কবিতা
সমীরণ ঘোষ
অবদমন
গ্রামোফোনের শূন্যে কুকুরগুলোকে মেঘের
কলকব্জা ছাড়া ভাবাই যাচ্ছে না
মাত্রাহীন আকুপাংচার কুকুরদের পিষে ফেলছে
অকার্যকরী সীসা ওদের কানে গুঁজে দিচ্ছে
ধাতুর সন্ত্রাস
একজন মেয়ে-দোলনা দুই বরকন্দাজ-সহ
গানকে পালিশ দিচ্ছে খুব
রেকর্ড টলছে। পিন ফিশফিশে গলির গালায়
চোং থেকে খনখনে জিভের আর্তনাদ
অবদমনের লোহা
বিভ্রম
সাতহাজারচারশোফুট ভ্রান্তিকে হয়তো পাহাড়
ভাবাই সমীচীন। কিন্তু পাথরগুলো মোটেও
ফিরিয়ে নেবে না ভারী শ্বাস ভারী ফাঁসের আঙুল
গলার অবর্ণনীয় দাগ-সহ তুমি আরও জীবিত ও মৃত
ভ্রান্তিও পাখির কাচের। দাঁড়ে ইশকুলে মেঘ
দিদিমণি গানের লম্বা কোনো সেতুর বেগুনি
ঘণ্টার উদ্বেগ কুকুরদের নিরর্থক লাফের আদিম
গলার চামড়া ছিঁড়ে পেরুতে চাওয়ার দাগ
আরও আরও ফাঁসের বিভ্রম
ঘুণ
কায়মনোবাক্যে হাতলের কাঠ চেয়ারকে মার্জনা
করছে। এমনই সন্তের শুঁড়িপথ
আঙুলের হাড়ের কল্পনা মাত্রাহীন তামার বিদ্যুৎ
হাতলকে সান্ত্বনা দিচ্ছে কাঠের গরাদ
চেয়ার অবয়বহীন তরলসবুজ
প্রায়ান্ধ হাতল। হাড়ের আঙুলে আর ঘুণের কণায়
পাগল
সন্দেহজনক কেউ প্রশ্ন করছে। কিন্তু লোহার
চোয়াল কোনো উত্তর দেবে না
রবার চিবোচ্ছে কেউ। মারাত্মক। আর মার্জনাহীন
নল বাড়িয়ে রেখেছে প্রাণপণ
চোয়ালের লোহা আরও চোখের পারদে সাদা
তামাক কুচোনোর ঘ্যানঘেনে
সংশয়কর টানা ফোকলা করিডর। টানা হাড়ের
কুকুর। লন্ঠনের পাগল কেউ সন্দেহ পুঁতছে
আরও সন্দেহের নখে
সংযোগ
নিগ্রহ এমনই যে কুকুরগুলোই ঘনিয়ে ওঠা
আমাদের শব। ঝাঁকি দিলে একফোঁটা
আলোও আসছে না
নীহারিকা মৃতের চিৎকারে লাল। মহাকর্ষজ
সেতুর আবছা
হাড়ের বেলুনও এত চমৎকার কারিগরি-সহ
ঘনিয়ে উঠছে
শোভাযাত্রা
মদে জারিয়ে যাওয়া মাস্টার কুকুরগুলোর
ঠান্ডা নাক জিভের ইস্পাতটুকুই পড়তে পারছে
লোহার শিরশিরে কোনো দেশের সন্ধ্যে
অহেতুক পেরেক পোঁতার ধু ধু
কার্তুজের লম্বা পাহাড়
মাস্টারের কাঠামো মুখে কুকুরগুলোও টানা
ধ্বনির অনন্ত

সমীরণ ঘোষ
জন্ম ১৯৫৫ সালে। সত্তরের এই কবির প্রথম কবিতার বই ‘হে বন্ধ কাপালিক’ প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। ‘চাদলাগা চৌষটি আশমান’ তাঁর দশম কাব্যগ্রন্থ। ‘কবিতা সংগ্রহ’ ছাড়া ৪৮ পৃষ্ঠা কি বড়োজোর ৮০ পৃষ্ঠার বইতে তাঁর ইঙ্গিতধর্মী রূপ যেন অরূপকে স্পর্শ করে। কলকাতা থেকে দূরে মুর্শিদাবাদের প্রাচীন শহর বহরমপুরে থাকেন। সেখানকার অন্যতম লিটল ম্যাগাজিন ‘রৌরব’পত্রিকার সঙ্গে আরক্ত জড়িয়ে ছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ‘স্বয়ম্বর’ নামে পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি চিত্রশিল্পে সমান পারদর্শী তিনি। তাঁর ক্যানভাসে বহু বিচিত্র মানবিক অথচ ইন্দ্রিয়াতীত বর্ণসুষমা। সেই সঙ্গে এই কবির আছে সংগীতের প্রতি একান্ত অনুরাগ। আছে নিজস্ব গায়কী। জীবিকা হিসেবে সরকারি চাকরি করেছেন। এই কবির কবিতায় সংপৃক্ত দীপ্র আধুনিকতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিষাদ-বৈরাগ্য। যে কোনো কবিতা পাঠকের কাছেই সে এক আশ্চর্য ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।