনার জয়ধ্বনি দিতে দিতে, কাঁদতে কাঁদতে, কাঁদাতে কাঁদাতে এক কলঙ্কিত ধূসরতার দিকে যাব আমরা, রক্ত সাঁতরে সাঁতরে।

Facebook Comments

পছন্দের বই