লেখক নয় , লেখাই মূলধন

কবিতা

সুমন সাধু

গুপ্ত পাখিবিদ্যা আর বেড়াল যাবতীয়

জীবনের যত গুপ্ত পাখিবিদ্যা আর বেড়াল যাবতীয়
ঠিকানা মজবুত সর্বস্ব পথে ক্লান্তির কুহক
যেন পাতার আড়ালে মুচকি হাসা আকন্দ ফুল
ঝরে পড়ে স্বজনহারানো এ বরষা মরশুমে
আর যত আকুল দীর্ঘশ্বাসের কাছে এসে বসে পড়ছে
না ফোটা ডিম্বপ্রণালী
এই রূপে হতশ্রী হই
যত পাপতাপ বিদ্ধ হোক কামিনী নাভিকুণ্ডে
জ্বালাটি জুড়োবার নয়, তবু রোজ আপনার
সঙ্গে কথা ফুরোয় না
কথার পিঠের ধুলো ঝেড়ে এ বরষায়
আপনি ঘুমাতে পারেন না
শরীরের সমস্ত জলে সুউচ্চ মেঘ জমে
বাষ্পলোকে যেন প্রসূতির কুয়াশাকঙ্কাল

একা এক ব্রহ্মাণ্ড

হাজার হাজার সূর্যের পাশে প্রকাণ্ড সব আলো
ভিড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছায়া
কী হিমশীতল সেইসব শরীর, কী নিদারুণ লোভ
একা হয়ে আসা ঘর ক্রমশ বৃহৎ হয়
স্বভাবের জলতেষ্টা পায় হঠাৎ

এই বোকা ব্রহ্মাণ্ডের মাঝে চিৎ হয়ে শুয়ে আছি
চারপাশে উড়ন্ত সব ছাড়পোকা

ঘরের কথা

একটা বেডরুম
শতবর্ষ পুরনো খাটে লাল চাদর পেতে রাখা হয়েছে
দুটো চেয়ার ঘরের দৈর্ঘ্য প্রস্থকে দুইভাগ করেছে
হাওয়ায় উড়ছে সদ্য ভেজা তোয়ালে
ঘরের তিনদিকে পেরেক বিদ্ধ ফটোফ্রেম
মেঝেতে লুটানো তোমার টুপি, চায়ের কাপ
একটা ঘরে যা যা থাকার সব আছে
এমনকি তোমার ছায়া
শুধু এই ঘরে অত্যাচারিত হওয়ার প্রতিটি দাগ
আমার শরীর থেকে উধাও
তারপর থেকে আমি অলৌকিকে বিশ্বাস করি

অনন্ত

জুন মাসের দেওয়াল বেয়ে নামছে নীল ফুলের ক্যালেন্ডার
সিনেমার আবহে তখন গর্ভবতী বেড়ালের কান্না
এমন বরষার দুপুরে অনন্ত গতিতে ধেয়ে আসছে
শুদ্ধচারী মন্ত্রগুচ্ছ
তোমায় সেলাম ঠুকি
আর ওস্তাদের শেষ রাতে হুবহু পড়ে ফেলি ময়মনসিংহ-গীতিকা
তোমাকে তোমার নামে ডাকার মিথ শেষ হয়
আমার নধর শরীরের সেবা লাগে না আর
শুধু চোখের নীলমণি দিয়ে ঢেউ খেলে যায়
এ রোগের মেয়াদ বারোমাস
কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলেই মেপে নিই নাগরের শিশ্ন
শরীরের যুদ্ধ থামে

স্বাধীনতা

সমূহ সন্ধের মাঝে ভাবি আমাদের চিল-চিৎকার
রঙের হলদে থেকে গলে পড়ে ভিতরের কমলা
চারপাশে ভিড় করে মহীরুহরা
আমাদের কদমছাঁট চুলে আজ দৃশ্যমান কাঁচি
মরমে পরিপাটি ছোঁয়া
যেন কাঁটার আড়ালে আমাদের মা

কাল দেশ স্বাধীন হবে
মায়ের মধ্য গগনে ঘুরবে রেডিওর চাকা
তরঙ্গ পাড়ে ধাক্কা খাবে, ফিরে আসবে
একা এ দেশের প্রান্তরে এলোচুল, বিনুনি, সোমত্ত সিঁথি
চিল চিৎকারে ফেটে যাবে দেশপ্রেমের গান

Facebook Comments

পছন্দের বই