কবিতা
পায়েল দেব
জলশরীর থেকে
১
অসুখের শব্দে ঘুম খোলে
ভয় থেকে নুনজল বেয়ে কিছু বালিহাঁস, প্যাকপ্যাকানিতে খুলে যাওয়া ঠোঁটের ফাঁকে সঞ্চিত খিদের মতো
বের করি
বাঁশের পালায় জমানো পয়সা
তামাটে বাতের বলয় বলয় আকৃতি
ঘুমের ভেতর যেতে চাইছি, অথচ গোঙানির শব্দ খুঁটে খুঁটে সব খেয়ে নিচ্ছে
২
তলপেট জুড়ে যে-শিশুটি শুয়ে আছে, তার খেলনার কথা ভাবি, হাততালি আসে, ধরে রাখি
এরকম রাতে একটি শ্রীমুখের আদল বানাতে চেয়েছিলাম
হয়তো পেরেছি
মায়েদের তলপেট আভা হয়ে লেগে আছে দূর দিগন্তে
৩
বাবা দাড়ি কামাতে বসেন, শেইভিং কিটটির বয়স অনেক, গালের একাংশ ফুলিয়ে, গোঁফের একপাশ বেঁকিয়ে নতুন নতুন মুখ করে দেখেন— আয়না আসলে সুন্দর, বাবার বয়স হয়েছে, আয়নারও— মাঝে মাঝে ছেড়ে গেছে পারদ
দুব্বো ঘেরা উঠোনে হা-করে আমি আর ভাই বাবার ভঙ্গি দেখছি
শিশুদের খিলখিলে ভরে গেছে মায়ের রান্নাঘর
৪
ধর্মকে অনুবাদ করতে বসব, কলম হয়ে দাঁড়াল ভারত, এত বড়ো দেশ কীভাবে ধরব ভাবছি, মধ্যমা আর তর্জনীর ভেতর বেঁধে গেল বিদ্রোহ, এবার ধীরে এলেন ধর্ম, ধারালো চক্র ছেড়ে দিলেন আর চোখের নিমেষে টুকরো টুকরো হয়ে গেল দেশটি
তাই আর অনুবাদ সম্ভব হচ্ছে না, আপাতত কলম খুঁজছি।
৫
পিতামহীর দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বকটি
এক পা ছুঁয়ে নামছে দেশভাগ
অন্য পায়ে জড়িয়ে ঘটিবাটি
এমন বর্ষায় কতবার সব অপরাধ ধুয়ে মুছে গেছে
বক তবু ঠায় দাঁড়িয়ে
৬
আমাদের ময়নাটিকে যে-রাতে বনবিড়ালটি ছিঁড়ে খেল
কী অপরূপ অন্ধকার
তুমুল ঘুমে, আমি কৃষ্ণ কৃষ্ণ করে মাতাল
৭
ঘরে তিনটি খাট, একটির পায়া ভাঙা, একটির ময়ূরের পেখম
অন্যটি সংগম শেষে ঘুম বেড়ে দেয়,
বাকি দুটো খেয়েদেয়ে নিজেদের নষ্টের ভেতর সটান শুয়ে থাকে।

পায়েল দেব
জন্ম তৎকালীন উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনবাড়ি গ্রামে ১৯৮৭ সালের ২৭ জুলাই। পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা, সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কুয়াশার সানস্ক্রিন’ প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে ত্রিপুরার নীহারিকা প্রকাশনী থেকে। আরও চারটি কাব্যগ্রন্থ ‘গাছের গোপন অসুখ’, ‘নিমফুল’, ‘স্কেচবুক’ (একফর্মা), ‘জন্মান্ধ পংক্তিমালা’ (একফর্মা)।