লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

অনিন্দিতা গুপ্ত রায়

ধুলোবালি

এক
মাঝে মাঝে মনে হয় শ্বাস নেওয়ার মতো ভারি পৃথিবীতে কিছু নেই। মাঝে মাঝে মনে হয় অপেক্ষা শব্দের গায়ে যদি একটা চারা গাছ পুঁতে দিতে পারতাম। মাঝে মাঝে মনে হয় একবার চলে গেলে আর কারো সঙ্গেই দেখা হবে না? এ সমস্ত দিনে এও মনে হয় বড়ো বেশি ক্ষমাপ্রবণতা লঘু করে দেয়।

আজকাল প্রায়ই মনে হয়
কারণ ছাড়াও পৃথিবীতে কত কিছুই তো ঘটে…

দুই
সবুজ ল্যান্ডস্কেপ, মসে ঢাকা লোমশ গাছেরা, এসব পেরিয়ে অনেকটা দূর চলে গেলে পথ আর পা পরস্পরকে জিজ্ঞাসা করে ঠিকানা। কেউই কিছু বলতে পারে না কাউকে।
একটা খরগোশ আর একটা শেয়াল পরস্পর বিপরীত দিকে দৌড়ে যাচ্ছে দেখি।
কার পায়ের চিহ্ন ধরে যাবে তুমি, তুমি ঠিক করো।
সোজা হাঁটতে গেলে মস্ত সরীসৃপ রাস্তা জুড়ে শুয়ে
কে কার বন্ধু এরা, শত্রু বা কার? জঙ্গল জঙ্গল বিস্তৃত সবুজ সমস্তটা গিলে ফেলে। আমাকেও।

কখন উগড়ে তুলে ফেলে দেয়, অপেক্ষায় থাকি।

তিন
ছোটো ছোটো গঞ্জের হাট ধুলো ও কাদামাটি মেখে ঘর ছাড়ার স্পৃহা কিরকম মায়া করে তোলে সব।
হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় না।
তবু হাত প্রসারিত থাকে।
তবু দৃশ্যগুলো সরে সরে যায়।
অপ্রাকৃত শব্দের কাছাকাছি এত আলো জমে থাকে, খুব অলক্ষ্যে

ঘরে ফেরার পথ রূপকথা হয়ে যায়!

চার
ছবি আঁকতে বসেছ
রেখায় রঙে আলো আঁকতে গিয়ে ফুটিয়ে তুলেছো অন্ধকার—
যাকে ঘিরে ঘিরে
ওই কিছু না থাকাটুকুই আলো।
তাকে জায়গা দিয়েছ খেলাধুলো মেখে নিতে
কিছু নেই বোঝাতেও তো কিছু আছে বলতেই হল!
হাওয়াকে আঁকতে গিয়ে ঝরাপাতা কেঁপে ওঠা জল
উড়ো চুল যেভাবে এঁকেছ

আর হাওয়া তার পাশ দিয়ে চোখ মটকিয়ে দূরে সরে গেছে!

পাঁচ
অপরাজিতার নীলে হলুদ প্রজাপতি উড়ে উড়ে ঘোরে।পুরনো নদীর মতো তাপ তাদের ডানায়। হঠাৎ মনে হয় হুল নেই কান্না নেই ভাষা নেই। তবে কী ভাবে ফুলের কাছে রেখে যায় হয়ে ওঠবার ব্যথা? কুৎসিত কীট থেকে এমন ডানার আলো কতটা যন্ত্রণা সাঁতরে এসে এনেছিল সে, ফুল জানে, গাছ জানে, পাতাগুলো জানে?

যে খোলস ফাটিয়ে সে উড়ে এলো সেখানে সুতোয় কিছু বাঁধা রয়ে গেল— ছেঁড়া সুতো, জানো তুমি, তুমি জানো?

সমস্তই জানতে হবে, একথা কে কবে জেনেছে!

Facebook Comments

পছন্দের বই