লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সঞ্জীব নিয়োগীর কবিতা

স্মৃতির আগামী

কে কোন দিকে বয়ে যায়
বয়ে যাওয়াগুলো দুঃখের সুর মেখে থাকে

দুঃখের গান বেজে ওঠে
বন্ধ করে দিই
কিংবা ভলিউম কম করে শোনা না শোনার মাঝে

মন বেজে উঠলে গান হয়
তখন বাসি দিনের কথা আর মনে রাখেনা কেউ

মধু আনতে বেরিয়ে আমি বাঘের গন্ধ পাই
আর মদের টানে এলোমেলো টাইপ হয়ে যায় কবিতা
সেগুলোও অবিকল রেখে দিলে
ভরাট করা যেত কিছু গর্ত

আর তখন শেয়ালের ছবি আঁকা বসে বসে
প্রতিযোগিতাহীন লেগে থেকে

মেধাঘুম ভালোলাগে প্রচ্ছদের দেশে

এই তো তুলোর দিন উড়ে যাচ্ছে মেঘে
ডাকাডাকির অবহেলা একপেশে জেনে

ছবির কথার কথা ভার হয়ে আসে শেষ দিকে
মনমরা পাপক্ষয়

বারবার বয়ে যায় দুঃখের ক্ষমতা
পায়ের অক্ষম বাড়াবাড়ি
নিয়ে চলে যাব
মুহূর্তে উদ্যত

সুন্দর কথাদের কন্ডোমের পাশে বিশ্বাসযোগ্য বসিয়ে রেখে আসি
আর সিগারেট কিনতে গিয়ে টিকটিকি লজেন্সের বয়মে হাত বুলই

ফিরে যাই ব্রেকের পর একটা লেজ
যেখানে ধরা ছিল…
যেখানে ফেলে এসেছিলাম পুরাতাত্ত্বিক সঙ্গম

ফাটল থেকে গেল, যা সবার ক্ষেত্রেই হয়
আমি এই নিয়ে কাটিয়ে দিতে পারব
সমুদায়িক নির্মাণের বিস্মৃতি

হঠাৎ ছুটে আসা কোনো নিশানা
আমি তোমাকে খাপ খাইয়ে নিব
বিফল হতে দেব না
কত আশায় তোমার এদিকে ধেয়ে আসা
হে চিরসখা আততায়ী

উন্মুখ যখন, কখন বিরূপ হয় এই জেনে নেওয়া
উজাড় ছবির স্বপ্নময় ভনভনে মাছির মগ্নতা
মুঠো করে ধরে তুমি গতজন্ম, ব্লেডচিহ্ন অদৃশ্য করেছ

সেই চিঠিগুলো পড়ে থাকবে বাগানে
লুকিয়ে রেখেছিলে যাদের স্বর্গ মত্য পাতালের ভয়ংকর সুন্দরের থেকে
আজীবন
আজীবন
আজীবন…

মৃত্যু আর অমরত্ব আর জীবন যখন কোনো আলাদা মতলব নিয়ে হাঁটে না
পাতা ঝড়ার শব্দও নেই যেখানে

এই সাড়াশব্দহীন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র নিয়ে আমার কোথাও যাবার নেই
দেওয়ালে যায় না থাক একা থাক নিঃসঙ্গ দেওয়ালে

মন খারাপের জন্য আমি বসে থাকি নির্জন গুহায়
মনখারাপ একটা তীব্র আলো হয়ে
কোনো এক অচেনা প্রান্তর থেকে লহমায়
ছুটে এসে আমার ভেতরে ভেতরে ভেতরে
ঘুরপাক খেতে থাকে…

আমি তাকে নিরাময় নামে ডাকি

……

জন্ম পরবর্তী অবাক স্বাদগুলো
তাড়াতাড়ি গলে যাচ্ছে কাঠির বরফ

ঝড় বলে ডেকে কোনো এক হওয়ার গতির মধ্যে ভয় ভরে দিলে

দু-দিকে প্রচুর আলো, অন্ধকার
শিল্পীর দোকান
সাজানো
এলোমেলো
মাঝখানে অনর্গল আমাদের বাড়ি

তার বাঁধা থেকে যায় নির্বিকার উঠোনের বুকে
আঙুলেরা সেই তার নানাভাবে ছোঁয়
ডায়েরির পাতার হলুদ, বিবাহের জন্মদৃশ্যে
গায়ে লেগেছিল জোড়াতালি

আরেক রকমভাবে কাছে টানা যেত তো বাহির
রি-টেক হলো না
মনোলগ সংলাপ হয়েছে
মজে গেছে নদী
নদী ছেড়ে চলে যাওয়া মাঝিদের পেট …

জেগে ওঠা চরে
ফসল কাটার গান
সে কি শুনে গেছে

এভাবেই বহু স্মৃতি ক্ষীণ হয়ে আসে

বারবার নিচু হয়ে তুলে নিচ্ছ স্বাধীনতা
স্বাধীনতা তো খুব সাধারণ জিনিস
মাটির কাছে বসে থাকে
টক্সিক দ্যাখে আর কাঁদে

কান্নায় সর্বাধিক আনন্দ … এই কথা বলে
কেউ কোনো এক দিকে কেঁদে ওঠে

নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকে মাথা রাখার বুক
পরমায়ু গান গায়
ফসিলের মাঠে…

একদা খাঁচা ও অন্যান্য গল্প

কাদা নিয়ে অনেক গল্পের দিন লেগে আছে বুকে
আঙুলের সীমার বাইরে তুমি আঙুল চেয়েছ
আলতো ধরে হেঁটে গেছ ধীরে অন্যমনে
প্রাণঘাতী পিছলের মন ভেঙে দিয়ে
তোমাকে চেয়েছে তবু দীর্ঘ পথের ধুলোবালি

এইভাবে গল্প শুরু হয়
কোনো দিন কাদা নিয়ে
কোনো দিন খরা গেলে ধুলোবালি থাকে

আঙুলেরা চিনে নেয় নিজস্ব ভূমিকা

প্রতিলিপি কিছু কম দামে
বিক্রি হয়
মাঠের বাইরে
যেমন হঠাৎ কেউ ফাঁকা ঘরে বসেই থেকেছে একা একা
একদিন নিজেকে পেয়েছে
হয়তো সেভাবে নয়, বোধিগাছ অথবা সুজাতা
তবুও পেয়েছে স্বমহিমা, মুঠো ধরে থেকে

ঘুরপথে ফিরে এসে বলো
আবার এসেছি ফিরে বেহায়া কুকুর
পুকুর ঘাটের থেকে তুলিয়া নিয়াছি
শতচ্ছিন্ন শাড়ি
পাগলি তখন লাজে হাবুডুবু মরণের দিকে
পুরুষালি বীর্য যায় পথে গড়াগড়ি

যেন বাংলা ভাষা
জেলা থেকে গ্রাম থেকে ক্ষুদ্র পল্লী থেকে
নানা মুখে খেলা করে শেষমেশ
ঢুবে মরে কলকাতা পুকুরে

রিব কেজে সুরক্ষিত ভাইটাল অর্গ্যান্স
তন্মধ্যে অচিন করে দিবানিশি ড্যান্স
সামান্য নিয়ম ইহা জীববিদ্য কহে
ভবকালে হেরে কবি দেবী কালীদহে

আরও আরও দেব-দেবী ঘটে ক্রমে ক্রমে
প্রেম জাগে ঘর্মক্লান্ত শারীরিক শ্রমে

…..

সেতু, দ্যাখো, চোখ বন্ধ করে নিঃস্ব হও
গান শোনার মতো
হাত ধরার মতো
চুম্বনে শরীর তুচ্ছ তাই চোখ বন্ধ হয়ে আসে

নির্মাণের নামে নানা আসা যাওয়া চলে
মৃতদের নগরীর বুকে
টাকা দিয়ে শরীর কিনছে আর ভুলে থাকছে আঙুলের কালি

যৌনরস টাকার কাগজে মুছে ফ্যালে

যুবতি পাখির ভয়ে খাঁচা জেগে থাকে

যেমন অন্ধকার
স্মৃতি ও বিস্মৃতি
অংশত প্রেমে পড়ে যাই
আংশিক বহন করে বাঁচি

মৃত্যুর কুশলি হাসি ফুটে ওঠে ঘুম জাগরণে

কথার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে

বারবার বেঁচে উঠি শব্দের থেকে নিরাপদে…

Facebook Comments

পছন্দের বই