লেখক নয় , লেখাই মূলধন

গদ্য

প্রীতম বসাক

খণ্ড কবিতার জীবন


“যখন শুনি জীবন দীর্ঘ হয়ে উঠছে,
একথা সত্যি নয়

যে নারীর শরীর হয়ে উঠছে ক্রমশ আরো বিশাল
আর গাছেরা
উঠে যাচ্ছে
মেঘের ওপরে,

ছোট ফুলকির মধ্যে অন্তঃস্যূত হয়ে যাচ্ছ তুমি,

অথবা প্রেমিক-যুগল ভালোবাসা-
বাসি করছে সমস্ত দিন!

খুব সরলভাবে বললে বলতে হয় এর মানে
সরলভাবে
বেঁচে থাকা শক্ত”

সহজ সরল জীবনের কথাই তো লিখতে চেয়েছি। সহজে যা পরিপাক হতে পারে। অনেকটা বড়ো হয়ে পর্যন্ত মনে পড়ে না কোনো দার্শনিক প্রশ্ন মনের মধ্যে রেখাপাত করেছিল কিনা! এই যেমন অস্তিত্ব বিষয়ক কোনো অতল জিজ্ঞাসা! কে আমি? কেন এই জন্ম-টন্ম? এই সকল প্রশ্নেরা আমাদের পাড়ায় পা রাখত না। আমাদের গায়ে দারিদ্র্যসীমার গন্ধ লেগে থাকত ঠিকই, না-পাওয়া কামরাঙা ফল নিয়ে আমাদের খুব ভাবনা ছিল না কখনোই। বরং সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত আমি এবং আমরা খুঁটে খুঁটে খেয়েছি ছড়িয়ে থাকা দানাশস্য। মা ও বাবার তরফ থেকে আমি যে-সম্পদ উত্তরাধিকারে পেয়েছি তা হল অনেক অনেক সম্পর্কের সাথে বসবাস। বাবারা দুই শরিক মিলে এগারোটি ভাই ও একমাত্র বোন। আমাদের জ্যোৎস্না পিসি। আর মায়ের তরফ থেকে পনেরো জন মামা মাসি ও তাদের অসংখ্য পাখি-সন্তান। আমি একদিনের জন্য একা হতে পারিনি। চাইওনি। সারাটা বছর সংসারে স্বজনের আনা-গোনা আমাদের উঠোনে পালকের যোগান দিত। না হলে কোন সাহসে, বাবা, আট আনার দলিল লেখা বাবা, বাড়ির নাম রাখেন ‘আনন্দ-আশ্রম’। দুটো টালির ঘর। চাটাইয়ের সিলিং। এক কোনায় কিছুটা শূন্যস্থান। আমার রহস্যের তিমিরময় এলাকা। বৃষ্টি হলে এখান ওখান থেকে জল পড়ছে। কোথাও পুরোনো ছাতা, কোথাও বালতি বসিয়ে রাখা। আমার ১৫ বছর বয়সে বাড়িতে বিদ্যুৎ এল। তার আগে লণ্ঠনের ঈষদুষ্ণ আলো। বড়োদাদা আর একমাত্র বোন দুই দিকে। আর ছায়ার দিকে আমি। একটা ডিম সুতো দিয়ে দুই ভাগ করে এবেলা আর ওবেলা। বছরে দু-বছরে একবার মাংস। সেদিন উৎসব। সময়ের আগে খিদা পাচ্ছে। দুপুরে চার টুকরো রাতে দু-টুকরো। সাথে বড়ো বড়ো আলু। মায়ের রান্না। ঈশ্বরপ্রদত্ত। সর্বত্র খ্যাতি। দুঃখ কোথা দিয়ে ঢুকবে। কোনো গ্লানি ছুঁতে পারে না এই বাড়িকে। তবেই না ‘আনন্দ আশ্রম’। কিন্তু সব ভালোর শেষ থাকে। দুঃখকে জায়গা করে দিতেই হয়। ছেলেপুলে বড়ো হয়। ছড়িয়ে পড়ে। আনন্দের হাট ভেঙে যায়। তিন সন্তানের জননী একদিনও চোখের জল না ফেলে ভাত মুখে তোলেন না। এই সেদিন পুরোনো গেটটা ভেঙে ফেলতে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু এটাও ঠিক এ-বাড়িতে আর আনন্দ নেই। এ-বাড়ি এখন অশ্রুসজল। শ্যাওলা ধরা চোখে একজন পাহাড়া দেয় তাঁর স্মৃতি বিষয়ক রচনাগুলো। আমি এখনও জীবনকে প্রশ্ন করিনি কী পেলাম? কিন্তু তিনি, নিশ্চয় প্রতিদিন একবার তাঁর শূন্য ঘরের দিয়ে তাকিয়ে ভাবেন না কি তাহলে শেষপর্যন্ত কী মানে জীবনের? ভাবেন না কি—

“মৃত্যু ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে, তার হাত আমাকে ধরতে হবে।
তার গায়ে শশার গন্ধ,
সে অশরীরী নয়, না বোঝা কবিতার লাইন নয়,
আমার মায়ের মায়ের অল্প বয়সের গানের গলার মতোই মিষ্টি, সপ্রতিভ।
আমি আজ যখন বিকেলে বেড়াতে যাচ্ছিলাম
সে আমাকে বলল— এবার চলো।
একটা আলোকে সে গড়িয়ে দিয়েছে
আকাশের পারে অন্য ছায়ায়—
সে গতি বাতাসে উলটোয় না,কলস্বরা কান্নায় কাঁপে না,
কখনো থামে না,
তার রেখা সুপ্ত, রঙ অদৃশ্য সমুদ্র।

মৃত্যু আমার সঙ্গে কথা বলেনি,
তবু আমি বুঝি তার মন।
শক্ত স্বচ্ছ হিরে হয়ে
আমার বেদনাকে কাটতে কাটতে সে ভাবে
এটাও জীবন।”


আমার মামার বাড়ি ছিল সাত সাগর তেরো নদী পাড়ে। সত্যি বলছি। মাত্র ১২২ কিলোমিটার দূরে হলেও তখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় তা গিয়ে দাঁড়াত যুদ্ধে যাওয়ার মত। ভোরের আলো ফুটবার আগে উঠে লটবহর নিয়ে বাস ধরতে আসা। তখন এক-একটা স্টপেজে কোনো বাস থামলে বাসের সব যাত্রী রাগে ফেটে পড়ার আগে পর্যন্ত বাস ছাড়ার ব্যাপারে কোনো হেলদোল দেখাত না কনডাক্টর বা ড্রাইভার। এত অনাবিল ক্ষোভ হজম করার শক্তি তারা কীভাবে পেত কে জানে? পেছনে যতক্ষণ না আর একটা বাস এসে দাঁড়াচ্ছে ততক্ষণ সে জগদ্দল হয়ে দণ্ডায়মান থাকত। বাসের ছোটো যাত্রীরা ততক্ষণে আবার ঘুমিয়ে কাঁদা। বিশেষ করে আমার বোনের অদ্ভুত ব্যাপার ছিল বাসে ওঠা মাত্র মায়ের বুকে মুখ রেখে ওই যে ঘুমে ঢলে পড়ত উঠত পার-পতিরামে। আমার বিশ্বাস ও এখনও তাই করে। ফলে বাস থেকে বাইরের জাড্য পৃথিবী কেমন দেখতে হয় সে আজও জানে না। আমার আবার ঠিক উলটো। বাসে ট্রেনে দিনের বেলা আমার চোখে ঘুম থাকে না। আমিও চলছি, বাইরেটাও চলছে— এই খেলা আমার আজও ভালো লাগে। বাসে উঠলে জানালার পাশে আমার ছেলেবেলাটা আমার আঙুল ধরে। সেদিন শিশু মনে একটা ভয় পেয়ে বসত। যদি বাসটা অ্যাকসিডেন্ট করে। যদি মরে যাই। ঠাকুরকে ডাকতে শুরু করতাম তখন। পাশের সিটে মা-ও বোনের সাথে ঘুমাচ্ছে। আমার ভয় করে। এখনও বাসে উঠলে, জানালয় মাথা রেখে মৃত্যুচিন্তা গ্রাস করে। মনে হয় এই বাসাটার মতো একদিন থেমে যাব আমিও নেমে যাব গন্তব্যে। নাকি পৌঁছোনোর আগেই। এই ভয়টা দার্শনিক। বুঝি এখন। নিজের কাছে ঝুঁকে পড়ে বলি—

“প্রিয় মাটি, এখন মৃত্যুর কথা শুধু ভাবি,
তোমাকে ভাবি না।
তুমি গাছ-ফুল-লতা নিয়ে জাঁকিয়ে বসেছ,
সমস্ত মানুষজন তোমার বুকের ওমে লুকিয়ে রয়েছে—
ট্রেন আসে যায়, যেন তুমি খেলনা গড়েছ,
তাই খেলা,
তাই খেলা রাত্রিদিন, এখানে ওখানে, আশে পাশে,
প্রিয় মাটি, তুমি ত্যাগ আমাকে করেছ, নাকি
আমিই তোমাকে?
এখন মৃত্যুর কথা শুধু ভাবি, তোমাকে ভাবি না”


কী করে একদিন কবিতার মেঘ জড়ো হয়েছিল আমার মাথায়! কে জাদুদণ্ড ঘুরিয়ে গিলি গিলি ছু বলে পাখি ডেকে এনেছিল— ক্রোনোলজি মেনে বলতে পারব না! যে-কোনো স্মৃতির মধ্যে গিয়ে বসলেই মায়ের মুখ ভেসে ওঠে। আর একটা লক্ষ্মীছাড়া দারিদ্র্য। টুনটুনির বাচ্চা হয়েছে গৃহস্থের বেগুন গাছে। পাতা সেলাই করে বানানো। রোজ আসে দুষ্টু বিড়াল আর টুনটুনি বলে পেন্নাম হই ঠাকুরণ। বিড়াল খুশি হয়ে চলে যায়! এভাবে চলতে চলতে টুনটুনির ছানারা বড়ো হয় আর মা বলে উড়তে পারবি? ছানারা মাথা নাড়ে। সায় দেয়। মাকে আস্বস্ত ও আশ্চর্য করে ডানা রওনা দেয়। সেদিন বিড়াল এলে দে লাথি বলে উড়ে যায় মা। বিড়াল লাফ দেয়। সূর্যকে হাতের মুঠোয় নিবে বলে। বাকিটা যে-কোনো মেইনস্ট্রিম সিনেমার ভিলেনের পরিণতি। রক্তপাত। তা বাচ্চাদের গল্পে রক্তপাত থাকবে না এটা কোনো বাস্তবতা নয়! আমাদেরও ছিল। তার মধ্যে থেকেই হয়তো কবিতার বীজাণু উঠে এসেছিল মাথায়। গরিব মানুষের ঘরে যেভাবে চন্দ্রবিন্দু ছাড়া চাঁদ ঢুকে পড়ে অনুমতি না নিয়ে!

আসলে আলাদা করে কোনো গুণ ছিল না। গানের কোনো ঐতিহ্য থাকার কথা ছিল না। আমার হাতেও কোনো সুর নেই। উচ্চতা এবং শরীর এতোটাই নিরীহ ছিল যে-কারো চোখে পড়ার কথাও ছিল না। কিন্তু কীভাবে যেন কবিতা জাতীয় কিছু একটা ছায়ার মতো ঘুরঘুর করত। ক্লাস নাইনের পাঠ্য বাংলা বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় একদিন একটা কবিতার মতো কিছু লিখেছি, আর এক বন্ধু তা স্যারকে দেখিয়ে বলছে স্যার দেখুন ও বইতে কবিতা লিখেছে। ভূগোলের মাস্টারমশাই বইটি নিলেন, দেখলেন কিন্তু কিছু বললেন না। তবে আমার কবিতা লেখার কথা রাষ্ট্র হয়ে গেল। বিশেষ করে টিউশনের মেয়ে বন্ধুদের কাছে একটা আত্মপরিচয়ের প্রবল বাসনা পেয়ে বসল। যদিও এ-সবে তারা পাত্তা দিল না খুব একটা। কিন্তু আমি পালটে যেতে লাগলাম। অন্য আমি একটা। সবার থেকে আলাদা হওয়ার বোধ জেগে থাকল মাথায়। বাচ্চার দাঁত উঠলে যেমন চামচ থেকে জুতো সবেতেই কামড় বসাতে চায়, আমিও খাতার পর খাতা ভরিয়ে তুললাম হাবিজাবি লেখায়। আজও তা-ই লিখে যাচ্ছি। হিজবিজবিজ। হিং টিং ছট। স্তন সেই কবেই শুকিয়ে গেছে তবুও সন্তান অভ্যাসে চুষে যাচ্ছে ভাষার কষা বৃন্ত।


সবাই তো স্মৃতিই লেখে। অসংখ্য জিন পাহারা দেয় গুপ্ত সাম্রাজ্যের মোহরগুলি। খুল যা সিমসিম। শুধু ছোট্ট একটা মন্ত্র। তবুও কেউ কেউ ভুলে যায়। বেশ করে। শান্তি পায় তাদের সামাজিক আত্মা। কিন্তু যাদের ঘুমের মধ্যে কামরাঙাগাছ ফুল ঝরায়। নিশি যাদের ডেকে নিয়ে যায় মেঘবসতি অবধি। কারুবাসনা তাদের স্মৃতির কবর খুলতে প্ররোচিত করে। প্রেত খুঁড়তে খুঁড়তে একটা ভীতু মানুষ তখন পরে নেয় আলখাল্লা। এক কোপ বসায় আর গলগল করে পুঁজ রক্ত মাছের মতো লাফিয়ে খাতায় এসে পড়ে। ও খাতা ও সাদাপাতা তুমি ওই মীনটিকে ধরো। গাঁথো কলমের ডগায়। লিখে নাও যা-কিছু ওর পেট থেকে পেলে। যা-কিছু ও খেয়েছিল তোমার অভিজ্ঞান। শকুন্ত লাবণ্য।

সেই লাবণ্যের খোঁজ আমার শুরু হয়েছিল ‘পাখি সব করে রব দিয়ে’, ‘সকালে উঠিয়া আমি’ দিয়ে। মামার বাড়ির দিনগুলোতে আমি নিজে রাখাল বালক হয়ে কতদিন গোরুর পাল নিয়ে মাঠে গেছি। দূরে তখন প্রাইমারি স্কুলের গরিব মাস্টার আমার দাদু নিমের দাঁতন ভেঙে নিচ্ছেন। মাজতে মাজতে স্কুলে পৌঁছে যাবেন। তার আগে পুকুরে নেমে ধুয়ে নেবেন বাসি লোভ। একটু ভালো করে দেখুন পাঠক ওঁর বাম হাতে বাঁশের কাঁচা কঞ্চি। গোপাল বড়ো ভালো ছেলে। ওই দেখুন রাখালের কমলালেবুর মতো নরম হাতে সপাটে পড়ল বুড়োর জীবনদর্শন। আমার পিঠেও পড়ল কি? না, আমি তার দাদার কন্যার সন্তান। শহরের মোরগ বাঁধা আছে মাথায়। শহরের স্কুলের ছুটি যার শেষ হয় না। আবার গ্রামের স্কুলও তাকে নেয় না। নেবে কেন গায়ে সাবানের গন্ধ লেগে আছে না! আমি অপেক্ষা করে থাকি কখন রাখালের টিফিন হবে। আর নতুন কোন আমগাছের খোঁজে সারাটা দুপুর আমরা পাখি হব। বালকের অবাক হব! এই অবাকই আমি মাতৃভাষায় অনুবাদ করেছি শুধু। আজও করে যাই। কেননা— “আমি ফুল ফোটা কোনোদিন দেখিনি। আমি ফুলের ফুটে ওঠা দেখতে চাই। এতবছর বাঁচলাম অথচ ফুলের, ফুলের পরাগ থেকে ফুটে ওঠা, প্রস্ফুটিত হওয়া দেখলাম না? আফশোস হয়। ফুল কখন ফোটে তাও তো জানি না। সকাল নাকি গভীর রাত্রে? সারাদিন সারারাত ফুল গাছের সামনে দাঁড়িয়ে থাকব। পরাগ তার পাপড়ি মেলে ধরেছে আমাদের সুন্দর পৃথিবীতে, সেই মূহূর্তটাকে আমি পেতে চাই… আমার শুধু দুটো চোখ আছে। তাই দিয়ে দেখব ফুল নিজের জন্য ফুটে উঠছে, গানের মতো,এক লয় থেকে আরেক লয়ে যাচ্ছে সে— কবিতার মতো, এক পঙ্‌ক্তি থেকে আর এক পঙ্‌ক্তি হয়ে সে পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে— ফুলের এই পূর্ণতার দিকে যাওয়া আমি দেখব।…”


“বোগদাদে এক খলিফা ছিলেন, তাঁহার নাম ছিল মনসুর। তিনি কবিতার বড়ই ভক্ত ছিলেন।…মনসুর কবিতা ভালোবাসেন শুনিয়া রাজ্যের যত কবি ভাল ভাল কবিতা লিখিয়া তাঁহাকে শুনাইতে আসিতেন। সেই সব কবিতায় বেশীর ভাগ কেবল খলিফার রূপগুণের প্রশংসা থাকিত। কে কত বেশী তারিফ করিয়া মনসুরকে খুশী করিতে পারেন, তাহাই লইয়া কবিদের ভিতর দস্তুরমত আড়াআড়ি চলিত। সকলের আশা, খলিফা খুশী হইয়া ভারি পুরস্কার দিয়া ফেলিবেন।”

দ্রাক্ষাফল অতিশয় খাট্টা— আমার নীতিমালায় এমন বাক্য নেই। আমি বিশ্বাস রাখিনি কিছু পাওয়ায়। আমি লাফ দিইনি স্তনবৃন্ত ছাড়া কোনো ফলের মোহে। না-পাওয়ার দুঃখ আমার স্বপ্নের ভিতর এসে পালক ফেলে যায় না। খিদা পেলে মায়ের কাছে নীরবতাটুকু পৌঁছে দিতাম শুধু। কচি মুখের ম্লান আলোয় ভরে যেত বাসনকোসন। একটা অদৃশ্য বৃক্ষের গায়ে নিজেকে সঁপে দিয়ে ভাত ফোটা দেখতাম। ফ্যান গলানো দেখতাম। আর দেখতাম কাঁসার থালায় কী আশ্চর্য রূপকথা বেড়ে দিচ্ছেন স্নেহময়ী জবাফুল। ওই সাদা ফুলের মায়ায় আমি ফকির হওয়ার ডাক পেয়ে চলে গেছি পথের থেকে পথে। গাছের থেকে গাছে। মানুষ থেকে মানুষের সুগন্ধি রুমালে।

শুধু লেখা হওয়ার পর যে-দুঃখ আমি তার পাশে গিয়ে বসি। অঙ্কে ফেল করা ছেলের পাশে যেমন বসে তার বাবা! যেহেতু জানি সারাজীবনে আমার কবিতাও হয়নি অঙ্কও না তাই এই দুইয়েরই পাশে আমাকে বসে থাকতে হয়। মনখারাপ হলে যেমন কিশোর বসে থাকে রক্তকরবীর পাশে। বিশুপাগল তার গানের পাশে। লেখা যখন মাথার ভিতর থাকে তখন ফল ফেটে যাওয়ার মুহূর্তের যন্ত্রণা যেন। তা একরকম। আর হয়ে যাওয়ার পর, ফল ফেটে যাওয়ার পর, যখন তার রূপ রূপকথা থেকে বাস্তবে নেমে আসে তখন তার দিকে তাকিয়ে মনে হয় কেন আনলাম এই অসীম বিশ্বে তাকে অসহায় করে। একাকী করে। অপূর্ণ করে। হ্যাঁ, অপূর্ণ কেন-না যা লিখতে চেয়েছিলাম যেভাবে আঁকতে চেয়েছিলাম তার চোখের ছায়া— তা তো পারিনি! তখন ওই অসম্পূর্ণের পাশে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না আর। থাকতে থাকতে তারপর একবার দিকে ঝুঁকে পড়ি শ্রমিকের মেঘ নিয়ে। তার আঙুল ধরে বৃষ্টির ধারণা দিতে তাকে স্পর্শ করি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙলে বাজারে যাই। কচি লাউলগা খুঁজি।

ঋণ: য্যাজে‌ন গিলভিক, দেবারতি মিত্র, প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত, রাণা রায়চৌধুরী, ইমদাদুল হক।

Facebook Comments

পছন্দের বই