লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

রঘু জাগুলিয়া

তখন দুপুর। গাছের পাতা দিয়ে ঝরে পড়ছে এপ্রিলের রোদ। অবসন্ন পাতার কথা ভাবছি সারাক্ষণ। ভাবি জীবন কি কয়েক ফোঁটা জল। পিপাসার্ত পথিকের মতন অতিক্রান্ত বেলা। পাঁচিলের উপর দিয়ে মাঝে মাঝে একটা-দুটো কালো বিড়াল হেঁটে যায়। আর্দ্রতাহীন একটা বাতাস ধীরে-ধীরে কণ্ঠরোধ করে। আর বাবলাগাছের গুঁড়ি রাস্তা আগলে পড়ে থাকে এমনি
যেন মৃত্যুর পর আরও অবাধ্য হয়ে উঠছে কেউ

তখন দুপুর, চলে যাচ্ছে পরকালে…

গাছের কাছে ছায়া থাকে যেন পুরোনো বন্ধুর মতো। পুরোনো দিনগুলোর মতো। কত পথ চলে যায়, কত অজানা সিঁড়ি দিয়ে চলে যায় আলো। আমার মনের থেকে দ্রুতগামী সেই পাখি, আমি তাকে খুঁজি। সবুজ-হলুদ ধানখেতের উপর দিয়ে একটা হাওয়া চলে যায় নিঃসঙ্গ।

ভাবি, নিঃশ্বাসের কাছাকাছি আসে না কেন আজ, পুরোনো স্মৃতিগুলোর গন্ধ।

জানলার পাশে বসে রোদে ডুবে থাকা লাল বাড়িটাকে দেখি। গৃহবাসীনি পর্দায় হাওয়া লেগে মাঝে মাঝে গায়ের উপর এসে পড়ে— যেন কবেকার তাঁর হারানো স্নেহ, মমত্ব…

একটা, দুটো, জোনাকি ঢুকে পড়ে ঘরে…

অথচ আশ্চর্য সেই রাত, ফ্যানের শব্দে কখন যে ঘুম ভেঙে গেল— দেখলাম বাড়ি তো কোথাও নেই, একা একটা বেড়াল আঁচড় কাটছে অন্ধকারে। তারপর অন্ধকার আরও অন্ধকারের ভিতর কারা যেন করাত দিয়ে গাছগুলো কেটে ফেলছে, ঝরে যাচ্ছে ফুল—
অরণ্য কেঁপে উঠছে ভয়ে…

এক-এক সময় শীত করত, জ্বরে তখন ভীষণ গা পুড়ে যেত।

মৃত্যু হয়তো ঘুমের পাহাড়
যার সমস্ত পথই ধুলো—
ছাদের উপর মাংস ঠুকরে খাওয়া কাক যেন একটা আগুন নিয়ে খেলছে…

সূর্যাস্তবেলায় নদীর পাড়ে দেখি কীভাবে আগুন স্পর্শ করছে জল। শুনি ঢেউ-এর আর্তরব। মনে হয় একদিন আমাকেও জলের শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলবে জল।

তবু কিছু সুর, কিছু নিজস্ব পথ আছে জেনেই— নক্ষত্রের শুয়ে থাকা দেখি।

পাগলটা অভিমানে শুয়ে থাকত ওখানে
ঝড়বৃষ্টি রাতেও দেখেছি কতবার
তার ছেঁড়া কাঁথাকাপড় থেকে ঠিকরে আসছে আলো
আর আমরা, পাগল বাইরে আছে জেনেও
দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লাম

তারপর একা আরও একটা বর্ষাকাল চলে গেল…

Facebook Comments

পছন্দের বই