লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

বর্ণালী কোলে

কাব্য বিবর্জিত কবিতা


কবিতা যে কোথায় আরম্ভ হয় আমরা কেউ কী জানি। গল্প কোথায় শুরু। একঘেঁয়ে
‘ভালো’ ও ‘খুব ভালো’ কমেন্ট লেখার থেকে মুক্তি পাওয়ার মুক্তাঞ্চল কোথায়। যেখানে
অন্তত বৃষ্টির মতো অনায়াস নিজেকে বলা যায়। আঘাত করতে ভয় পাও? সত্য
জানালে তোমার পায়ের নীচের ভূমি চোরাবালুকায় পরিণত হবে ও তার মধ্যে ক্রমশ
নিজে কবরস্থ হয়ে যাবে তার ভয় পাও? তোমার সেই দাপট কোথায়। তোমার সেই
শক্তি কোথায়, যেখানে এক হাতে, নিজস্ব হৃদয়ে ইমারত বানিয়ে অনায়াসে অট্টহাস্য
করা যায়!
তুমি মিথ্যাচারী, এটা মেনে নাও। তোমার বাঁচাও কোথাও অভিনয়, মেনে নাও।


এইটুকু স্বীকারোক্তির পর কবিতার দ্বিতীয়াংশ শুরু। সেদিন দুপুরে তোমার
ঘরে তুমি একা। আকাশ ঘিরে মেঘ। ঠিক যেন রবীন্দ্র-কবিতা, তরুছায়ামসীমাখা,
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা। জানালার বাইরে সবুজ প্রান্তর। দূর-দিগন্তরেখায় বৃষ্টি। ঘন কুয়াশায়
নিবিড়তা। ধানক্ষেতে ঢেউ। ঢেউ বেয়ে বেয়ে সে আসছে। তোমার মৃত বন্ধু। ঠিক জানালার
কাছে এসে দাঁড়াল। তুমি জাল দেওয়া জানালার এপারে বসা নন্দিনী। উলটো রক্তকরবী।
জালের বাইরে রাজা। বহুদিন পর। বৃষ্টি এনেছে। হাওয়া।বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তোমাকে
নিয়ে যাচ্ছে কোথায়। এত জল, এত জল। বাপ্তাইজ সম্পূর্ণ তোমার।
এরপর, এরপর থেকে প্রিয় হল ক্রুশ!


যখন জ্বর আসছিল, কেঁপে কেঁপে, বাইরে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রা, আর তুমি তোমার
সর্বাঙ্গ চাদরে মুড়ে নিচ্ছিলে, তখন তুমি পুলকিত কোথাও, তুমি হেমন্তের
জাতক। বাড়িতে তুমি সম্পূর্ণ একা। মাথার পাশে, জল, থার্মোমিটার আর পাইরেজেসিক।
বেহুঁশ তুমি, অথচ রোমাঞ্চিত। কার্তিকের শেষে এনই হিমেল হাওয়া, এমনই শীত
শীত। দ্রুত সন্ধ্যা নামে। প্রদীপের আলোয় মায়াজন্ম, জাতিস্মর ও আলাদিন। কাঁপতে
কাঁপতে আরও চাদর টেনে নিচ্ছে তুমি। আরও গুটিয়ে যাচ্ছ তুমি। অথচ বুঝতে পারছ
কোজাগরী পার হয়ে নক্ষত্ররা স্থির হচ্ছে… জন্মমাস আসন্ন তোমার।


দামী প্রিন্টেড কটন। মাচিং ব্লাউজ।
তার সাজানো গোছানো বাড়ি, সাজানো অশ্বের মুখ সর্বদা পূর্ব দিকে ধাবমান।
কর্তা অফিসে। মেয়ে কলেজ। প্রতিবেশীরা কেউ পাহারায় নেই। দোকানের
খরিদ্দার চলে যেতেই মুষলধারে বৃষ্টি। দোকানের ঝাঁপ নামিয়ে তড়িৎ, তার
পূর্বতন, বলা যায় তার চিরন্তন প্রেমিক, ওপরে।
তারপর..
খোলা আাঁচল গড়িয়ে লাবণ্য নামে। ঘোড়ার ঈষৎ দিক পরিবর্তন।

আলনায় ভাঁজ করা মেয়ের টি-শার্টের ওপরে লেখা বাণীরা মৃদুমন্দ হাসে… লেস স্লিপ, মোর
ড্রিম।


আপনি বোধহয় নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে কখনও ভালোবাসেননি। অন্যকে ভালোবাসাটাও
তাই একপ্রকার নিজের মধ্যেই ঘোরাফেরা করা। নিজেকে নিয়ে এত থাকলে সুতোর মতো
নিজের মধ্যে জড়িয়ে যেতে হয়। অজস্র গিঁট। খুলতে গিয়ে নিজেকেই কেটে কেটে বাদ।

দেখি আপনাকে। সঙ্গে সঙ্গে দেখি দূরত্বটাও। দুটো আলাদা নদী। দুটো আলাদা নৌকো। পৃথক
গতিপথ। কখনো কখনো প্রতিবেশীর মতো পাশাপাশি, কয়েক মুহূর্ত। কুশল বিনিময়।
ক্ষণিকের। এইটুকু। দুই নদীর মাঝে পথ। রোদ্দুর ও ছায়া। ওইটুকুই মায়া।

দেখছেন তো, শাড়ি পরে পরে কেমন দীর্ঘাঙ্গী হচ্ছি দিন দিন।
নিজেকে কেবল-ই মনে হচ্ছে ‘সুচরিতা’।
ঠিক ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথ। গোরার প্রেমিকা!

Facebook Comments

পছন্দের বই