লেখক নয় , লেখাই মূলধন

বইমেলার ডায়েরি: সেলিম মণ্ডল

০৬/০২/১৯

পনেরোটা রোজা পেরোলেই, ছেলেবেলায় আমরা গোনা শুরু করতাম— আর কতদিন পর ঈদ! দিন যত কমে আসত কচি কচি মুখগুলো  হয়ে উঠত আরো বেশি উজ্জ্বল। এখন আর ছোটোবেলা নেই। নেই উৎসবের সেই আনন্দ। এখন সারাবছর অপেক্ষা থাকে এই বইমেলার জন্য। মেলা শুরুর দিন থেকেই আমাদের ঈদ। দিন যত এগোতে থাকে ভিতরটা হু হু করতে থাকে। ঠিক যেন উলটোটা।

আজ ষষ্ঠদিন শেষ হয়ে গেল। শুরু হয়েছে দিন কমা।  কিছুদিন বাদেই বিসর্জনের ঢাক বাজবে। কাস্তের মতো চাঁদ কি উঠবে? কে জানে!

মেলার দিনগুলো লিখে রাখার জন্যই এই ডায়েরি লেখা। এ লেখা কাব্যগদ্য নয়। অনেকেই পড়ছেন। জানাচ্ছেন। কোনোদিন ফিরতে ফিরতে ট্রেনে-বাসে লিখি। কোনোদিন ফিরে মাঝরাতে লিখি। কেউ কেউ রাগ করে ডায়েরিতে তাঁর নাম লিখিনি বলে। আসলে সব নাম মনে আসে না। যা সেইমুহূর্তে মাথায় আসে তাই লিখি। ডায়েরি তো এডিট করা যায় না। তাই এডিটও করি না। কবি সুব্রত সরকার আজ ডেকে বলল, সেলিম লেখাগুলো পড়ছি রোজ। খুব ভালো লাগছে। মেলাটাকে তোমার লেখাতে দেখতে পাচ্ছি।

গতকাল খুব একটা ভিড় ছিল না। আজও খুব বেশি ভিড় হবে আশা করিনি। তবে গতকালের থেকে আজ লোক বেশি হলেও বইকেনার পাঠক কম ছিল। এবছর টেবিল সামলানোর মূল কান্ডারি অরূপদা আজ এসেছিল। সঙ্গে ছিল দেবু, তন্ময়, শতানীক। মৃন্ময়দা, নদিয়া থেকে বেশ সেজেগুঁজে এসেছে, নতুন বই নিয়ে ছবিটবি তুলবে বলে কিনা কে জানে! লোকটা খুব খুঁতখুঁতে প্রতি পদে পদে প্রশ্ন করে। একটু-আধটু বিরক্তি লাগলেও, জানি লোকটার ভিতরটা সাদা। আর কেউ এভাবে খুঁতখুঁত করলে তবেই তো আমরা পরবর্তীতে ভুল বা ক্রুটি শুধরে নিতে পারব।

টেবিলে এসেছিল অনেকেই। আজ সেভাবে কোনো টেবিল বা স্টলে যাইনি। বইপত্রও কিনিনি। মেলা ঢোকার পথে কৌরবে আমি আর শূদ্রকদা একবার ঢুঁ মেরেছিলাম, উদয়ন ঘোষ এল কিনা খোঁজ নিতে। পঙ্কজদা রোজ মেসেজ করে, সেলিম একটু খোঁজ নিও বইটা এল কিনা। টেবিল বসি বা না বসি এই প্যাভিলিয়নে ঘুরপাক মারতে ভালোলাগে। তবে পঙ্কজদার মতো ভালো মানুষ, ভালো কবি এবং ভালো পাঠকের জন্য এটুকু না করলে অন্যায় হবে। আজব মানুষ, সেদিন আমার পকেটে পাঁচশো টাকা দিয়ে বলে উদয়ন ঘোষ নিয়ে রেখো রাখিস প্লিজ। ওদের কপি শেষ। আমি কিছুতেই নেব না আর ও দেবেই। শেষপর্যন্ত, আমি একশো টাকা ফিরত দিয়ে টাকাটা রেখে দিলাম। ঠিক মিনিট কুড়ি পর লোকটা এসে, ভাই আমাকে আড়াইশো টাকা দে। আমার কাছে যা টাকা ছিল শেষ। দোকানে বিল করে রেখে এসেছি।

পঙ্কজদা, অভিজিৎদা এরা আমাদের অহংকার। যতদিন এমন পাঠক থাকবে, বাংলা অক্ষরমালা ভাতফুল হয়ে ফুটবে। আমরা তার সুবাস নেব। আমরা তার শিষে দুধ হয়ে দানা বাঁধব, নিশ্চিত।

 

Facebook Comments

পছন্দের বই