লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

পার্থজিৎ চন্দ

রক্তমাখা, চোদ্দো লাইন-৪

শুয়ে আছে পিণ্ডবৎ, তাকে তুমি গর্ভ বলে মানো
ভাবো, এটুকু অর্জন নিয়তির কোটি সম্ভাবনা
ঘুরে ঘুরে ধাত্রে আসে, তারপর ধারকের রীতি
তাকে শস্য-স্পর্শ দেওয়া। অভ্রান্ত রাস্তার শেষে বাড়ি
দাঁড়িয়ে রয়েছে একা, ভাঙা সাইকেল টব ছুরি
নিপুণ সাজানো। তাকে রাখা আপেলের টুকরো;
যেহেতু সে-গর্ভ থেকে খিদে নিয়ে জন্মেছে সকালে
তার ক্ষুধিত লালার সামনে অসহায় খাদ্যরথ
দ্বিবিধ প্রকাশে ফোটে। মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না
এবং সে গর্ভে ঢালে অনিবার্য টন টন খিদে
ফলত এ-গর্ভাশয় অযৌন জননের চিৎকার
বুকে নিয়ে বার বার অশ্রু ফেলবে, শিহরিত হবে
শুয়ে থাকবে পুত্ররূপে কন্যারূপে শূন্যতার হিম

প্রসববেদনা শেষে হাতে ধরো দ্বিগুণ অসীম

রক্তমাখা, চোদ্দো লাইন- ৫

আগে দাও পরিখার নির্ভরতা, মদ। তারপর রাত-পথিকের
মাথার ভেতর অচিরাৎ ঢুকে যাবে সেই সব মায়াবাদ্য, ট্রাম্পেট
এই যে স্লটার-হাউস মাৎসন্যায়ের, আরব্যরজনী ফুঁড়ে গল্প
ক্ষুধাতুর কামকলা অলীক কথন, সাজানো উপসংহার প্রায়।
ক্যাসেলে ঝিলিক দিয়ে ওঠা অস্ত্রশস্ত্র, আর গোপনীয় নয় রাত
বরং ভেলভেট কর্সেট প্রকাণ্ড হুক নিজে হাতে খুলে মাংস ধরবে
ক্রমতালিকার মৃত্যুধারা রক্তধারা নিয়ম মেনে সম্পন্ন হবে;
উদ্‌ভ্রান্ত তাতার দস্যুর হাতে জাদুপ্রদীপের অধিকার
আরও বেশি রাত্রের হিংস্র ছায়ামথ, উন্মুক্ত করেছে এতক্ষণে
ক্যাসেলের প্রকৃত দরজা, গুমঘর। দু-হাতে পরানো বাঘনখ
স্বয়ংক্রিয়, ইঙ্গিত একযোগে ফোটে স্থলে জলে অন্তরিক্ষে, দুর্গে
হতভম্ব আপেলের দিকে ছোটে সাপ। লিঙ্গ নিরপেক্ষ নীল ভ্রূণ
একমাত্র হিংসার। তার আশ্বাসে নিশ্চয় এতদূরে আমিও আসিনি

দেখো, তোমার পাঠানো জলৌকার ফেরা, পিঠে বস্তা… রক্তভেজা নুন

রক্তমাখা, চোদ্দো লাইন- ৬

লূতাতন্তু ছড়িয়েছে ব্যবস্থার দূরতম কোণে
প্রতিটি গল্পের শেষে ঢুকে গেছে চিতা খরগোশ
প্রথমে চিতার হাঁ-য়ে মিশে যায় খরগোশের মাথা
অজীর্ণ মাংস-হাড় জন্মান্ধ কথকের আইরিসে
ঢুকে আরেক কাহিনি, প্রতিনায়কের ঘামরক্ত—
মাখা, অস্বীকার করে চিতার ঘাতক দাঁত থাবা
গল্পের সাপেক্ষে গল্প এভাবে স্বাধীন ভূমি পেলে
সার্থকতা পায় চোখ। গল্পের থেকে মাইক্রোস্কোপ
তুলে ফেলে দর্শকের ভূমিকা বদলায় সংগোপনে
তখন সে খুঁজে ফেরে রহস্যজনক দূরবীন
চোখ রেখে দেখে ভ্রম, ইস্কাপন হরতন দেখে
দেখে রাজার ভূমিকা অকস্মাৎ বদলের বিবি
সেখানে মাকড়-রাত প্রশ্নাতুর, অনিবার্য কূট

যা ছিল স্পষ্ট অ্যালবার্ট, দূর থেকে মনরোর ছবি

রক্তমাখা, চোদ্দোলাইন- ৭

ভূর্জপত্র, খাগের কলম… সংঘর্ষ পরিস্থিতি
বলে একে মানা আবশ্যিক। কারণ এ-অবিরাম
ঘর্ষণের ফলে ফুঁসে উঠবে কুণ্ডলীকৃত অজগর
পাক দিয়ে ধরবে কুরুক্ষেত্র প্রতিটি রথের চাকা
রক্তস্রোত তির বৃংহণ, কে কাকে যে বিশ্বরূপ
দর্শন করাবে মৃত্যুতীরে… চাকা বসে যাওয়া রথ
নিকট বর্তমানের থেকে দূর বর্তমানে যায়
তথ্য, সংকেত। দূরগামী আলোর শরীর থেকে
তালা খোলা সে-সব সিন্দুক ঝরে পড়বে আমাদের
সমস্ত প্রলাপ লক্ষ করে। দাঁত-ভাঙা গজানন
তখনও লিখছে প্রতিটি শব্দ গুপ্ত-হত্যা গুপ্ত-প্রেম
সংঘর্ষ বিরতিবিহীন, ফুলকি উঠছে ঊর্ধ্বদিকে
উত্তাপে শিথিল হয়ে আসে মোমের কলম, গলে

আরও কত কুরুক্ষেত্র শ্যামবাষ্প ঢাকা যুদ্ধ অগণন

Facebook Comments

পছন্দের বই