লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সরদার ফারুক

বুনো চাঁদ

ইতস্তত পড়ে আছে শামুকের ভাঙা খোল
সাদা কড়ি, তারামাছ, ত্রিকোণ পাথর
বালির কাগজ জুড়ে কাটাকুটি খেলা
শেষ হতে বেশি দেরি নেই

ঝাউপাতা নাচে শুধু হাওয়ার উচ্ছ্বাসে
নারকেলসারি বলে ওঠে—
ওকে বিয়ে দিয়ে দাও!

তাঁবুর জীবন ভুলে, যাযাবর, শহরের দিকে হাঁটে
বুনো চাঁদ পিছু নেবে, কখনো ভেবেছ?
বাঁশের সেতুর কাছে বেদেনির চুড়ির দোকান

জ্বর

বিড়ালবিদ্বেষী কেউ বলেছিল প্রাণীটির রোমের নীচেই থাকে
জ্বরের জীবাণু। বাড়িতে বিড়াল নেই, তবু মাঝেমধ্যে জ্বর হয়
রক্ত পরীক্ষার কথা ভাবি
এমন সংক্রমণ খুব কম আছে— ত্বক থেকে স্নায়ু
এতটা নিবিড় করে আর কেউ জড়ায় আমাকে?

প্রবল দংশনে সব প্রতিরোধ ছেঁড়ে। যদি আজ সবাই ভুলেছে
তবে সে থাকুক— অন্তহীন এই নির্বাসনে, গোপন প্রেমিকা

কুশপুত্তলিকা

যেন তুমি অনেকটা মদ পান করে শুয়ে আছ মাঠে
মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দেয় লাজুক তারার হাসি
যেন তুমি দিনমান অনাথের মতো পথে ঘুরে
দোকানির বয়সি মুখের রেখা দেখে যাও

এখন নীরব থাকা ভালো। আইনের বইয়ে বাসা বাঁধে
বোলতার পরিবার
প্রহরীর জুতোর ডগায় ঘাস লেগে আছে, বন্দুকের নলে
সাদা প্রজাপতি বসার আগেই উড়ে যায়
নীল ওড়নার নীচে মহাদেশ, অচেনা ভূগোল
কখনো দেখেছ তুমি মেরুর বরফ, প্রেইরির তৃণভূমি?

তোমার গোপন কথা সকলেই জানে
চৌরাস্তার মোড়ে টাঙিয়ে রেখেছে কুশপুত্তলিকা
শীতের আগুনে সহসাই ছাই হয়ে যাবে

হাত

ছবিতে তোমার কাঁধে কার যেন হাত!
খোঁপায় গাঁদার ফুল, হাসি হাসি মুখ
জুলাইয়ের অসহ্য গরমে
মানচিত্র ফুটে আছে বাহুর সন্ধিতে

ফোটোগ্রাফারের ভুলে
ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর মাথা কাটা পড়ে গেছে
শুধু বনমানুষের মতো তার
রোমশ থাবাটি দেখা যায়

মৃদঙ্গ

সুডৌল মৃদঙ্গ দেখে থমকে দাঁড়াই
কী করে বাজাই
কীভাবে তুলব আমি রাধাকৃষ্ণ বোল?
ভাবতেই সাতটি সাগরে উতরোল
আড়-ঠেকা, সম-ফাঁক, নিগূঢ় তেহাই
হিসাব মিলাই

আসলে তো সুর-তাল সব মনে মনে
বিষাদমথিত আর তোলপাড় ক্ষণে
উঠে আসে হাতের আঙুলে
এক জীবনের না পাওয়ার কথা ভুলে

Facebook Comments

পছন্দের বই