কবিতা
মধুমিতা রায়
মধ্যাহ্ন সমীক্ষা
১
সাধ বলতে ভাত খাবে। খিদেকে দেবে ওম
ধূপ জ্বালে। ধুনো দেয়। মৃত কাঠে প্রাণ জড়ো করে
প্রদীপ জ্বালানো। ভর সন্ধ্যা। উবু হয়
হাঁটু গেড়ে বিশ্বাসের মালা জপা
কপালে হাত সরে না। হাত মুঠো হয় না।
মনে মনে রাগ। কলসি রাগে
খাবার গোছায় আকুতির জল
২
খিদে মায়া। আগুন জানে। জলের ছোঁয়ায়
দেখে না কেউ। বোঝে না কেউ। দূর থেকে দেখে
এমনি উপহার। রঙিন কাগজ
ছিঁড়ে করে টুকরো। খেদের গালিচা
মরা চাঁদ আরও মরে
শুকতারা বয়সের ভারে বোবা হয়ে যায়
৩
জিভের কাছে যাই। বিস্বাদ চোখ
সব মিথ্যা। বাড়ে না। কাড়েও না
সার মেশাই। ফেলে রাখি
বর্ষা আসে। ভিজে গেছে
পুত্রের পোশাক। বারান্দায় ঝোলা
টপটপ শব্দ হলে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখা
জল নাকি লোভ… লোভ… লোভ…
৪
খুন্তির আওয়াজ জানে?
ঠিকঠাক নিয়ম ব্যাকরণ ধুনির
শব্দ, বর্ণ, বাক্য ব্যয়। খুচরো পয়সার মতো। ঝনঝনে আওয়াজ। মৌলিক শব্দ
ভাঙে না। জুড়ে যায়। রৌদ্রে কড়কড়ে
হঠাৎ ঘাড় বেয়ে নেমে আসে হলুদ শরীর
৫
কলাগাছ বড়ো হয়। পাতার ফাটল
হাওয়া বাধে। ঝড় হয়
মন ভাঙে। আর কেন? এই তো সময়
মেয়েদের বয়স! বোকা তুমি
গাছ কাটো। গোড়া থেকে
কাঁদুনি নামার আগে নিজেকেই পিণ্ডদান করো
৬
মধ্যবিত্ত শরীর। শরীর গড়ানো জল
আঁধার নামে। আহ্নিক গতি
বেগে মৃত্যু। প্রাণ নেই। মান নেই
আছে শানিত আওয়াজ। লোডশেডিং
নিজের রক্তের স্বাদ নিজেই চাটে
অর্ধেক জিভে সব নোনা লাগে
৭
বৈপরীত্য নামে। ছেলেখেলা জাগে
থালাভরতি ভাত। দুপুর গড়ানো
গেলার আগে আমায় গেলো
আঁশটে গন্ধ। মেছুনির নাচ
গ্রাস চটকিয়ে অসহ্যকর
কাদা মাড়াই খালি পায়ে
মশার শব্দ। ঘুম ভাঙে
৮
কিছুটা মিথ। সামান্য বিশ্বাস
সুখি করে অলীক মায়া
পিতৃমুখ ডুব দেয়। রাশিফল সাঁতরে যায়
গা হেলানো। জন্মসুখ
কর্মসুখ ভেসে যায়। ডুবুজলে মুখ খোঁজে
কোন মেয়ে? কার অসুখ?
কারসাজি কিচ্ছু নেই! অসুখ সাজাই মুখোশ দিয়ে
৯
বৃষ্টিভেজা জামা। হ্যাঙারে ঝোলা জল
গড়িয়ে পড়ে, ভিজিয়ে দেয়
চেনা জন্মদাগ
মতভেদ জাগে। উগড়ে দেয়
জমানো গরল। মন্থনে ওঠা
ছলনা ভেজা দাগ। কানামাছি খেলা
কুড়িয়ে নেয়। সেলাই করে
খোলা বোতাম
ইচ্ছার সাথে অনিচ্ছার মিশ্রণ
হু হু করে ডাক। শুকনো পাঁজর
১০
হারিয়ে ফেলার সমার্থক শব্দ নেই
যত ভাবি, ক্ষয়ে যায়
সরে যায়। নিজের থেকেই
ডাকটিকিট নিয়ে যায়, খোলা চিঠি
একনিঃশ্বাসে লিখে রেখেছিল যক্ষ
মেঘও ব্যর্থ হয়। পাথর বানায়
ঘুম পাড়িয়ে দেয় তুলোর মতো মেঘে

মধুমিতা রায়
জন্ম উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহাকুমার অন্তর্গত বাদুড়িয়া গ্রামে। লেখালেখি ২০২০ সালের শুরুতে।