লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সেলিম মণ্ডল

আপেল ও সিঁড়িভাঙা অঙ্ক

সম্পর্ক, এক সিঁড়িভাঙা অঙ্ক। বাবা চেয়েছিল— আমি অঙ্কে অনার্স করি। ফিজিক্স নিয়েছিলাম। নিউটনের মতো পড়ে থাকা লাল আপেল তুলে বুঝে নিতে চেয়েছিলাম মাধ্যাকর্ষণ বল। আপেল কুড়োতে গিয়ে দেখেছি— এখানেও সেই সিঁড়িভাঙা অঙ্ক। যতই উপরে ওঠার চেষ্টা করি— ছাদ দেখতে পাই না। শূন্যতার আলো অথবা হতাশা আমায় না-শিখিয়েছে অঙ্ক, না শিখিয়েছে ফিজিক্স। দূর থেকে শুধু যারা এসেছিল বা দূরে চলে গিয়েও যারা কাছে থেকে গেছে তারা আসলেই আপেলের প্রেমে পড়েছিল। তারা বার বার ছুরির অভাবে, না কেটেই খেয়ে নিয়েছে গোটাটা।

ভালোমন্দ

প্রতিটা মানুষ স্বপ্ন দেখে। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখতে দেখতে বৃদ্ধ হয়ে যায়। তারপর মৃত্যুবরণ করে। আবার কেউ কেউ স্বপ্ন দেখতে দেখতে চুল-দাড়ি সাদা করে ফেললেও বৃদ্ধ হয় না। আপনি এই দু-ধরনের মধ্যে কেউ একজন হবেন। আপনার চুল পাকেনি। দাড়িতে গজায়নি মেঘ। কিন্তু আপনার রক্তের মধ্যে বসেছে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, রক্ত দেবেন কি, দেবেন না… আপনার মন চায় মানুষের জন্য কাঁদতে, আপনার প্রাণ চায়— রক্ত বেচে আপনি স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখবেন…
এভাবেই একদিন কবরের সামনে দাঁড়াবেন… কবর থেকে উঠে আসা আরেকটি স্বপ্ন দেখা মানুষ আপনার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করবে… তার সঙ্গে গল্প করতে মন্দ লাগবে না…

লম্ফ

একবারই ঝড়ে তছনছ হয়েছি। একবারই। কতবার চেয়েছি— এবার উঠে দাঁড়াব। ঘুরে দাঁড়াব। মাঝে মাঝে এমন ঝড় আসে, মনে হয়— ঘুরে না দাঁড়ানোই ভালো। এই ঝড় আগলে রাখি। ভেঙে যাওয়া শিকড় থেকে ছোটো ছোটো ডালপালা গজাক। তবুও আঁচড় থাকুক। থাকুক এই অন্ধকার। পুরোনো স্থাপত্যের মতো ধ্বংসাবশেষ নিয়ে। লোকে ভিড় করুক। দেখুক— ঝড় আসলে ঝঞ্ঝাট নয়। ঝড় হল স্মৃতিমহল। ঝড় হল হারিয়ে যাওয়া মানুষের ফেলা যাওয়া পুরোনো লম্ফ…

আহ্বান

তুমি নেই অথবা তুমি আছ— এই বিশ্বাসের মধ্যে একটি গাছ বড়ো হয়ে ওঠে, মুনাই। বৃক্ষরোপণের সময় হাতে দেওয়া হয়েছিল একটি কুঠার। নিজ গলা কেটেছি, হাত কেটেছি, পা কেটেছি… গাছকে বলেছি: বড়ো হও, বড়ো হও। পাখি এসে বসবে ডালে। তার ঠোঁটে চুমু খাব।
গাছ কই? একটা আসবাব হয়ে ওঠা তক্তা নিজেকে সাজাতে পারবে সেই আনন্দে বীজের কাছে মিছে গর্ভ চাইছে। ফুলের কাছে কে আত্মহত্যা করবে? ফলের পাকা ত্বকে চুইয়ে পড়ছে সময়। ডালে ডালে পাতায় পাতায় শোনো কি সেই আহ্বান?

হাওয়া

রুটির দোকান থেকে ফিরে এসে দেখি— খাবারে, মাছিদের বমি! দ্রুত হাওয়া করি। মাছি কই? মাছি কই? হাওয়া লাগে নিজ গায়ে৷ বমির গন্ধ নেই। নিজের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ঘরে। খিদে আর পায় না। খালি রুটির দোকানের মেয়েটিকে মনে পড়ে… তার খাবারেও মাছি ছিল… তার খাবারেও হয়ত বমি ছিল… তবে হাওয়া করার কিচ্ছু ছিল না…

Facebook Comments

পছন্দের বই