লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

দেবাশিস বিশ্বাস

তাস ও রক্তের স্পট: একটি অমেরুদণ্ডী নোট

[মহোদয়, আমি অসমের জঙ্গলে যাইনি। কিন্তু সামনের বাঁশবাগানে দাঁড়িয়ে তর্ক শুনছি গণ্ডারের। অণ্ডকোষের আশায় গণ্ডারকে হত্যা করা হবে। এবং তার মিহি দাঁতের ফুঁ ছড়িয়ে দেওয়া হবে সবুজ কাষ্ঠলে…]

মস্তিষ্কের খোঁজে লণ্ডভণ্ড করেছে বাগান
তরমুজের জেদ ফাটিয়ে ঘুমিয়েও পড়েছে
‘মুক্ত করো জনজাতি মানবসভ্যতা’
জোনাকির মিটি মিটি টাইমের বর্গ
জড়িয়ে থাকে যারা তাদের অস্তিত্ব অজগরের মতন

*
লোম ছুঁয়ে পালিয়ে যাওয়া হাওয়া
‘ভাল্লুক থাবা চাটছে’—
তাকে পাশ কাটিয়ে
ট্রাক
ধাতুকে ধাক্কা দেয়

বরফের উপরে আছড়ে পড়ে OZONE
মস্তিষ্ক,
ও কিছুই না।
দুর্বল পাখি তাড়ানোর মেশিন।

দ্রাঘিমা টেনে রেখে পালিয়ে গিয়েছে ম্যাকাও,
তার জঙ্গলে মুক্ত চুমু
ভাবো, পরশু থেকে, আজ দাবার প্রত্যেক ঘরে কোনো খেলা নেই।
দু-বার না উড়ে একবারেই
মাথার চুলগুলো কমে যাচ্ছে… ডুবে যাচ্ছে যাদের অস্তিত্ব অজগরের মতো

একদল হরিণ,
কখনোই ভাবিনি রাস্তা তার পিতামহের স্মৃতি নিয়ে যাবে

অস্থির সময়ে, টেবিলের অন্ধকারে পাখির ডাক
লালায় অ্যাসিড…! দাঁতের তড়িৎক্ষরণ বিলাসিতার কারণ।
কল্পনায় দোষ নেই, যতবার খুশি গলায় ফাঁস পড়তে পারো
ক্ষেপে উঠছে টলটলে হাত
চাবুক
মাছি
তেলের ব্যাড়েল গড়ানো
এই তোলা হল, সাজিভরতি, জবাফুল। মন্দির।

[তারপর পবিত্র কুসুমের ডাল ছিঁড়ে মায়াহীন বিষুবতলে হলুদ সূর্যমুখী ফুল থেঁতলে তুমি ঠিক পালিয়ে যাচ্ছ অণ্ডকোষ জ্বালিয়ে। একটু বোসো, নিরিবিলি সন্তানের নড়ে ওঠা দাঁতের মিথ্যায় ইঁদুরকে আন্দাজ করো। তুমি কি ভাগ্যবান! জমি বন্ধকের অজুহাতে ড্রিল করছ নাভিতে। সে-নাভি দুর্গন্ধময়।
ভাবছ, এবার রোপওয়ে থেকে ঝাঁপ দেবে?]

তুলতুলে পোঁদ-পাকা বুলবুলি অরাজনৈতিক
বহু পুরোনো প্লাস্টিক জানলায় বাঁধা আছে,
ওখানে ফোন ঝোলানো থাকে
ট্রান্সফরমার ফ্ল্যাশ করে। দু-একটা বাঁদুরের বার্স্ট।
নেমে গেলে শ্রমিকের কালো ধোন, বিশেষরূপে তার যৌনতার কোনো দাম নেই।
লক্ষ লক্ষ যুগের রূপান্তর, মানুষ গাছের শাখাপ্রশাখা খোঁজে।
মনে পড়ছে, হাতকাটা ৫০ হাজার মিলিয়নের থেকেও বেশি রক্তের মুঠি।
চা পাতা চেবাতেও জল ওড়ে, অরোগ্রাফিকভ্রান্তি
বুকে হাঁটা বালি, অর্ধেক আংলি ছাড়া কিছুই নয়

[কটেজের সামনেই বাদামের খোসা। কিছু তাস ও রক্তের স্পট। ইয়া, বিশাল লোহার গেটে ঘাতকের তড়িঘড়ি ছুটে পালানোর রেখা। লতিয়ে সন্ধ্যা নামে বা ভেঙে পড়ে সকালের সূর্য। জন্তু তো, রড কোষ দিয়ে দ্যাখে, কটেজের আকাশ দিয়ে জেট বিমান উড়ে যায়…]

আমি পলাতক হাজার হাজার কচ্ছপের পিঠের শ্যাওলায়
কেউ টিপে দিয়ে স্যুইং খায়
অযথা গভীর সমুদ্রে দাঁড়িয়ে কলোনিবিমুখ হয়ে পড়ি
তারা খসা ও মেরুন কালারের হাতুড়ি-মুখো তিমির পেটে অজস্র মাছ
বলেছিল, শান্তি এক দুর্ভিক্ষের নাম…
ভাবুক অনায়াসে গাছগুলো ছেঁটে দেয়… বাড়তি খনিজ
লম্বা লম্বা পা… এ-সব রূপকথারই গল্প।
সেও একা

জলে জলে ঘোরে
পৃষ্ঠটানের জন্যই সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
গৃহহীন পিছলে যাওয়া সৌরে আচমকা দেখা হয়ে যায় দেয়াল। চুনের রেখায় বুদ্ধি… লা লা লা

এবারের মতো প্রথম আবিষ্কারের খাতা থেকে তোমায় বাদ দেওয়া হল

ঐরাবতের কাহিনি


মোচড়ানো বৃক্ষের জাহাজ, উড়ে গেছে কি — কবিতার
ফাঁকা অনিঃশেষে দাঁড়ানো ঐরাবত, চুলগুলো বারুদ
কোথায় ছিল সে, অনুমানে তিনটে খুন হয়
যতই রটানো হোক তিলখেতে বাঙালার পাখি ধরা হয়—
বদমেজাজি লোক সে, সীসার হৃদয় থেকে ভার নিয়ে নেয়
ধরা যাক, শ্বাসরুদ্ধ
অপর পাশে কবিতার খেত

উচ্ছে কবিতার কাছে, ঘেঁষে আছে খুনি নিবারণ—


যথাসম্ভব টান দিলেই পুকুরের নলি ছিঁড়ে যাবে, শান্ত মৌরলার চঞ্চল
মাথাদের বিশ্রাম চাই… এই অজুহাতে আঁশ তোলা হয়
কঠোরের দিক ওইদিকে, একটু কান ঘেঁষে গেলেই বাড়ি ঘর জঙ্গলে, মাতৃ হাঁ শ্বাসের আওয়াজ
শোনো, অবিকল জিতে যাওয়া ট্রফির চিক্কন—
ছুঁড়ে কেউ জমেছে এমন… মা-মরা সন্ধ্যার একায়?
আবহাওয়া মাছেদেরই থাকে
তবু কোনো চোর আসে, যথাসম্ভব টান দিয়ে মৌরলার ঠোঁট ছিঁড়ে নেয়


যতটা ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি, মাফলার জমে যাওয়া বরফ
আমি তা কুকুর চোদার মতো দেখি
এই গরল, তামার পাত্র উপচে ওঠে দোকানের ঘরে
বিধিসম্মত কফিনের পেরেকে খুঁচিয়ে তুলছে সে কবেকার জমে থাকা ফ্লেশ!
কালো জাদুতে বিশ্বাসী, ঐরাবত
গন্ধের অভাব বোঝে, নাসারন্ধ্র থেকেও দূরে, সূর্যের প্রজ্জ্বলন
এ কেমন মহামায়া রুপোর জলের কাছে আবেদন যেন
মৃত পশুদের দল স্টিল হয়ে আছে, ধীর হয়ে আছে
ঘাসের ক্রমশ হাত মানুষ তুচ্ছ করে
যেন সে পশু নয়
কফিন বানানো তার কাজ, অদৃশ্য জাতক!

Facebook Comments

পছন্দের বই