লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

প্রীতম বসাক

মধ্যরাতের জীবনী

মাঝরাতে ঈশ্বরের কাছে আগুন ধার করি। চেখে দেখি পাহাড়ের আত্মকথা। অনেক ব্যর্থতা ভাগ করি। আমাদের সঞ্চয় থেকে পাখি উড়ে যায়। প্রতিটি বাক্যে জোনাকি জ্বলে নেভে। ঈশ্বর শোনান বিষের সংজ্ঞা। আমি তাকে কাব্যের জ্যামিতি শেখাই। বলি ঘাম থেকেই যে কোনো সন্তানের জন্ম। ওম দিয়ে ফসলের চোখ নরম করতে হয়। পথজুড়ে শিশুগাছ ডাকে। অতঃপর ঈশ্বর কবিতা লিখতে ওজু করেন। আর আমি বিষ মাখি চুলে। সব অক্ষর জ্যোতির্ময় হয়। সকল আমি গরল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

জ্বরের বিড়াল

পুরোনো প্রেমের-শরীর থেকে থার্মোমিটার কুড়িয়ে রাখছি। তুলে রাখছি বজ্রপাত। কিছুকাল একটা জ্বরের বিড়াল পুষেছি। দৃশ্য রেখে উড়ে গেছে চোখ। কুয়োর খুব কাছে যে বিদ্যুৎগাছ। গুঁড়ো গুঁড়ো চ্যুতিরেখা। বোতলে রাখা রাসায়নিক। আমি এযাবৎ বেচে দিয়ে মুখ রেখেছি কোমলে। আমাদেরও লেবুপাতার হৃদয় ছিল একদা। যা ঘুরেফিরে তোমার বসবাসের কাছেই ফিরিয়ে দেয়। আর আত্মহত্যার গান ধরে বুড়ো গিটারিস্ট। গৃহস্থকে জলের বাইরে স্থাপন করে। গাঁজা খায়। ধুম ছাড়ে

পাগল লিখিত বৃষ্টি

এদিকে তোমার সেই পাগল নিজেকেই পান করছে। আর আমার মানুষ-বিষয়ক গবেষণায় ঢেলে দিচ্ছে জল। আমি দুঃখগুলো ধুতে যাব এমন সময় এগিয়ে এল তোমার মোরাম-বিছানো হাত। চোখে চোখে করুণ ঝুলে ছিল বলে আমি আর ও-পথে পাখি শেখার দোকান খুলিনি। বরং আমার ঈশ্বর চিন্তার ফাটলগুলো মেরামত করেছিলাম। আর তখনই পাগলটি তার গামছা থেকে মেঘ ঝেড়ে ফেলল। গান থেকে সে তুলে নিল আশ্চর্য দরোজা।

দুঃখের জার্নাল

আমাদের দুঃখগুলোর কোনো ব্যাকরণ নেই। কোনো চলছে না চলবে না নেই। শুধু কিছু মেঘ আর মেঘের এককোণে দাঁড়িয়ে থাকা গতজন্মের টিনের বাক্স আছে। কবি এখানে শ্রমিকের ধর্ম ভুলে চাঁদ মেলে দেয় আর অতি প্রাচীন নদীর রজঃপথ আবার উন্মুক্ত হয়ে যায়। আমাদের ছেলেরা বৃষ্টির আঙুলে পরিয়ে দেয় দৃশ্যের অবাক। এখানে কোনো প্রক্ষিপ্ত নেই। ধংসাবশেষ নেই। মাথাউঁচু জলগাছ দুই হাত বাড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধ ডাকছে। আর ভেঙে পড়ছে আমাদের দু-পশলা ভুলভ্রান্তি।

দীনতা সমগ্র

এই আমার দীনতা সমগ্র। যদিও হৃদয়ের ফুটো সারাই করার জন্যই আমার সমুদ্র ভ্রমণ। মাছের বাজারে আমি দেখেছিলাম এ-জীবনের শ্রেষ্ঠ বণিক। নোনা জলের গল্প থেকে আঁশ বাছার সহজ সূত্র এমনভাবে বিলি করছিল যেন জীবনটাকে সে আঠারো খণ্ডে প্রকাশ করেছে। সেদিনের পর আমি কিন্তু আর বৃষ্টি কাটার সাহস করি না। স্বাস্থ্য-উদ্ধারে গিয়ে চোখে ঢাকনা দিয়ে পান করি ঢেউ-উৎসব। সেলাই করি ঠোঁটের রহস্য।

Facebook Comments

পছন্দের বই