লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

রাজীব মৌলিক

খচ্চর

পায়ের তলাতে রাখা আমাদের দুঃখ
তবু কেন ঘাসফুল হয়ে ফুটল না
নদী হয়ে ছুটল না—

গড়িয়ে পড়ছে দিন; দেহ থেকে হাত
তারা কেন আদালতে গিয়ে বলল না
পড়াশোনা করে চুষে দিতে পারব না কালো দাগ।

মা-কে নিয়ে কথা হয় রোজ
ভাগাভাগি করি হাতাহাতি করি খিস্তি দিয়ে বলি
জন্ম না দিলেই বাঁড়া দেখতে হত না
খচ্চরের মুখে ঝামা ঘষে দিলে কেউ ফাঁসি হয়ে ফুটত না!

দেশকে আমার মনে হয় কেন ভিখিরির কোল
গভীর ঘুমেও ভেঙে যায় ঘুম থেকে
ডেকে ওঠে ককিয়ে যে পাড়া
বেশ্যার ভাতের ফ্যানে আমার আইন দেয় টোল।

মাজন

আমার এখন মানুষকে দেখলে ভয় হয় না
কাউকে আর অনুরোধ করে কিছু বলতে হয় না
কোনো অবিশ্বাস করার কিছু নেই

এখন আমি সরকার পক্ষের
সরকার আমাকে যা বলে আমি তাই করি
আমার নিজস্ব কোনো চোখ কান নেই
বন্ধুরাও আমার দলে যোগ দিয়েছে
আশাবাদী গোটা পৃথিবীটাই আমার সঙ্গে

যদিও আমার বাবা মা বিরোধিতা করেছে
এবং তারা সরকারের সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে
আমি সুবিধাবাদী পন্থায় বিশ্বাসী

নিজের সুখের জন্য সরকারের পতন চাইতেও পারি।

আমার কবিতা

আমার কবিতা ঘুমিয়ে পড়েছিল
খিদেয়, তৃষ্ণায়, পাঠকের অবহেলায়
সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মতো আবার জেগে উঠেছে

এখন আমার কবিতা খেতে জানে
ঘুমোতে জানে
লোকমুখে উলঙ্গ হতে জানে
কুকুরের মতো পা চাটতে জানে

আমি আশ্চর্য হই তার জাদুকরী শক্তি দেখে
আমার কবিতা কখন কুকুর হয়ে গেছে
কখন ঘেউঘেউ করা শিখল—

দেশটা কি সত্যি সত্যি কুকুরে ভরে গেল!

খেউড়

বাবাকে গালি দেওয়ার মতো শব্দ বাংলা অভিধানে নেই
তাই সরকারের মতো তার কাজকর্ম বলে গালি দিই

সে এতে মনে কিছু করে না
ভাবে ছেলে সোনার টুকরো
গালি দিলেও গায়ে লাগে না

অথচ আমি মন থেকে বাবাকে গালি দিই
আর মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি

কাউকে যেন এমন হাত না দিয়ে পাঠান
যে-হাতে শুধু ইট পাথরের শব্দ লেগে থাকে

সঙ্গে একটা কালো টিপসই…

হাটবার

পশুদের হাট বসেছে আজ
সমস্ত হিংস্র পশুরা বুথে বুথে দামি গাড়ি নিয়ে ঘুরছে
আর দেখছে ছোটো ছোটো হরিণ শাবকের দল
লাইন দিয়ে বলী হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে

ব্যানারে ফেস্টুনে খোদাই করা তাদের নাম
কেউ-বা মাইকে ছড়িয়ে দিচ্ছে হুমকি
বলি হওয়ার বিভিন্ন পন্থা

আমার বাবার শরীর ভালো না
তবু সে হাটে যাবে

হাটে না গেলে গোয়ালে বলী হওয়ার মতো পশু নাই

উপত্যকা

গুষ্টিশুদ্ধ বোকাচোদা একজায়গায় জড়ো হয়েছে
এবার বাজেট তৈরি হবে—
কে কার পেটে লাথি মারবে তার প্ল্যান লিখে রাখা হবে
ভিখারির দল এ শুনে রাস্তা অবরোধ, ট্রেনে আগুন জ্বালাবে
ওদের কাজই দেশে আগুন লাগানো

এত বেশি আগুন যদি পোঁদে থাকে
তাহলে সাহস করে যা না মেরে আয়
প্ল্যানিং কমিটির পোঁদে

মরলেও লোকে বলবে
শিশুকালে বাঘিনী মায়ের দুধ পান করেছিল

বালটা আসলেই একটা মাল ছিলো…!

ডাঁসা

ডাঁসা পেয়ারার মতো তোমার ভবিষ্যৎ
অন্ধকারে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে—

তুমি জ্বলে উঠছ
গাঁজাখোরের মতো

উজ্জ্বল হয়ে উঠে আবার কেলিয়ে যাচ্ছে তোমার ভবিষ্যৎ
আর তাতেই বাঁড়া তুমি রেগে লবডঙ্কা
সামান্য দেশলাইয়ে বারুদ কম থাকায়
হাত উঠালে দোকানদারের উপর
হাত উঠালে মা বোনের উপর

অথচ তোমার প্রতিটি রাতজাগা জুড়ে আলো ফেলছিল
থিওরি, থিসিস, লিটেরাচার, সায়েন্স।

ভিত্তিহীন

একুশতম গোল মিটিঙেও দেশের উন্নয়নের কথা বলা হল না
আর রাজ্যটা তো বোকাচোদায় পেয়েছে
যে-ই ক্ষমতায় আসে সেই গাঁড় মারে

এবার দুর্গাপূজায় মা-কে পুরোনো শাড়িতে দেখতে হবে
অথচ উদগাণ্ডুগুলো নশ্বর দেহে কেজি কেজি সোনা পরিয়ে
পালন করবে ডি জে উৎসব।

ভাড়াটে মাগিদের নাভি দেখে নৃত্য ভুলে যাবে
কিশোরী মেয়েটি।

তবু বিদ্রোহ করবে না। রাস্তায় নামবে না একজোট হয়ে
পার্টি পার্টি করে নিজের রক্ত চুষতে দেবে—

অথচ যে-কোনো মুহূর্তে দেশটা বলদে যেতে পারত
শুধু একটা বিদ্রোহ দরকার
সমস্ত রং ভুলে একবার মাঠে নামলেই নৃপতিরা পালটে যেত।

শোঁ-শোঁ

শোঁ-শোঁ আওয়াজ করে গিলে খাচ্ছে তোমাকে আমাকে
স্বপ্নের ভেতরেরও ঢুকে পড়ছে হেলিকপ্টার
আমাদের প্রিয় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী

তার শরীরে কোথাও স্বপ্ন নাই
তার মনে কোথাও পাপ নাই

সে নরক থেকে পালিয়ে এসেছে
লুসিফার তল্লাশি করেও ব্যর্থ হয়েছে

এবার আমরাও ব্যর্থ হয়েছি চিনতে
তবু সোচ্চার হচ্ছি না

আমাদের কলিজা সে কিনে ফেলেছে
জোম্বি হয়ে গেছি আমরা

নিজেদের রক্তকে ভাবছি বিরোধী মুখ।

Facebook Comments

পছন্দের বই