লেখক নয় , লেখাই মূলধন

সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা

নির্বীজ প্রস্তাবনার দিকে

রাত্রির পাঠক্রম তোমাকে জটিল ভেবে সিঁদ কেটে ঢুকে পড়ছে অস্থিচাতুরী। ফসলের দিকে যেতে যেতে দেখা হবে বলেছিল বিষণ্ণ রক্তপাত। ঋতুভার খুলে খুলে আশ্চর্য হেঁটে আসে শান্ত মৃগপথ। ষড়যন্ত্রের ভেতর সাজানো বনতল। শুধুই তমাল হাওয়া। যক্ষিণীর স্তনের মতো অপভ্রংশ কিছু আলাপ। সর্পভাষার পাশে যেকোনো করুণা, পুরানো গানের ভেতর খুলে দেয় শামুকের জরায়ু— গহ্বর। কথার আদলে যারা কথাকে ফেরায়, তাদেরই ছুরিতে শ্যাওলা মেখে শুয়ে থাকে ধ্বজভঙ্গ পাথর। এটুকুই দিকনির্দেশ। রাত্রিশিকারে যাবে বলে ভ্রূ-তে ধনুক এঁকে নিজেকে গুছিয়ে নেয় কৃষ্ণবালিকা।

অস্ত্রের ডাক পেরোতে পেরোতে, নির্বীজ গর্ভ খুলে দেয় তোমার কামরাঙা গাছ।

জন্মান্তরের পথে পথে

সাদা সরষের ক্ষেত থেকে অবসরে কুড়িয়ে এনেছ অবসাদ। হাওয়া নেই এমন নির্জন বিকেল। স্থবির সাইকেলের চাকায় অনেক পুরানো ধুলো। গঙ্গাফড়িংয়ের মতো আলো কমে আসে। দিগন্তের চোখের নিচে এভাবেই কালি জড় হলে, ঝাপসা হয়ে ওঠে সমস্ত অক্ষর পরিচয়।

তৃষ্ণা নেই। আকাঙ্ক্ষা নেই। শুধু একটা জন্মান্ধ কুয়ো আত্মহত্যার গল্প শোনাবে বলে তোমাকে ফুসলে নিয়ে যাচ্ছে জন্মান্তরের দিকে।

ভুল সংলাপের মঞ্চ থেকে

কার থেকে গোপন করবে পাথরের অস্ত্র?

শিকার উৎসব পেরিয়ে এসে দেখ, রাশি রাশি হরিণমাংস। শব্দহীন মাছি উড়ে আসে। তোমার আঙুলে মন্ত্রপূত তামার আংটি। কাঁচা মাংসের বাড়িঘর। ভেতরে জানালা খোলা। বাতাসে বাতাসে খুলে গেছে সংযম। রক্ত জানে, রক্তের কাছে ফিরতে চেয়েই তুলে রেখেছ গোপন নূপুর।
শান্তির সংলাপ— এ শুধু সন্ন্যাসীর অভিনয়।

চেয়ে আছি অনাবৃষ্টি

শর্তহীন আক্ষেপের দিকে সরোদ বাজছে খুব। স্মৃতি থেকে যতদূর এই আবহ— ততটাই দীর্ঘমেয়াদী শূন্যতা। পুরানো ক্যালেন্ডারের গোপন অসুখ থেকে, নিরাময় তুমি বেছে বেছে আলাদা করেছ কথা ও সুর। গান পর্যন্ত হাঁটতে পারিনি একসাথে— এমন মনখারাপ থেকে হাওয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছি ছাতিমের ফুল।

এই চৈত্রপবনে, বৃষ্টি ভাবতে পারি না কিছুতেই।

গানহীন, শোকহীন

সংলাপ খুলে খুলে জড় হচ্ছে গ্রহদোষ। মেদ ও মদের আধিক্য নিয়ে শীতকাল আসে। এইসব কঠিন দিনে মরে যাওয়া লন্ঠনের আলোর নিচে নির্বান্ধব শুয়ে থাকে বালি— কচ্ছপ। আমিষ নদীটির জলে হাত ধুতে ধুতে চিহ্নহীন খসে গেছে আয়ুরেখা। অবাধ হাওয়ায় পড়ে থাকে পাথরের ছুরি।

আবহের পরে আর কোন গান নেই। পায়ে পায়ে উঠে শোক ও সম্ভার।

Facebook Comments

পছন্দের বই