লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

রাজদীপ পুরী

অদৃষ্ট

হাওয়ায় পুড়ে গেল ঈশ্বরের ছায়া, এখন নীল রঙের রোদ হাতে নিয়ে
ঈশ্বর ঘুরে বেড়ান মাঠে ঘাটে, ধুলোর আলপনা জমে তাঁর গায়ে,
নব্য প্রেমিক প্রেমিকারা তাঁকে পাথর মনে করে নিজেদের নাম
যত্ন করে লিখে রাখে— ঈশ্বর সব দেখেন আর মুচকি হাসেন,
নতুন অলংকার পেয়ে, আহ্লাদে আটখানা হয়ে পুড়ে যান ঈশ্বর…

বধূবরণ

সেদিন চৌকাঠ ডিঙিয়ে রোদ্দুর এল, এল আলো বাতাস জল—
একটা আস্ত সমুদ্র এসে ভাসিয়ে দিল খাট, আলমারি, ঘরের সমস্ত আসবাব…
এখন খোলা জানলার পাশে ভ্যান গখের হলুদ গমখেত,
আর রাতের বেলায় ছাদ জুড়ে মুনলাইট সোনাটা!
তোমার অর্ধেক আকাশ ‘এই শুনছ…’ বলে আলতো টোকা দিল আমার অর্ধেককে…
দু-চারটে তারা খসে পড়ার পর— সেদিন তোমার সঙ্গে চৌকাঠ ডিঙিয়ে
গোটা পৃথিবী এল আমার ঘরে আর আস্ত একটা সূর্য এসে
আটকে রইল আমাদের বাড়ির আশমানে

একটি বিধিসম্মত সতর্কীকরণ

পিরীত দিও গো কন্যে, দিও মন, মেলে দিও ডানা এক আশমান—
বাতাসে উড়েছে রঞ্জক, কদমের বনে দ্যাখো একা বিষণ্ণ কানহাইয়া…
সুর নেই তাঁর, লয় কেটে গেছে, বাঁশিতে ফিসফাস, কিসব গুঞ্জন!

ডানা থেকে খসে পড়ে ময়ূরকন্ঠী আলো, সেই আলো গায়ে মেখে
আর পোড়াইও না শ্রীঅঙ্গ

কোজাগরী

বিপদের ছায়ার মতো স্নিগ্ধ আর উদাসীন আমাদের বেঁচে থাকা,
মৃত্যুর চেয়েও রূঢ় চোখে আমরা তাকিয়ে থাকি অমরত্বের দিকে,
বাঘনখ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফালা ফালা করে ফেলার ভেতর
যে অদম্য উল্লাস কাজ করে… খুচরো পয়সার মতো তা জমিয়ে রাখি
লক্ষ্মীর ভাঁড়ে, জীবনকে মোচ্ছব বানাতে দেওয়ালে দেওয়ালে
টাঙিয়ে রাখি কাঁচা মেয়ের ছবি…

রূপোর থালার মতো চাঁদ উঠেছে, লক্ষ্মী ঠাকরুনের লাল আলতা পা ছাপে
গাঢ় চুমু এঁকে দিয়ে ফেরার হয়ে যান এক কবি

দাম্পত্য

আমাদের সারারাত খুনসুটি আর তুমুল ঝগড়াঝাটির পর
এই যে সূর্য ওঠে আর রোদ এসে ঝিলমিল করে
আমাদের ছোট ঘরে… আমাদের ছোট ছোট সুখ, ছোট ছোট রাগ অভিমান—
এই যে আমরা ভাগাভাগি করে নিই, কি নিই না বল?
আমাদের চারহাত দুহাত হয়ে যাওয়ার পরও এই যে
আমরা প্রেমিক প্রেমিকা সাজি, আর তালি বাজাতে বাজাতে
পার হয়ে যাই দিন মাস বছর, আস্ত ট্রাম লাইন…

হট প্যান্ট আর স্ট্রবেরী কন্ডোমে টগবগ করে আমাদের
খেজুর রঙের দাম্পত্য!

Facebook Comments

পছন্দের বই