কবিতা
নিয়াজুল হক
দ্বন্দ্ব ও লড়াই
একদিন একটি কালো পানকৌড়ি দেখে
সান্ত্বনা পেলাম প্রথম
আর একদিন
একটা সাদা বক দেখে
হতাশায় ডুবে গেলাম
এই দুটো পাখির
দ্বন্দ্ব এবং লড়াই দেখতে দেখতেই
তোমার কাছে এলাম
তুমি কী করবে?
ফেলে দেবে নর্দমায়?
অথবা
প্রত্যাখ্যান করবে?
তোমার কোর্টেই
বল গড়িয়ে দিলাম
গোবরের ইমেজ
রাস্তা দিয়ে
মারতে মারতে নিয়ে যাব
পিঠে চাবকাতে চাবকাতে নিয়ে আসব
এই বর্ণমালাদের সঙ্গে দেখা হলে
মনে মনে অট্ট হেসে উঠি
এদের গন্তব্যও কোথায় জানি
এই গোবরদের
ভুয়ো বাদামের ইমেজ
কেরোসিন ঢেলে
মানুষ একদিন জ্বালিয়ে দেবে
দাগ
আলু এবং পটলের তরকারি বানিয়ে
বললাম, আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি
কিন্তু
প্রশ্ন করলাম না
আলু কোথা থেকে এল
তেমনি প্রশ্ন করিনি
তামাকের বাবা কে
জানতে চাইনি
আনারস, হাতেনাতে
বা কেরামতি-র পূর্বপুরুষ কে
আমরা জানিই না
রুবট্টন এবং রুবটন কে
একমাত্র মানুষ
দেশ হারালে, ভূমি হারালে
বাসস্থান হারালে
উদ্বাস্তু হয়ে যায়
কিছুতেই দাগ উঠতে চায় না
নীরব দর্শক
এখন বেড়ালরা
পাঁকের তলায় লুকিয়ে থাকে
পাঁক ফুঁড়ে
তালগাছের মাথায় চড়ে বসে
এই পর্যন্ত হোগলায় ছাওয়া বাড়িঘর
তারপর
তালগাছের মাথা থেকে
লাফ দিয়ে বিমানে ওঠে
উড়ে যেতে যেতে ঝাঁপ দেয় সাগরে
আর পড়ে যায়
গভীর পাতালে
এমন একটা সময় আসবে
যখন গাছগুলোই
নীরব দর্শক হয়ে উঠবে
আত্মহত্যা
হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটল
হঠাৎ একটা
ঘটনা ঘটে গেল
তার পাশ দিয়ে
কয়েকটি সাদা জলের নদী বয়ে গেছে
সেই জল লাল হয়ে
সাগরে গিয়ে মিশে যাচ্ছে
এর নাম লুকোচুরি খেলা
শৈশবের সঙ্গে যার কোনো মিলই নেই
সমুদ্র গর্ভ থেকে তারা
তারা পাহাড় হয়ে জন্মায়
কাউকে না কাউকে
একদিন আত্মহত্যা করতেই হবে
মস্তক মুণ্ডন
লিখুক
লিখুক
লিখুক
আমি রাস্তা ছেড়ে দেব
ওরা
গাছ লিখুক
নদী লিখুক
সমুদ্র লিখুক
এমনকী
পাহাড়ও লিখুক ওরা
আমি রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়াব
প্রয়োজনে
রাস্তায় ছড়ানো কাঁটার গায়ে
পেট্রল ছিটিয়ে পুড়িয়ে ফেলব
আর অন্য এক ঘাটে উঠব
তার মানে এই নয়
মস্তক মুড়ব আমি
টিউকলের মতো যন্ত্রের মুখ
পিকেট শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি
অনেক আগে
ছোটোবেলায় যাকে জেনেছিলাম ঝামা হিসেবে
আর যা
প্রতিটি ঝালাইয়ে
কাজে লাগত
তারপর বাড়ি করতে এসে জোর ধাক্কা খেলাম
স্ট্রেইট পিকেট শব্দবন্ধের কাছে
মহান শিক্ষক রাজমিস্ত্রি শেখাল যেটা
জানলাম
আংশিক ঝামা-ইট অথবা
ইটের খুব কাছাকাছি ঝামাকেই
স্ট্রেইট পিকেট বলা হয়
অথচ
মহান শিক্ষক প্রসঙ্গে
বরাবর জেনে এসেছি
সাদা চক, কালো ব্লাকবোর্ড
এবং কানা উপছানো জ্ঞান
যা টিউকলের মতো একটি যন্ত্রের মুখ দিয়ে বের হয়
চেতনা
নিজেকে ভারী করে কী লাভ?
নিজেকে
এমন হালকা করতে হবে
যেন চেসিস দেখা যায়
যেন খাঁচার ভেতর দেখা যায় অচিন পাখি
যাকে ধরতে গেলে উড়ে যাবে
খামকা কী লাভ
নিজেকে ভারী করে?
নিজেকে হালকা করতে করতে
অতি সাধারণকেও আঁকড়ে ধরতে হবে
সাধারণেরও কি কোনো সীমা আছে?
সে কি অপার সমুদ্র নয়
যেখানে চেতনা জমা থাকে মানুষের?

নিয়াজুল হক
জন্ম ১৬ মে ১৯৫৬। কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে একজন আধিকারিক ছিলেন। বসবাস পূর্ব বর্ধমান শহরে। প্রথম বই ‘অলীক অর্গান’ (১৯৯৫), ‘অশনি অপেরা’ (২০১০)।