কবিতা
প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী
লুব্ধক
জলে স্পর্শ করে গেছি, একটি নক্ষত্র রাতে নেমে এল বলে
বহুদিন পরে এল, বহু সন্ধ্যা পার করে, দৃষ্টি বিহ্বল
এল এই, নিমেষেই জ্বেলে দিল অপ্রতিম আলো
সে-আলো শরীরে মেখে, অন্ধকার হয়ে গেছে স্ফটিক স্ফটিক!
ঘনভার রাত্রি নামে, আদিগন্ত ভেসে যায় শূন্যের গহ্বরে
আমি সে-আলোর আভা মুঠো ভরে রেখে দিই শ্লোকের মতন
দ্বন্দ্ব
আমার সমস্ত দিন যদি-বা জোনাকি আলো খোঁজে
সন্ধ্যে নামে যত্র তত্র, ফিরে যায় শালিকের দল
ক্যাকোফোনি পৃথিবীর তারই মধ্যে আকাঙ্ক্ষা নিষ্ফল
তারই মধ্যে মৃদুস্বর কখনো শ্রুতিতে বেজে ওঠে
বাদামি খামের পিঠে টুকরো অক্ষর লেখা হলে,
বোধহয় সে-অক্ষরই দীর্ঘ কবিতার কোনো পাতা
কবে সে কবিতা শুরু, কবে তার বেড়েছে আকার
জানে না এখনও কেউ বন্ধ থাকা দেরাজের তাকে
তরঙ্গ বাহিত হয়ে চলে আসে আলো হাওয়া তার
এমনও মুহূর্ত আসে সমস্ত ক্লান্তিই নির্ভার
হতে চায় তার কাছে, আবার দ্বিধায় করে ভর
ভেঙে ফেলে সকালেই রাতের বানিয়ে তোলা ঘর
জন্মান্তর
তুমি ভাবো হাল ছেড়ে চলেই এসেছি
চলে তো এসেছি বহুদিনই
তবুও প্রতীক্ষমাণ জীবন আমার
ঘাসের সবুজে আর নরম হৃদয়ে
পা ফেলেছি অতি সাবধানী
যে-সময় চলে যায়, দ্রুতগামী যে-সময়
পারিনি রাখতে ধরে শিখিনি কৌশল
প্রতীক্ষা শিখেছি শুধু, সামান্য সম্বল
ঘাসের সবুজে আর নরম হৃদয়ে শুনি
‘এ-জন্মে ঘেঁটে গেছে সব’
শাখা প্রশাখায় তবু পরিযায়ী থেকে যাই
যে-থাকা দুরূহ সম্ভব!
অপারগতা
আবাহন নেই মানে বিসর্জন নয়
তুমি তা বোঝো না, জানি। তুমি তা জানো না
ঘুমের ভিতর থেকে যে-সব অক্ষর
ম্লান হয়ে পড়ে থাকে ঘরের কোণায়
সঙ্গহীনতার কথা তারা কিছু জানে
বাকিটুকু মিশে যায়, হাওয়ায় হাওয়ায়
সমস্ত জীবন ধরে অপেক্ষা করেছি
ধীর এলে দ্রুতপাখি বড়ো অসময়ে
ভ্রমণ পিপাসু তবু বুঝতে পারো না?
পাহাড়ের বিপরীত সমুদ্র নয়!
একটি সরল বাক্য
অনন্ত ফসল খেত পারাপার করে
পৌঁছেছি তোমার কাছে, নিষ্ফল দিন!
গতিহীন এই পথে ক্ষতের উপর
বিছিয়েছি রোগশয্যা, নিরাময়হীন
আরও কি আঘাত বাকি? বাকি আছে আরও?
প্রস্তুতিও সেইমতো শুরু হোক আবারও… আবারও…
একটি সরল বাক্য বুঝে গেছি শেষে
সরল হয় না পথ।
হয় জটিল, নয় জটিলতর…

প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী
জন্ম আসামের করিমগঞ্জে। কর্মসূত্রে কলকাতায় বসবাস। একটি বেসরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন এবং জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত। মাস কমিউনিকেশন জার্নালিজ্ম নিয়ে পড়াশুনা। কবিতা লেখেন, টুকটাক ব্যক্তিগত গদ্যের পাশাপাশি। প্রথম কবিতার বই ‘বানানো সংলাপ’।